করোনা সংকট মোকাবিলা করতে সরকারের নীতিমালা সম্পর্কে সংসদে বক্তব্য রাখলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ অর্জিত সাফল্য সত্ত্বেও বিপদের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে দিলেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার সকালে জার্মান সংসদের নিম্নকক্ষে সরকারের নীতিমালা তুলে ধরে ম্যার্কেল বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি এমন পরিস্থিতি দেখেনি৷ রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে অভূতপূর্ব পদক্ষেপ নিতে হয়েছে৷ করোনা সংকটের মোকাবিলা করতে অকল্পনীয় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে৷ এসব উদ্যোগ দ্রুত অনুমোদন করার জন্য তিনি সংসদের উভয় পক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন৷ তিনি স্বীকার করেন যে, সাধারণ মানুষের সহযোগিতা ছাড়া এমন প্রচেষ্টা কখনোই সফল হতো না৷ মানুষের অনেক মৌলিক অধিকার খর্ব করার সিদ্ধান্ত তাঁর জন্য কতটা কঠিন ছিল, তা মনে করিয়ে দেন ম্যার্কেল৷
মতবিরোধ ভুলে গোটা দেশে ব্যাপক সহযোগিতার দৃষ্টান্তও তুলে ধরেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ তাঁর মতে, সংযম, নিয়মানুবর্তিতা ও সংহতির মাধ্যমে জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের গতি যথেষ্ট কমানো সম্ভব হয়েছে৷ তবে তিনি মনে করিয়ে দেন যে, সাফল্য সত্ত্বেও জার্মানি এখনো মহামারির প্রথম পর্যায়ে রয়েছে৷ তাই অর্জিত সাফল্য নষ্ট করে পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যাবার বিষয়ে সতর্ক করে দেন তিনি৷ তাঁর মতে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এড়িয়ে চলতে অদূর ভবিষ্যতেও অনেক কড়াকড়ি মেনে নিতে হবে৷ ধাপে ধাপে কিছু বিধিনিয়ম শিথিল করা হলেও সার্বিকভাবে কড়াকড়ি মেনে চলতে হবে৷
করোনা সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্বও তুলে ধরেন ম্যার্কেল৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে নিবিড় সহযোগিতার অঙ্গীকার করেন তিনি৷ বৃহস্পতিবার ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে জার্মানির অবস্থান বুঝিয়ে বলেন জার্মান চ্যান্সেলর৷
এদিকে বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনার পর মহাজোট সরকারের শরিক দলগুলি আরো কিছু পদক্ষেপের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে৷ মূলত অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে একগুচ্ছ পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সরকার৷ বৃহস্পতিবার সংসদে ম্যার্কেল সেগুলিরও উল্লেখ করেন৷
নতুন এই উদ্যোগের আওতায় সাধারণ মানুষ ও শিল্পবাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে নির্দিষ্ট কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ যে সব কর্মীরা উদ্বৃত্ত হয়ে পড়েছেন, তাদের বেতন মেটাতে সরকারি ভরতুকির অঙ্ক ও মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার৷ তাছাড়া শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের লোকসান সামাল দিতে কর কমানো হবে৷ ক্যাফে-রেস্তোঁরার আয় প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই শাখাকে সাহায্য করতে ভ্যাটের হারও কমানো হবে৷ স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনার ক্ষতি এড়াতে শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার কেনার জন্য ১৫ কোটি ইউরো ব্যয় করবে সরকার৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ)
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতৃত্বে যে নারীরা
বিশ্বের কয়েকজন নারী নিজেদের অবস্থান থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/W. Berrazeg
আঙ্গেলা ম্যার্কেল
‘জার্মানির ৬০ ভাগ নাগরিক করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন’ সরাসরি এমন মন্তব্য করে প্রথমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনামে এসেছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ তারপর করোনা সংকটকে জার্মানির জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে বর্ণনা করে দেশবাসীকে সতর্ক করে দেন ম্যার্কেল৷সংকট মোকাবেলায় তার সব পদক্ষেপের প্রশংসা হচ্ছে৷ করোনায় কম মৃত্যুহারের জন্য জার্মানির প্রশংসার সময়ও আসছে তার নাম৷
ছবি: Reuters/M. Schreiber
মারলিন আড্ডো
জার্মানির হামবুর্গ-এপেনডর্ফ মেডিকেল সেন্টারে নিজের দলের সঙ্গে কোভিড ১৯ ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টায় ব্যস্ত এখন মারলিন আড্ডো৷ ভায়রোলজিস্ট মারলিন এর আগে ইবোলা ভাইরাস এবং মার্স করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছেন৷
ছবি: Privat
জাসিন্ডা আর্দার্ন
প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দার নেতৃত্বে করোনাভাইরাসকে এখনো হুমকি হতে দেয়নি নিউজিল্যান্ড৷ প্রথমে সীমান্ত বন্ধ করে দেন তিনি৷ বিদেশ থেকে আসা প্রায় বন্ধ করে ঘোষণা দেন, কেউ এলে তাকে সেল্ফ কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে দুই সপ্তাহ৷ মাত্র ৬ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ার পরই সারাদেশে ঘোষণা করেন লকডাউন৷ ফলাফল এখনো মাত্র১০২ জনের দেহে সংক্রমণ এবং একজনেরও মৃত্যু না হওয়া৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/N. Perry
জুং ইউন কিয়ং
দক্ষিণ কোরিয়ার সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পরিচালক তিনি৷ তবে এই পরিচয় ছাপিয়ে এখন সবাই তাকে'জাতীয় বীর' হিসেবে চেনে৷ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর রাতের ঘুম ভুলে গিয়েছিলেন, সহকর্মীদের অনুরোধেও অফিস ছাড়তে চাইতন না৷ সবার জন্য করোনা-পরীক্ষা নিশ্চিত করায় আন্তরিক পদক্ষেপ নিয়ে সংকট নিয়ন্ত্রণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই নারী৷
ছবি: picture-alliance/Yonhapnews Agency
মেটে ফ্রেদেরিকসেন
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী নিজের দেশে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি অবলম্বন করে আসলে ইউরোপকেও পথ দেখিয়েছেন৷ মার্চের মাঝামাঝি থেকেই করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/Ritzau Scanpix
সাই ইং-ওয়েন
তার দেশ তাইওয়ানে করোনাভাইরাস ভয়াবহ সংকটের জন্ম দেবে বলে আশঙ্কা ছিল বিশেষজ্ঞদের৷ কিন্তু চীনে সংক্রমণ বাড়া শুরু হতেই চীন, হংকং এবং ম্যাকাও থেকে কারো তাইওয়ানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে তার সরকার৷ তারপর পর্যায়ক্রমে নেয়া হয় কর্নার সংক্রমণ রোধের আরো কিছু কঠোর পদক্ষেপ৷ তার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে তাইওয়ানে করোনাভাইরাস এখনো বড় আতঙ্ক হয়ে ওঠেনি৷