জার্মানিতে বাসস্থান সংকটে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা
২৩ অক্টোবর ২০২৩সমস্যার সমাধানে গ্যোটিঙ্গেন শহরের ছাত্র সংগঠন একটি হোটেল ভাড়া করেছে যেখানে শিক্ষার্থীরা হ্রাসকৃত মূল্যে থাকতে পারছেন৷ তবে শিক্ষার্থীরা সেখানে শুরুর কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারেন৷ মিউনিখে, যেখানে শিক্ষার্থীদের মাসে গড়ে ৭২০ ইউরো (প্রায় ৮৪ হাজার টাকা) বাসা ভাড়া দিতে হয়, সেখানে একটি ক্যাম্পিং সংগঠন শিক্ষার্থীদের কমমূল্যে ক্যাম্প করার সুযোগ দিচ্ছে৷
এ বছরের শুরুতে এডুয়ার্ড পেস্টেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা জানায়, জার্মানিতে সাত লাখের বেশি অ্যাপার্টমেন্টের অভাব আছে, বিশেষ করে সাশ্রয়ী অ্যাপার্টমেন্টের৷ এছাড়া বাসা ভাড়া নাটকীয়ভাবে বাড়ছে, বিশেষ করে বড় বিশ্ববিদ্যালয় আছে এমন শহরগুলোতে৷
জার্মানির ছাত্র সংগঠন ডিএসডাব্লিউ এর প্রধান মাটিয়াস আনবুল এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বড় শহরগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী বাসস্থানের অভাব ‘শোচনীয় অবস্থায়' পৌঁছেছে৷
জার্মানিতে শিক্ষার্থীদের জন্য ডিএসডাব্লিউর প্রায় ১,৭০০ ছাত্রাবাস আছে৷ এগুলোতে এক লাখ ৯৬ হাজার জনের থাকার সুবিধা আছে৷ থাকার সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন ৩২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী৷
সোফায় ঘুমানো ও দীর্ঘ পথ পাড়ি
বার্লিনের ফ্রি ইউনিভার্সিটির নতুন শিক্ষার্থী মার্লিন এখনও থাকার জায়গা পাননি৷ তাই তিনি বার্লিনের কাছে তার মা-বাবার বাড়িতে কিছুদিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে থাকা তার খালার বাড়িতে কিছুদিন করে থাকছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি মাসে ৫০০ ইউরো (সাড়ে ৫৮ হাজার টাকা) ভাড়া দিতে পারবো, কিন্তু বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, বাড়িওয়ালার কাছ থেকে কোনো উত্তরই পাই না৷''
২১ বছর বয়সি আরেক শিক্ষার্থী টালিনা জানান, বাসা ছাড়তে গত আগস্ট মাসে তাকে মাত্র এক মাসের সময় দেওয়া হয়েছিল৷ তার ক্লাসমেট এলি এখন সাবলেট থাকছেন৷ কিন্তু এ বছরের মধ্যেই তাকে অন্য জায়গা খুঁজতে হবে৷ বিষয়টি সহজ হবে না, কারণ বার্লিনে একটি শেয়ারড অ্যাপার্টমেন্টের ঘর ভাড়া এখন প্রায় ৬৫০ ইউরো (প্রায় ৭৬ হাজার টাকা)৷ গত এক দশকে এই ভাড়া প্রায় দ্বিগুন হয়েছে৷ গতবছরও এই ভাড়া প্রায় ১০০ ইউরো কম ছিল, বলে মোসেস মেন্ডেলসজোন ইনস্টিটিউট ও ফ্ল্যাটশেয়ার প্ল্যাটফর্ম wg-gesucht.de এর গবেষণায় দেখা গেছে৷
জার্মানির কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী ঋণ ও সহায়তা স্কিমের (বিএএফও্যজি) আওতায় বর্তমানে বাসস্থান বাবদ ৩৬০ ইউরো দেয়া হচ্ছে৷
বার্লিনের ছাত্র সংগঠনের মুখপাত্র ইয়ানা ইয়ুডিশ ডয়চে ভেলেকে বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্রাবাসে আসন পাওয়ার আবেদন দিন দিন বাড়ছে৷ এই সংগঠন প্রায় নয় হাজার শিক্ষার্থীর থাকার ব্যবস্থা করতে পারে৷ অপেক্ষমাণ তালিকায় আছে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী৷ থাকার জায়গা পেতে তিন সেমিস্টার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷ ইয়ুডিশ বলেন, ‘‘অনেক শিক্ষার্থী থাকার জন্য শহরের অনেক বাইরে চলে যাচ্ছেন৷ তারা দীর্ঘ সময় যাতায়াতের বিষয়টি মেনে নিচ্ছেন৷''
