জার্মানিতে মহাজোট সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ শুরু হচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জার্মান প্রেসিডেন্ট এই বিষয়ে আলোচনা করতে ৩ শীর্ষ নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ এই উদ্যোগ সফল হলেও সরকার গড়তে অনেক সময় লাগবে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটিয়ে স্থিতিশীল সরকার গঠন করার এটাই শেষ সুযোগ৷ এই উদ্যোগ বিফল হলে সংখ্যালঘু সরকার বা নতুন নির্বাচনের পথে এগোতে হবে, যার পরিণাম অনিশ্চয়তায় ভরা৷ ইউনিয়ন শিবিরের দুই নেতা – সিডিইউ দলের আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও সিএসইউ দলের নেতা হর্স্ট সেহোফারকেই আবার মহাজোট সরকার গড়ার উদ্যোগ নিতে হবে৷ উল্লেখ্য, জার্মান কৃষিমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ‘বিদ্রোহ' দুই শিবিরের মধ্যে তিক্ততা বাড়িয়ে দিয়েছে৷ এই প্রেক্ষাপটে এসপিডি দলের নেতা মার্টিন শুলৎসকে জোট গঠনের লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করতে তাঁদের রাজি করাতে হবে৷ তিনি রাজি হলে দুই শিবিরের মধ্যে জোট গঠনের লক্ষ্যে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হবে৷ সেই প্রচেষ্টা সফল হলে শুরু হবে সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক আলোচনা৷ এসপিডি দলের কিছু নেতার মতে, এই প্রক্রিয়া শেষ হতে আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত গড়িয়ে যেতে পারে৷
বৃহস্পতিবারের আলোচনার সামগ্রিক ফলাফল জানতে কিছুদিন সময় লাগতে পারে৷ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদের আলোচনা এতকাল গোপনীয়তার বেড়াজালে মোড়া ছিল৷ বৃহস্পতিবার তার ব্যতিক্রম ঘটবে, এমনটা আশা করা কঠিন৷ আগামী ১লা ডিসেম্বর সকালে এসপিডি নেতা শুলৎস দলের শীর্ষ স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন৷ আগামী ৭ থেকে ৯ই নভেম্বর এসপিডি দলীয় সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে আরও বড় আকারে আলোচনা হবে৷ এই সম্মেলনে মহাজোটের পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন পেলে শুলৎস আবার ম্যার্কেল ও সেহোফারের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন৷ উল্লেখ্য, আবার মহাজোট সরকার গঠনের প্রশ্নে আপত্তি তুলে নিলেও শুলৎস এখনো সব পথ খোলা রাখছেন৷
ইউনিয়ন শিবিরের সিএসইউ দলে নেতৃত্বের চলমান সংকটও মহাজোট গঠনের উদ্যোগের উপর কালো ছায়া ফেলছে৷ বিরোধ মিটিয়ে বাভেরিয়ার এই দলের শীর্ষ পদ ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে শেষ পর্যন্ত কে বা কারা আসীন হবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷
১৯শে ডিসেম্বর ফেডারেল জার্মানির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এক দিন৷ নির্বাচনের ৮৬ দিন পরেও সরকার গঠন করা সম্ভব না হওয়ায় এ দিন ২০১৩ সালের রেকর্ড ভেঙে যাবে৷ সে বছর নির্বাচনের ৮৬ দিন পর নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছিল৷
এসবি/ডিজি (ডিপিএ, এএফপি)
জার্মানিতে কি আবারো মহাজোট সরকার ফিরে আসবে? আপনার কি মনে হয়? লিখুন আমাদের নীচের ঘরে৷
যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাস্ত করেন ম্যার্কেল
এমনকি ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগেও তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো রাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয় বা পাশে সরিয়ে দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নিজের দল বা বিরোধী দলের অনেক নেতাকেই নানাভাবে ঠেকিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
‘কোল গার্ল’ যখন গুরুকে ছাড়লেন
