দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় এবং যুদ্ধের পর নদী বা জলাশয়ের পানিতে অস্ত্র, বোমা ও অন্যান্য উপকরণ ফেলা হয়েছিল৷ জার্মানি জুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে জলাশয়ের পানি কমে গিয়ে এসব সামরিক অস্ত্র-শস্ত্র বেরিয়ে পড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
তাই পুলিশ সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, গ্রেনেড, বোমা বা অন্য কোনো সামরিক সরঞ্জাম দেখতে পেলে কেউ যেনো তাতে হাত না দেয়৷ পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জার্মানির পূর্বাঞ্চলের সাক্সনি আনহাল্ট আর সাক্সনি রাজ্যে এল্বে নদীর বিভিন্ন জায়গায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপুল পরিমাণ বোমা ও অস্ত্র পাওয়া গেছে৷ এগুলোর মধ্যে আছে ২২টি গ্রেনেড, মাইন ও অন্যান্য বিস্ফোরকদ্রব্য৷ পুলিশের এক কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা পরিষ্কার যে পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় এগুলো পাওয়া যাচ্ছে৷''
ড্রেসডেন যেদিন ধ্বংস হয়
সত্তর বছর আগে ড্রেসডেন শহরের ওপর অগ্নিবর্ষণ করে মিত্রশক্তির বোমারু বিমান৷ প্রায় পঁচিশ হাজার মানুষ সেই বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান৷ বোমার রাত্রির পর ড্রেসডেন-কে চেনার উপায় ছিল না৷
ছবি: Getty Images/Matthias Rietschel
বোমা, ধ্বংস, লুটতরাজ
১৯৪৫ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি ২৪৫টি ল্যাংকাস্টার বোমারু বিমান ইংল্যান্ড থেকে আকাশে ওঠে৷ রাত ন’টা বেজে উনচল্লিশ মিনিটে ড্রেসডেনে সাইরেন বাজতে শুরু করে৷ মাত্র ২৩ মিনিটের ‘কার্পেট বম্বিং’ ড্রেসডেনের উপর আগুনের গালিচা বিছিয়ে দেয়৷ ব্রিটিশ বোমারু বিমান হানা দেয় দু’বার, মার্কিনি বোমারু বিমান আরো একবার৷ শহরের প্রায় ১৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ড্রেসডেন ক্যাথিড্রাল ধ্বংস
সে রাত্রির বোমাবর্ষণে ড্রেসডেনের প্রখ্যাত রোমান ক্যাথলিক ক্যাথিড্রাল বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ভিতরের ছাদ ও খিলান ধসে পড়ে৷ গির্জাটি স্যাক্সনি অঞ্চলের বৃহত্তম গির্জাগুলির মধ্যে গণ্য৷ এই ক্যাথলিক গির্জাটি ড্রেসডেনের অপর মহান স্থাপত্য, প্রটেস্টান্ট ‘চার্চ অফ আওয়ার লেডি’ থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরত্বে এবং প্রায় একই সময়ে তৈরি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্টিন লুথার-ও রক্ষা পাননি
প্রটেস্টান্ট মতবাদের স্রষ্টা মার্টিন লুথার-এর স্মৃতিসৌধটি চার্চ অফ আওয়ার লেডি-র ঠিক সামনে৷ বোমার রাত্রিতে স্মৃতিসৌধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল৷ ১৮৮৫ সালে মূর্তিটি স্থাপন করা হয়৷ লুথার ১৫১৬ এবং ১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দে ড্রেসডেনে এসেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
অর্থহীন ধ্বংসলীলার প্রতীক
অষ্টাদশ শতাব্দীর ব্যারোক স্থাপত্যের এক আশ্চর্য নিদর্শন ছিল ড্রেসডেনের ‘ফ্রাউয়েনকিয়র্শে’ বা চার্চ অফ আওয়ার লেডি৷ ১৯৯৩ সাল অবধি তার ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকে এক নিরর্থক ধ্বংসযজ্ঞের প্রতীক হয়ে৷ গির্জার চূড়ার উপর যে ক্রুশচিহ্নটি ছিল, সেটিকে আবার ঠিক সেইভাবে গড়ে দিয়েছেন ইংল্যান্ডের এক ঢালাইকর, যাঁর বাবা বোমারু বিমানের চালক হিসেবে ড্রেসডেনের বোমার রাত্রিতে উপস্থিত ছিলেন৷
