ভয়াবহ বন্যার পর থেকে দুর্গত এলাকায় চলছে সবকিছু যত দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর চেষ্টা৷ ধীরে ধীরে সবই হয়ত হবে, তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে হাজার হাজার টন ওজনের আবর্জনা সরানো৷
বিজ্ঞাপন
সেই কাজও চলছে বন্যায় বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে৷ কিন্তু বন্যার পর প্রায় দু' সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও আবর্জনা ব্যবস্থাপনার জন্য সুপ্রসিদ্ধ দেশটির জন্য আবর্জনাই এখন ভয়াবহ এক সমস্যা৷ ভেঙে পড়া ঘর-বাড়ির নানা অংশ ভেসে বেড়াচ্ছিল চারপাশে৷ ভাসছিল ফার্নিচার, টেলিভিশন, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, বই, ছবির অ্যালবাম, পুরোনো রেকর্ড আরো কত কী! জলমগ্ন রাস্তা থেকে জল সরে গেলেও যানবাহন ঢুকতে পারছিল না, সেসব এলাকায় হাঁটাচলাও ছিল দুস্কর৷
তাদের প্রথম স্বস্তি
আরভাইলারের মিস ক্রল (পুরো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)-এর বাবা-মায়ের বাসার দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল ভেসে আসা একটা ফ্রিজ৷ নতুন ফ্রিজটাতে তখনো চুম্বক লাগানো অক্ষরগুলো অক্ষত৷ দরজায় ‘‘থ্যাঙ্ক গড উই আর অ্যালাইভ'' লেখা স্টিকারটাও দেখা যাচ্ছিল পরিষ্কার৷ ক্রলের বাবা-মা ওই ফ্রিজটা নিয়েই বেশি বিপদে পড়েছিলেন৷ কে সরাবে ওটা?
পানি সরে যাওয়ার পর আবর্জনার পাহাড় সরানোর কাজও শুরু হলো৷ একসময় সরানো হলো ফ্রিজটাও৷ অনেক দিন পর সেদিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন ক্রল, ‘‘আবর্জনাগুলো যে সরানো হয়েছে তা খুব বড় স্বস্তির ব্যাপার৷'' স্থানীয় আরেকজন তো বলছিলেন রাস্তার আবর্জনার সরানোর দিনটিতে তার মনে হয়েছিল যেন আগেভাগে ক্রিসমাস চলে এসেছে!
দল বেঁধে কাজ
আবর্জনা সরানোর কাজ মূলত নগর কর্তৃপক্ষের হলেও সবাই শুধু কর্তৃপক্ষের অপেক্ষায় বসে থাকেনি৷ স্থানীয় নির্মাণ ঠিকাদার, খামারি এবং দমকল কর্মীরা যোগ দেন আবর্জনা ব্যবস্থাপনা কোম্পানির সঙ্গে৷ এর ফলে কাজ এগোতে থাকে দ্রুত৷
জার্মানিতে বন্যা: দুর্যোগে মানুষ মানুষের জন্য
জরুরি অবস্থায় তাৎক্ষণিক সাহায্য সবচেয়ে ফলপ্রসূ৷ জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার পর স্বেচ্ছাসেবীরা যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়ালেন তা অভূতপূর্ব৷ ছবিঘরে বিস্তারিত৷
ছবি: DW/B. Schülke
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আহরভ্যালিতে
জার্মানিতে এবার বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আহরভাইলার বা আহরভ্যালি৷ সেখান থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে লিমবুর্গ থেকে তেলভর্তি ট্যাঙ্ক নিয়ে ভোরবেলা হাজির টোমাস এবং মারিয়াস৷ উদ্দেশ্য ক্ষতিগ্রস্তদের ডিজেল দেয়া৷ ১৭টি জ্বালানি ব্যবসায়ী ৩২ হাজার লিটার ডিজেল ত্রাণ হিসেবে দিয়েছেন৷ জরুরি ত্রাণ-কাজে সহায়তাকারীদের জ্বালানি দিয়ে সাহায্য করছেন তারা৷ ফেসবুকে আগাম এ বিষয়ে জানানো হয়েছে৷
ছবি: Matthias von Hein/DW
জরুরি জ্বালানি সহায়তা