দীর্ঘদিন চ্যান্সেলর পদে থাকে হেলমুট কোল ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় প্রথম সুযোগ দিয়েছেন এবং তাঁর উত্থানে সহায়তা করেছিলেন৷ কিন্তু ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর ম্যার্কেল এবং সিডিইউ তাঁর বিপক্ষে চলে যায়৷ কোল কিছু সূত্র থেকে নগদ অর্থ সাহায্য নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে সব সূত্রের বিস্তারিত তিনি জানাননি যা দলের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন সেসময় সিডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার – রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি
২০০৫ সালের নির্বাচনে এসপিডি’র চ্যান্সেলর শ্র্যোডারকে পরাস্ত করেন ম্যার্কেল৷ তবে এই পরাজয়ে শ্র্যোডারের নিজের দাম্ভিকতাও কিছুটা ভূমিকা রেখেছিল৷ সেই নির্বাচনে খুব অল্প ব্যবধানে সিডিইউ’র কাছে হেরে যায় এসপিডি৷ যদিও নির্বাচনের আগে টিভি বিতর্কে তিনি দাবি করেছিলেন, যে জার্মানরা চায় তিনি ক্ষমতায় থাকুন৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি এবং তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার - দীর্ঘদিনের সঙ্গী
শুরুতে ম্যার্কেলের অধীনে চারবছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ এরপর ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেন সামাজিক গণতন্ত্রীদের এই রাজনীতিবিদ৷ কিন্তু সেই নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি স্টাইনমায়ারের দল৷ পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আবারো ম্যার্কেলের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন স্টাইনমায়ার৷ আর চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে তিনি জার্মানির প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kembowski
গ্যুন্টার ও্যটিঙার - পথের কাঁটা দূর হলো
ম্যার্কেল যে শুধু তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেন এমন নয়৷ বরং নিজের দলে থাকা সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের লোভনীয় অন্য কোন পদেও পাঠিয়ে দেন৷ তাঁর সহকর্মী বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্যুন্টার ও্যটিঙারকে ২০১০ সালে তিনি ইউরোপীয় কমিশনে বড় পদে পাঠিয়ে দেন৷ অথচ ও্যটিঙারের সেই পদ পাওয়ার মতো কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
রোনাল্ড কখ - বাতিলের তালিকায় ফেলে দেয়া
দুই কারণে রোনাল্ড কখ পরিচিত৷ প্রথমত, তিনি দলাই লামার বন্ধু৷ দ্বিতীয়ত, সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্ব চালুর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য৷ হেসে রাজ্যের এই রাজ্য প্রধান কখনো ম্যার্কেলের উত্থানে বাধা না হলেও হঠাৎ করেই মনে করেছিলেন তাঁকে বার্লিনে বড় পদের জন্য ডাকা হবে৷ কিন্তু ম্যার্কেলকে তাঁকে সেরকম কোন সুযোগ দেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ - একজন দুর্ভাগা রাষ্ট্রপতি
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ কিন্তু ২০১০ সালে হর্স্ট ক্যোলার পদত্যাগ করার পর সিডিইউ বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ভুল্ফ সুযোগ পেয়ে যান৷ ভুল্ফ তখন লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের রাজ্যপ্রধান৷ পরবর্তীতে অবশ্য দুর্নীতির দায়ে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেয়ার স্টাইনব্রুক – সঠিক মানুষ, ভুল সময়
২০১৩ সালে ম্যার্কেল যখন তাঁর ক্যারিয়ারের তুঙ্গে, তখন এসপিডি থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেছে নেয়া হয় পেয়ার স্টাইনব্রুক’কে৷ ম্যার্কেলের অধীনে একসময় অর্থমন্ত্রী থাকা এই রাজনীতিবিদের চ্যান্সেলর পদ পাওয়ার সব যোগ্যতাই ছিল৷ কিন্তু সময়টা ঠিক ছিল না৷ ম্যার্কেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুবিধা করতে পারেননি তিনি৷