গত জানুয়ারি মাসেই এ ঘোষণা দিয়েছিল ফেসবুক৷ একটি ‘টেস্ট’ পর্যায়ে ইউজাররা সন্দেহজনক পোস্টিংগুলিকে ‘ফ্ল্যাগ’ করতে পারবেন ও একটি ফ্যাক্ট-চেকিং সংগঠন সেগুলির সত্যতা যাচাই করবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
বিজ্ঞাপন
২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসেই ফেসবুক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের একটি কর্মসূচি শুরু করে৷ এক্ষেত্রে ফেসবুক এবিসি নিউজ ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মতো সংবাদ সংগঠনের সঙ্গে সহযোগিতা করবে; অপরদিকে পলিটিফ্যাক্ট, স্নোপস এবং ফ্যাক্টচেকের মতো ফ্যাক্ট-চেকিং গ্রুপ বিতর্কিত কাহিনীগুলির সত্যতা যাচাই করবে৷
ফেসবুক যে এই পন্থা পরীক্ষা করার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে জার্মানিকে বেছে নিয়েছে, তার একটা কারণ এও হতে পারে যে, গতবছরের শেষে জার্মান সরকার ঘোষণা করেছে যে, ফেক নিউজের বিস্তারের জন্য দায়ী কোম্পানিগুলির উপর কঠিন অর্থদণ্ড আরোপের কথা ভাবা হচ্ছে৷ যেমন: ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর তথ্য বা হেট স্পিচ রিপোর্ট হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরানো না হলে ৫০০,০০০ ইউরো অবধি ফাইন হতে পারে৷
ভাইরাল হওয়া কিছু ভুয়া খবর
আজকাল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক তাজা খবর শেয়ার করা হয়৷ কিন্তু সেই খবরগুলোতে অনেক ভুয়া খবরও থাকে৷ অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিভ্রান্তও হন৷ ছবিঘরে থাকছে ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ছড়ানো কয়েকটি ভুয়া খবর৷
একটি ফেসবুক লাইভে দেখাচ্ছিল আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র থেকে নভোচারীদের স্পেসওয়াক করার দৃশ্য৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ভাইরাল হয়ে যায়৷ ইউএনআইএলএডি, ভাইরাল ইউএসএ এবং ইন্টারেসটিনেট- এটি পোস্ট করার পর ফেসবুকে বিপুল পরিমাণ লাইক ও শেয়ার হয়৷ কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ফুটেজের কোথাও নাসা বা ফেসবুকের লাইভ স্ট্রিম কথাটির উল্লেখ ছিল না৷ পরে নাসা’র এক মুখপাত্র জানান, ভিডিওটি ২০১৩ সালে রুশ নভোচারীদের ধারণ করা ভিডিও৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Nasa
করোনা বিয়ারের প্রতিষ্ঠাতার উইল
২০১৬ সালের অন্যতম ভাইরাল খবর এটি-করোনা বিয়ার-এর প্রতিষ্ঠাতা আন্তোনিও ফার্নান্দেজ মৃত্যুর আগে তাঁর জন্মভূমি স্পেনের একটি গ্রামের ৮০টি পরিবারের মধ্যে ২০ কোটি ইউরো দান করার উইল করে গেছেন৷ ডেইলি মেইল প্রথমে খবরটি প্রকাশ করে স্থানীয় পত্রিকার বরাত দিয়ে৷ পরে আরটি, দ্য ইন্ডেপেন্ডেন্ট, দ্য মিররসহ বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রও তা প্রকাশ করে৷ পরে ফার্নান্দেজের পরিবার প্রতিবাদ জানানোয় তারা খবরটি সরিয়ে ফেলে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M. Rourke
ধর্ষণের ভুয়া খবর
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বার্লিনে লিজা নামের এক জার্মান কিশোরীকে এক দল অভিবাসীর ধর্ষণ করার খবর ভাইরাল হয়ে যায়৷ বিশেষ করে রুশ মিডিয়ায় খবরটি বিপুল কভারেজ পায়৷ পরে কিশোরীটি জানায়, সে সব কিছু বানিয়ে বলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Wuestenhagen
মার্কিন নির্বাচন
মার্কিন নির্বাচনে যে ভুয়া খবরটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছিল তাতে ছিল ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধের মাত্রার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফলের তুলনা৷ এছাড়া নির্বাচনের ফলাফলের এমন একটি মানচিত্র ওয়াশিংটন পোস্ট প্রকাশ করেছিল, যেটির দিকে ভালোভাবে তাকালে বোঝা যায় একেবারে ওপরে ২০১২ সালের উল্লেখ রয়েছে৷
ট্রাম্প এবং সিম্পসন
সিম্পসন কার্টুনে বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী থাকে৷ আর এ কারণে ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর একটি ট্রল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে বলা হয় সিম্পসনে আগেই বলা হয়েছিল, ট্রাম্প নির্বাচনে জিতবেন৷ কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু হয়নি৷ অথচ টুইটারে বাস্তব আর পুরোনো ভুয়া সিম্পসনের ছবি দেয়ায় নিউজটি ভাইরাল হয়ে যায়৷
