জার্মানি: বর্ণবাদ ও বঞ্চনার শিকার, মুসলিম, কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয়রা
৯ নভেম্বর ২০২৩
কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয় ও মুসলিমদের জার্মানিতে বর্ণবাদী আচরণ বা বঞ্চনার মুখে পড়তে হয়, জানাচ্ছে সমীক্ষা।
বিজ্ঞাপন
যাদের গায়ের রং কালো বা বাদামি, যে মুসলিম মেয়েরা মাথায় হিজাব পরেন, যারা ভালো করে বা একেবারেই জার্মান বলতে পারেন না, তারা জার্মানিতে হামেশাই অপমানকর দৃষ্টি বা সরাসরি অপমানের মুখে পড়েন।
জার্মান সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড মাইগ্রেশনের(ডেজিম) রিপোর্ট ন্যাশনাল ডিসক্রিমিনেশন অ্যান্ড রেসিজিম মনিটর থেকে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, জার্মানিতে বসবাসকারী ৫৪ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ অন্তত একবার এই আচরণের শিকার হয়েছেন। কৃষ্ণাঙ্গ পাঁচজন নারীর মধ্যে একজন জানিয়েছেন, তারা বছরে একাধিকবার হুমকির মুখে পড়েছেন। ১৪ শতাংশ মুসলিম নারী ও ১৩ শতাংশ এশীয় নারীরও একই অবস্থা হয়েছে।
ডেজিমের ডিরেক্টর জানিয়েছেন, বারবার এই অভিজ্ঞতার প্রভাব স্বাস্থ্যের উপর পড়ছে, রাষ্ট্রীয় সংস্থার উপর থেকে আস্থা কমে যাচ্ছে, গণতন্ত্রের বিপদ বাড়ছে।
ইউরোপে বাড়ছে বর্ণবাদ এবং বিদেশি-বিদ্বেষ
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গত কয়েক বছরে বর্ণবাদী ও বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণের সংখ্যা বাড়ছে৷ ইউরোপের কিছু দেশের এমন ঘটনার তুলনমুলক সংখ্যা থাকল ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/A. Rentz
বর্ণবাদ ও বিদেশি-বিদ্বেষ
কোনো ব্যক্তির জাতি, বর্ণ, গায়ের রং, ভাষা, জাতীয়তা ইত্যাদির কারণে আক্রমণের শিকার হওয়াকে বর্ণবাদ এবং বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষ বলে চিহ্নিত করেছে অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ- ওএসসিই৷
ছবি: DW
ওএসসিই
ওএসসিই বা অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ হলো ইউরোপের একটি বেসরকারি সংস্থা৷ সংস্থাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঘটা বিদ্ধেষমুলক আচরণ বা হেইট ক্রাইমের তথ্য প্রকাশ করে থাকে৷ বর্তমানে মোট ৫৭টি দেশ সংস্থাটির সদস্য৷ সদস্য রাষ্ট্রসমূহে সব ধরনের হেইট ক্রাইম লিপিবদ্ধ করে সংস্থাটি৷
ছবি: DW / Aida Cama
অস্ট্রিয়া
ইউরোপের এই দেশটিতে বর্ণবাদ ও বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে ৷ ২০১৭ সালে এধরনের মোট ২২৭টি ঘটনা চিহ্নিত করা হয়৷ পাঁচ বছর পর ২০২১ সালে এমন ঘটনার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৪২০টি৷
ছবি: benkrut/YAY Images/IMAGO
বেলজিয়াম
ইউরোপের আরেক দেশ বেলজিয়ামেও পরিস্থিতি একই রকম৷ দেশটিতে ২০১৭ সালে মোট ছয়শটি এমন বিদ্বেষমূলক ঘটনা চিহ্নিত করা হয়৷ আর ২০২১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৫৫তে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Rothermel
ফ্রান্স
দেশটিতে ২০১৭ সালে ৮৮২টি বর্ণবাদী ও বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় ওএসসিই৷ আর ২০২১ সালে এই সংখ্যা দুই হাজার ৫৬৷
ছবি: Christophe Archambault/AFP
জার্মানি
