জার্মানির একটি উগ্র ডানপন্থি গোষ্ঠী দেশটির মসজিদগুলোতে হামলার পরিকল্পনা করেছিল বলে জানিয়েছে সরকার৷ এজন্য ১২ সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির একটি উগ্র ডানপন্থি গোষ্ঠীর ‘সন্ত্রাসী শাখার' সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ তারা দেশটির মসজিদগুলোতে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করেছে বলে সোমবার দাবি করেছেন সরকারের একজন মুখপাত্র৷
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বরত ঐ কর্মকর্তা বলেছেন, একটি দলের এমন সন্ত্রাসী সেল থাকার ঘটনায় তারা হতবাক৷ বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রার্থনাস্থলে কোনো হামলার ঘটনার আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না৷
এই ঘটনায় চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মুখপাত্র স্টেফান সাইবার্ট বলেন, ‘‘স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার রক্ষা করা রাষ্ট্র এবং সরকারের দায়িত্ব৷ এক্ষেত্রে কারো ধর্ম যা-ই হোক না কেন, তা বিবেচ্য নয়৷''
শুক্রবার বেশ কয়েকটি রাজ্যে অভিযান চালিয়ে এই বারো জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে৷ তদন্ত চলাকালীন সময়ে তাদেরকে জেলে রাখার নির্দেশ দিয়েছে জার্মানির ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিস৷
এফএস/এসিবি (এপি, এএফপি, রয়টার্স, ইপিডি)
ইউরোপে কি উগ্র বামপন্থা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে?
হামবুর্গে গেল বছরের সংঘাতের পর এই প্রশ্নটি বার বার সামনে আসছে৷ জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের বিরোধিতাকারীরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে হামবুর্গে জড়ো হন৷ এদের মধ্যে উগ্র বামপন্থিরাই ছিলেন সহিংস৷
ছবি: DW/T. Sparrow
ইউরোপে চরম বামপন্থিদের সংখ্যা কত?
উগ্র ডানপন্থিদের নিয়ে যত গবেষণা হয়েছে তার চেয়ে অনেক কম হয়েছে উগ্র বামপন্থিদের নিয়ে৷ জি-টোয়েন্টি সম্মেলনকে ঘিরে হামবুর্গে দাঙ্গার পর একটি বিষয় নিশ্চিত যে, ইউরোপ জুড়ে চরম বামপন্থিদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে এবং তাঁরা অনেকটাই সংগঠিত৷ তবে সংখ্যায় এরা কত তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনো নেই ইউরোপোলের কাছে৷
ছবি: DW/T. Sparrow
জার্মানির চরম বামপন্থিরা
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে প্রতিরক্ষা দপ্তরের সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে, ২০১৬ সালে ৮ কোটি ১৪ লাখ মানুষের এই দেশে ২৮,৫০০ চরম বামপন্থি কর্মী আছেন, যাদের মধ্যে সাড়ে আট হাজারকে সহিংস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Geisler-Fotopress/C. Hardt
বাড়ছে উগ্রপন্থিদের সংখ্যা
জার্মানিতে গেল বছরের তুলনায় উগ্র বামপন্থিদের সংখ্যা বেড়েছে ১০ ভাগ, যদিও নৈরাজ্যের ঘটনা কমেছে৷ তবে হামবুর্গের ঘটনার পর আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, ২০১৭ সালে এই সংস্কৃতির আরো বিস্তার ঘটবে৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে
ইউরোপের অনেক দেশেই বাম ঘরানার উগ্রপন্থিদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়৷ যেমন ইটালি, গ্রিস ও সুইডেনেও জার্মানির মতো বামপন্থিদের দেখা যায়৷ এমনকি জুরিখ ও বার্নেও বামপন্থিদের সহিংসতার উদাহরণ আছে৷ কোন কোন গ্রুপের উত্থান উগ্র ডানপন্থাবিরোধী আন্দোলন থেকে, যেমন সুইডেনের ‘রিভলিউশনারি ফ্রন্ট’ এবং গ্রিসের ‘কন্সপিরেসি অফ দ্য ফায়ার সেলস’৷
ছবি: Reuters/K.Pfaffenbach
উগ্র বামপন্থার উত্থান?
সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায় এই ইঙ্গিত পরিষ্কার৷ ইউরোপে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ইউরোপলের সাম্প্রতিক রিপোর্টে সাম্প্রতিককালে বামপন্থিদের ‘উত্থান’ বিষয়ে পরিষ্কার ইঙ্গিত মিলেছে৷ ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালে বেশ কয়েকটি স্থানে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে তাদের সংশ্লিষ্টতার কথাও জানিয়েছে তারা৷ তবে তাদের অস্থিতিশীলতা তৈরির ‘সক্ষমতা এখনো অনেক কম’ বলে মন্তব্য করেছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/N.Liponne
সবাই ‘সহিংস’ নন
সার্বিকভাবেই বামপন্থার বিস্তার ঘটছে৷ তবে এর বিস্তার ঘটলেও সবাই সহিংস নন৷ এমনকি চরম বামপন্থি আন্দোলনগুলোও অতটা সহিংস নয়, যতটা কয়েকটি নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী দল বা তাদের কর্মীরা করে থাকেন৷
ছবি: Reuters/K.Pfaffenbach
জার্মানির চরম বামপন্থিরা
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে প্রতিরক্ষা দপ্তরের সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে, ২০১৬ সালে ৮ কোটি ১৪ লাখ মানুষের এই দেশে ২৮,৫০০ চরম বামপন্থি কর্মী আছেন, যাদের মধ্যে সাড়ে আট হাজারকে সহিংস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Heimken
চরম বামপন্থিদের রকমফের
বিশ্লেষকরা তিনটি ভাগে মূলত ভাগ করেছেন: মার্কস ও লেনিন অনুসারী কমিউনিস্ট, সহিংসতাবাদী এবং তথাকথিত ‘স্বাধীন’ প্রতিক্রিয়াশীল, যাদের সঙ্গে হামবুর্গের ওটে ফ্লোগা কিংবা কোপেনহেগেনের বিখ্যাত ক্রিস্টিয়ানা অনুসারীদের যোগাযোগ রয়েছে৷ জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, কমিউনিস্টদের সংখ্যা দিন দিন কমলেও বাড়ছে বাকি দু’দলের কর্মীসংখ্যা৷ বেশিরভাগ সহিংসতার জন্য নিজেদের ‘স্বাধীন’ দাবি করা দলটির কর্মীরাই দায়ী৷
ছবি: picture-alliance/M.Heine
কেন তাঁরা সংগঠিত হচ্ছে?
জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মতে, সাধারণভাবে ‘‘পুঁজিবাদী কাঠামোকে অস্বীকার’’ করাই বামপন্থিদের আন্দোলনের মূল কারণ৷ তবে পুঁজিবাদকে এখন তাঁরা আর শুধু একটি অর্থনৈতিক কাঠামোর ভেতর থেকে দেখেন না৷ বরং সামাজিক বৈষম্য, বাসযোগ্য ভূমি উজার, যুদ্ধ, উগ্র ডানপন্থা, বর্ণবাদ এবং পরিবেশ ধ্বংস করা – এ সব বিষয়কে নিয়ে সামগ্রিকভাবে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থাকে চিহ্নিত করেন