রেমাগেন শহতরটিও বন্যায় ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এই শহরের কাছে সিনঝিগের বাসিন্দা রাসিম শেরভিদাকু বন্যার পর থেকে অবিরাম ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করে যাচ্ছেন৷ রেমাগেনের একটি পার্কিংলটে জরুরি জ্বালানি সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করেছেন তিনি৷ তিনি ও তার পরিবার অক্ষত থাকলেও তারা ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বদ্ধপরিকর৷ তার ছেলেও বন্যা পরবর্তী জঞ্জাল পরিষ্কারে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করছেন৷
ছবি: Thomas Frey/picture alliance/dpa
দুর্গতরা অভিভূত
বার্লিনের দুর্যোগ গবেষক মার্টিন ফস জানিয়েছেন, ‘‘স্থানীয় মানুষ সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছেন৷ বিশেষ করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হননি, তারা তাৎক্ষণিক সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন৷ যারা এতদিন ভাবতেন এখনকার পৃথিবীতে মানুষ খুব স্বার্থপর, তারা এই সাহায্য দেখে অভিভূত হয়েছেন৷’’
ছবি: privat
জীবনের ঝুঁকি
আইফেলের ষাটোর্ধ্ব হুবার্ট শিলেস যা করেছেন তা অভাবনীয়৷ বাঁধের পানি আটকাতে ৩০ টনের খননযন্ত্র নিয়ে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি যে কাজ করেছেন তাতে প্রাণে বেঁচেছেন ১০ হাজার মানুষ৷
ছবি: Thomas Frey/picture alliance/dpa
খনন যন্ত্র নিয়ে ৩০০ কিলোমিটারের যাত্রা
কার্স্টেন স্টাইনার বন্যার তিনদিন পর তার বিশাল খনন যন্ত্র নিয়ে নিজের খরচে ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন দুর্গত এলাকায়৷ উদ্দেশ্য জঞ্জাল পরিষ্কার করা৷ যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো তার উপার্জনের কী হবে? তিনি বললেন, ‘‘এখানকার মানুষের দিকে তাকাও৷ আমার চেয়ে তাদের অবস্থা অনেক খারাপ৷’’
ছবি: Matthias von Hein/DW
কাজ ভাগ করে নেয়া
তবে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুত সাহায্যের হাত বাড়ানোয় সবচেয়ে বেশি উপকার হয়েছে৷ নিজেরা দল তৈরি করে কাজ ভাগ করে দিয়েছেন৷ এই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় যারা ছোটখাটো সাহায্যও করছেন তারাও একেকজন ‘হিরো’ বলে মনে করেন ব্রেমেনের দুর্যোগ গবেষক ভোল্ফ ডোমব্রোস্কি৷
ছবি: Max Diron
বাড়িয়ে দাও তোমার হাত
মাক্স ডিরোন তেমনি একজন হিরো৷ ত্রিশের কাছাকাছি বয়সি এই তরুণ পুরোনো ফায়ার ট্রাক দিয়ে রেমাগেনে বিনামূল্যে ক্ষতিগ্রস্তদের জ্বালানি দিয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, দুর্যোগের রাতে তার পুরোনো গাড়ি নিয়ে তিনি বেড়িয়ে পড়েছেন আহরভ্যালির দুর্গত এলাকায় মানুষকে সাহায্য করতে৷ এরপর থেকে প্রতিদিন কাজ শেষে ঠিক বিকেল ৫টায় সেখানে হাজির থাকেন তিনি৷ জঞ্জাল পরিষ্কার এবং বাড়িঘর ঠিক করায় হাত লাগান৷
ছবি: Thomas Frey/dpa/picture alliance
শাটল বাস নিয়ে ত্রাণ কাজ
পাবলিক বাসগুলো দুর্গত এলাকায় স্বেচ্ছাসেবীদের পৌঁছে দিচ্ছে বিনে পয়সায়৷ এ পর্যন্ত অন্তত এক হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে দুর্গত এলাকায় পৌঁছে দিয়েছে এসব বাস৷ তাদের যাত্রা শুরু হয় সকাল ৭টায়৷ বাড-নয়েনআহর-আহরভাইলারের মার্ক উলরিখ এই উদ্যোগের আয়োজক৷ তার এলাকাটি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যায়৷ শাটল বাস সংক্রান্ত যাবতীয় আপডেট তিনি ফেসবুকে দিয়ে থাকেন, যাতে রাস্তার যানজট না হয়৷
