মঙ্গলবার রাত দুইটা থেকে ২৪ ঘণ্টার রেল ধর্মঘটের ডাক দিলো ট্রেড ইউনিয়ন জিডিএল। বাড়তি বেতনের দাবিতে এই ধর্মঘট।
বিজ্ঞাপন
গত একমাস ধরে জার্মানির রেল ও বিমান পরিবষেরা বারবার ধর্মঘটের মুখে পড়েছে। মঙ্গলবার রাত দুইটা থেকে যাত্রীবাহী ট্রেনের কর্মীরা ধর্মঘট করবেন। তার আগে সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে মালগাড়ির চালকরা ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট করছেন।
কর্তৃপক্ষ আরো আলোচনা চায়
ট্রেড ইউনিয়ন জিডিএলের তরফে জানানো হয়েছে, ১৯ জানুয়ারির পর থেকে রেল কর্তৃপক্ষ নতুন কোনো প্রস্তাব দেয়নি। তাই জিডিএল এই ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হয়েছে। কারণ জিডিএলের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।
রেল কর্তৃপক্ষ ডয়চে বান বা ডিবি জানিয়েছে, তারা চায় জিডিএল আবার আলোচনায় বসুক। কিন্তু জিডিএল বলছে, নতুন কোনো প্রস্তাব ছাড়া তারা আলোচনায় বসবে না। বেতম বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলনে নামার পর মঙ্গলবার ষষ্ঠ ধর্মঘটে নামবে জিডিএল।
ডিবি-র তরফ থেকে পার্সোনেল বিভাগের প্রধান বলেছেন, ''আমরা নিশ্চিত আলোচনায় বসলেই চুক্তি সম্ভব হবে।''
বেতন বাড়ানো ছাড়াও জিডিএলের আরেকটি প্রধান দাবি হলো, কাজের সময় সপ্তাহে ৩৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৩৫ ঘণ্টা করতে হবে। কিন্তু ডিবি জানিয়ে দিয়েছে, এই দাবি মানা সম্ভব হয়। কারণ, এটা শুধু আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিকর তাই নয়, কর্মসংস্থান নিয়ে বর্তমান নীতিরও বিরোধী।
জার্মান অর্থনীতিতে তিন দিনের রেল ধর্মঘটের বহুমুখী প্রভাব
তিন দিনের রেল ধর্মঘট জার্মানির বাণিজ্য, পণ্য পরিবহণ, বন্দরের কর্মকাণ্ড, সেই সঙ্গে ভোক্তাদের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷ এখানেই শেষ নয়৷ আরো জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Jana Rodenbusch/REUTERS
বিকল্প নেই যাদের
জার্মানির রেল চালকদের ইউনিয়ন জিডিএল মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত তিনদিনের ধর্মঘট ডেকেছে৷ এতে শুধু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেল অপারেটর ডয়চে বানই নয় রেল কার্গো ব্যবহারকারী অন্য কোম্পানিগুলোরও ক্ষতি হচ্ছে৷ জার্মানির পণ্য পরিবহণের দুই-তৃতীয়াংশই হয় সড়ক ব্যবহার করে৷ এক-পঞ্চমাংশ হয় রেলপথে৷ কিন্তু তার গুরুত্ব কম নয়৷ বিশেষ করে ইস্পাত, রাসায়নিক, কয়লাসহ এমন কিছু পণ্য রেলে পরিবহণ হয় যার আর কোনো বিকল্প নেই৷
ছবি: Bernd Thissen/dpa/picture alliance
অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত
রেলপথে পণ্য পরিবহণের অর্ধেক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেল কোম্পানি ডয়চে বানের দখলে৷ বাকি অর্ধেক পরিচালনা করে বেসরকারি কোম্পানিগুলো৷ তাদের চালকেরা এই ধর্মঘটে না থাকলেও এর নেতিবাচক প্রভাব আছে কোম্পানিগুলোর উপরে৷ কেননা ডয়চে বানের চালকেরা ছাড়াও ধর্মঘট আহ্বান জানানো হয়েছে রেল লাইনের রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী এবং সুইচ টাওয়ারের দায়িত্বে থাকা কর্মীদেরও৷ তারা যোগ দিলে কোনো ট্রেনই চালানো যাবে না৷
