টাকার বিনিময়ে অনেক জার্মান অভিবাসী শিশুদের বাবা হচ্ছেন, যাতে সেই সন্তানের এবং তার মায়ের ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত হয়৷ তবে এরকম ভুয়া বাবাদের আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তি দেয়াটা বেশ জটিল মনে হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বার্লিনের কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার স্বীকার করেছে যে, দেশজুড়ে ‘ভুয়া বাবার' সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে৷ এ রকম বাবার সংখ্যা অন্তত পাঁচ হাজার বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ৷
দেখা গেছে, একজন জার্মান অর্থের বিনিময়ে একটি অভিবাসী শিশুর পিতৃত্ব গ্রহণ করে৷ এতে করে সেই শিশু সহজে জার্মান পাসপোর্ট পেয়ে যায়৷ আর শিশুটি জার্মান পাসপোর্ট পেলে তার মা-ও জার্মানিতে বসবাসের অনুমিত লাভ করে৷
জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি স্টেট সেক্রেটারি ওলে শ্যোর্ডার এই বিষয়ে বলেন, ‘‘অভিবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত করতে মিথ্যা অভিভাবকত্ব গ্রহণের এই চর্চা দেশব্যাপী দ্রুতহারে বাড়ছে৷'' তিনি বলেন, এ রকম পাঁচ হাজার ঘটনার কথা সরকার জানলেও প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে৷
‘এতিম’ শিশু শরণার্থীরা ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার
ইউরোপে আশ্রয় মিলছে শরণার্থীদের৷ খারাপ খবরও আসছে তাদের নিয়ে৷ সপ্তাহে একটি দেশেই অন্তত ৭০০ এমন শিশু আসছে যাদের বাবা-মা সঙ্গে নেই৷ ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অনেকেই৷ গ্রিসে শুরু হয়েছে শরণার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Djurica
বছরে ৫ লাখ শরণার্থী নেবে জার্মানি
কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী নিরাপদ এবং উন্নত জীবনের আশা নিয়ে প্রবেশ করেছে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ায়৷ জার্মানির ডেপুটি চ্যান্সেলর সিগমার গাব্রিয়েল জানিয়েছেন, আগামী কয়েক বছর জার্মানি বছরে ৫ লক্ষ করে অভিবাসনপ্রত্যাশী নিতে পারবে৷ তিনি আরো জানান, এত শরণার্থী নিলেও সরকার জনগণের ওপর বাড়তি করারোপ করবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
বাড়িতে শরণার্থী রাখতে আগ্রহী ব্রিটিশরা, সরকারের ওপর বাড়ছে চাপ
শিশু আয়লানের লাশের ছবি নিয়ে আলোড়নের পর বছরে ২০ হাজার শরণার্থী নিতে রাজি হয়েছে ব্রিটেন৷ তবে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের এই ঘোষণায় ব্রিটিশরাই সন্তুষ্ট নয়৷ এখনো অনেক ব্রিটিশ ইন্টারনেটে নিজের বাড়িতে শরণার্থী রাখার আগ্রহ প্রকাশ করে সরকারের প্রতি আরো উদার হবার আহ্বান জানাচ্ছেন৷ প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টিও একই দাবি তুলেছে৷ ব্রিটেন আরো বেশি শরণার্থী নেবে কিনা এ নিয়ে আলোচনা হবে সংসদে৷
ছবি: Reuters/T. Melville
গ্রিসে শরণার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ, শঙ্কিত ইইউ সভাপতি
শরণার্থী আর পুলিশের মধ্যে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়েছে গ্রিসের লেসবস দ্বীপে৷ আড়াই হাজারের মতো অভিবাসনপ্রত্যাশী এথেন্সে যাওয়ার জন্য জোর করে জাহাজে উঠতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়৷ তারপরই শুরু হয় সংঘর্ষ৷ এদিকে তুরস্কের কাছাকাছি দেশ হওয়ায় গ্রিসে সিরীয় শরণার্থীর ঢল অব্যাহত রয়েছে৷ ইইউ সভাপতি ডোনাল্ড টাস্ক এ নিয়ে শঙ্কিত৷ তিনি মনে করেন, সিরিয়া থেকে অবাধে লোক আসার এই ধারা আগামী কয়েক বছর ধরে চলতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AA/A. Mehmet
সুইডেনে ‘এতিম’ শিশু শরণার্থী
তাদের বাবা-মা বেঁচে আছে কিনা, বেঁচে থাকলে কোথায় আছে- শিশুরা তা বলতে পারেনা৷ প্রাণ বাঁচাতে একা একাই দেশ ছেড়ে তারা চলে এসেছে ইউরোপে৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে শুধু সুইডেনেই ৭০০-র মতো এমন শিশু আসছে৷ ওপরের ছবিটি হাঙ্গেরির৷
ছবি: Reuters/L. Balogh
পথে পথে শিশুনির্যাতন
শুধু সিরিয়া নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ, এমনকি আফ্রিকা অঞ্চল থেকেও আসছে শিশু শরণার্থী৷ ডেনমার্কের ওরেসুন্ড ব্রিজ হয়ে তারা ঢুকে পড়ছে সুইডেনে৷ শিশুদের অনেকেই আহত, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনে বিপর্যস্ত৷ চলন্ত ট্রাক থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে আহত হচ্ছে অনেকে৷ অনেকে আবার ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার৷ মানবপাচারকারীরাই করছে ধর্ষণ, নির্যাতন৷
ছবি: Reuters
5 ছবি1 | 5
অনেকক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, যিনি অভিবাসী শিশুর বাবা হচ্ছেন, তিনি আসলে বেকার এবং সরকারি ভাতা নির্ভর জীবনযাপন করেন৷ ফলে সন্তানের পিতা হলেও তাকে সন্তানের জন্য কোনো খরচ দিতে হয় না৷ বার্লিনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরবিবি জানাচ্ছে, শুধু বার্লিনেই এ রকম সাতশ' বাবার খবর জানে সরকার৷ সেখানকার রাজ্য কৌঁশুলির কার্যালয়ের এক মুখপাত্র মার্টিন শ্যেল্টনার সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন যে, বার্লিনে এমন এক ভুয়া বাবার সন্ধান পাওয়া গেছে, যিনি দশটি শিশুর পিতৃত্ব দাবি করেছেন৷
শ্যেল্টনার অবশ্য এ-ও জানিয়েছেন যে, এমন বাবাদের শাস্তির আওতায় আনা বর্তমানে দুষ্কর৷ কেননা, সন্তানটি আসলেই সেই ব্যক্তির কিনা তা জানার জন্য তার ডিএনএ পরীক্ষার এখতিয়ার এই মুহূর্তে সরকারের নেই৷ ডিএনএ পরীক্ষা করলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুন্ন হতে পারে৷ ফলে একটি শিশুর জন্ম নিবন্ধনে বাবা হিসেবে যার নাম থাকে, জার্মান আইনে তিনিই বাবা, এমনকি যদি তিনি ‘বায়োলজিক্যাল ফাদার' না হন, তাহলেও৷
উল্লেখ্য, এর আগে ভুয়া বিয়ের মাধ্যমে অভিবাসীদের জার্মান নাগরিকত্ব দেয়ার চর্চা ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছিল জার্মানিতে৷ তবে আইনের মাধ্যমে সেই চর্চায় লাগাম টানা সম্ভব হয়েছে৷ ভুয়া বাবাদের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সেরকম উদ্যোগ ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
এ বিষয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