ছবি: picture alliance/dpa
ড্রেসডেন তার ট্রেডমার্ক ফিরে পেয়েছে
১৯৯৪ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ফ্রাউয়েনকিয়র্শে আবার গড়ে তোলা হয়৷ খরচ পড়েছিল প্রায় ১৩ কোটি ইউরো৷ সারা বিশ্ব থেকে অনুদান আসে৷ একানব্বই মিটার উচ্চতার গির্জাটির আশপাশের ব্যারোক বসতি স্যাক্সনির রাজধানী ড্রেসডেনের নতুন কেন্দ্রস্থল হয়ে দাঁড়ায় – বিশেষ করে পর্যটকদের চোখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hiekel
ধ্বংসের কোনো চিহ্নই অবশিষ্ট নেই
বহু পর্যটক ড্রেসডেনের কেন্দ্রে ক্যাথলিক ক্যাথিড্রালের সামনের চত্বর দিয়ে যাবার সময় নতুন করে গড়ে তোলা পুরনো বাড়িগুলি দেখে মুগ্ধ হন৷ প্রটেস্টান্ট স্যাক্সনির রাজা আউগুস্ট ক্যাথলিক ধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন পোল্যান্ডের রাজা হবার জন্য৷ ক্যাথলিক গির্জাটি তৈরি হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি৷
ছবি: picture alliance/Johanna Hoelzl
নবরূপে
১৯৪৫’এর বোমার রাত্রিতে ক্ষতিগ্রস্ত লুথার মূর্তিটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৫৫ সালে৷ কিন্তু ২০০৩-৪ সাল পর্যন্ত মূর্তিটিকে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থাতেই রাখা হয়েছিল – যুদ্ধ ও ধ্বংসের প্রতীক হিসেবে৷ মেরামত করা মূর্তিটির পাদদেশে আজকাল তরুণ-তরুণী ও পর্যটকদের ভিড় করতে দেখা যাবে৷
ছবি: imago/Chromorange
এলবে নদীর তীরের ফ্লোরেন্স
ড্রেসডেন আজ জার্মানির সবচেয়ে সুন্দর শহর বলে গণ্য হয়৷ তার ব্যারোক স্থাপত্যের জন্য ড্রেসডেন-কে বলা হয়, এলবে নদীর তীরের ফ্লোরেন্স৷ এই শহরে বহু দেখার জিনিস আছে, যা পর্যটকদের টানে৷ সাড়ে পাঁচ লাখ বাসিন্দা সম্বলিত ড্রেসডেন জার্মানির ১২টি বৃহত্তম শহরের মধ্যে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Lander
বোমার রাত্রির সেই অভিজ্ঞতাকে জাগিয়ে রাখা
ড্রেসডেনের একটি পুরনো, পরিত্যক্ত গ্যাসের ট্যাংকে ১৯৪৫’এর বোমার রাত্রির ছবিগুলি প্যানোরামা হিসেবে দেখতে পাওয়া যাবে৷ শিল্পী হলেন ইয়াদেগর আসিসি৷ ছবিতে বোমা আক্রমণের অব্যবহিত পরে শহরের কেন্দ্রের পরিস্থিতি দেখিয়েছেন আসিসি তাঁর প্যানোরামায়: চতুর্দিকে ধসে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি; ধোঁয়া উঠছে; কোথাও কোথাও লেলিহান অগ্নিশিখা৷
ছবি: Getty Images/Matthias Rietschel
9 ছবি1 | 9
জার্মানিতে এ বছর জুলাইকে বলা হচ্ছে উষ্ণতম মাস৷ ৩১শে জুলাই সাক্সনি আনহাল্টে তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ এ সপ্তাহের শুরুতে সাক্সনি আনহাল্টের মাগডেবুর্গে পানির উচ্চতা রেকর্ড ৫১ সেন্টিমিটার কমে গেছে৷ ১৯৩৪ সালে পানি কমেছিল ৪৮ সেন্টিমিটার৷