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর বিপদে
ফ্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স অন দ্য জেনারেল স্টুডেন্ট কমিটি' বা এএসটিএর প্রতিনিধি টোমাস শ্মিট বলছেন, এএসটিএর কাছে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম বাসস্থানের অভাব৷ ‘‘কিছু শিক্ষার্থী তাদের মা-বাবার কাছ থেকে পাওয়া আর্থিক নিশ্চয়তা ব্যবহার করে থাকার জায়গা ভাড়া নিতে পারছেন৷ কিন্তু এটি বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সমস্যা, কেননা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা এমন নিশ্চয়তা দিতে পারেন না,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷
টোমাস শ্মিট চান, নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণ ও পুরনোগুলোর সংস্কারের জন্য বার্লিনের সেনেট অর্থ বরাদ্দ দিক৷ এছাড়া বার্লিনে বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেওয়ার পুরনো নিয়মটি আবারও চালু করার পক্ষে তিনি৷
জার্মানির ছাত্র সংগঠন ডিএসডাব্লিউর ভাইস সেক্রেটারি জেনারেল স্টেফান গ্রব জানিয়েছেন, গত ১২ থেকে ১৫ বছরে জার্মানিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দশ লাখ বেড়ে ২৯ লাখে পৌঁছেছে৷ কিন্তু তাদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরিতে বিনিয়োগ করা হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ ‘‘আমার আশঙ্কা, আমরা একটি দুই শ্রেণির সমাজে পরিণত হতে যাচ্ছি, যেখানে ধনি ব্যক্তিরা চাইলে পড়াশোনা করতে পারবে আর অন্যরা পড়াশোনা করতে পারবে না৷ এমনটা হলে বিষয়টি বিপর্যয়কর হবে, কারণ তখন কেউ পড়তে পারবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত দেবে টাকা- মেধা ও স্মার্টনেস নয়,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷
সরকারের অঙ্গীকার
জার্মানির কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী ঋণ ও সহায়তা স্কিমের (বিএএফও্যজি) আওতায় বর্তমানে বাসস্থান বাবদ ৩৬০ ইউরো দেয়া হচ্ছে৷ ছাত্র সংগঠন ডিএসডাব্লিউ চায়, এই বরাদ্দ বাড়ানো হোক৷ তবে তারা এটিও স্বীকার করছেন যে, মাত্র ১০-১১ শতাংশ শিক্ষার্থী এই স্কিমের সুবিধা পাওয়ার উপযুক্ত৷
শিক্ষার্থী, শিক্ষানবীশ ও প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের সাশ্রয়ী ভাড়ায় থাকার ব্যবস্থা করতে জার্মানির জোট সরকার ২০২৩ সালের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ইউরো ভর্তুকি ঘোষণা করেছে৷
গৃহায়ন, নগর উন্নয়ন ও ভবন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৪ ও ২০২৫ সালের জন্যও এই পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি হিসেবে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷
‘‘থাকার জায়গা পেতে শিক্ষার্থীদের বয়স্ক মানুষ, ছোট পরিবার, নিম্ন আয়ের মানুষ, শরণার্থী ও অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে৷ ফলে আমরা যে সমস্যাটার কথা বলছি সেটি শুধু উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যা নয়, এটি একটি সামাজিক সমস্যা,'' বলেন ডিএসডাব্লিউর ভাইস সেক্রেটারি জেনারেল স্টেফান গ্রব৷
হেলেন ভিটেল/জেডএইচ