তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানকে একটি ব্যঙ্গাত্মক কবিতার মাধ্যমে অবমাননার মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন জার্মান সঞ্চালক ইয়ান ব্যোমারমান৷ বাদী পক্ষের আইনজীবীরা এজন্য জার্মানদের প্রশংসায় ভাসছেন৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার জার্মানির সরকারি জেডডিএফ টেলিভিশনের মহাসচিব টোমাস বেলুট জানিয়েছেন, ‘‘ব্যোমারমানের বিরুদ্ধে ‘এক রাষ্ট্রপ্রধানকে অবমাননার' অভিযোগ খারিজ করেছেন মাইনৎসের আইনজীবীরা৷ এটা প্রমাণ করে জার্মানির শিল্পীদের স্বাধীনতা৷ জার্মান শিল্পীদের জন্য এটা ভালো একটা খবর৷'' ব্যোমারমানের আইনজীবী ডানিয়েল ক্রাউসে বলেছেন, ‘‘আইনজীবীদের ওপর ভীষণ রাজনৈতিক চাপ ছিল৷ তারপরও তারা যে রায় দিয়েছেন তা আসলেই প্রশংসার যোগ্য৷''
ব্যোমারমান টুইটারে জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন, কেননা হামবুর্গের একটি আদালতে ঐ কবিতার ওপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটি মামলা এখনো চলছে৷ এর্দোয়ান ঐ কবিতার নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলাটি করেছিলেন৷
বাকস্বাধীনতা যেখানে যেমন
আপনার দেশে বাকস্বাধীনতা পরিস্থিতি কেমন? ডয়চে ভেলের দুই সাংবাদিক এই প্রশ্ন করেছিলেন সদ্য সমাপ্ত গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে আগত বিভিন্ন দেশের ব্লগার, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্টদের৷
ছবি: DW/A. S. Brändlin
শাম্মী হক, অ্যাক্টিভিস্ট, বাংলাদেশ
‘‘বাংলাদেশের মানুষ তাদের মনের কথা বলতে পারেন না৷ সেখানে কোনো বাকস্বাধীনতা নেই এবং প্রতিদিন পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে৷ একজন সামাজিক অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার হিসেবে আমি ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করি, যা ইসলামিস্টরা পছন্দ করেনা৷ তারা ইতোমধ্যে ছয় ব্লগারকে হত্যা করেছে৷ ফলে আমি দেশ ছাড়তে বাধ্য হই৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ভেনেজুয়েলা
‘‘বাকস্বাধীনতা হচ্ছে এমন এক ধারণা যার অস্তিত্ব আমার দেশে নেই৷ সাংবাদিকরা জরিমানা আর নিজের জীবনের উপর ঝুঁকি এড়াতে সরকারের সমালোচনা করতে চায়না৷ সরকারের সমালোচনা করলে সাংবাদিকদের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়৷ এরকম পরিস্থিতির কারণে অনেক সাংবাদিক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন৷ দেশটির আশি শতাংশ গণমাধ্যমের মালিক সরকার, তাই সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
রোমান দবরোখটভ এবং একাতেরিনা কুজনেটসোভা, সাংবাদিক, রাশিয়া
রোমান: ‘‘রাশিয়ায় সরকার আপনাকে সেন্সর করবে৷ আমাদের ওয়েবসাইটটি ছোট এবং লাটভিয়ায় নিবন্ধিত৷ ফলে আমি সেন্সরশিপ এড়াতে পারছি৷ তা সত্ত্বেও সরকার মাঝে মাঝে আমাদের সার্ভারে হামলা চালায়৷’’ একাতেরিনা: ‘‘রাশিয়ায় বাকস্বাধীনতার কোনো অস্তিত্ব নেই৷ ইউরোপের মানুষ রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে স্বাধীন৷ আমি আশা করছি, রাশিয়ার পরিস্থিতিও বদলে যাবে৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সিরিয়া
‘‘বেশ কয়েক বছর ধরেই সিরিয়ায় বাকস্বাধীনতার কোনো অস্তিত্ব নেই৷ এমনকি আসাদের শাসনামল সম্পর্কে অনুমতি ছাড়া মতামতও প্রকাশ করা যায়না৷ এটা নিষিদ্ধ৷ কেউ যদি সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাহলে খুন হতে পারে৷ আমি যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনামূলক কিছু লিখি, তাহলে বেশিদিন বাঁচতে পারবো না৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
আয়েশা হাসান, সাংবাদিক, পাকিস্তান
