জার্মানির এফেল্সব্যার্গ-এ রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেডিও টেলিস্কোপ৷ সেখানেই আছে ‘লোফার গার্ডেন’, সেটি এক অন্য ধরনের টেলিস্কোপের সমষ্টি৷ এই দুই মিলিয়ে জোতির্বিজ্ঞানীরা পাল্সার, কোয়াসার ইত্যাদির খোঁজ করেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির বাড ম্যুনস্টার-আইফেল এলাকার এফেল্সব্যার্গ-এ এই সুবিশাল ডিশ অ্যান্টেনাটি লাগানো আছে৷ এটি হল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেডিও টেলিস্কোপ৷
রমেশ কারুপ্পুস্বামী-র জন্ম ভারতে৷ মাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমি-তে জোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেন৷ প্রতিষ্ঠানটিতে এফেল্সব্যার্গ-এর যান্ত্রিক রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করে জ্যোতির্মণ্ডলের বিভিন্ন বস্তু পর্যবেক্ষণ করা হয়৷ রমেশ বলেন, ‘‘আমরা বাইরে যা দেখছি, সেটি হল এফেল্সব্যার্গ-এর একশো মিটার ব্যাসের রেডিও টেলিস্কোপ৷ এফেল্সব্যার্গ হল বন শহরের কাছে, আর এটি হল বিশ্বের বৃহত্তম ‘স্টিয়ারেবল' টেলিস্কোপগুলির অন্যতম, যা দিয়ে আমরা জ্যোতির্মণ্ডলের নানা বস্তু পর্যবেক্ষণ করতে পারি৷''
জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে কুরুপ্পুস্বামী পাল্সার অথবা নিউট্রন স্টার-এর মতো বস্তু পর্যবেক্ষণ করতে চান: এগুলি হল সূর্যের চাইতে বড় আকারের বিভিন্ন ধ্বংসপ্রাপ্ত নক্ষত্রের অবশেষ৷
মহাশূন্যে হাত বাড়াচ্ছে ইউরোপ
চালকযুক্ত স্পেস ক্যাপসুলটির নাম ওরিয়ন৷ এসা এবং নাসা ২০১৭ সালে যৌথভাবে এই ক্যাপসুলটিকে মহাশূন্য প্রেরণ করবে৷ এসা দেবে মুখ্য মডিউলটি৷
ছবি: ESA/Foster + Partners
তারা থেকে তারায়
চালকযুক্ত স্পেস ক্যাপসুলটির নাম ওরিয়ন৷ এসা এবং নাসা ২০১৭ সালে যৌথভাবে এই ক্যাপসুলটিকে মহাশূন্য প্রেরণ করবে৷ এসা দেবে মুখ্য মডিউলটি৷ ক্যাপসুলটি প্রথমে চন্দ্র প্রদক্ষিণ করবে৷ তারপর মহাশূন্যে অবস্থান নেবে একটি নির্দিষ্ট বিন্দু হিসেবে৷ হয়তো মঙ্গলগ্রহ যাত্রার পথে তা কাজে লাগবে৷
ছবি: ESA-D. Ducros, 2012
মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় অভ্যস্ত হওয়া
প্রথমে ইউরোপের নভচারীদের পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস’এ যাত্রা করার পালা৷ এসা’র অ্যাস্ট্রোনট ইটালির লুকা পার্মিতানো একটি জলের চৌবাচ্চায় স্পেস ওয়াক অভ্যেস করছেন৷ স্থান: কোলোনের কাছে ইউরোপীয় নভচারী কেন্দ্র (ইএসি)৷
ছবি: ESA/H. Rueb, 2010
আইএসএস’র জন্য তিন ইউরোপীয় নভশ্চর
লুকা পার্মিতানো আইএসএস’এ থাকবেন এ’বছরের মে মাস থেকে নভেম্বর মাস অবধি৷ ২০১৪ সালে এ’ভাবেই যাবেন জার্মানির আলেক্সান্ডার গের্স্ট৷ তারপরে যাবেন একজন মহিলা, ইটালির সামান্থা ক্রিস্টোফোরেত্তি৷
ছবি: dapd/NASA
মানুষের বদলে মাল পরিবহণ
