আদালত, ক্লাসরুম থেকে রাজনীতির মঞ্চ - জার্মানিতে বাড়ছে ইংরেজি ভাষার কদর, যাতে করে আরো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে দেশটি বিশ্বের দরবারে৷
বিজ্ঞাপন
একটা সময় ছিল যখন জার্মান রাজনীতিবিদেরা ইংরেজি বলতে চাইতেন না৷কিন্তু এখন, বহু শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের ইংরেজি জ্ঞান দেখাতে ছাড়ছেন না৷
সম্প্রতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবককে দেখা গেছে ইংরেজিতে কথা বলতে৷ দেখা গেছে অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনারকেও ব্লুমবার্গ টিভিতে জার্মান অর্থনীতি বিষয়ে ইংরেজিতে তর্ক করতে৷
এর আগে, সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে প্রায় কখনোই দেখা যায়নি ইংরেজি বলতে৷ তা সে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েই হোক বা ২০১৯ সালে সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও৷ কিন্তু বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ তা না করে একই চ্যানেলে নিজের বক্তব্য ইংরেজিতেই রাখেন৷
তবে এক সময় যে সাবেক জার্মান মন্ত্রী গুইডো ভেস্টারওয়েলে ইংরেজির বিরোধিতা করতেন, তার দল এফডিপিই বর্তমানে জার্মানিতে ইংরেজির ব্যবহার বাড়ানোর পক্ষে৷
বার্লিনের ক্যাফে সংস্কৃতি
হংকংয়ের গ্রাফিক শিল্পী চ্লে কা কেই ইয়াউ সম্প্রতি বার্লিনে এসেছিলেন৷ বার্লিনের বিভিন্ন ক্যাফেতে সময় কাটান তিনি৷ ছবিও আঁকেন৷ তাঁর সেই স্কেচ এখন বার্লিনের কফি হাউস খোঁজার বিশ্বস্ত গাইড৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
ওরা, ক্রুৎসবার্গ
ওরানিয়েনপ্লাৎসের ‘ওরা’ বার্লিনের অন্যতম থিম ক্যাফে৷ আগে এই ক্যাফের জায়গায় একটি ওষুধের দোকান ছিল৷ পরবর্তীকালে ওষুধের দোকান ক্যাফেতে পরিণত হলেও, পুরনো অনেক জিনিসই রেখে দেওয়া হয়৷ পুরনো সিঙ্ক, ঘড়ি, ক্যাবিনেট সবই রেখে দেওয়া হয়েছে আগের মতো৷ কাঠের কাউন্টারে মোমবাতির আলোয় কফি অন্যরকম এক অনুভূতি তৈরি করে৷ ক্যাফের কর্মীরা বন্ধুত্বপূর্ণ৷ খাবারও ভালো৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
কাফে কানেল, নয়-কোলন
বার্লিনের নয়-কোলন অঞ্চলে রয়েছে এই ক্যাফেটি৷ টেম্পলহফার ফেল্ডের কাছে৷ অর্থাৎ, পুরনো বিমানবন্দরের কাছে৷ কাফে কানেলে ঢুকলে সময়ের নিয়ম গুলিয়ে যায়৷ নানা ধরনের কফি এবং পেস্ট্রি পাওয়া যায় এখানে৷ সবচেয়ে বড় কথা, এই ক্যাফেতে ঢুকলে মনে হয় নিজের বাড়ি৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
রোমার্স, নয়-কোলন
চলতি হাওয়ার পন্থি এই ক্যাফে কখনও বিমর্ষ করে না৷ লোকে বলে শহরের সেরা চায়ে লাতে পাওয়া যায় এখানে৷ সঙ্গে অসাধারণ দেখতে এবং খেতে কেক৷ বার্লিনে এলে অবশ্যই একবার এখানে ঢুঁ মারা উচিত৷ তবে দেরি করা যাবে না৷ দ্রুত এদের খাবার ফুরিয়ে যায়৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
এফ৫, ক্রয়েৎসব্যার্গ
স্পেশালিটি কফি খেতে চাইলে এফ৫ সঠিক নির্বাচন৷ রোস্টেড কফি বিন এবং ওটের দুধ, অসাধারণ কম্বিনেশন৷ সবচেয়ে বড় কথা হলো, এককাপ কফি নিয়ে এখানে দীর্ঘক্ষণ কাটিয়ে দেওয়া যায়৷ চাইলে আড্ডা মারা যায় আশপাশের ক্রেতাদের সঙ্গেও৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
হোমমেড, ফ্রিডরিশহাইন
