৫১ শতাংশ জার্মান মনে করেন, জার্মানিতে ‘নো-গো’ বা অপরাধপ্রবণ অঞ্চল রয়েছে৷ এর বিপরীতটা মনে করেন ৪১ শতাংশ নাগরিক৷ পুলিশ অপরাধচক্রকে অচিরেই কঠোরভাবে দমন করতে সক্ষম হবে বলে এ বিষয়েও ৭৭ শতাংশ জার্মান আশাবাদী৷
বিজ্ঞাপন
বেশিরভাগ জার্মানই মনে করেন, তাঁদের দেশে এমন কিছু আইন-শৃঙ্খলাহীন অরাজক অঞ্চল রয়েছে যেখানে আইন ও পুলিশ পৌঁছাতে পারে না৷
রোববার জার্মানির সবচেয়ে বেশি প্রচারিত ট্যাবলয়েড পত্রিকা ‘বিল্ড’ পরিচালিত এক জরিপের ফলাফলে এমন চিত্রই উঠে এসেছে৷
যদিও দেশটিতে ‘মগের মুল্লুক’ থাকার ব্যাপারে নাগরিক জরিপে উঠে আসা এই আশঙ্কার বিপরীতে বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন৷
বিল্ড পত্রিকার ঐ জরিপে অংশ নেওয়া ৫১ শতাংশ জার্মান মনে করেন, জার্মানিতে ‘নো-গো’ বা অপরাধপ্রবণ অঞ্চল রয়েছে৷ এর বিপরীত মনে করেন ৪১ শতাংশ নাগরিক৷ তবে জরিপের ফল বলছে, পুলিশ অপরাধচক্রকে অচিরেই কঠোরভাবে দমন করতে সক্ষম হবে বলেই ৭৭ শতাংশ জার্মান আশাবাদী৷
জার্মানিতে নারী-পুরুষের বেতনে ব্যাপক ফারাক
জার্মানিতে একই পেশায় মহিলারা পুরুষদের চেয়ে গড়ে ২১ শতাংশ কম বেতন বা পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন৷ সত্তরটির বেশি পেশার মধ্যে মাত্র চারটিতে মহিলারা পুরুষদের চেয়ে বেশি বেতন পেয়ে থাকেন৷ কোন কোন পেশায়, তার হদিশ রয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kumm
পূর্তশিল্প
হ্যাঁ, মূলত পুরুষদেরই কাজ বলে পরিচিত হলেও এই শিল্পে কিন্তু মহিলারা পুরুষদের চেয়ে বেশি রোজগার করে থাকেন৷ জার্মানিতে পূর্তশিল্পে মহিলাদের গড় মাসিক বেতন ৩,৭৩০ ইউরো, পুরুষদের ৩,৭২৮ ইউরো৷
ছবি: Reuters/E. De Castro
শিক্ষাক্ষেত্রে
শিক্ষকতায় পুরুষরা গড়ে মহিলাদের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি বেতন পেয়ে থাকেন৷ জার্মানিতে শিক্ষাক্ষেত্রে পুরুষদের গড় আয় মাসে ৪,৬৬৯ ইউরো, মহিলাদের ৪,১৩১ ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিবহণ ও পরিসংখ্যান
‘সড়ক পরিবহণ ও পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিবহণ’ বিভাগে মহিলারা পুরুষদের চেয়ে পাঁচ শতাংশ বেশি রোজগার করে থাকেন৷ জার্মানিতে গৃহনির্মাণ শিল্পেও মহিলারা পুরুষদের চেয়ে দুই শতাংশ বেশি বেতন পান৷ এমনকি ‘ডাক, কুরিয়ার ও এক্সপ্রেস সেবা’ বিভাগেও মহিলারা সামান্য হলেও এগিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/Ulrich Baumgarten
আইন নিয়ে যাদের কারবার
আইনজীবী, ট্যাক্স কনসাল্টেন্ট বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট – জার্মানিতে এসব পেশায় পুরুষরা মহিলাদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ রোজগার করে থাকেন! এসব পেশায় পুরুষরা মাসে গড়ে ৬,৪৩৪ ইউরো আয় করে থাকেন, মহিলারা ৩,৪৭৮ ইউরো৷
ছবি: Gina Sanders/Fotolia.com
খেলাধুলা, মনোরঞ্জন, অবসর বিনোদন
