জার্মানিতে ২৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা এবার ধর্মঘটে নামছেন। বেতন ও কাজের সময় সংক্রান্ত দাবিতে।
বিজ্ঞাপন
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ইউনিয়নের নেতারা এই নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু সেই আলোচনায় কোনো ফল হয়নি।
তারপরই এই হাসপাতালগুলির হাজার হাজার চিকিৎসক মঙ্গলবারে ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা উত্তর জার্মানির শহর হ্যানোভারে সমবেত হবেন এবং বেতন বাড়ানো এবং অনিয়মিত কাজের সময়ের পরিবর্তে নির্দিষ্ট সময়ের দাবিতে বিক্ষোভ জানাবেন।
চিকিৎসকদের ট্রেড ইউনিয়নের দাবি, চিকিৎসকদের বেতন ১২ দশমিক পাঁচ শতাংশ বাড়াতে হবে। নিয়মিত নাইট ডিউটি, শনিবার ও ছুটির দিনে কাজ করলে বাড়তি অর্থ দিতে হবে।
জার্মানির এই বিশ্ববিদ্যালয় হাসাপাতালগুলিতে ২০ হাজারের বেশি চিকিৎসক আছেন। তাদের বেতন সরকার দেয়।
ইউনিয়নের নেতা বটজলার ডিপিএ-কে বলেছেন, ''জতীয় সরকার এটা মানতে চাইছে না যে, বিশ্ববিদ্যালয় হাসাপাতলগুলি সমানে পিছিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকদের বেতন ও কাজের পরিবেশের বিচারে তারা আরো পিছিয়ে যাবে।''
তিনি বলেছেন, ''অন্য মেডিক্য়াল সংস্থার তুলনায় এই হাসপাতালগুলিতে বেতন কম ও কাজের সময় বেশি। তাই জুনিয়র ডাক্তাররা এখানে আর আসতে চাইছেন না।''
জার্মান অর্থনীতিতে তিন দিনের রেল ধর্মঘটের বহুমুখী প্রভাব
তিন দিনের রেল ধর্মঘট জার্মানির বাণিজ্য, পণ্য পরিবহণ, বন্দরের কর্মকাণ্ড, সেই সঙ্গে ভোক্তাদের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷ এখানেই শেষ নয়৷ আরো জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Jana Rodenbusch/REUTERS
বিকল্প নেই যাদের
জার্মানির রেল চালকদের ইউনিয়ন জিডিএল মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত তিনদিনের ধর্মঘট ডেকেছে৷ এতে শুধু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেল অপারেটর ডয়চে বানই নয় রেল কার্গো ব্যবহারকারী অন্য কোম্পানিগুলোরও ক্ষতি হচ্ছে৷ জার্মানির পণ্য পরিবহণের দুই-তৃতীয়াংশই হয় সড়ক ব্যবহার করে৷ এক-পঞ্চমাংশ হয় রেলপথে৷ কিন্তু তার গুরুত্ব কম নয়৷ বিশেষ করে ইস্পাত, রাসায়নিক, কয়লাসহ এমন কিছু পণ্য রেলে পরিবহণ হয় যার আর কোনো বিকল্প নেই৷
ছবি: Bernd Thissen/dpa/picture alliance
অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত
রেলপথে পণ্য পরিবহণের অর্ধেক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেল কোম্পানি ডয়চে বানের দখলে৷ বাকি অর্ধেক পরিচালনা করে বেসরকারি কোম্পানিগুলো৷ তাদের চালকেরা এই ধর্মঘটে না থাকলেও এর নেতিবাচক প্রভাব আছে কোম্পানিগুলোর উপরে৷ কেননা ডয়চে বানের চালকেরা ছাড়াও ধর্মঘট আহ্বান জানানো হয়েছে রেল লাইনের রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী এবং সুইচ টাওয়ারের দায়িত্বে থাকা কর্মীদেরও৷ তারা যোগ দিলে কোনো ট্রেনই চালানো যাবে না৷
ছবি: HRSchulz/IMAGO
বন্দরে কনটেইনার জট
