পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে অজস্র মসজিদ৷ স্থাপত্য শৈলিতে ভুবন বিখ্যাত তেমনি কিছু মসজিদ নিয়ে জার্মানিতে ক’দিন আগেই হয়ে গেলো একটি প্রদর্শনী৷
বিজ্ঞাপন
দেয়ালে কোনো কারুকাজ নেই৷ নেই আভিজাত্যে মোড়ানো ঝাড়বাতি৷ নেই সুদীর্ঘ গম্বুজ৷ আছে মোটে চারদিকের চারটি দেয়াল৷ আর আছে মাথার উপর ছাদ৷ শুধু এইটুকু নিয়েই সুসম্পন্ন হতে পারে একটি মসজিদ৷
সেই হজরত মহম্মদ-এর আমলের কথাই ভেবে দেখুন৷ চার দেয়ালের উপর কেবল খেজুর পাতার ছাওনি৷ আর মক্কার দিকে ফেরানো মুখ৷ ব্যাস, এইটুকুতেই হয়ে যেত মসজিদ৷ সাজ-সজ্জাহীন সে সাধারণ ঘর-ই হয়ে যেত নিপুণ প্রার্থনালয়৷
বার্লিনের মসজিদগুলো...
জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ৮০টিরও বেশি মসজিদ রয়েছে৷ ক্লাসিক বা আধুনিক যে ধরনেরই হোক না কেন, এই মসজিদগুলো বার্লিনের নানা অঞ্চলের এবং নানান সময়ের চিহ্ন বহন করে৷
ছবি: Max Zander
ভারতীয় মডেলে তৈরি
জার্মানির সবচেয়ে পুরনো মসজিদটি হচ্ছে বার্লিনের শহরে কেন্দ্রে অবস্থিত আবাসিক এলাকা ভিলমার্সডর্ফ-এ৷ এই আহমেদিয়া মসজিদটি জার্মান স্থপতি কার্ল আগুস্ট হ্যার্মানের পরিকল্পনায় এবং ভারতের বিখ্যাত ‘তাজমহল’-এর মডেলে তৈরি করা হয়৷ মসজিদটির উদ্বোধন করা হয় ১৯২৮ সালে৷
ছবি: Max Zander
বিতর্কিত মসজিদ
এই মসজিদটি উদ্বোধন করার সময় প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও পরে তা মেনে নেওয়া হয়৷ মেনে নেওয়ার উদ্যোগের পেছনে ছিল হাইনার্সডর্ফের সংগঠন ‘‘হাইনার্সডর্ফ তোমার দরজা খোলো’’ এবং প্রথম ইমাম আবদুল বাসিত তারিকের মোটো ছিল, ‘‘কারো জন্য ঘৃণা নয়, সবার জন্য ভালোবাসা’’ – এই নীতিবাক্য৷
ছবি: Max Zander
ছিমছাম মসজিদ
নারী স্থপতি মুবাশরা ইলিয়াস বেশ সাদামাটাভাবেই এই মসজিদের কাজ করেছেন৷ এখানে ২৫০ জন মুসল্লির নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে৷ মসজিদের প্রধান ঘরটির ঠিক ওপরেই মহিলাদের জন্যও রয়েছে আলাদা ঘর৷
ছবি: Max Zander
সবচেয়ে বড় মসজিদ
বার্লিনের নয়ক্যোলন এলাকার এই মসজিদটিকে মুলমানদের সাংস্কতিক মিলনকেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা হয়৷ বার্লিনের সবচেয়ে বড় এই মসজিদে ১,৫০০ জন মানুষ একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন৷ মসজিদটিতে বিশেষ আয়োজনের জন্য আলাদা জায়গাও রয়েছে৷ ২০১২ সালে জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই মসজিদটি পরিদর্শন করেন৷
ছবি: Max Zander
মুসলমানদের কবরস্থান
মুসলমানের জন্য যে কবরস্থান রয়েছে, ঠিক তার পাশেই ১৯৮০ সালে এই মসজিদ তৈরি করা হয়৷ পরে অবশ্য এটা আরো বড় করা হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে এটির পরিধি৷
ছবি: Max Zander
বিভিন্ন ধর্মের সংস্কৃতি বিনিময়
জার্মানির তুর্কি সম্প্রদায় মানুষরা অন্যান্য ধর্মের মানুষদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করে৷ এখানে ইসলাম ধর্ম এবং অন্যান্য ধর্মের নানা আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা হয়৷ যাঁরা এখানে আসেন, তাঁদের পুরো মসজিদটা ঘুরে দেখানো এবং ইসলাম সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়৷
ছবি: Max Zander
ইসলাম ধর্মের সেন্টার
