জার্মানির অনেক পরিবারে তিন বা তারও বেশি সন্তান রয়েছে৷ তবে এসব পরিবারের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রয়েছে অভিবাসনের ইতিহাস৷
জার্মানিতে তিন বা ততোধিক সন্তান আছে এমন পরিবারের সংখ্যা ১৯৯৬ সালে ছিল ২৫ শতাংশ৷ পরের দুই দশকের ব্যবধানে ২০১৫ সালে তা কমে হয়েছিল ২৩ শতাংশ৷ কিন্তু ২০২৪ সালে আবারও তা বেড়ে হয়েছে ২৬ শতাংশ৷ছবি: Bernd Thissen/dpa/picture alliance
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিকাল অফিস বা কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় (ডেস্টাটিস) জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জার্মানিতে বড় পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুদের সংখ্যা আবারও বাড়তে শুরু করেছে৷ এই প্রবণতা শুরু হয়েছে ২০১৫ সাল থেকে অর্থাৎ জার্মানিতে যখন তীব্রভাবে অভিবাসন প্রবাহ শুরু হয় সেই সময় থেকে৷
জার্মানিতে তিন বা ততোধিক সন্তান আছে এমন পরিবারের সংখ্যা ১৯৯৬ সালে ছিল ২৫ শতাংশ৷ পরের দুই দশকের ব্যবধানে ২০১৫ সালে তা কমে হয়েছিল ২৩ শতাংশ৷ কিন্তু ২০২৪ সালে আবারও তা বেড়ে হয়েছে ২৬ শতাংশ৷
ডেস্টাটিস বলছে, ‘‘গত দশ বছরে এই সংখ্যাটি সম্ভবত ২০১৫ সালে শুরু হওয়া অভিবাসন প্রবাহের কারণে বেড়েছে৷''
জার্মানির ভিসায় কড়াকড়ি বাড়ছে: যা যা জানা দরকার
01:17
This browser does not support the video element.
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জার্মান পরিবারগুলোর তুলনায় অভিবাসনের ইতিহাস রয়েছে এমন পরিবারগুলোতে তিন বা ততধিক সন্তান রয়েছে৷ ২০২৪ সালে জার্মানিতে অবস্থানরত ১৯ শতাংশ অভিবাসী পরিবারে কমপক্ষে তিনটি সন্তান ছিল৷
জার্মানিতে পরিবারের আকার
ডেস্টাটিস জানিয়েছে, ২০২৪ সালে জার্মানির আট শতাংশ শিশু তিন বা ততোধিক ভাই-বোনের সঙ্গে বেড়ে উঠছিলেন৷ আর ১৮ শতাংশ শিশুর ছিল দুই ভাই-বোন৷ তবে, পরিসংখ্যানে এক ভাই-এক বোন রয়েছে এমন শিশুর সংখ্যা ৪৪ শতাংশ, যা সবচেয়ে বেশি৷ আর ৩০ ভাগ শিশু পরিবারের একমাত্র সন্তান হিসেবে বেড়ে উঠছিল৷
জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় ফেডারেল রাজ্যগুলোতে বড় পরিবারের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি৷ সেখানকার ১৩ শতাংশ পরিবারে কমপক্ষে তিনটি সন্তান আছে৷ বিপরীতে, পূর্ব জার্মানিতে এই হার ১১ শতাংশ৷
ছোটো পরিসরে করা বার্ষিক আদমশুমারি থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ডেস্টাটিস৷ এই বিশেষ আদমশুমারিতে জার্মানির মোট জনসংখ্যার এক শতাংশের তথ্য সংগ্রহ করা হয়৷
জার্মানিতে ৪ লাখ ৩০ হাজার ডে কেয়ার-এর ঘাটতি রয়েছে৷ শিশু পরিচর্যা কর্মীও প্রয়োজনের তুলনায় এক লাখ ২০ হাজার কম৷ কোলনের কিছু কিন্ডারগার্টেন তাই অভিবাসী কর্মী নিয়োগ করে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Oliver Pieper/DW
জার্মানিতে শিশু পরিচর্যায় সংকট
জার্মানিতে বর্তমানে ৪ লাখ ৩০ হাজার ডে কেয়ারের অভাব রয়েছে। একটি জরিপে ১ লাখ ২৫ হাজার কর্মীর অভাবের কথাও বলা হয়েছে। এই সংকট জার্মানির পশ্চিম অংশে, বিশেষ করে নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়াতে বেশি তীব্র৷
ছবি: Oliver Pieper/DW
শিশু পরিচর্যা সংকটের অর্থনৈতিক প্রভাব
শিশু পরিচর্যা কর্মীর অভাব জার্মান অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। স্টেপস্টোনের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, শিশু পরিচর্যা সংকটের কারণে জার্মানির প্রতি বছর ২৩ বিলিয়ন ইউরোর ক্ষতি হচ্ছে। প্রতি বছর ১ দশমিক ২ বিলিয়ন কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের কাজের সময় কমাতে বাধ্য হচ্ছে।
ছবি: K. Schmitt/Fotostand/IMAGO
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
শিশু পরিচর্যা খাতে কর্মী-সংকটের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও রয়েছে। সাবেক পূর্ব জার্মানিতে নারীদের কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য শক্তিশালী শিশু পরিচর্যা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল, কিন্তু পশ্চিম জার্মানি তেমন কোনো উদ্যোগ ছিল না। জার্মানির পশ্চিমাংশে তাই শিশু পরিচর্যা পরিষেবার অভাব এখনো বেশি।
ছবি: Ebrahim Noroozi/PA/picture alliance
দ্বিভাষিক ডে কেয়ার
সমস্যার সমাধানে কোলনের একটি কিন্ডারগার্টেন বাইলিঙ্গুয়াল, অর্থাৎ দ্বিভাষিক শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এই সেন্টারটি স্প্যানিশ এবং জার্মান ভাষায় শিক্ষা দেয় এবং শিশুদের গান গাইয়ে এবং বিশেষ ধরনের খেলাধুলার মাধ্যমে দ্বিতীয় ভাষা শিখতে সহায়তা করে।
রস্টকের এক নার্সারি স্কুলের শিক্ষক কাতজা রস ‘এভরি চাইল্ড কাউন্টস’ নামে এক গণস্বাক্ষরতা অভিযান শুরু করেছেন৷ এ পর্যন্ত ২ লাখ ২০ হাজার ১৮০ জনের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তিনি। রস এবং তার সহযোদ্ধারা শিশু পরিচর্যা পেশাদারদের জন্য ভালো কাজের পরিবেশ, ভাষা শিক্ষা, শিশু পরিচর্যার স্থান বাড়ানোসহ নানা দাবি আদায়ের জন্য লড়ছেন৷
ছবি: Lars Heidrich/Funke Foto Services/IMAGO
অভিবাসী কর্মীদের জন্য সুযোগ
সিঞ্চিয়া মালকা-বুচহোলজ ২০১৩ সালে বাইলিঙ্গুয়াল শিক্ষার উদ্যোগ শুরু করেছিলেন। এখন তিনি সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ডিরেক্টর। তিনি বলেন, ‘‘এই বাইলিঙ্গুয়াল পদ্ধতি শুধুমাত্র শিশুদের জন্য নয়, বরং বিদেশ থেকে প্রশিক্ষিত শিশু পরিচর্যা কর্মীদের জন্যও নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে৷’’