‘‘পাকিস্তানে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা’ শব্দ দু’টি খুবই বিপজ্জনক৷ এগুলোর ব্যবহার আপনার ক্যারিয়ার বা জীবন শেষ করে দিতে পারে৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
রাবা বেন দউখান, রেডিও সাংবাদিক, টিউনিশিয়া
‘‘আমাদের অভ্যুত্থানের একমাত্র ফল হচ্ছে বাকস্বাধীনতা৷ আমরা এখন আমাদের সরকারের সমালোচনা করার ব্যাপারে স্বাধীন৷ এবং আমি যখন আমাদের অঞ্চলের অন্য দেশের বাসিন্দাদের বাকস্বাধীনতার কথা জিজ্ঞাসা করি, তখন একটা বড় ব্যবধান দেখতে পাই৷ আমাদের দেশে দুর্নীতিসহ নানা সমস্যা আছে সত্যি, তবে বাকস্বাধীনতা কোনো সমস্যা নয়৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
খুসাল আসেফি, রেডিও ম্যানেজার, আফগানিস্তান
‘‘বাকস্বাধীনতা আফগানিস্তানে একটি ‘সফট গান৷’ এটা হচ্ছে মানুষের মতামত, যা সম্পর্কে সরকার ভীত৷ এটা চ্যালেঞ্জিং হলেও আমাদের প্রতিবেশীদের তুলনায় আমাদের অবস্থা ভালো৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
সেলিম সেলিম, সাংবাদিক, ফিলিস্তিন
‘‘ফিলিস্তিনে সাংবাদিকদের খুব বেশি স্বাধীনতা নেই৷ একটা বড় সমস্যা হচ্ছে, সাংবাদিকরা মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করতে পারে না৷ ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করছে৷ তারা যদি ফেসবুকে তাদের মতামত জানায়, তাহলেও সরকার গ্রেপ্তার করে৷ তবে সিরিয়া বা ইরাকের চেয়ে অবস্থা ভালো৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
অনন্য আজাদ, লেখক, বাংলাদেশ
‘‘আমাদের দেশে কোনো বাকস্বাধীনতা নেই৷ আপনি ইসলাম বা সরকারের সমালোচনা করে কিছু বলতে পারবেন না৷ ইসলামী মৌলবাদীরা ঘোষণা দিয়েছে, কেউ যদি ইসলামের সমালোচনা করে, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে৷ আমি একজন সাংবাদিক এবং গত বছর আমাকে ইসলামিস্ট জঙ্গিরা হত্যার হুমকি দিয়েছে৷ ফলে আমাকে দেশ থেকে পালাতে হয়েছে৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
9 ছবি1 | 9
গত ৩১শে মার্চ সরকারি জেডডিএফ টেলিভিশনের লেট-নাইট ‘‘নিও ম্যাগাজিন রয়াল'' অনুষ্ঠানে ছড়াটি পাঠ করেন ইয়ান ব্যোমারমান৷ দৃশ্যত লক্ষ্য ছিল, এর্দোয়ানের আমলে তুরস্কে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যেভাবে চাপের মুখে পড়েছে, সেই বিষয়টি নিয়ে ব্যঙ্গ করা৷ কিন্তু যে কারণেই হোক, ছড়ায় এর্দোয়ানের যৌন পছন্দ-অপছন্দকে পাশবিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা সে ছাগলদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কেই হোক আর ভেড়াদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কেই হোক৷
এই কবিতা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে জেডডিএফ তাদের অনলাইন থেকে কবিতাটি সরিয়ে ফেলে৷ কিন্তু তার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ভাইরাল হয়ে যায়৷ এপ্রিলে এর্দোয়ান ব্যক্তি হিসেবে একজন জার্মান উকিলের মাধ্যমে জার্মানির মাইনৎস শহরের আদালতে একটি মামলা দাখিল করেন৷ জার্মানির আইনের ১০৩ ধারায় মামলাটি করেন তিনি, যেখানে কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের অবমাননাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে৷ সেসময় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছিলেন তিনি জার্মানিতে শিল্পীর স্বাধীনতাকে খুবই গুরুত্ব দেন৷
জার্মানির বিচার মন্ত্রণালয়ের কাছে এ রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তারা কথা বলতে অস্বীকার করেন৷ জার্মানির সাংবাদিক ইউনিয়নও জানিয়েছে, এ রায়ের মাধ্যমে জার্মানিতে বাক স্বাধীনতার প্রতি সম্মানই প্রতিফলিত হয়েছে৷ এদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী নুমান কুরতুলমুস জানিয়েছেন, কবিতাটি একেবারেই অশ্লীল এবং এটা কেবল প্রেসিডেন্টের একার অপমান নয়, ৭ কোটি ৮০ লাখ তুর্কির অপমান৷