জার্মানিতে বসবাসরত অনেক বিদেশীই নাগরিকত্ব গ্রহণে তেমন উৎসাহী নন
৫ মে ২০০৯জার্মান নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা অভিবাসীদের সংখ্যা ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে৷ ২০০০ সালে এই সংখ্যা ১ লক্ষ ৮৭ হাজার হলেও, ২০০৭ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ১৩ হাজারে৷ অর্থাৎ, জার্মান নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে৷ আর ২০০৮ সালের সরকারী হিসেব না পাওয়া গেলেও, সে সংখ্যা আরো প্রায় ১৮ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন বাম দল লিংকসপার্টাই-এর সাংসদ সেভিম ডাগডেলেন৷
তিনি জানান : এটা সত্যিই সামঞ্জস্যহীন৷ জার্মান সরকার বারবার এ দেশকে ইন্টিগ্রেশনের দেশ বলে উল্লেখ করে থাকে৷ বলে অভিবাসীদের স্বাগত জানানোর, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার এক সংস্কৃতির কথা৷ কিন্তু বেশিরভাগ অভিবাসীই আর জার্মান নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করছেনা৷ তাদের আশংকা, বাধাবিঘ্নগুলি এতো বেশি যে শেষ পর্যন্ত তাদের আবেদনপত্র খারিজ হয়ে যাবে৷
এই আশংকার অবশ্য কারণও রয়েছে৷ ২০০৭ সাল থেকে নাগরিকত্ব পেতে ইচ্ছুক এমন অভিবাসী মানুষদের জন্য অতিরিক্ত কিছু বিধিনিয়ম চালু হয়েছে৷ এই নতুন বিধির আওতায় ২৩ বছরের কম বয়সী যারা তাদেরকেও আয়ের পূর্ণ বিবরণ দাখিল করতে হবে৷ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রত্যেক আবেদনকারীকে ৩৩-টি প্রশ্ন সম্বলিত এক পরীক্ষার মাধ্যমে জার্মান নাগরিক হওয়ার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে৷ সরকারের দাবি, এ পরীক্ষায় প্রায় কেউই অকৃতকার্য হচ্ছেনা৷ সমালোচকরা অবশ্য সে-কথা মানতে রাজি নয়৷ তারা বলছে, পরীক্ষার ভয়ে লেখাপড়ায় তেমন একটা ভালো নয়, এমন বহু অভিবাসী নাগরিকত্বের আবেদনপত্রই সংগ্রহ করছেনা৷
এ বিষয়ে নগররাজ্য বার্লিনের বিদেশী বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গ্যুনটার পিনিং বললেন : এরা হল সেই সব মানুষ যাদের আমরা সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসতে চাই৷ সুশিক্ষিত অভিবাসীরা নিজেরাই সচেতনতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়৷ সমস্যা তাদের নিয়ে নয়৷ আমরা তাদেরই চাই যারা এতদিন নিজেদের বিচ্ছিন্ন রেখেছে এবং এখন এই সমাজে সম্পৃক্ত হবার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে চায়৷ কিন্তু তারা এই পরীক্ষার ব্যাপারগুলি নিয়ে ভয় পাচ্ছে৷
শুধু তাই নয়, যেসব বিদেশী কম সময়ের জন্য জার্মানিতে বসবাস করতে আসছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও জার্মান ভাষা শিক্ষা ও জার্মানির সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করার বিষয়টিকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ উপার্জনের বিষয়টিও পাচ্ছে সমান গুরুত্ব৷ ভাষা নিঃসন্দেহে যোগাযোগের চাবিকাঠি৷ তাই, জার্মান সরকারের বিদেশী বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারিয়া ব্যোমার নাগরিকত্ব অর্জনের সংখ্যা কমে যাওয়া সত্ত্বেও, এখনকার বাধাগুলি আবার তুলে দিতে চাননা৷
ব্যোমার বলেন : সম্প্রতি হামবুর্গে এক আলোচনা সভায় যোগ দেওয়ার সময় একজন অভিবাসী আমাকে জানান, ৩০ বছরেরও বেশি সময় তিনি জার্মানিতে বসবাস করছেন৷ তিনি নিজেকে হামবুর্গেরই মানুষ বলে মনে করেন৷ তাঁর মতে জার্মান ভাষাটা যথেষ্ট জানা না থাকলে এদেশে বিচ্ছিন্ন এক অতিথি হয়েই থাকতে হবে৷
প্রসঙ্গত, ইউরোপে অভিবাসী বা বহিরাগতদের ভূমিকা সম্পর্কে এই মুহূর্তে নানা রকম আলোচনা চলছে৷ একদিকে অভিবাসীদের প্রয়োজনীয়তা, তাদের প্রবেশের বৈধ বা অবৈধ পথ বা কাঠামো সম্পর্কে যেমন প্রশ্ন উঠছে, তেমনই অন্যদিকে যে সব বিদেশী বহু বছর ধরে ইউরোপে বসবাস করছেন, সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত করার বিষয়টিও বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে বর্তমানে৷ তাছাড়া, জার্মানিতে বসবাসরত বিদেশীদের সংখ্যাও কম নয়৷ তাঁদের একটা বড় অংশের এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস বা কাজ করার অধিকারও রয়েছে৷ রয়েছে জার্মান নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগ৷ তাই এবার জার্মান ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞানের যথাযোগ্য প্রমাণ দিতে পারলেই তাঁদের সামনে খুলে যাবে নতুন নতুন সুযোগ৷
প্রতিবেদক: দেবারতি গুহ, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক