রবিবার বন শহরে এসপিডি দলের সম্মেলনে মহাজোট সরকার গড়ার আলোচনার পক্ষে সমর্থন আদায় করতে পেরেছেন শীর্ষ নেতা মার্টিন শুলৎস৷ কোয়ালিশন চুক্তি সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলের সদস্যরা৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটানোর চাবিকাঠি এসপিডি দলের হাতে৷ তারা ইউনিয়ন শিবিরের সঙ্গে আবার মহাজোট সরকার গঠন করলে জার্মানি, তথা ইউরোপে স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়বে৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এসপিডি দলের নেতৃত্ব এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত একা গ্রহণ করতে নারাজ৷ দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে সেদিকে এগোনোর পথে এগোচ্ছেন শীর্ষ নেতা মার্টিন শুলৎস-সহ অন্যান্য নেতারা৷ তারই আওতায় রবিবার বন শহরে দলের প্রায় ৬৪০ জন ডেলিগেটের মধ্যে প্রায় ৫৬ শতাংশ মহাজোট গড়ার আলোচনার পক্ষে সমর্থন জানালেন৷ তবে এটাই শেষ পদক্ষেপ নয়৷ শেষ পর্যন্ত মহাজোট নিয়ে দুই শিবির ঐকমত্যে এলে এসপিডি দলের প্রায় ৪ লক্ষ ৪০ হাজার সদস্যকে সেই কোয়ালিশন চুক্তির প্রতি সমর্থন জানাতে হবে৷ তবেই সরকার গঠন করা সম্ভব হবে৷
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের নেতৃত্বে আরও একবার মহাজোট সরকারে যোগ দিলে দলের ভাবমূর্তির আরও ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করছে এসপিডি দলের একটা বড় অংশ৷ রবিবার তারা তাদের যুক্তি তুলে ধরলেন৷ তাঁদের মতে, একের পর এক মহাজোটের অংশ হয়ে এসিপিডি তার নিজস্ব চরিত্র অনেকটা হারিয়ে ফেলেছে এবং ভোটারদের আস্থা হারিয়েছে৷ গত নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিপর্যয়ের পর শিক্ষা নিয়ে বিরোধী আসনে বসা উচিত বলে তাঁরা মনে করেন৷ অন্যদিকে দলের নেতৃত্ব দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতির স্বার্থে সরকারের অংশ হবার পক্ষে৷ নতুন নির্বাচন হলে এসপিডি আরও সমর্থন হারাবে বলে মনে করেন তাঁরা৷ শেষ পর্যন্ত সামান্য ব্যবধানে হলেও এই যুক্তির প্রতি সমর্থন আদায় করতে পেরেছেন তাঁরা৷ সেইসঙ্গে দলের মধ্যে এমন খোলামেলা বিতর্ককে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরছেন তাঁরা৷
এসপিডি দল এবার ইউনিয়ন শিবিরের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছে৷ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসপিডি দলের সদস্যদের হাতে থাকায় ইউনিয়ন শিবিরে বেশ অস্বস্তি কাজ করবে৷ কারণ, এসিপিডি দলের বেশিরভাগ দাবি মেনে না নিলে সরকার গড়ার দ্বিতীয় প্রচেষ্টা বিফল হবে৷
কী চায় জার্মানির এসপিডি দল?
ছোট শরিক হয়েও জার্মানির বিদায়ী মহাজোট সরকারে যথেষ্ট সাফল্যের সঙ্গে অনেক দলীয় সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পেরেছে এসপিডি দল৷ তবে ভোটাররা তার স্বীকৃতি দেয়নি৷ আবার মহাজোটে যোগ দিলে অনেকগুলি শর্ত চাপাতে চায় এসপিডি৷
ছবি: picture-alliance/U. Baumgarten
‘আরও ইউরোপ’
বর্তমান সংকটগুলির সমাধানের লক্ষ্যে ব্রেক্সিটের পথে না গিয়ে ইইউ-কে আরও শক্তিশালী করে তুলতে চায় জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রী দল৷ ইউরোপীয় স্তরে ন্যূনতম মজুরি, তরুণদের বেকারত্বের মোকাবিলা, কোম্পানিগুলির উপর অভিন্ন কর চাপানো এবং ‘কর ফাঁকির মরুদ্যান’ বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন দলের নেতা মার্টিন শুলৎস৷ ২০২৫ সালের মধ্যে ‘ইউরোপীয় যুক্তরাষ্ট্র’ স্থাপনের স্বপ্ন দেখছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই প্রাক্তন স্পিকার৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Florin
শ্রমিকদের আরও অধিকার
জার্মানিতে শ্রমিক-কর্মীদের অধিকার বাড়াতে চিরকাল উদ্যোগ নিয়ে এসেছে সামাজিক গণতন্ত্রী দল৷ তবে সাম্প্রতিক কিছু সংস্কারের ফলে সেই ভাবমূর্তি বেশ ক্ষুণ্ণ হয়েছে৷ এবার বেতন ও মজুরি কাঠামো কার্যকর করা ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার দাবি জানাচ্ছে এসপিডি৷ তাছাড়া যারা পার্ট টাইম বা খন্ডকালীন কাজ করছে, তাদের ফুল টাইম বা পূর্ণ কাজের কাঠামোয় ফিরে যাবার অধিকারের স্বীকৃতি চায় এসপিডি৷
ছবি: picture-alliance/Ulrich Baumgarten
অবসর ভাতার আমূল পরিবর্তন
সমাজে সংহতির ভিত্তিতে জার্মানির অবসর ভাতা কাঠামোর আমূল পরিবর্তন চায় সামাজিক গণতন্ত্রী দল৷ বিশেষ করে সারা জীবন কাজ করেও শেষ বয়সে দারিদ্র্যের ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চায় এসপিডি৷ অতএব সংহতির স্বার্থে অবসর ভাতার বিচ্ছিন্ন সব কাঠামোগুলিকে একত্র করার চেষ্টা চালাতে চায় তারা৷ অত্যন্ত জটিল এই ব্যবস্থার রাতারাতি পরিবর্তন যে কঠিন হবে, সে বিষয়ে অবশ্য তেমন সংশয় নেই৷
ছবি: picture-alliance/S. Gollnow
বিনামূল্যে শিক্ষা
জার্মানির শিক্ষাব্যবস্থার একটা বড় অংশই সরকারি ভরতুকিতে চলে৷ তবে অবকাঠামোর কিছু দুর্বলতার ফলে সমস্যা রয়েছে৷ বিশেষ করে শিক্ষা রাজ্য সরকারগুলির এক্তিয়ারে থাকায় এ ক্ষেত্রে সার্বিক উদ্যোগ নেওয়া কঠিন৷ এসপিডি দলের দাবি, সারা দেশে বিনামূল্যে কিন্ডারগার্টেন ও সেখানে সারাদিন বাচ্চা রাখার সুযোগকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে৷ এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির আধুনিকীকরণসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ চাই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gambarini
স্বাস্থ্যবিমা ব্যবস্থার সংস্কার
বর্তমানে জার্মানিতে সার্বজনীন ও বেসরকারি স্বাস্থ্যবিমা চালু রয়েছে৷ ডাক্তারখানা ও হাসপাতালে বেসরকারি স্বাস্থ্য বিমাকারীদের বিশেষ খাতির করা হয়, অন্যদের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়৷ এই বিভাজন ঘুঁচিয়ে সবাইকে নিয়ে এক ‘নাগরিক স্বাস্থবিমা’ চালু করতে চায় সামাজিক গণতন্ত্রীরা৷ তবে এই প্রস্তাবের জোরালো বিরোধিতা করছে বেশ কিছু মহল৷ তাদের আশঙ্কা, এর ফলে স্বাস্থ্য অবকাঠামোর মানের ক্ষতি হবে৷
ছবি: Colourbox
শরণার্থী নীতি
২০১৫ সালে বিশাল সংখ্যক শরণার্থীর ঢলের কারণে জার্মানির রাজনীতি জগত উত্তাল হয়ে উঠেছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেল তাঁর উদার মনোভাবের জন্য প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷ এসপিডি গোটা অভিবাসন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের দাবি জানাচ্ছে, যাতে আইনি পথে বিদেশিরা জার্মানিতে এসে কাজের সুযোগ পায়৷ তবে রাজনৈতিক আশ্রয়ের অধিকার সঙ্কুচিত করার বিরোধী এই দল৷ আশ্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো ঊর্ধসীমাও মানতে নারাজ তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা
সন্ত্রাসী হামলা ও অপরাধ দমন করতে প্রায়ই হিমশিম খায় জার্মানির পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ৷ ফলে মানুষের মনে অসন্তোষ দেখা যায়৷ এই সমস্যার মোকাবিলা করতে এসপিডি দল আরও পুলিশকর্মী নিয়োগের দাবি জানাচ্ছে৷ সেইসঙ্গে অপরাধ প্রতিরোধ করার জোরালো উদ্যোগ চায় তারা৷ তাদের মতে, দাগী অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে গোটা ব্যবস্থায় আরও দক্ষতার ছাপ আনতে হবে৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/B. Marks
পরিবেশ সংরক্ষণ
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে এককালে জার্মানি পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছে৷ বিকল্প জ্বালানির বিকাশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্যও এসেছে৷ কিন্তু কয়লার লাগাতার ব্যবহার, ডিজেল গাড়ি নিয়ে বিতর্কের মতো কারণে এ ক্ষেত্রে জার্মানির ভাবমূর্তি বেশ ধাক্কা খাচ্ছে৷ এমন প্রেক্ষাপটে এসপিডি বিকল্প জ্বালানির আরও ব্যবহারের উপর জোর দিতে চায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নারী-পুরুষের সমানাধিকার
শিল্পোন্নত দেশগুলিতেও কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বেতন বৈষম্য বাস্তব সমস্যা৷ এই তালিকায় জার্মানির অবস্থান ভালো নয়৷ একাধিক সরকার এই বৈষম্য দূর করতে শিল্প-বাণিজ্য জগতের সঙ্গে বোঝাপড়ার চেষ্টা করেও বিফল হয়েছে৷ এবার এসপিডি দল চায়, আলাপ-আলোচনার বদলে আইন করে তাদের এই বৈষম্য দূর করতে বাধ্য করা হোক৷