জার্মানিতে ২০২৩ সালে নারীদের গড় আয় পুরুষদের তুলনায় ১৮ শতাংশ কম ছিল। তবে সামঞ্জস্য ভিত্তিতে এ ব্যবধান ছিল ৬ শতাংশ।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার জার্মানির ফেডারেল স্ট্যাটিসটিক্স অফিস প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর জার্মানির নারীরা প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ২০ দশমিক ৮৪ ইউরো এবং পুরুষরা গড়ে ২৫ দশমিক ৩ ইউরো আয় করেছেন।
পরিসংখ্যানবিদরা লিঙ্গের ভিত্তিতে বেতনের পার্থক্য হিসাব করেছেন- যা পুরুষ ও নারীদের মধ্যে গড় মোট আয়ের পার্থক্য দেখিয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে এ হিসাব করা হচ্ছে এবং সে বছর পার্থক্য ছিল ২৩ শতাংশ।
অবশ্য জার্মানিতে এলাকা ভিত্তিতে এই পার্থক্য সমান নয়। পশ্চিম জার্মানিতে গড় মোট আয়ে পার্থক্য ১৯ শতাংশ। তবে সাবেক কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির রাজ্যগুলোতে এই পার্থক্য বেশ কম, মাত্র ৭ শতাংশ।
পার্থক্যের কারণ
ফেডারেল স্ট্যাটিসটিক্স অফিস এই পার্থক্যের কয়েকটি কারণ সামনে এনেছে যার একটি, ৩০ বছরের পর নারীদের উপার্জন স্থবির হতে শুরু করা। জার্মানিতে নারীরা সাধারণত গড়ে এই বয়সে নিজেদের প্রথম সন্তানের জন্ম দেয়।
"এমনটা হতে পারে, কারণ, নারীদের কর্মজীবনে পারিবারিক কারণে বার বার তাদের ক্যারিয়ার বাধাগ্রস্ত হয় এবং তারা খণ্ডকালীন কাজ বেছে নেন।”
শিশুদের যত্ন এবং পারিবারিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এমনটা হয় বলে সংস্থাটি মনে করে। এ কারণে নারীদের ক্যারিয়ারের অগ্রগতি এবং বেতন বৃদ্ধি আর তেমন একটা হয় না।
তবে কোনো নারী এবং পুরুষ একই কর্মঘণ্টা কাজ করেছেন, একই যোগ্যতা নিয়ে এবং একই ধরনের কাজে- এমন ক্ষেত্রেও নারীরা গড়ে পুরুষদের চেয়ে কম উপার্জন করেন। তবে এক্ষেত্রে পার্থক্য কম, ৬ শতাংশ।
লিঙ্গ বৈষম্য: বাংলাদেশ ও অন্যদের অবস্থান
নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে প্রথম দশ দেশের মধ্যে থাকলেও অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যে বাংলাদেশ আছে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর কাতারে৷ লিঙ্গ সমতা অর্জনে বিশ্বে কোন দেশের কী অবস্থান দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossein
লিঙ্গ বৈষম্যের সূচক
নারী-পুরুষ সমতার দিক থেকে বিশ্ব কতটা এগুচ্ছে, কোন দেশের কী অবস্থান তা নিয়ে টানা ১৬ বছর ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে জেনেভা ভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম৷ অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগ, শিক্ষাগত অর্জন, স্বাস্থ্য এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন; এই চার সূচকের উপর ভিত্তি করে লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিবেদন তৈরি করে তারা৷ চলতি বছর এই প্রতিবেদনে ১৪৬টি দেশের চিত্র উঠে এসেছে৷
২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বৈশ্বিকভাবে লিঙ্গ বৈষম্য দূর হয়েছে ৬৮ শতাংশ ক্ষেত্রে৷ এই হিসাবে শতভাগ সমতা অর্জনে সময় লাগবে ১৩২ বছর৷ ১৪৬টি দেশের হিসাবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় ৯৫ শতাংশ বৈষম্য দূর হলেও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ আর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে অর্জন মাত্র ২২ শতাংশ৷
ছবি: Julien Mattia/AA/picture alliance
কর্মসংস্থানে নেতৃত্ব
২০২২ সালে সরকারি, বেসরকারি খাতে নেতৃত্ব পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল ৩৩ শতাংশ৷ এরমধ্যে এনজিওতে ৪৭ শতাংশ ও শিক্ষায় ৪৬ শতাংশ নেতৃত্বে নারীরা আছেন৷ অন্যদিকে জ্বালানি, প্রযুক্তি, উৎপাদন ও অবকাঠামের মতো শিল্পখাতে নেতৃত্ব পর্যায়ে নারী অবস্থান মাত্র ২০ শতাংশ৷
ছবি: SAP
এগিয়ে উত্তর অ্যামেরিকা