প্রথম দেখে বোঝাই যায় না যে এটা একটা মসজিদ৷ উমর আল-ইবনে খাতাব মসজিদটি বার্লিনের আবাসিক এলাকা ক্রয়েৎসব্যার্গের মধ্যমণি৷ বলা বাহল্য, এই এলাকা তুর্কি অধ্যুষিত৷ মসজিদের ভেতরে নামাজের ঘরগুলোর আশেপাশে ছোটখাটো দোকান, কফি শপ, ট্রাভেল এজেন্সি ইত্যাদি রয়েছে৷ ২০০৮ সালে শুরু হওয়া এই মসজিদটিতে একটি মাদ্রাসাও রয়েছে৷
ছবি: Max Zander
ওজু ঘর
মাসহারি সেন্টারের মসজিদের বেজমেন্ট, অর্থাৎ মাটির নীচের একটি ঘরে তৈরি করা হয়েছে এই সুন্দর ওজু ঘরটি৷ এখানে পুরুষ এবং নারীরা আলাদাভাবে ওজু করতে পারেন, অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে বিশুদ্ধ করার ব্যবস্থা রয়েছে এই মসজিদে৷
ছবি: Max Zander
আন্তর্জাতিক কমিউনিটি
ঝাড়বাতির নীচে নামাজের এই ঘরটিতে একসাথে ১,০০০ জন মুসলমান নামাজ পড়তে পারেন৷ তুর্কি বংশোদ্ভূত মানুষ ছাড়াও মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন আরব, আফ্রিকান, বসনীয় ও অন্যান্য দেশের মুসলমানরা৷ প্রতি শুক্রবার ঐতিহ্যগতভাবে জুম্মার নামাজ হয় আরবি ভাষায়৷ তবে সকলের সুবিধার্থে দেয়ালে লাগানো মনিটরে আরবি এবং তুর্কি ভাষাতেও পড়ে নেয়া যায় অনুবাদ করা আয়াতগুলি৷
ছবি: Max Zander
9 ছবি1 | 9
মসজিদের ছিমছাম সেই সাধারণ গড়ন আজও আছে৷ নিরলঙ্কার মসজিদ আজও আছে দুনিয়ার দেশে দেশে৷ তবে কি-না, আধুনিক এই স্থাপত্যের যুগে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে মুসলিমদের উপাসনালয়েও৷
বিরাট, বিপুল জায়গা নিয়ে, কয়েক তলা জুড়ে মসজিদ তৈরি হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে৷ আধুনিক সে সব মসজিদের কোনোটিকে হয়তো বাইরে থেকে দেখতে মনে হতে পারে একটি বাঙ্কারের মতো৷ আবার কোনো মসজিদের গম্বুজ এমনই মনোরম, যে দেখে মন ভরে যায়৷
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো, জার্মানিতেও রয়েছে অসংখ্য মসজিদ৷ সেই ক্ল্যাসিক গড়ন থেকে একেবারে আধুনিক স্থাপত্য নকশা – সব ধরণের নকশার মসজিদ-ই আছে এ দেশে৷
পরিসংখ্যান বলছে, জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে আছে প্রায় দুই হাজার মসজিদ৷ শুধু তাই নয়, এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই৷ ২০০৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১২০ টি নতুন মসজিদ নির্মিত হয়েছে ইউরোপের এ দেশটিতে৷
জগত জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এসব মসজিদের সৌন্দর্য ও স্থাপত্য নকশা তুলে ধরতেই ক'দিন আগে একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় স্টুটগার্টে৷ ইন্সটিটিউট ফর ফরেন কালচারাল রিলশনস গ্যালারি এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে৷ আগামী জুন মাসে এ প্রদর্শনীটি-ই আবার শুরু হবে বার্লিনে৷
তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের ৩০ টি মসজিদকে তুলে ধরা হয়েছে প্রদর্শনীতে৷ ১৯৬০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নির্মিত উল্লেখযোগ্য মসজিদগুলোই ঠাঁই পেয়েছে এখানে৷
প্রদর্শনীর তত্ত্বাবধায়ক ভালেরি হামারবাখার ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘জার্মানিতে অসংখ্য মসজিদ আছে৷ সেগুলো সম্পর্কে মানুষকে জানাতেই এই প্রদর্শনীর আয়োজন৷''