ছবি: Christian Mang/REUTERS
8 ছবি1 | 8
এখনো অনেক কাজ বাকি
রাস্তা থেকে সরানো হলেও ছোট-বড় সব আবর্জনা এখনো যথাযথভাবে সরানো যায়নি৷ ডাস্টবিনের পাশে, কিংবা শহরের কোনো ফাঁকা জায়গায় সারবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে লোহা, কাঠ, প্লাস্টিক ইত্যাদির তৈরি নানা জিনিস৷ তার মধ্যে কিছু এখনো ব্যবহারযোগ্য৷ সেসব যতটা সম্ভব পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে প্রকৃত মালিকদের জন্য৷
স্বাভাবিক অবস্থায় বড় বড় আসবাব থেকে কাঠ, লোহা বা অন্য কোনো ধাতুর তৈরি অংশ আলাদা করা হয় পুনর্ব্যবহারের জন্য৷ কিন্তু এত বড় দুর্যোগের প্রস্তুতি তো ছিল না, তাই পাহাড়সমান আবর্জনার সামনে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এখন অসহায়৷ অনেক আসবাবের কাঠ এখনো ভেজা৷ শুকানোর আগে পুনর্ব্যবহারযোগ্য অংশ আলাদা করা যাবে না৷ তা ছাড়া এত জিনিস সরানোর জায়গা পাওয়াও মুশকিল৷ অথচ দ্য অ্যাসোসিয়েশন এনভায়র্নমেন্টাল অ্যাকশ জার্মানি (ডিইউএইচ) ইতিমধ্যে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এমন আবর্জনার স্তূপ পরিবেশের ভয়ঙ্কর ক্ষতি করবে, তাই মাটিতে বা মাটির নীচের পানিতে মিশে গিয়ে যাতে পরিবেশের ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য এগুলোকে কংক্রিটের ওপর বা সেরকম শক্ত কোনো স্থানে রাখতে হবে৷ এত আবর্জনা রাখার জায়গা বের করা কঠিন বলে ডিইউএইচ-এর কর্মকর্তা মারিয়েকে হফমান, জলে ভেসে আসা আসবাবপত্র, সাইকেল, থালাবাসন, ফ্রিজ ইত্যাদি পরিষ্কার এবং ঠিকঠাক করে আবার ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করার পরামর্শ দিয়েছেন৷
বন্যার পর জার্মানদের বাঁচার লড়াই
চকিত বন্যার জল নেমেছে। কিন্তু তা ফেলে গিয়েছে ধ্বংসস্তূপ। আর সেই সব সরিয়ে বাঁচার লড়াইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জার্মানরা।
ছবি: Thomas Lohnes/Getty Images
বন্যার পরের ছবি
যে জায়গায় বন্যা হয়েছে, সেখানে শুধু বিপর্যয়ের ছবি। বাড়ি ভেঙেছে। গাড়ি ভেসে গেছে। আসবাব ভেঙে ছড়িয়ে আছে চারদিকে। মৃতের সংখ্যা ১৬০ ছাড়িয়েছে। এখনো অনেকে নিখোঁজ।
ছবি: Abdulhamid Hosbas/AA/picture alliance
এ কোন বাড়ি
জুটা স্কেলেকিসের অ্যাপার্টমেন্ট। তিনি ও তার আহত স্বামী দুই দিন ধরে এই অবস্থায় ছিলেন। তারপর প্রশাসনের কর্মীরা এসে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যান। তাদের অ্যাপার্টমেন্ট আর বাসযোগ্য নেই।
ছবি: Thomas Lohnes/Getty Images
রাস্তার হাল
যা একসময় ছিল মানুষের প্রিয় আসবাব ও ঘরের জিনিসপত্র, তা এখন আবর্জনায় পরিণত হয়েছে। সেই আবর্জনায় ভর্তি রাস্তা। কিন্তু এর ফলে পরিবেশ দূষিত হয়ে তার প্রভাব মানুষের স্বাস্থ্যের উপর পড়তে পারে। আর কাদা একবার শুকিয়ে গেলে খুব শক্ত হয়ে যাবে। তা ওই আবর্জনাকে এমনভাবে জড়িয়ে নেবে যে, তখন পরিষ্কার করা দুষ্কর হবে।
ছবি: Bram Janssen/picture alliance/AP
কাজে নেমে পড়েছেন আবাসিকরাই
