মাংস কেনার সময় আশি ভাগের বেশি জার্মান পশুকল্যাণের জন্য ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দাম দিতে প্রস্তুত৷ বাজারে কেনা মাংস যে সত্যিই সেরকম খামার থেকে এসেছে, তার সার্টিফিকেট দেবেন সরকার – পরিকল্পনা আপাতত সেরকমই৷
বিজ্ঞাপন
সুপারমার্কেটে খাবার-দাবার বিভাগে গেলেই চোখে পড়বে, প্যাক করা বা না-করা মাংসের জন্য নানা ধরণের তকমা – তাদের সকলেরই উদ্দেশ্য হলো, ক্রেতাকে জানানো, ঠিক কোন ধরনের পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট পশুটিকে পালা হয়েছে৷ ওদিকে নিত্যনতুন ছাপ বাজারে আসছে৷ কাজেই জার্মান গ্রাহকদের পক্ষে বোঝা দায়, তাঁরা যে যৎসামান্য হলেও, কিছুটা বেশি মূল্য ধরে দিচ্ছেন, সেটা বাস্তবিক গৃহপালিত পশুদের কল্যাণে ব্যয় হচ্ছে কিনা৷
শাকসবজির ক্ষেত্রে যা অরগ্যানিক, মাংস বা ডিমের ক্ষেত্রে তা পশুকল্যাণ৷ আজ অনেকদিন হলো, পশ্চিমে কৃষি একটি ‘শিল্পে' পরিণত হয়েছে৷ হাজার হাজার মুরগির খামার; শত শত গরু বা শূকরের খামার; ব্যাপক হারে ডিম ও মাংস ও অন্যান্য আমিশ খাদ্যপণ্য উৎপাদন৷ একদিকে পশুপালন, অন্যদিকে পশু পরিবহণ ইউরোপে যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, পরিবেশ সচেতন আধুনিক জার্মানদের কাছে তা আর গ্রহণযোগ্য নয়৷ কাজেই তাঁরা আরো বেশি পশুকল্যাণ দেখতে চান ও সেজন্য বেশি মূল্য দিতেও প্রস্তুত৷
জার্মানরা মাংস খেতে বেশি ভালোবাসেন
জার্মানরা প্রায় প্রতিদিনই মাংস খায় যদিও ডাক্তারদের মতে, কেউ দিনে ১০০ গ্রামের বেশি মাংস খেলে তাঁর হৃদরোগের ঝুঁকি এবং পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷
ছবি: aquariagirl1970 - Fotolia.com
প্রতিদিন মাংস
জার্মানদের খাবারের তালিকায় প্রায় প্রতিদিনই মাংস থাকা চাই৷ মাংস রান্না বা সেদ্ধ অবস্থায়, এছাড়া সসেজ, সালামি, হ্যাম – কোনো না কোনোভাবে তাঁদের খাবার টেবিলে থাকে মাংস৷ তবে অতিরিক্ত মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় এবং এতে নানা সমস্যা দেখা যায়, সে কথা জেনেও তাঁরা মাংস পছন্দ করেন৷
ছবি: picture-alliance/landov
সপ্তাহে ৬০০ গ্রাম মাংস
একজন প্রাপ্তবয়স্ক জার্মান গড়ে দিনে ১৫০ গ্রাম মাংস খান, অর্থাৎ সপ্তাহে যা ১০০০ গ্রামেরও বেশি৷ অথচ ডাক্তাদের মতে, একজন মানুষ সপ্তাহে ৬০০ গ্রাম মাংস খেতে পারেন এবং এর বেশি খাওয়া একেবারেই উচিত নয় যদি সে মাংস ‘রেড মিট’ হয়৷ গরু, ছাগল, শূকর, ভেড়া এবং ঘোড়ার মাংসকে ‘রেডমিট’ বলা হয়৷
ছবি: Fotolia/stockcreations
ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়