তিন ইউরোপীয় নভশ্চর আইএসএস’এ যাবেন রুশ সোয়ুজ রকেটে চড়ে৷ এসা ইতিমধ্যে তথাকথিত অটোম্যাটিক ট্রান্সফার ভেহিকেল বা এটিভি’র মাধ্যমে আইএসএস’এ মালপত্র পাঠায়৷ পরের যাত্রা আগামী ১৮ই এপ্রিল৷ এটিভি’তে সাত টন খাদ্য ও সরঞ্জাম পাঠানো যায়৷
ছবি: ESA/S.Corvaja/dapd
চন্দ্রবাসের স্বপ্ন
চন্দ্রপীষ্ঠে এ’ধরনের একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন থেকে এসা এখনও অনেক দূর৷ সেখানে জন পাওয়া গেলে, তা’তে চাঁদের ধুলো মিশিয়ে বাড়িঘর তৈরি করা যেতে পারে৷ এবং চাঁদে জল আছে কিনা, চীনের চাঙ-ই ৩ রোভার চন্দ্রযান তা এ’বছরেই জানতে পারবে৷ চন্দ্রে অবতরণের পর এসা ঐ রোভারে তথ্য পাঠানোর ভার নেবে এবং তার গতিবিধি পরিচালনা করবে৷
ছবি: ESA/Foster + Partners
ডার্মস্টাট থেকে স্যাটেলাইট পরিচালনা
এসা’র ইউরোপীয় মহাকাশ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বা এসক থেকে চাঙ-ই ৩’এর আগের চীনা মহাকাশযানগুলিতে তথ্য পাঠানোয় সাহায্য করা হয়েছিল৷ চীনের আগের মহাকাশযানগুলি চন্দ্র প্রদক্ষিণ করেছে কিন্তু চন্দ্রপীষ্ঠে অবতরণ করেনি৷ এসক থেকে অপরাপর বহু গবেষণা ও যোগাযোগ সংক্রান্ত স্যাটেলাইটের যাত্রার উপর নজর রাখা হয়৷
ছবি: ESA - J. Mai
থ্রি-ডি’তে আমাদের ছায়াপথ
এ’বছরের অক্টোবর মাসে স্পেস প্রোব বা মহাশূন্য অভিযাত্রী যান ‘গাইয়া’ তার যাত্রা শুরু করবে৷ ইন্টারোফেরোমিটারের সাহায্যে আলোকতরঙ্গ থেকে আমাদের নক্ষত্রপুঞ্জের একটি থ্রি-ডি ছবি তৈরি করবে এবং ‘মিল্কি ওয়ে’ ছায়াপথের অনেক রহস্য উদঘাটন করবে৷ এসা’র গবেষকরা অন্তত এক বিলিয়ন নতুন তারা আবিষ্কার করার আশা করছেন৷ এমনকি তিন বিলিয়নও হতে পারে৷
ছবি: ESA/Medialab
গ্রহাণুর সন্ধানে
রোজেট্টা স্পেস প্রোব’টি ২০০৪ সাল যাবৎ ৬৭/পি চুরজুমভ-গেরাসিমেঙ্কো ধূমকেতু অভিমুখে যাত্রা করছে৷ ২০১৪ সালের সূচনায় মহাকাশযানটি ধূমকেতুটির কক্ষপথে যোগদান করবে৷ তবে ধূমকেতু অবধি পৌঁছতে পৌঁছতে রোজেট্টা অনেক কিছু দেখবে: নাসা’র ডিপ ইমপ্যাক্ট প্রোজেক্টাইলটি কিভাবে টেম্পল ওয়ান ধূমকেতুতে আঘাত করবে৷ এচাড়া রোজেট্টা দেখবে মঙ্গলগ্রহ এবং স্টাইনস ও লুটেশিয়া নামের দ’টি অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণু৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধূমকেতুর উপর অবতরণ
২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে রোজেট্টা ফিলি নামের এই রোবোটটিকে ধূমকেতুর উপরে নামাবে৷ কোলোনে অবস্থিত জার্মান বিমান ও মহাকাশযাত্রা কেন্দ্র ডিএলআর থেকে সেই অবতরণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে৷ কাজটা শক্ত হবে, কেনান ধূমকেতুটির মাধ্যাকর্ষণ খুব বেশি নয়৷ রোজ্ট্টা ধূমকেতুটির রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করবে৷
ছবি: ESA/AOES Medialab
স্যাটেলাইটের রিসাইক্লিং সম্ভব নয়