অঞ্চলভিত্তিক দিক থেকে উত্তর অ্যামেরিকা প্রায় ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা অর্জন করেছে৷ এরপর রয়েছে ইউরোপ৷ এই অঞ্চল ৭৬.৬ শতাংশ বৈষম্য দূর করেছে৷ লাতিন অ্যামেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চল ৭২.৬ শতাংশ, মধ্য ও পূর্ব এশিয়া ৬৯ শতাংশ, সাব সাহারা আফ্রিকা ৬৮.৭ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা ৬৩.৪ শতাংশ সমতা অর্জন করেছে৷ এক্ষেত্রে ৬২ শতাংশ নিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশ৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Beck
শীর্ষে যারা
বিশ্বে কোন দেশেই এখন পর্যন্ত শতভাগ বৈষম্য দূর করা সম্ভব হয়নি৷ তবে শীর্ষ দশটি দেশটি অন্তত ৮০ শতাংশ লিঙ্গ সমতা অর্জন হয়েছে৷ প্রথম দশটি দেশে রয়েছে: আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, নিউজিল্যান্ড, সুইডেন, রুয়ান্ডা, নিকারাগুয়া, নামিবিয়া, আয়ারল্যান্ড ও জার্মানি৷
ছবি: Roger Evans/Action Plus/picture alliance
পিছিয়ে যারা
লিঙ্গ সমতা অর্জনে বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর বেশিরভাগই এশিয়ার৷ কাতার, বেনিন, ওমান, আলজেরিয়া, মালি, চাদ, ইরান, কঙ্গো, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান ১৪৬টি দেশের তালিকার তলানীতে রয়েছে৷
ছবি: Ahmad Sahel Arman/AFP
দক্ষিণ এশিয়া পিছিয়ে
দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে লিঙ্গ সমতা অর্জনে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ৷ বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশের র্যাংকিং ৭১৷ এক্ষেত্রে নেপাল ৯৬ তম, শ্রীলঙ্কা ১১০ তম, মালদ্বীপ ১১৭ তম, ভূটান আছে ১২৬ তম অবস্থানে৷ বিশ্বে ১৩৫তম আর দক্ষিণ এশিয়ায় ষষ্ঠ অবস্থানে আছেন ভারত৷ গোটা বিশ্বে লিঙ্গ সমতা অর্জনে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দুইটি দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তান, যাদের অবস্থান যথাক্রমে ১৪৫ ও ১৪৬৷
ছবি: Sanjay Kanojia/AFP
রাজনীতিতে এগিয়ে বাংলাদেশ
রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে লিঙ্গ সমতা অর্জনে এগিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম৷ এর অধীনে তিনটি সূচক আছে৷ এর মধ্যে গত ৫০ বছরে রাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি সময় নারী নেতৃত্বের দিক থেকে বাংলাদেশ রয়েছে শীর্ষে৷ সংসদে নারীর অংশগ্রহণে ৯২তম আর মন্ত্রীসভার সদস্যের দিক থেকে আছে ১২৭ তম অবস্থানে৷
ছবি: Xinhua News Agency/picture alliance
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে পিছিয়ে
স্বাক্ষরতার হার এবং প্রাথমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় লিঙ্গ সমতার দিক থেকে বাংলাদেশে অবস্থান ১২৩ তম৷ স্বাস্থ্যসূচকে অবস্থান ১২৯তম৷
ছবি: Abdullah Al Momin/bdnews24.com
কর্মসংস্থানে শেষের কাতারে
অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের দিক থেকে বিশ্বের ১৪৬ দেশের মধ্যে বাংলাদের অবস্থান ১৪১তম৷ শ্রমশক্তি, মজুরি সমতা, আয়, নেতৃত্ব কিংবা পেশাগত ও কারিগরিখাতে নারীদের অবস্থানের সূচকগুলোতে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্তত ১০৮টি দেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
10 ছবি1 | 10
মজুরিতে বৈষম্য শুধু জার্মানিতে নয়
নারী-পুরুষ মজুরিতে এই বৈষম্য শুধু জার্মানিতেই নয়, বরং পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জুড়েই এই পার্থক্য বিদ্যমান।
ইউরোপিয়ান কমিশনের তথ্যানুযায়ী, পুরো ইইউ জুড়ে একই কাজের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের তুলনায় একজন নারীকে গড়ে ১৩ শতাংশ কম মজুরি দেওয়া হয়।
আর এই পার্থক্য মুছে ফেলার গতিও অত্যন্ত ধীর।
২০২০ সালের মার্চে ইউরোপিয়ান কমিশন, ২০২৫ সালের মধ্যে বেতনে এই বৈষম্য মুছে ফেলতে একটি পথরেখা ঠিক করে। ২০২৩ সালের জুনে ‘পে ট্রান্সপারেন্সি ডিরেক্টিভ' প্রকাশ করা হয়। লক্ষ্য হলো শ্রমিকদের জন্য তারা মজুরিতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন কিনা তা নির্ধারণ করতে পারা বা নিয়োগকর্তাদের জন্য তারা সমান বেতনের নীতি প্রয়োগ করছেন তা নিশ্চিত করা সম্ভব করে তোলা।