ইউরোপের আরেক বড় দেশ জার্মানিতে ২০১৭ সালে এমন মোট ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ৮৬০টি৷ ২০২১ সালে এমন ঘটনার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় নয় হাজার ২৩৬৷ প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতির পরিবর্তনের কারণে এই সংখ্যা বেড়ে থাকতে পারে বলা ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/E. Contini
ইটালি
ইউরোপের সাগরতীরের এই দেশটিতে ২০১৭ সালে মোট ৮২৮টি ঘটনা চিহ্নিত করা হয়৷ আর ২০১৭ সালে এই ঘটনা দাঁড়ায় এক হাজার ১৬০৷
ছবি: Reuters/A. Bianchi
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসে ২০১৭ সালে বর্ণবাদী ও বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষের মোট ৩২৭টি লিপিবদ্ধ করে ওএসসিই৷ চার বছর পর ২০২১ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৫০৷
ছবি: Getty Images/M. Thompson
গ্রিস
ইউরোপের আরেক দেশ গ্রিসে ২০১৭ সালে মোট ১২৮টি বর্ণবাদ ও বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক ঘটনার কথা জানায় ওএসসিই৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে গত চার বছরে এমন বিদ্বেষমূলক আচরণ কমেছে৷ ২০২১ সালে দেশটিতে বর্ণবাদী ও বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক ৬৭টি ঘটনা রেকর্ড করেছে প্রতিষ্ঠানটি৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/N. J. Kokovlis
স্পেন
২০১৭ সালে এই দেশটিতে মোট ৫২৪টি বর্ণবাদ ও বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়৷ ২০২১ সালে ঘটনার সংখ্যা দাঁড়ায় ৬২৯টিতে৷
ছবি: Jordi Boixareu/Zuma/picture alliance
10 ছবি1 | 10
৪১ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ও ৩৯ শতাংশ মুসলিম পুরুষ পুলিশের কাছ থেকে বর্ণবাদী বঞ্চনা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এমনকী স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও তারা বঞ্চনার শিকার হন। তাদের চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে অসুবিধা হয়। তাদের সমস্যাকে উপযুক্ত গুরুত্ব দেয়া হয় না। কৃষ্ণাঙ্গ, মুসলিম ও এশীয়রা জানিয়েছেন, তাদের চিকিৎসায় দেরি করা হয় বা এড়িয়ে যাওয়া হয় অথবা তাদের ঘন ঘন চিকিৎসক বদল করে দেয়া হয়।
ডেজিমের সহ-ডিরেক্টর ফ্র্যাংক ক্য়াল্টার জানিয়েছেন, ''এই আচরণ ও বঞ্চনার মুখে পড়ে অনেকেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। অনেকের অ্যংজাইটি ডিসঅর্ডার হয়।''
রাজনীতিকদের কাছে তিনি বলেছেন, এই সব মানুষকে সাহায্য করা দরকার এবং একটি গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা উচিত। চিকিৎসার ক্ষেত্রে গায়ের রং বা পদবি কখনো বিচার্য হতে পারে না। চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসাকর্মীদের জন্য বর্ণবাদ-বিরোধী প্রশিক্ষণ খুবই জরুরি। সরকারি অন্য কর্মীদেরও এই প্রশিক্ষণ জরুরি বলে তিনি জানিয়েছেন।
শ্বেতাঙ্গ নারীদের অভিযোগ
শ্বেতাঙ্গ নারীরাও বঞ্চনার অভিযোগ করেছেন। তারা যৌন নিগ্রহের কথা বলেছেন।
পরিবার বিষয়ক মন্ত্রী লিসা পস ডিডব্লিউকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ''বঞ্চনা ও বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট করে ব্যবস্থা নিতে গেলে আরো নিয়মিত ও বিজ্ঞানসম্মত তথ্য দরকার।''