বিতর্কিত ‘গ্র্যুনার পুংক্ট’
১৬ জুলাই ২০১৩‘গ্রিন পয়েন্ট'-এর ধারণা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক হয়ে থাকে৷ এবার জার্মানির স্থানীয় পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ সংস্থা (ভিকেইউ) এতদিনের চালু থাকা বর্জ্য পৃথকীকরণ, সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের পদ্ধতিকে পাল্টাতে চায়৷ কারণ, জার্মান নগর কর্তৃপক্ষ ও পৌরসভাগুলো এখন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণের এ দায়িত্ব নিজ হাতে নিতে আগ্রহী৷
১৯৯১ সাল থেকে চালু
১৯৯১ সালে গৃহীত জার্মান প্যাকেজিং নীতিমালার সময় থেকেই গ্রিন পয়েন্ট ব্যবস্থা চালু রয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের তৎকালীন পরিবেশমন্ত্রী ক্লাউস ট্যোপফার-এর সময় এই নীতিমালা গৃহীত হয়৷ এর আওতায় পণ্য উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারীদের ওপর তাদের ব্যবহৃত প্যাকেট পুনরায় কাজে লাগাবার জন্য ফেরত নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়৷ এর ফলে, প্যাকেট-বর্জ্য থেকে নবায়নযোগ্য উপাদানগুলো আলাদা করে প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা করা হয়৷ এর আগে এইগুলি আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে মাটির নীচে পুঁতে ফেলা হতো৷ ফলে বর্জ্যকে আবার ব্যবহার করা যেত না৷ অন্যদিকে এই নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর থেকে গ্লাস, কাগজ ও প্লাস্টিককে আবারো ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হচ্ছে৷ এর ফলে শুধুমাত্র পরিবেশই যে পরিচ্ছন্ন হচ্ছে তাই নয়, একই সাথে দামি কাঁচামাল আমদানি করার ওপর জার্মানির নির্ভরশীলতা কমেছে৷
শুরুতে একচেটিয়া বাজার
প্যাকেজিং নীতিমালা বাস্তবায়নের কিছু দিন আগে ডুয়াল সিস্টেম জার্মানি বা ডুয়ালে সিস্টেম ডয়চল্যান্ড (ডিএসডি) খুচরা ও ভোগ্য পণ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে৷ এই প্রতিষ্ঠান ‘গ্রিন পয়েন্ট' ব্যবস্থা চালু করে৷ তবে এই সবুজ বিন্দু শুধু কৌটা, দৈ-এর কাপ এবং দুধের প্যাকেটের গায়ে দেখা যায়৷ পণ্য উৎপাদনকারী ও বিপণনকারীরা নিজেদের প্যাকেটের গায়ে পরিবেশ বান্ধব এই চিহ্ন ছাপাতে চাইলে তাদের ‘লাইসেন্স ফি' জমা দিতে হয়৷ সেই থেকে ভোক্তাদের নতুন অভ্যাস চালু হয় – তা হলো বর্জ্য পৃথকীকরণ৷
বর্তমানে প্যাকেজিং বর্জ্য হলুদ কন্টেইনার, হলুদ ব্যাগ কিংবা গ্লাস ও কাগজের জন্য নির্ধারিত কন্টেনারে আলাদাভাবে ফেলা হয়৷ ডিএসডি তাদের নির্ধারিত কোম্পানিকে এসব নবায়নযোগ্য বর্জ্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব দেয়৷ প্রথমদিকে, ডিএসডি গোটা জার্মানি জুড়ে এক্ষেত্রে একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করে৷ এরপর ২০০৪ সালে বুন্ডেসকার্টেলআমট বা কেন্দ্রীয় বাণিজ্য জোট স্থাপিত হয়৷ ইতিমধ্যে প্যাকেজিং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ১০ টি প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে৷
বিধি-বিধানেও রিসাইক্লিং-এর দাবি
জার্মানির স্থানীয় পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ সংস্থা (ভিকেইউ)-এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট পাট্রিক হাসেনকাম্প বলেন, ‘‘ডিএসডি প্যাকেজিং নীতিমালা প্রণয়নের শুরু থেকেই ক্লিয়ারিং-এর কাজ করেছে৷ তারা লাইসেন্স ফি নিয়েছে এবং লাইসেন্স দিয়েছে৷'' এছাড়া তারা নিজেদের অর্থনৈতিক লাভের দিকে বেশি দৃষ্টি দিয়েছে এবং মোটা অঙ্কের লাভ করছে৷ এর ফলে রিসাইক্লিং-এর মান উপেক্ষিত থেকেছে৷ ভোক্তাদের খরচও করতে হচ্ছে অনেক বেশি৷
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এই কাজটি বেসরকারি সংস্থা ডিএসডি-র বদলে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষের হাতে দেওয়ার প্রস্তাব করেন হাসেনকাম্প৷
প্রতিযোগিতা ও কর্মদক্ষতা
ডিএসডি-র মুখপাত্র নর্ব্যার্ট ফ্যোল এই সমালোচনাকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন৷ তিনি বলেন, কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের লাভ নিয়ে কেউ সমালোচনা করতে পারেনা৷ এছাড়া বিগত বছরগুলোতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের খরচের হার ক্রমাগত কমানো হয়েছে৷ ফ্রান্সের দিকে একবার দৃষ্টি দিলেই সহজে বোঝা যায় যে, পৌরসভা প্যাকেজিং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিলে কোনোভাবেই খরচ কমতে পারে না৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘ফ্রান্সে প্যাকেজিং বর্জ্য খুব অল্প পরিমাণে সংগৃহীত হয় এবং খরচও অনেক, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে জার্মানির চেয়েও বেশি৷ কারণ সেখানে কর্মদক্ষতা এবং কার্যকারিতার নিয়ন্ত্রণ নেই৷'' ফলে পৌরসভাগুলো যদি এই বর্জ্য রিসাইক্লিং-এর দায়িত্ব গ্রহণ করে জার্মানিতেও একই অবস্থা সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন ফ্যোল৷
ইইউ জুড়ে ‘গ্রিন পয়েন্ট'
নর্ব্যার্ট ফ্যোল-এর দৃষ্টিতে, ‘গ্রিন পয়েন্ট'-এর সাফল্য অসাধারণ ৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্যাকেজিং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যে বিধান রেখেছে, জার্মানি তাঁর চেয়ে স্পষ্টই এগিয়ে গেছে৷ ইউরোপের অন্য কোনো দেশই প্যাকেজিং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং রিসাইক্লিং-এর কাজে এতটা অগ্রসর হতে পারেনি৷ ডিএসডির মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেন, ‘‘জার্মানি এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই অগ্রদূত''৷