ছবি: INTERTOPICS / Taschen-Verlag
শোকার্ত ক্যাঙ্গারু
ডেইলি মেইল এমন একটি ছবি প্রকাশ করে যেখানে দেখানো হয় এক পুরুষ ক্যাঙ্গারু নারী ক্যাঙ্গারুকে দুই হাতে ধরে অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে আছে৷ ইভান সুইৎজারের তোলা ছবিটি এভাবে উপস্থাপনের কারণে ভাইরাল হয়ে যায়৷ তবে ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞরা জানান, নারী ক্যাঙ্গারুর সঙ্গে যৌন মিলনের ইচ্ছে জাগলে পুরুষ ক্যাঙ্গারুর চোখ অশ্রুসজল হয়, তখনই তারা দুই হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে নারী ক্যাঙ্গারুকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে৷
ছবি: DW/C. Atkinson
বিখ্যাত গণমাধ্যমের নকল
ভুয়া খবর প্রচারকারীরা জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত ওয়েবসাইটগুলোকে নকল করে ৷ ফলে মানুষ খুব ভালোভাবে লক্ষ্য না করলে বুঝতে পারে না, সেগুলো প্রকৃত ওয়েবসাইট, নাকি ভুয়া৷ যেমন, এবিসি নিউজ ডট কম এর সঙ্গে ডট সিও যুক্ত করে (ABCnews.com.co), ব্লুমবার্গের সঙ্গে ডট এমএ যুক্ত করে, ওয়াশিংটন পোস্ট ডট কম- এর সঙ্গে ডট সিও যুক্ত করে কয়েকটি ভুয়া সংবাদ সাইট তৈরি করা হয়েছে৷ এসব ওয়েবসাইটের কাজই ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করা৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
7 ছবি1 | 7
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পর থেকে বহু জার্মান রাজনীতিকের আশঙ্কা যে, রাশিয়া আগামী সেপ্টেম্বরে জার্মান সংসদীয় নির্বাচনের আগে অনুরূপ প্রভাব ফেলার চেষ্টা করতে পারে৷ যে ধরনের ভুয়া খবর ছড়িয়ে নির্বাচনের ফলাফলকে রাশিয়ার অনুকূল করে তোলা সম্ভব, সেগুলোকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অবাধ বিস্তার লাভ করতে দেওয়া যায় না৷
ভুয়া খবরের কিছু দৃষ্টান্ত
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বার্লিনে লিজা নামের এক জার্মান কিশোরীকে এক দল অভিবাসী ধর্ষণের খবর ভাইরাল হয়ে যায়৷ বিশেষ করে রুশ মিডিয়ায় এই খবর বিপুল কভারেজ পায়৷ পরে কিশোরীটি স্বীকার করে যে, সে সব কিছু বানিয়ে বলেছে৷
২০১৭-র সূচনায় আসে মার্কিন ব্রাইটবার্ট সংস্থা থেকে শুরু হয়ে জার্মানিতে ছড়িয়ে পড়ে একটি ভুয়া কাহিনী৷ সেখানে বলা হয়, ১,০০০ সিরীয় উদ্বাস্তু ‘জার্মানির প্রাচীনতম গির্জায় আগুন ধরিয়েছে'৷ তার কিছুদিন পরেই সিরীয় উদ্বাস্তু আনাস মোদামানি ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করেন, কেননা মোদামানি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে তাঁর সেল্ফি পোস্ট করার পর তার বিরুদ্ধে ব্রাসেলসের সন্ত্রাসী আক্রমণে জড়িত থাকার যে ফেক নিউজ প্রকাশিত হয়েছিল, ফেসবুক তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷
সেপ্টেম্বরে জার্মানিতে নির্বাচন৷ বাজফিড খবর দিয়েছে যে, চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ভুয়া খবরের সংখ্যা ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে এবং তার মধ্যে দক্ষিণপন্থি সূত্র থেকে আসা নেতিবাচক খবরই বেশি৷
অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen
ফেক নিউজ ফিল্টারিং টুল...
‘ফেক নিউজ ফিল্টারিং টুল' থেকে শুরু করে ‘ফ্যাক্ট-চেক বাটন' অবধি বিভিন্ন নাম দেওয়া হচ্ছে বস্তুটিকে৷ ফেসবুক ব্যবহারকারী যদি কোনো পোস্ট দেখে মনে করেন যে, এটা ফেক নিউজ হতে পারে, তাহলে তারা পোস্টটির ওপরের ডান দিকের কোণায় ক্লিক করে সেটিকে ফেক নিউজ হিসেবে ফ্ল্যাগ করতে পারবেন৷ ফেসবুকের কর্মীরা তখন সেই পোস্টটিকে দেখবেন, সেই সঙ্গে সেটিকে পাঠানো হবে বার্লিন ভিত্তিক একটি নিরপেক্ষ ফ্যাক্ট-চেকিং সংগঠনে, যার নাম ‘করেক্টিভ'৷ করেক্টিভ যদি পোস্টের কাহিনীটিকে অনির্ভরযোগ্য মনে করে, তাহলে সেটিকে ‘ডিসপিউটেড' বা ‘বিতর্কিত' বলে ফ্ল্যাগ করা হবে৷
ফেক নিউজ হিসেবে ফ্ল্যাগ করা থাকলেও লোকে সেটিকে শেয়ার করতে পারবেন, কিন্তু তারা একটি ওয়ার্নিং পাবেন৷ এছাড়া পোস্টটি নিউজ ফিডের অ্যালগরিদমে অগ্রাধিকার পাবে না৷