ডাক্তারদের মতে, কেউ দিনে ১০০ গ্রামের বেশি ‘রেডমিট’ খেলে তাঁর হৃদরোগের ঝুঁকি এবং পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ সে তুলনায় সাদা মাংস, অর্থাৎ মুরগি বা পাখির মাংস খেলে ঝুঁকি অনেক কম৷
ছবি: picture alliance/dpa
পরিমিত পরিমাণ
মাংসতে রয়েছে প্রোটিন, আয়রন এবং ভিটামিন ‘বি’৷ জার্মানির পট্সডাম রেব্র্যুক-এর খাদ্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ড.গিজেলা ওলিয়াস বলেন, রেডমিট হৃদরোগ এবং পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় ঠিকই৷ তবে মাংসের তৈরি সসেজ কিন্তু এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় আরো বেশি৷
ছবি: picture alliance/chromorange
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিটকাটার
জার্মান মাংসের দোকানের কর্মীরা প্রায় সকলেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত৷ এখানে যে কোনো জায়গায় কাজ করতে গেলে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকতে হয় – তা সে মাংস কাটার কাজ হোক, অথবা অন্য কোনো কাজ৷
ছবি: DW
গ্রিল মাংস
আগুনে পোড়ানো বা গ্রিল করা রসালো মাংস দেখতে যেমন লোভনীয়, তেমন খেতেও দারুণ মজা৷ তাই গ্রীষ্মকালে জার্মানরা প্রায়ই গ্রিল পার্টির আয়োজন করেন, যেখানে প্রচুর পরিমাণে মাংস খাওয়া হয়৷
ছবি: DW/K.Sacks
আরো গ্রিল
নানাভাবে বিভিন্ন পশুর বিভিন্ন অংশের মাংস গ্রিল করা হয়৷ তবে জার্মানরা বেশিরভাগই গ্রিল করেন শূকরের মাংস৷ এসব লোভনীয় গ্রিল দেখে কারো কি মনে থাকার কথা যে, একজন মানুষের দিনে মাত্র ১০০ গ্রাম মাংস খাওয়া উচিত?
ছবি: DW/K.Sacks
দামে সস্তা
গরু বা খাসির মাংসের তুলনায় শূকরের মাংস দামের দিক দিয়ে অনেক সস্তা৷ আর সেজন্যই হয়ত শূকরের মাংস জার্মানিতে বেশি খাওয়া হয়ে থাকে৷ এবং সেটা হয়ে থাকে নানাভাবেই!
ছবি: picture alliance / Fotoagentur Kunz
পাউরুটির সাথেও মাংস
জার্মানরা সকালের নাস্তা বা রাতে রুটির সাথেও মাংসের সসেজ বা মাংসের স্লাইস খান৷ এছাড়া, বিভিন্ন দোকানে, ক্যাফেতে নানা ধরনের রুটির মধ্যে ‘স্যান্ডউইচ’ আকারে মাংস ভরে খাবারও চল আছে জার্মানিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ড্যোনার কাবাব
জার্মানিতে অনেক তুর্কি রেস্তোরাঁ আছে এবং এসব রেস্তোরাঁর বেশিরভাগ খাবারই মাংস দিয়ে তৈরি৷ বিশেষ করে ‘ড্যোনার কাবাব’ তরুণদের কাছে বেশ প্রিয়৷ এটা একরকম পাতলা রুটির মধ্যে সবজি এবং গ্রিল করা মাংস দিয়ে তৈরি করে হয়৷ বলা বাহুল্য, জার্মানিতে ৪০ লাখ মুসলমানের বাস, যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই এসেছেন তুরস্ক থেকে৷
হালাল মাংস
জার্মানিতে তুর্কি দোকানগুলোতে হালাল মাংসও পাওয়া যায়৷ সেসব দোকানে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসলমানসহ জার্মানরাও মাংস কেনেন৷
