1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে বাংলাদেশি সবজির সফল খামার

৬ নভেম্বর ২০২০

জার্মানদের বাংলাদেশের শাক-সবজির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে বেশ বড়সড় এক খামার গড়েছেন এক প্রবাসী বাংলাদেশি৷

ছবি: Arafatul Islam/DW

জার্মানির অফেনবাখ শহরে মাইন নদীর তীরে অবস্থিত এই খামারে কচু, লাউ, কুমড়া, মরিচ, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গাসহ অনেকরকম শাক-সবজি পাওয়া যায়৷ তবে, খামারটিতে চাষ করতে হয় একটু ভিন্নভাবে, পরিবেশবান্ধব উপায়ে৷

জার্মানির অফেনবাখ শহরের এক কোণায় গড়ে উঠেছে একটি সবুজ খামার৷ মাইন নদীর তীরে অবস্থিত এই খামারে বাংলাদেশের শাক-সবজি চাষ করছেন একদল প্রবাসী বাংলাদেশি৷ খামারটি কয়েক হাজার বর্গমিটার এলাকায় বিস্তৃত৷

বাংলাদেশের শরিয়তপুরের বাসিন্দা শাহজাহান ভূঁইয়া জার্মানিতে পাড়ি জমান ১৯৯১ সালে৷ তিনি একজন শখের খামারি৷ নিজের দেশে যেসব শাক-সবজি পাওয়া যায়, তার প্রায় সবই এখানে ফলান তিনি৷ ভূঁইয়া বলেন, ‘‘২০১৩ সালে আমি এই খামার শুরু করি৷ আমাদের কাছে সব ধরনের বাংলাদেশি শাক-সবজি পাওয়া যায়৷ আমার খামারে ১৯ জাতের কাঁচামরিচ আছে, বোম্বাই মরিচ আছে, বেগুন আছে, লাউ আছে, আছে ধুন্দল, বরবটি, লালশাক - এক কথায় বাংলাদেশে যেসব শাক-সবজি পাওয়া যায়, তার সবই আমার এখানে আছে৷’’

জার্মানিতে কচু, লাউ ফলাচ্ছেন শাহজাহান

06:20

This browser does not support the video element.

মূলত শিল্পাঞ্চলের মধ্যে অফেনবাখের এই খামারটি গড়ে উঠেছে, নাম হাফেনগার্টেন৷ স্থানীয় বাংলাদেশিরা শহর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখানে জমি ইজারা নিয়েছেন৷ শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে এখানে খামার গড়ার অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ এতে করে শহরটিকে আরো পরিচ্ছন্ন এবং সবুজ মনে হবে বলে আশা তাদের৷ তবে, এখানকার মাটিতে সরাসরি চাষাবাদ করা যায় না৷

শাহজাহান ভূঁইয়া এই বিষয়ে বলেন, ‘‘অফেনবাখ্ শহর কর্তৃপক্ষ আমাদের যখন জমি করার জন্য জায়গা দেয়, তখন বলে যে, এখানে সরাসরি এখানকার মাটিতে চাষাবাদ করা যাবে না৷ কেননা, এটা শিল্পাঞ্চল ছিল, ফলে মাটি বিষাক্ত হতে পারে৷ তাই তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা অন্য স্থান থেকে মাটি এনে টবে করে এখানে চাষাবাদ করি৷ আগে বেশিরভাগই টবে লাগাতাম৷ কিন্তু খেয়াল করলাম, কম মাটিতে গাছ ভালোভাবে বাড়ে না৷ এ কারণে এখন বড় টবের পাশাপাশি কাঠ দিয়ে বড় বেডের মতো করে সেখানে গাছ লাগাচ্ছি৷ কারণ, মাটি বেশি হলে ফলনও ভালো হয়৷’’  

শীতপ্রধান দেশ জার্মানিতে সারা বছর চাষাবাদ করা ভূঁইয়ার পক্ষে সম্ভব হয় না৷ তাই এই খামারে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস অবধি চাষাবাদ করেন৷ আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বেশ দ্রুতই বিভিন্ন শাক-সবজি ফলানো সম্ভব হয়৷ এজন্য বিভিন্ন রকম মাচাও তৈরি করেছেন তিনি, যেখানে উদ্ভিদগুলো সহজে  বাড়তে পারে৷ আর শাক-সবজির বীজ অনেকক্ষেত্রে তিনি এই খামার থেকেই সংগ্রহ করেন৷

‘মেড ইন বাংলাদেশ’

24:08

This browser does not support the video element.

অফেনবাখের এই খামারে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব উপায়ে চাষাবাদ করেন ভূঁইয়া৷ কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করেন না তিনি৷ কেননা, এখানে উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকারক কোনো কীটপতঙ্গ নেই৷ আর জমিতে যে সার ব্যবহার করা হয়, তা-ও তৈরি করা হয় জৈব উপায়ে৷ ভূঁইয়া বলেন, ‘‘এই গামলায় আমি নিজেই সার তৈরি করি৷ এখানে বিভিন্ন গাছের পাতা, লাউয়ের ছোলা, শাক-সবজির যত রকম উচ্ছিষ্ট আছে, সব পানির মধ্যে ভিজিয়ে রাখি৷ এভাবে পনেরো দিন ঢেকে রাখলেই তা সারে পরিণত হয়৷ এটা জৈব সার এবং উদ্ভিদ ও পরিবেশের জন্য উপকারী৷’’

ভূঁইয়ার এই খামারে যে-কেউ প্রবেশ করতে পারেন৷ এজন্য আলাদাভাবে অনুমতি নিতে হয় না৷ তবে, কোনো সবজি কেউ নিতে চাইলে তার অনুমতি প্রয়োজন হয়৷ এই প্রবাসী বাংলাদেশি চান জার্মানরা তার দেশের শাক-সবজির সঙ্গে পরিচিত হোক, তার দেশ বাংলাদেশ সম্পর্কে জানুক৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার বাগানে মাসে দু-একবার দেশি শাক-সবজি রান্না করে জার্মানদের দাওয়াত দেই৷ আমি এভাবে আমাদের সবজি সম্পর্কে ওদের ধারণা দেই, পরিচিত করি৷ আর বাংলাদেশিরা তো এখান থেকে শাক-সবজি নেয়ই৷ বিকেলে অনেকেই এখানে ঘুরতে, দেখতে আসেন৷’’

জার্মানির বিভিন্ন শহরে ‘অ্যালটমেন্ট’ ব্যবস্থার মাধ্যমে ছোট ছোট বাগানের সাময়িক মালিক হওয়া যায়৷ ইউরোপের কেন্দ্রের এই দেশটিতে বসবাসরত অনেকের মধ্যে বাগান করার এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে৷ তবে, চাহিদা অনুযায়ী জায়গার জোগান না থাকায় অনেককে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়৷

স্ত্রী ফাহিমা ভূঁইয়াকে সঙ্গে নিয়ে শাকসবজি চাষ করতে বেশ বড় একটি জায়গা পেয়েছেন শাহজাহান ভূঁইয়া৷ বাংলাদেশের শাক-সবজির এরকম বড় খামার জার্মানিতে সচরাচর দেখা যায় না৷

ভবিষ্যতে খামারের পরিধি আরো বড় করতে চান ভূঁইয়া দম্পতি৷ তবে, সেজন্য আরো জমি প্রয়োজন, যা শীঘ্রই পাওয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত নন তারা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