অর্ধশতাব্দী ধরে মহাকাশে রকেট ও স্যাটেলাইট পাঠানো হচ্ছে৷ এক সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় প্রায় ছ’লাখ নানা ধরনের ও আকারের স্ক্র্যাপ এ’ভাবে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে৷ এসা চাপ দিচ্ছে মহাশূন্যে আবর্জনা কমানোর জন্য: অকেজো স্যাটেলাইটগুলোকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রিতভাবে ভূপাতিত করতে হবে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
এফেল্সব্যার্গ-এর ১০০ মিটার ব্যাসের রেডিও টেলিস্কোপটি দিয়ে পাল্সার-দের খোঁজ পাওয়া যায়৷ পাল্সার-রা ১০০ গিগাহার্ত্স পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সির বেতার তরঙ্গ বিকিরণ করে৷ রমেশ বলেন, ‘‘এটা জোতির্মণ্ডলের বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তু পর্যবেক্ষণ করতে খুব সাহায্য করে৷ পাল্সার পর্যবেক্ষণ করে আমরা জানতে পারি, মাধ্যাকর্ষণ কীভাবে ‘স্পেসটাইমের' আকার বদলে দেয়৷''
তিনশো' মিটার দূরে বাগানের মাটিতে এক পর্যায় অমনি-ডাইরেকশনাল অ্যান্টেনা বসানো আছে৷ এটি হল একটি ‘লোফার' বাগান৷ লোফার, এলওএফএআর, অর্থাৎ লো-ফ্রিকোয়েন্সি অ্যারে হলো একটি নতুন ধরনের টেলিস্কোপ, যা তার অ্যান্টেনাগুলিতে সংগৃহীত ইলেকট্রনিক ডাটা-কে ডিজিটাল ডাটায় পরিণত করতে পারে৷ এফেল্সব্যার্গ-এর লোফার গার্ডেন হল ইউরোপের ১১টি দেশে ছড়ানো একটি মহাশূন্য পর্যবেক্ষণ প্রণালীর অঙ্গ৷
অন্যান্য টেলিস্কোপের সঙ্গে লোফার-এর তফাৎ এই যে, লোফার বহু ছোট ছোট, সমান্তরাল অ্যান্টেনার সমষ্টি৷ ছোট কেবেল যুক্ত এই খাড়া অ্যান্টেনাগুলো অতি নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সির সন্ধান দিতে সক্ষম৷ রমেশ বলেন, ‘‘এই টেলিস্কোপের কোনো সচল যন্ত্রাংশ নেই৷ যার অর্থ, এটা কোনোদিকে ঘোরানোর কাজটা পুরোপুরি ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে করা হয়৷ সিগনাল ধরা, প্রসেসিং, সব কিছুই চলে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে৷ ফলে এই টেলিস্কোপ তৈরির খরচ খুবই কম৷''
বিরল নক্ষত্রপুঞ্জের ঝাঁক এবং কোয়াসার খুঁজতে জোতির্বিজ্ঞানীদের সাহায্য করতে এই লোফার সৃষ্টি করা হয়েছিল৷ আইটি-টেলিস্কোপ হওয়ার কারণে লোফার যুগপৎ আকাশের বিভিন্ন অংশে নজর রাখতে পারে৷ অনেকটা জায়গা জুড়ে সাজানো অ্যান্টেনাগুলোর পাঠানো ডিজিটাইজড সিগনাল জুড়ে যে রেডিও চিত্র সৃষ্টি হয়, তা বেশ স্পষ্ট ও নিখুঁত৷
লোফার টেলিস্কোপ এবং যান্ত্রিক রেডিও টেলিস্কোপ মিলে এফেল্সব্যার্গ কেন্দ্রকে একটি প্রশস্ত দৃষ্টিকোণ দিয়েছে৷ রমেশ বলেন, ‘‘আমরা জানতে চাই, সূর্য কোথা থেকে এসেছে, পৃথিবী কোথা থেকে এসেছে৷ পৃথিবীর আয়ু কতদিন, সূর্য কতদিন থাকবে৷ সূর্য কি অনন্তকাল থাকবে? এগুলো খুবই দার্শনিক প্রশ্ন৷ আমরা জোতির্বিজ্ঞান ব্যবহার করে এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পারি৷''
শহর থেকে দূরে গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ার ফলে এফেল্সব্যার্গ এই রেডিও টেলিস্কোপের জন্য আদর্শ৷ চতুর্দিকের সবুজ পাহাড় আবার মানুষের পাঠানো ইলেকট্রনিক সিগনাল থেকে এফেল্সব্যার্গকে বাঁচিয়ে রাখে৷