জার্মানিতে ভালো খাবার কিনতে সক্ষম মানুষ আরো কমেছে
১ আগস্ট ২০২৩
পরিসংখ্যান বলছে, মাছ, মাংস বা দামি সবজি কেনার সামর্থ্য হারিয়েছেন অনেক জার্মান৷ আর্থিক অনটনের কারণে সিঙ্গল প্যারেন্ট, অর্থাৎ বাবা বা মা একা সন্তান লালন-পালন করেন, এমন পরিবারগুলোর পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য সবচেয়ে কম৷
জার্মানির ১১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারেন নাছবি: Jin Mamengni/Xinhua/IMAGO
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ১১ শতাংশেরও বেশি মানুষ প্রতি দুই দিনেও ভালো, পুষ্টিযুক্ত খাবার খেতে পারে না৷ নতুন পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি দুই দিনেও জার্মানদের মধ্যে অনেকে মাছ, মাংস বা দামি সবজি কিনতে পারেন না৷
২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে জার্মান বাণিজ্য বিষয়ক সংবাদ সংস্থা্ ‘রিডাকৎসিয়নসনেটসভেয়ার্ক ডয়েচল্যান্ড' সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের বরাত দিয়ে তারা জানায়, এখন জার্মানির ১১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারেন না৷ আগের বছরের চেয়ে এমন মানুষ অনেক বেড়েছে বলেও জানিয়েছে তারা৷ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জার্মানির অন্তত ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ সিঙ্গল প্যারেন্টের প্রতি দিন পুষ্টিযুক্ত খাবার কেনার সামর্থ্য নেই৷ ২০২১ সালে এমন সিঙ্গল প্যারেন্ট ২.৬% কম ছিল৷
জার্মানি : ধনী দেশের গরিবেরা যেমন
করোনা মহামারির সময় ধনী আর গরিবের ব্যবধান বাড়তে না দেয়ার উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও জার্মানিতে এ ব্যবধান বেড়েছে৷ এ দেশের মানদণ্ডে গরিবদের আরো গরিব হওয়ার নমুনা দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Markus C. Hurek/dpa/picture alliance
ধনী দেশে পথের পাশে দরিদ্র মানুষ
বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ জার্মানি৷ এ দেশেও আছে গৃহহীন মানুষ৷ করোনা মহামারির সময় গৃহহীনের সংখ্যা বেড়েছে৷
ছবি: Rupert Oberhäuser/picture alliance
ব্যয় কমিয়ে বাঁচার চেষ্টা
করোনার পর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ায় জ্বালানি এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে৷ সন্তানের মুখে আহার তুলে দিতে জার্মানির অনেক মা এখন নিজে একবেলা না খেয়ে থাকেন বা খেলেও কম খান৷ অবসর ভাতায় চলতে পারেন না বলে অনেক প্রবীণ বোতল কুড়ান৷ তা বিক্রি করে সামান্য কিছু অর্থ আসে, তাতেই তারা খুশি!
ছবি: Rupert Oberhäuser/picture alliance
দারিদ্র্য বাড়ছে জার্মানিতে
জার্মানিতে দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ছে- এ শুধু বিশ্লেষকদের অনুমান নয়, পারিট্যাটিশে ভলফারট্সফারবান্ড নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানও বলছে এ কথা৷ তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এ মুহূর্তে জার্মানির এক কোটি ৩৮ লাখের মতো মানুষ হয় দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করছেন, নয়তো দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছেন৷
ছবি: imago images/epd
২০তম ধনী দেশ জার্মানি
২০২১ সালে মাথাপিছু জিডিপির হিসেবে বিশ্বের ২০ তম ধনী দেশ হয়েছিল জার্মানি৷সে বছর জার্মানির মাথাপিছু বার্ষিক জিডিপি ছিল ৫২ হাজার ২০০ ইউরো (৫০ হাজার ৭০০ ডলার)৷ এক লাখ ৩৬ হাজার ৭০০ ইউরো মাথাপিছু বার্ষিক জিডিপি নিয়ে সবচেয়ে ধনী দেশের স্বীকৃতি পেয়েছিল লুক্সেমবুর্গ৷ সবচেয়ে কম মাত্র ২৭০ ইউরো বার্ষিক মাথাপিছু জিডিপি ছিল বুরুন্ডির৷ সে কারণে ২০২১ সালে আফ্রিকার এই দেশটিই ছিল বিশ্বের দরিদ্রতম৷
