গ্রামবাংলায় মাটির বাড়ির উপর খড়ের চাল দেখতে খুব সুন্দর লাগে৷ কিন্তু বিশাল খামারবাড়ির উপর প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে চাল তৈরি করা সহজ কাজ নয়৷ জার্মানির উত্তরে এক মিস্ত্রী এই কাজে বেশ ভালোই হাত পাকিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির উত্তরে সর্বত্র রিড বা খাগড়া গজায়৷ স্টেফান সিবিঙার সেগুলি খুবই পছন্দ করেন৷ তরুণ বয়সেই বাভেরিয়ার এই মানুষটি উত্তরে ফ্লেন্সবুর্গ শহরের কাছে বাসা বাঁধেন৷ আজ তিনি স্বাবলম্বী৷ ছাদে খাগড়ার চাল বসান তিনি৷ একেবারে স্বপ্নের পেশা৷ এই মুহূর্তে তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে প্রায় ২০০ বছর পুরানো একটি খামারবাড়ির ছাদ লাগাচ্ছেন৷ সরকারি ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা এই বাড়িটিকে হুবহু মূল রূপে ফিরিয়ে আনতে হবে৷ ছাদও খাগড়ার হতে হবে৷ প্রায় ১০০ বর্গমিটার ছাদের জন্য ১,০০০ আঁটি খাগড়ার প্রয়োজন৷ কঠিন পরিশ্রমের কাজ৷ নিপুণ হাতে কাজ করতে হয়৷ স্টেফান বলেন, ‘‘প্রতি বর্গ মিটারের জন্য ১১ আঁটির হিসাব করি৷ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণ রাখা হয়৷ নীচে নেমে আনার চেয়ে হাতের কাছে থাকা ভালো৷''
সবার আগে খাগড়া ছাদের উপর সমান ভাবে ভাগ করা হয়৷ চোখের আন্দাজেই সব কাজ হয়৷ বাতাসের ধাক্কা সামলাতে খাগড়া তার দিয়ে বাঁধা থাকে এবং ছাদের কাঠের গুঁড়িতে ভালো করে বসানো থাকে৷ ধারালো অংশ থাকা সত্ত্বেও মিস্ত্রীরা গ্লাভস ছাড়াই কাজ করেন৷ স্টেফান বলেন, ‘‘এভাবে হাত দিয়ে কাজ করতে হলে গ্লাভস থাকলে চলে না৷ অথবা পরলেও দু'ঘণ্টা পর পর সেগুলি নষ্ট হয়ে যায়৷ সব ক'টি আঙুল অক্ষত রয়েছে বটে, তবে প্রতিদিনই আঘাত লেগে কিছু রক্তপাত ঘটে৷''
একমাত্র এভাবেই অরগ্যানিক আকার তৈরি হয়৷ খামারবাড়ির ছাদ তৈরি করতে প্রায় ২০,০০০ ইউরো খরচ হয়েছে৷ মালিকের জন্য টাকার অঙ্কটা বেশ বড়৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি পিছিয়ে আসেননি৷ সেইসঙ্গে ঝুঁকিগুলি সম্পর্কেও তিনি সচেতন৷ খাগড়ার চালে আগুন লাগার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ খামারবাড়ির মালিক ভালট্রুড লুকখুস বলেন, ‘‘আমি জানি, বেশি খরচ হলো৷ শুধু অগ্নিবিমার মাশুলই বছরে দেড় হাজার ইউরো৷ কিন্তু এখানে আবহাওয়া গ্রীষ্মে শীতল ও শীতে উষ্ণ থাকে৷ বাড়ির একটা চরিত্র রয়েছে, তা বদলানো যায় না৷ এমনকি ইটও খাপ খায় না৷ বাড়িতা যেন জীবন্ত, পরিবেশের সঙ্গে খাপ খেয়ে যায়৷''
খাগড়ার চাল তৈরির কাজের জন্য কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই৷ কয়েকজন চালের মিস্ত্রি এই উপকরণের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছেন৷ ইট ব্যবহার করলে তিন দিনে কাজ হয়ে যেত৷ খাগড়া দিয়ে চাল ঢাকতে ২ সপ্তাহ সময় লেগেছে৷ কারণ হাত দিয়েই নিখুঁতভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে সব কিছু ভালো করে নিরাপদভাবে ফিট করতে হয়৷ স্টেফান সিবিঙারের কাছে এটা অভিজ্ঞতার প্রশ্ন৷ সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা বা মাপজোকের বালাই নেই৷ প্রত্যেকটি বাড়ির চালই অনন্য হয়৷ স্টেফান সিবিঙার বলেন, ‘‘আমার পেশাটা অনেকটা নাপিতের মতো৷ কারণ তাকেও তো চিরুনি চালাতে হয়৷''
মালিকের মনে হয় নতুন বাড়ির ‘চুলের ছাঁট' বেশ পছন্দ হয়েছে৷
ছোট্ট একটা ভালো বাসা