ধর্মঘটে শুধু রেল না, বন্দরের ব্যবস্থাপনার উপরেও প্রভাব পড়ছে৷ কনটেইনার পরিবহণ না হওয়ায় বিভিন্ন বন্দরে জট তৈরি হচ্ছে৷ হামবুর্গ বন্দরের সব কনটেইনারই রেলপথে পরিবহণ হয়৷ এই মুহূর্তে স্থলপথে পরিবহণ সেখান থেকে সম্ভব নয়৷ সময়মত পণ্য পরিবহণ করা না গেলে ইউরোপের অন্য বন্দরগুলোতেও এর প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: Marcu Brandt/dpa/picture-alliance
ধাক্কা অর্থনীতিতে
ভারি শিল্পের উপর নির্ভরশীল জার্মানির অর্থনীতি৷ এই ধর্মঘটে শিল্প খাতেই সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগছে৷ পণ্য সরবরাহ চেইনে জট লাগার কারণে শিল্পের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে৷ এর অর্থনৈতিক প্রভাব কতটা তীব্র হবে তা এখনই অবশ্য ধারণা করা যাচ্ছে না৷ তবে অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো প্রয়োজনীয় কাঁচামাল অগ্রিম মজুদ রেখে প্রস্তুতি নিয়ে রাখে৷
ছবি: Jochen Tack/picture alliance
ক্ষতির পরিমাণ কত
তিনদিনের এই ধর্মঘটের ক্ষতি কত তা পরিমাপ করাটা সহজ নয়৷ এক হিসাব অনুযায়ী দৈনিক ক্ষতির অঙ্ক কম-বেশি ১১ কোটি ডলার৷ তার চেয়েও বড় বিষয় হলো জার্মানির রেল পরিবহণ ব্যবস্থার দুর্নাম এতে আরো পাকাপোক্ত হলো৷ ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার পণ্য পরিবহণে রেলের অবদান ২৫ শতাংশে উন্নীত করতে চায়, যা বর্তমানে ১৯ শতাংশ৷ এমন পরিস্থিতি হলে সেই লক্ষ্য যে পূরণ হবে না তা বলা বাহুল্য৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
কেন ধর্মঘট
কর্মীদের ইউনিয়ন জিডিএল কর্তৃপক্ষের কাছে সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ৩৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৩৫ ঘণ্টা করার দাবি জানিয়েছে৷ তাদের দাবি অনুযায়ী, এজন্য মজুরি কাটছাট করা চলবে না এবং মাসিক বেতন ৬০০ ডলারের বেশি বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির সাথে সমন্বয় করে বোনাস দিতে হবে৷ কিন্তু কর্মী সংকট থাকায় কর্মঘণ্টা হ্রাসের দাবি মেনে নিতে রাজি নয় ডয়চে বান৷ তবে ৩২ মাসের জন্য মজুরি ১১ শতাংশ বাড়াতে রাজি তারা, যা প্রত্যাখ্যান করেছে জিডিএল৷
ছবি: Christian Charisius/dpa/picture alliance
6 ছবি1 | 6
তিনি জানিয়েছেন, ''সরকার ভাবছে, একটু-আধটু পরিবর্তন করে করবে, তারপর বলবে সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু তারা ভুল করছে। তারা যদি দাবি না মানে, তাহলে ডাক্তারদের ক্ষোভ বাড়বে।''
সরকারের আশা
সরকারের তরফ থেকে প্রধান আলোচনাকারী মনিকা হার্নল্ড বলেছেন, ''শেষ পর্য়ায়ের আলোচনা চলছিল এবং তাতে চুক্তি হয়নি। আলোচনা ভেস্তে যায়।''
তিনি বলেছেন, ''আমরাও চাই এই হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসকরা যে ভালো কাজ করছেন, তার বিনিময়ে তারা উপযুক্ত অর্থ পান। ফেব্রুয়ারিতে পরবর্তী পর্য়ায়ের আলোচনা হবে। তখন নিশ্চয়ই আলোচনা ফলপ্রসূ হবে।''
ধর্মঘট সত্ত্বেও হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাজ চালু থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, জরুরি পরিষেবা চালু রাখার জন্য ম্যানেজাররা আইনত বাধ্য। তবে ক্লিনিকের পরিষেবা বিঘ্নিত হতে পারে। জরুরি নয় এমন অপারেশনও পরে করা হবে।