সময় নষ্ট না করে কাজে নেমে পড়েছেন আবাসিকরাই। তারাই রাস্তা সাফ করছেন। আবর্জনা ফেলছেন। ময়লা ফেলার গাড়ি এসে বারবার করে তা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বন্যাক্রান্ত একটি এলাকায় সপ্তাহান্তে ১৪ হাজার টন আবর্জনা সরানো হয়েছে।
ছবি: Thomas Frey/picture alliance/dpa
সাহায্যের হাত
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন জার্মানির মানুষ। প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক গিয়ে বন্যাক্রান্ত এলাকায় কাজ করছেন। প্রচুর ডোনেশন জমা পড়েছে। বেশ কিছু সমাজসেবী সংগঠন জানিয়েছে, তারা আর ত্রাণসামগ্রী নিতে পারছে না। বিপর্যয় এই এলাকার সব মানুষকে এক করে দিয়েছে।
ছবি: Oliver Pieper/DW
ম্যার্কেল আবার
জার্মানির চ্যান্সেলার ম্যার্কেল মঙ্গলবার আবার বন্যাদুর্গত এলাকা ঘুরে দেখেন। তিনি এদিন গিয়েছিলেন নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়াতে।
ছবি: Wolfgang Rattay/AFP/Getty Images
বাসিন্দাদের সঙ্গে
ম্যার্কেল সেখানে বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা করেন। কথা বলেন। তাদের উজ্জীবীত করেন।
ছবি: Wolfgang Rattay/AFP/Getty Images
ত্রাণ কীরকম হচ্ছে
সেখানে ত্রাণের কাজ কীরকম হচ্ছে সেটাও দেখেন জার্মান চ্যান্সেলার।
ছবি: Oliver Berg/dpa/picture alliance
সমালোচনা
বন্যার আগাম আভাস দেয়া হয়নি, তাই বিপাকে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। জার্মান প্রশাসনকে এখন এই সমালোচনা শুনতে হচ্ছে। প্রশাসন অবশ্য এই সমালোচনা উড়িয়ে দিয়েছে। ম্যার্কেল বলেছেন, মোবাইল অ্যালার্ট সিস্টেমের উপর সবসময় ভরসা রাখা যায় না। যখন মোবাইল ফোনেই কাজ করবে না, তখন কী করে অ্যালার্ট মানুষের কাছে পৌঁছবে?
ছবি: Thomas Lohnes/Getty Images
9 ছবি1 | 9
ছদ্মবেশীদের উপদ্রব
দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই দুর্গত এলাকায় গিয়েছেন সেবার মনোভাব নিয়ে৷ এখনো অনেকেই কাজ করে যাচ্ছেন সেখানে৷ তবে মানবকল্যাণে উদ্বুদ্ধ এমন মানুষদের মাঝে কিছু লোভী মানুষও ঢুকে পড়ছে৷ বন্যাদুর্গতদের সহায়তার কথা বলে এলাকায় গিয়ে ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী গাড়িতে তুলে নিয়ে আসছে তারা৷ দুর্গতদের শেষ সম্বল হাতিয়ে নিতে যাওয়া এসব মানুষের ওপর এখন কড়া নজর রাখছে পুলিশ৷ মামলাও হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে৷ ম্যার্কিশার ক্রাইস এলাকার পুলিশ সুপারিন্টেন্ড্যান্ট মার্সেল ডিলিং জানান, ‘‘আবর্জনার স্তূপ থেকে ধাতুর তৈরি নানা জিনিস এবং ইলেক্ট্রনিক পণ্য চুরি করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে এ পর্যন্ত আমরা ১০টি ফৌজদারি মামলা করেছি৷''
বাড়ছে আবর্জনা
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর রাস্তা থেকে আবর্জনা সরিয়ে ফেলায় স্থানীয়দের অনেকেই তাদের বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফিরছেন৷ নিজেদের যেসব আসবাবপত্র বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো ফেলে দেয়ার জন্য রাস্তার পাশে রাখছেন তারা৷ ফলে আবর্জনার পাহাড় আবার বড় হচ্ছে৷