বড় চিন্তা থেকে ছোট ছোট বাড়ি - পরিবেশ সচেতন ইউরোপীয়রা এই ভাবনা নিয়েই সাজিয়ে তুলছেন চারপাশ৷ পরিবেশবান্ধব বাসা তৈরি করতে গিয়ে তাঁরা এমন সব ভাবনা কাজে লাগাচ্ছেন, না দেখলে বিশ্বাসই হবেনা৷ দেখুন সেরকম কয়েকটি বাড়ি৷
ছবি: Colourbox
হবিট হাউজ
‘হবিট’ নাম শুনলেই মনে পড়ে জে. আর. আর. টলকিনের অনন্য সৃষ্টি ‘দ্য হবিট’-এর কথা৷ ছবির এই বাড়িটিও যেন রূপকথার রাজ্য থেকেই নেমে এসেছে৷ পাহাড়ে গর্ত খুঁড়ে জায়গা তৈরি, সেই জায়গায় পাশের বন থেকে খড়কুটো, গাছের ডাল ইত্যাদি জোগাড় করে গড়ে তোলা হয়েছে দারুণ এক শান্তির নীড়৷ বাড়ির মেঝে বা দেয়ালেও ইট-শুড়কির চিহ্নমাত্র নেই, সবই খাঁটি মাটির তৈরি৷
ছবি: cc-by-nc-sa/Simon & Jasmine Dale
নৌকাঘর
জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দের ছন্দ অনেকের চোখেই ঘুম নিয়ে আসে৷ সেই শব্দের কাছে থাকতে চাইলে নদীতেই ঘর বানাতে পারেন৷ এমন ঘর অনেক আছে ইউরোপে৷ ছোট ছোট ঘরগুলো যেন নদীর জলে নৌকার মতো ভাসছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/JOKER
সার্কাস গাড়ি
দালান কোঠা বানানোয় ঝামেলা অনেক, খরচও প্রচুর৷ কার্বন নিঃসরণ কমানোয় ভূমিকা রাখতে আগ্রহীরা তাই নানা উপায়ে সেই ঝামেলা এড়িয়ে কম খরচেই বানাচ্ছেন বাড়ি৷ সার্কাসের দল যে ধরণের ওয়াগন নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতো, আজকাল সেইগুলোতেও গড়া হচ্ছে বাড়ি৷ পূর্ণাঙ্গ বাড়ির সব সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এসব বাড়ি যখন যেখানে খুশি নিয়েও যাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অন্যরকম গ্রাম
বার্লিনে তখন পর্যটক এবং ছাত্ররা সবে দলে দলে আসতে শুরু করেছে৷ সেই তুলনায় বাড়ি-ঘর বেশ কম৷ স্থানীয় এক আবাসন বিশেষজ্ঞের মাথায় কম খরচে অভিনব বাড়ি বানানোর একটা বুদ্ধি এলো৷ পুরোনো কন্টেইনার জড়ো করলেন সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা একটা জায়গায়৷ কয়েকদিনের মধ্যেই সেই কন্টেইনারগুলোই হয়ে গেল আলাদা আলাদা বাড়ি৷ সব বাড়ি মিলিয়ে গড়ে উঠল অন্যরকম এক গ্রাম৷ অভিনব এই গ্রামের সব অধিবাসীই শিক্ষার্থী৷
ছবি: Jorg Duske
বাক্সবাড়ি
বাক্স না বলে, এগুলোকে জাহাজের কন্টেইনারের মতো বলাই বোধহয় ভালো৷ পার্থক্য হলো, জাহাজের কন্টেইনার আড়াআড়ি হলেও এই ধরণের বাক্সবাড়ি দাঁড়ায় খাড়াখাড়ি৷ সব মিলিয়ে তিন তলা৷ ছোট ছোট তিনটি কামরায় কম চাহিদার আধুনিক জীবনের জন্য দরকারি সবকিছুই আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গাছবাড়ি
ইউরোপের বনে বনে ছড়িয়ে পড়ছে এ ধরণের বাড়ি৷ অনেকটাই ধাতব পদার্থের তৈরি হলেও ‘পরিবেশবান্ধব ছোট ঘর’এর ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়েই তৈরি এসব বাড়ি৷ প্রকৃতির বুকে থাকার লোভনীয় অভিজ্ঞতার আকর্ষণে আজকাল এমন বাড়ি তৈরির দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই৷
ছবি: Andreas Wenning
অপরূপ কাচঘর
এক জার্মান ডিজাইনারের অপরূপ সৃষ্টি এটি৷ ঘরের ছাদ, সাগর তীর, খেলার মাঠ- মোট কথা যেখানেই একটু ফাঁকা জায়গা, সেখানেই এই বাড়ি বসিয়ে শুরু করতে পারেন বসবাস৷ চারপাশ কাচের বলে সারাদিন আলোকিত থাকে এই ঘর৷ ‘লফটকিউব’ দেখতেও দারুণ, তাইনা?
ছবি: picture-alliance/dpa
বাগানবাড়ি
জার্মানির প্রায় সব শহরেই দেখা যায় এ ধরণের বাড়ি৷ এটাও পরিবেশবান্ধব৷ ছোট্ট একটু জায়গার ওপর এই বাড়ি তৈরির সময় আশপাশে বাগান করার জায়গাও রাখা হয়৷ সেখানে কেউ ফুলের বাগান করেন, কেউ বা সযত্নে করেন শাকসবজির ক্ষেত৷