ছবি: HRSchulz/IMAGO
বন্দরে কনটেইনার জট
ধর্মঘটে শুধু রেল না, বন্দরের ব্যবস্থাপনার উপরেও প্রভাব পড়ছে৷ কনটেইনার পরিবহণ না হওয়ায় বিভিন্ন বন্দরে জট তৈরি হচ্ছে৷ হামবুর্গ বন্দরের সব কনটেইনারই রেলপথে পরিবহণ হয়৷ এই মুহূর্তে স্থলপথে পরিবহণ সেখান থেকে সম্ভব নয়৷ সময়মত পণ্য পরিবহণ করা না গেলে ইউরোপের অন্য বন্দরগুলোতেও এর প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: Marcu Brandt/dpa/picture-alliance
ধাক্কা অর্থনীতিতে
ভারি শিল্পের উপর নির্ভরশীল জার্মানির অর্থনীতি৷ এই ধর্মঘটে শিল্প খাতেই সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগছে৷ পণ্য সরবরাহ চেইনে জট লাগার কারণে শিল্পের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে৷ এর অর্থনৈতিক প্রভাব কতটা তীব্র হবে তা এখনই অবশ্য ধারণা করা যাচ্ছে না৷ তবে অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো প্রয়োজনীয় কাঁচামাল অগ্রিম মজুদ রেখে প্রস্তুতি নিয়ে রাখে৷
ছবি: Jochen Tack/picture alliance
ক্ষতির পরিমাণ কত
তিনদিনের এই ধর্মঘটের ক্ষতি কত তা পরিমাপ করাটা সহজ নয়৷ এক হিসাব অনুযায়ী দৈনিক ক্ষতির অঙ্ক কম-বেশি ১১ কোটি ডলার৷ তার চেয়েও বড় বিষয় হলো জার্মানির রেল পরিবহণ ব্যবস্থার দুর্নাম এতে আরো পাকাপোক্ত হলো৷ ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার পণ্য পরিবহণে রেলের অবদান ২৫ শতাংশে উন্নীত করতে চায়, যা বর্তমানে ১৯ শতাংশ৷ এমন পরিস্থিতি হলে সেই লক্ষ্য যে পূরণ হবে না তা বলা বাহুল্য৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
কেন ধর্মঘট
কর্মীদের ইউনিয়ন জিডিএল কর্তৃপক্ষের কাছে সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ৩৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৩৫ ঘণ্টা করার দাবি জানিয়েছে৷ তাদের দাবি অনুযায়ী, এজন্য মজুরি কাটছাট করা চলবে না এবং মাসিক বেতন ৬০০ ডলারের বেশি বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির সাথে সমন্বয় করে বোনাস দিতে হবে৷ কিন্তু কর্মী সংকট থাকায় কর্মঘণ্টা হ্রাসের দাবি মেনে নিতে রাজি নয় ডয়চে বান৷ তবে ৩২ মাসের জন্য মজুরি ১১ শতাংশ বাড়াতে রাজি তারা, যা প্রত্যাখ্যান করেছে জিডিএল৷
ছবি: Christian Charisius/dpa/picture alliance
6 ছবি1 | 6
ইউনিয়নের হুমকি
জিডিএল জানিয়েছে, তারা এবার ধর্মঘটের বন্যা বইয়ে দেবে। এখন ধর্মঘটে নামার ৪৮ ঘণ্টা আগে তা জানিয়ে দেয়া হয়। পরে সেটাও আর করা হবে না।
ডিবি বলেছে, জিডিএল লাখ লাখ যাত্রীকে বিপাকে ফেলছে। দেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ধর্মঘটেরও বিপুল প্রভাব পড়বে।
তারা জানিয়েছে, দূরপাল্লার ও আঞ্চলিক ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিষেবা যাতে দেয়া যায়, তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। যে সব যাত্রী ধর্মঘটের দিন টিকিট কেটেছেন, তারা পরবর্তী তারিখে কোনো বাড়তি অর্থ না দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন।
জার্মানিতে এখন রেল ও বিমান পরিষেবা বারবার ধর্মঘটে ব্যহত হচ্ছে।