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ রকম কোনো অস্ত্র বা সরঞ্জাম দেখতে পেলে প্রথমে তাদের খবর দেয়া হয়৷ এরপর অস্ত্র নিষ্ক্রিয়করণ বিশেষজ্ঞরা সেখানে গিয়ে পরীক্ষা করে সেগুলোকে নিষ্ক্রিয় করেন৷ যেগুলো নিষ্ক্রিয় করা যায় না, সেগুলোকে খোলা জায়গায় নিয়ে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়৷ গত মাসে এলবে নদীতে পাওয়া দু'টি অ্যান্টি ট্যাংক মাইন-এর বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন অস্ত্র নিষ্ক্রিয়করণ বিশেষজ্ঞরা৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অনেক বিস্ফোরক এল্বে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিল৷ যার মধ্যে অনেকগুলো ভেসে ভেসে চেক প্রজাতন্ত্র-পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে এবং কিছু হামবুর্গের কাছে পৌঁছেছিল৷
এপিবি/ডিজি (ন্যান্সি ইসেনসন, ফল্কার ভিটিং)
জার্মানিতে গ্রীষ্ম ফিরে এসেছে
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সে এসেছে৷ তবে কতদিন থাকবে জানা নেই৷ শীতের দেশের মানুষের জন্য সারাদিন রোদের তাপ, রাতে গ্রীষ্মের আমেজ বড়ই মনোরম৷ জার্মানির সব অঞ্চল অবশ্য এখনো গ্রীষ্মের ছোঁয়া পায়নি৷
ছবি: picture alliance/M. C. Hurek
সুইমিং পুলে লম্ফঝম্প
জার্মানিতে গ্রীষ্মের ছুটি একসঙ্গে শুরু হয় না৷ যেমন স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যে ৩ সপ্তাহ আগেই গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হয়েছে৷ সেখানে হালে শহরে সুইমিং পুলে ভিড় বেড়েছে৷ শীতল পানিতে ঝাঁপ দেবার মজাই আলাদা!
ছবি: picture-alliance/ZB/J. Woitas
সূর্যালোকের দূত
ড্রেসডেন শহরের কেল্লাগুলিতে রাতে চলছে উৎসব৷ সেখানে হেঁটে বেড়াচ্ছেন সূর্যরানি৷ তাঁর উপস্থিতি নাকি খুব পয়মন্ত৷ অনেকের বিশ্বাস, তাঁর ঝোলায় রয়েছে কয়েকটি সুন্দর রৌদ্রোজ্জ্বল দিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
অস্বাভাবিক নিস্তব্ধতা
কোলন শহরের মানুষ কি সূর্যের আলোর আগমনের খবর পায়নি? রাইন নদীর তীরে একটি মাত্র মানুষকে রোদ পোহাতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Vennenbernd
চলো, লেকে যাই
অনেকেই সুইমিং পুলের ভিড় পছন্দ করে না৷ লেকের তটে জায়গাও বেশি৷ খোলামেলা পরিবেশে সাঁতার কাটার মজাই আলাদা৷ যেমন মিউনিখ শহরের কাছে এই হ্রদের তীরে সবাই আনন্দে মেতে উঠেছে৷
ছবি: picture alliance/M. C. Hurek
ত্বকের যত্ন নিতে হবে
বেশি মাত্রায় রোদের তাপ ক্যানসারের কারণ হতে পারে৷ তাই উপযুক্ত সানস্ক্রিন লোশন সঙ্গে থাকা জরুরি৷ ‘জার্মান ক্যানসার এড’ সংস্থা অবশ্য সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, দুপুরের রোদ পুরোপুরি এড়িয়ে চলাই ভালো৷
ছবি: picture-alliance/ZB/J. Woitas
গ্রীষ্মে প্রকৃতির খেলা
শুধু মানুষ নয়, প্রাণিজগতও সূর্যের আলো পেয়ে খুশি৷ প্রথমে বৃষ্টি, তারপর গরম আবহাওয়া পেয়ে প্রকৃতিও বিকশিত হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
উৎসবের ছোঁয়া
আবহাওয়া ভালো থাকলে বোডেনসে হ্রদে নৌকার মিছিল বেরোয়৷ সেই অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে এই ঐতিহ্য চলে আসছে৷ সে সময়ে মোস শহরের মানুষ গবাদি পশুর মড়ক থেকে রক্ষা পেয়েছিল৷ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে তারা জুলাই মাসের তৃতীয় সোমবার রঙিন সাজে সাজানো নৌকায় ওঠে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
গ্রীষ্মের অপেক্ষায়
শুধু জার্মানির উত্তর পূর্ব অঞ্চল এখন গ্রীষ্মের রস থেকে বঞ্চিত৷ হাতে গোনা কিছু মানুষ অবশ্য মেঘলা আকাশ উপেক্ষা করে সমুদ্রতট আঁকড়ে আছে৷ তবে সেখানেও আবহাওয়ার উন্নতির আশা রয়েছে৷