রিকার্ডা ফুঙ্ক : জার্মানির প্রথম সোনাজয়ী
টোকিও অলিম্পিকে জার্মানির প্রথম সোনা এনে দিলেন বন্যাদুর্গত এলাকার মেয়ে রিকার্ডা ফুঙ্ক৷ মঙ্গলবার ক্যানু স্লালম প্রতিযোগিতায় তিনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রথম হন৷
ছবি: Kirsty Wigglesworth/AP/picture alliance
জার্মানির প্রথম সোনা
টোকিও অলিম্পিক শুরু হয়েছে শুক্রবার৷ এতদিন পর্যন্ত জার্মানি মাত্র তিনটি ব্রোঞ্জ পেয়েছিল৷ মঙ্গলবার জার্মানিকে প্রথম সোনা এনে দেন রিকার্ডা ফুঙ্ক৷ ক্যানু স্লালম প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম হন৷
ছবি: Kirsty Wigglesworth/AP/picture alliance
ফেভারিটকে হারিয়ে
প্রতিযোগিতায় ফেভারিট ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার জেসিকা ফক্স৷ বেশ কয়েকবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেও এবার অলিম্পিকে সোনা পাওয়া হলো না তার৷ ২০১২-তে রূপা পাওয়ার পর ২০১৬-তে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন তিনি৷ এবারও ব্রোঞ্জ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ফক্সকে৷ এবার রুপা জিতেছেন স্পেনের মাইয়ালিন চৌরাউট৷
ছবি: Jan Woitas/dpa/picture alliance
খেলাটি কীরকম?
ছবিতে ক্যানু স্লালম খেলার ময়দান দেখতে পাচ্ছেন৷ ক্যানুতে করে প্রতিযোগীদের ২৫টি গেট পার হতে হয়৷ উপর থেকে পানির উপর দুটি দণ্ড ঝুলিয়ে গেটগুলো তৈরি করা হয়৷ পানিতে উঁচু-নীচু প্রবল ঢেউ তৈরি করা হয়৷ যে প্রতিযোগী কম সময়ে গেটগুলো পার হতে পারেন তিনি জয়ী হন৷
ছবি: Carl Court/Getty Images
ফুঙ্ক যেভাবে জিতলেন
১০৫.৫০ সেকেন্ডে ২৫টি গেট পার হয়ে স্পেনের মাইয়ালিন চৌরাউটের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন জার্মানির ফুঙ্ক৷ এরপর ফেভারিট অস্ট্রেলিয়ার ফক্স পানিতে নামেন৷ শুরুতে চার নম্বর গেট পার হতে গিয়ে তিনি গেট স্পর্শ করায় তাকে দুই সেকেন্ড জরিমানা করা হয়৷ এরপরও তিনি ভালোভাবেই এগিয়ে চলছিলেন৷ কিন্তু শেষ মুহূর্তে ২৪ নম্বর গেট স্পর্শ করায় আবারও তাকে দুই সেকেন্ড জরিমানা করা হয়৷ ফলে ফুঙ্কের চেয়ে ১.২৩ সেকেন্ড পিছিয়ে পড়েন তিনি৷
ছবি: Luis Acosta/AFP/Getty Images
দুটি কষ্টকর ঘটনার পর সাফল্য
২৯ বছর বয়সি রিকার্ডা ফুঙ্ক জার্মানির আরভাইলার এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন৷ মাত্র দুই সপ্তাহে আগে সেখানে বন্যায় প্রায় ১৭০ জন মারা যান৷ এর আগে ২০১৬ সালে ব্রাজিলে অলিম্পিক চলার সময় ফুঙ্কের কোচ স্টেফান হেনৎস গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন৷
ছবি: Ferdinand Merzbach/AFP/Getty Images
সবচেয়ে বড় সাফল্য
এটিই ফুঙ্কের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য৷ এর আগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপা আর ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন তিনি৷ তবে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে তার তিনটি সোনা, দুটি রুপা ও একটি ব্রোঞ্জ রয়েছে৷ সোনা জেতার পর জার্মানির প্রচারমাধ্যম এআরডিকে তিনি বলেন, ‘‘এটা অবিশ্বাস্য৷ এটা আমার স্বপ্ন ছিল এবং এটা এখন বাস্তব হয়েছে৷’’