এই বিভাগে বেতন বা পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে জার্মানিতে নারী-পুরুষের ব্যবধান সর্বোচ্চ৷ পুরুষরা যেখানে মাসে গড়ে ৫,৭০১ ইউরো রোজগার করে থাকেন, মহিলারা পান গড়ে ২,৭৭২ ইউরো৷ অন্যভাবে বলতে গেলে, এই সব ক্ষেত্রে পুরুষরা মহিলাদের চেয়ে মোট ১০৬ শতাংশ বেশি বেতন পেয়ে থাকেন৷
ছবি: Jimena Rojas
রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট
গবেষণা ও বিকাশের ক্ষেত্রে জার্মানিতে পুরুষদের গড় মাসিক আয় ৫,৫৭৭ ইউরো, মহিলাদের ৪,৩৩৪৷ অর্থাৎ পুরুষরা মহিলাদের চেয়ে ২৯ শতাংশ বেশি বেতন পেয়ে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/PhotoAlto/F. Cirou
বৈমানিক
বিমান পরিবহণের ক্ষেত্রে পুরুষরা যেখানে মাসে গড়ে ৭,৬৯৪ ইউরো রোজগার করে থাকেন, মহিলাদের মাসিক গড় আয় সেখানে ৩,৮৮৩ ইউরো৷ অর্থাৎ ‘মেঘের ওপারে’ মহিলারা পুরুষদের তুলনায় ৯৮ শতাংশ কম রোজগার করে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/G.Hochmut
হোটেল-রেস্টুরেন্ট
অতিথিদের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য না করা হলেও, গোটা হোটেল শিল্পে কিন্তু মহিলারা মাসে গড়ে ২,১৫৫ ইউরো রোজগার করে থাকেন, যেখানে তাদের পুরুষ সহকর্মীরা পান মাসে গড়ে ২,৪৫৬ ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
8 ছবি1 | 8
অভিবাসী এবং শরণার্থী অধ্যুষিত এলাকায় অপরাধপ্রবণতা বেশি বলে জার্মানদের এক ধরনের ধারণা রয়েছে৷ বিল্ড এর মতো কিছু পত্রিকা এ ধারণা উস্কেও দিচ্ছে৷
অথচ জার্মান ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশ (বিকেএ)-এর দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা৷ তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয় জার্মানদের তুলনায় বিদেশিদের আইন ভাঙার প্রবণতা অনেকটাই কম৷
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৬ সালে শারিরীকভাবে নির্যাতন বা আহত করার দেড় লাখ ঘটনার মামলা বা অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশের কাছে৷ এসব ঘটনায় অপরাধীদের মাত্র ৩৮ শতাংশ জার্মান বংশোদ্ভুত নন৷
বিকেএ’র সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, অভিবাসী বা শরণার্থীরা টিকেট না কেটে গণপরিবহনে ওঠা এবং ছিঁচকে চুরির মতো মামুলি অপরাধই করেন বেশি৷
‘মগের মুল্লুকে’র সত্যতা
অপরাধপ্রবণ এলাকা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা সহজে কাটছে না৷ বিশেষত কিছু সংসদ সদস্যও এ ধরনের এলাকার অস্তিত্ব রয়েছে বলে প্রচার করছেন৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেল সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পানও এই প্রচারণাকে উস্কে দিয়ে বলেছেন, ‘‘এসেন, ডুইসবুর্গ এবং বার্লিনের কোনও কোনও এলাকায় গেলে আপনার মনে হতে পারে রাষ্ট্র বা আইন বলতে কিছু নেই সেখানে৷’’
ডুইসবুর্গের মার্কসলো এলাকার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ এ উপশহরটি মিডিয়ার অপপ্রচারের শিকার৷
বেকারত্ব আর অভিবাসী অধ্যুষিত উপশহর মার্কসলোর আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ঠিক এর পাশের শান্ত নিরুপদ্রব শহর হিসেবে পরিচিত আখেনের চেয়ে ভালো৷