ছবি: Markus C. Hurek/dpa/picture alliance
জার্মানিতে দরিদ্র কারা
কোনো ব্যক্তির মাসিক আয় এক হাজার ১৪৮ ইউরোর চেয়ে কম হলে তিনি দারিদ্র্যসীমার নীচে আছেন বলে ধরে নেয়া হয়৷তবে এক সন্তান আছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে মাসিক আয় কমপক্ষে এক হাজার ৪৯২ ইউরো হতে হয়, না হলে তাকেও দারিদ্র্যসীমাধীন বলে ধরে নেয়া হয়৷ দুই সন্তানের বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে আয়সীমাটা দু হাজার ৪১০ ইউরো, অর্থাৎ আয় তার চেয়ে কম হলে জার্মানির মানদণ্ডে তারাও দারিদ্র্যসীমার নীচে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska
দ্রব্যমূল্যের চাপে পিষ্ট মানুষ
জার্মানিতে কেউ চাকরি না পেলে বা কাজ করতে না পারলে সরকার তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেয়৷ সেই প্রণোদনার অংশ হিসেবে ৪৪৯ ইউরো দেয়া হয় সারা মাসের খাদ্য, বস্ত্র, গৃহস্থালী নানা পণ্য কেনা এবং ঘরের যাবতীয় বিল পরিশোধের জন্য৷এছাড়া প্রতিটি শিশুর জন্য দেয়া হয় (বয়সভেদে) ২৮৫ থেকে ৩৭৬ ইউরো৷ কিন্তু দ্রব্যমূল্য এত বেড়েছে যে, ওলাফ শলৎস সরকার এ ভাতা ৪৪৯ থেকে বাড়িয়ে ৫০৩ ইউরো করার কথা ভাবছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Steinberg
অপ্রতুল সরকারি উদ্যোগ
সমাজ বিজ্ঞানী এবং দারিদ্র্য গবেষক ক্রিস্টোফ বুটারভেগে মনে করেন, মাসিক সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা কমপক্ষে ৬৫০ ইউরো না করলে দুর্মূল্যের এ বাজারে অনেক মানুষের জন্য তিনবেলা পর্যাপ্ত খাওয়া কঠিন হবে৷প্রসঙ্গত, জার্মানিতে রুটি, দুধ, ফল এবং শাকসবজির দাম ২০২০ সালের তুলনায় এ বছর শতকরা ১২ ভাগেরও বেশি বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER
বার্ধক্যে দারিদ্র্যের জ্বালা
বের্টেলসমান ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্মানিতে প্রবীণদের মধ্যেও দারিদ্র্য বাড়ছে৷ কয়েক দশক কাজ করে যারা মাসিক অবসর ভাতায় আয়েশে জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাদের কেউ কেউ দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে খণ্ডকালীন কাজে যোগ দিচ্ছেন৷ কাজ করেও নারীরা কুলাতে পারছেন না৷ পুরুষদের চেয়ে পারিশ্রমিক কম বলে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হচ্ছে তাদের৷
ফুলটাইম জব, অর্থাৎ দিনে আট ঘণ্টা কাজ করেও সেই আয়ে সংসার চালাতে পারছেন না- এমন মানুষের সংখ্যাও জার্মানিতে বাড়ছে৷এতদিন সন্তানহীন কোনো মানুষ ঘণ্টায় ১২ ইউরো হিসেবে দিনে আট ঘণ্টা করে সপ্তাহে মোট ৪০ ঘণ্টা কাজ করতেন৷ বিনিময়ে প্রতি মাসে পেতেন এক হাজার ৪৮০ ইউরোর মতো৷ দিব্যি চলে যেতো তাতে৷এখন তাতে চলছে না বলে অনেকেই আরেকটা খণ্ডকালীন কাজ করছেন৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTOs
9 ছবি1 | 9
প্রতিক্রিয়া
এই তথ্য জানতে চাওয়ার আবেদন করেছিল জার্মানির বামপন্থি দল ডি লিংকে৷ দলের সংসদীয় নেতা ডিটমার বার্টশ ‘খাদ্যপণ্যের উর্ধ্বগামী দাম'থামাতে বিফল হবার জন্য সরকারের সমালোচনা করেন৷
তিনি বলেন, ‘‘সুপারমার্কেটগুলি ঠকানোর বাজার হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ যত বেশি দাম, তত বেশি কেচাপ মাখানো পাস্তা৷''
সরকারের কাছে তার অনুরোধ, সুপারমার্কেটগুলির দাম নিয়ন্ত্রণ করতে সাময়িকভাবে জরুরি খাদ্যপণ্যে সেলস ট্যাক্স স্থগিত রাখা হোক৷