সিমোন-ডাখ রাস্তার উপরেই ‘হোমমেড’ ক্যাফে৷ দুপুরবেলা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে এক ঢুঁ মারা যায় এই ক্যাফেতে৷ রঙিন ডেকোরেশনের এই ক্যাফেতে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা যায়৷ বিশেষত, সপ্তাহান্তে এই ক্যাফের মজাই অন্যরকম৷ আড্ডা মারার আদর্শ জয়াগা৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
ফ্রিডল, প্রেনৎসলাওয়ার ব্যার্গ
কফি নিয়ে যাঁদের পড়াশোনা আছে, তাঁদের অবশ্য গন্তব্য এই ক্যাফে৷ নানাবিধ কফির বিন পাওয়া যায় এখানে৷ সিঙ্গল অরিজিন, ডার্ক ব্লেন্ড, ডিক্যাফ কফির মতো ঐতিহ্যবাহী কফি বিনের সন্ধান পাওয়া যাবে এখানে৷ এছাড়াও এখানে পাওয়া যায় নানারকমের কুকি৷ চাইলে এখানে এসে ব্রাজিলিয়ান ক্যাপুচিনো খেয়ে দেখা যেতেই পারে৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
পাকোলাট, প্রেনৎসলাওয়ার ব্যার্গ
ঐতিহ্যকে আধুনিক জীবনে ফিরিয়ে আনাই এই ক্যাফের বৈশিষ্ট্য৷ হাতে তৈরি বিনের কফি পাওয়া যায় এখানে৷ রয়েছে অ্যান্টিক কফি এবং চায়ের পাত্র৷ চা, কফির পাশাপাশি নানারকম হাতে তৈরি কেকও পাওয়া যায় এই ক্যাফেতে৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
শ্নাইডেরাই , প্রেনৎসলাওয়ার ব্যার্গ
ছোট্ট দোকান৷ ভাবনা ছোট্ট নয়৷ রাস্তার এক কোণে এই ক্যাফেতে ঢুকলে মন ভরে যেতে বাধ্য৷ জানালার ধারে বসে কফিতে চুমুক দেওয়ার মজাই আলাদা৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
8 ছবি1 | 8
অর্থনীতি ও বিচারব্যবস্থায় ইংরেজি
জার্মান অর্থনীতি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল ও এখানে বিশ্বের বড় বড় সংস্থার কার্যালয় রযেছে৷ ফলে স্বাভাবিকভাবেই ইংরেজি এখানেবাণিজ্যের ভাষা৷
আগস্ট মাসে জার্মান ক্যাবিনেট একটি বিল পাস করে, যার মাধ্যমে বাণিজ্য আদালতের এক্তিয়ারকে বাড়ানো হয় ও ইংরেজি ভাষায় তার কাজ চালানোর ব্যবস্থার নির্দেশ দেওয়া হয়৷
এই বিলের লক্ষ্য, জার্মানিকে বিচারব্যবস্থা ও অর্থনীতির দিক দিয়ে বিশ্বের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা, বলেন সরকারের মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ান হফমান৷
কিন্তু বদল আসতে সময় লাগবে, জানান বাণিজ্য বিষয়ক আইনজীবী মিশায়েল ভাইগেল৷ এই ধরনের বদলকে বাস্তবায়ন করতে বিনিয়োগ দরকার, দরকার সময়৷
সম্প্রতি পাস হওয়া দক্ষ কর্মী বিষয়ক আইনেও জার্মান ভাষার ওপর জোর কমানো হয়েছে৷ স্কুল কলেজে দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ইংরেজিকে নিয়ে আসার প্রস্তাব রেখেছে এফডিপি, যা জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে৷
বিভিন্ন সরকারি অফিসে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে ইংরেজির ব্যবহার৷ কিন্তু আরো উন্নত অনুবাদের কাজ ও প্রশিক্ষিত কর্মীর প্রয়োজনিয়তা চোখে পড়ার মতো৷
দৈনন্দিন জীবনে ইংরেজি
২০০৫ সাল থেকে জার্মানির সব প্রাথমিক স্কুলেই ইংরেজি পড়ানো হয়, শুধু ফরাসি সীমান্তের নিকটবর্তী অঞ্চল ছাড়া৷
উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি প্রোগ্রামগুলির দশ শতাংশই ইংরেজিতে পড়ানো হয়৷ ইংরেজির ব্যবহার কম হবার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশিরা পছন্দ করেন না জার্মানিতে দীর্ঘ দিন থাকতে, জলছে ইন্টারনেশনসের সমীক্ষা৷
কিন্তু ব্যতিক্রম বার্লিন৷ সেখানে বেশ কিছু ব্যবসার ক্ষেত্রে জার্মান ভাষার ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে৷
এক সময়ে যে বার্লিনে জার্মান ভাষা না জানলে কাজ পাওয়া কঠিন ছিল, সেই বার্লিনেই বিনা জার্মানে কাজ করছে নতুন প্রজন্ম৷