ছবি: aquariagirl1970 - Fotolia.com
11 ছবি1 | 11
সুপারমার্কেট ও চেনস্টোরগুলি বহুদিন আগেই ক্রেতাদের এই ‘প্রস্তুতি' আঁচ করে, সেই অনুযায়ী তাঁদের পণ্যের উপর পশুকল্যাণ সংক্রান্ত তথ্য দিতে শুরু করেছে৷ কিন্তু মুশকিল এই যে, এত ধরনের কোম্পানি ও এত ধরনের লেবেল বাজারে এসেছে যে, সাধারণ গ্রাহকের পক্ষে তার মর্মোদ্ধার করা সম্ভব নয়৷ সেই কারণেই দাবি উঠেছে, সরকারের তরফ থেকে একটি স্ট্যান্ডার্ড ছাপের ব্যবস্থা করা হোক, কী ধরণের পশুপালন থেকে সুপারমার্কেট, চেইনস্টোর বা দোকানের মাংস এসেছে৷
দাবি উঠেছে বললে ভুল বলা হবে, কেননা, এ দাবি অনেকদিনের৷ নতুন কৃষিমন্ত্রী ইউলিয়া ক্ল্যোকনারের উত্তরসুরী ক্রিস্টিয়ান স্মিট (সিএসইউ)-এর আমল থেকেই খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘পশুকল্যাণ তকমা' নিয়ে কাজ চলেছে৷ জার্মান পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সমিতি বিইউএনডি, জার্মান গ্রাহক সুরক্ষা সমিতি, জার্মানির সবুজ দল ও গ্রিনপিস সংগঠনের জার্মান শাখা এবার সেই পশুকল্যাণ তকমার দাবিতে আরো সোচ্চার হয়ে উঠেছে৷ কাজেই হয়তো বাস্তবিক এবার মাংসের উপর পশুকল্যাণ ছাপ আসতে চলেছে৷
গ্রাহক, কৃষি, সরকার
ফেডারাল কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের খাদ্য প্রতিবেদন বলছে, জার্মান গ্রাহকদের ৮৭ শতাংশ পশুকল্যাণ কামনা করেন এবং তাঁদের ৮৮ ভাগ পশুকল্যাণের দায়ে পশুজাত পণ্যের জন্য বর্ধিত মূল্য দিতে প্রস্তুত৷ পশুকল্যাণ বলতে, খামারে পশু প্রতি কতটা জায়গা রাখতে হবে, মা পশুদের কতদিন বেঁধে রাখা চলবে, বাচ্চা পশুদের কতদিন মা'র কাছে থাকতে দেওয়া হবে ইত্যাদি নানা খুঁটিনাটির তালিকা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়৷ এসব অবশ্য এর আগের মহাজোট সরকারের আমলেও করা হয়েছিল৷ কিন্তু সে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি৷ নতুন সরকারের জোট চুক্তিতেও নাকি পশুকল্যাণ ছাপের শর্তাবলী নির্ধারণ করার জন্য পাক্কা দু'বছর সময় রাখা হয়েছে৷ এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন সবুজ দলের সংসদীয় গোষ্ঠীর প্রধান আন্টন হোফরাইটার৷
ফ্রেশ খাবার চেনার উপায়
খাদ্যে ভেজাল আমাদের জন্য এক বড় সমস্যা৷ পাশাপাশি কোন ফল, সবজি বা মাংস ফ্রেশ আর কোনটি পুরনো কিন্তু দেখতে ভালো তা বোঝাও কঠিন৷ এখানে দেখে নিন, সহজ কিছু পদ্ধতি৷
ছবি: Fotolia/Subbotina Anna
কলা
ফ্রেশ কলা কিছু দাগসহ উজ্জ্বল হলুদ রংয়ের হবে৷ যদি সেটা বেশি নরম কিংবা বাদামি রংয়ের হয়ে যায়, তাহলে না কেনাই ভালো৷ তবে হলুদের উপর কিছুটা সবুজের আভা থাকলে ভয়ের কিছু নেই৷ এরকম কলা দুয়েকদিনের মধ্যেই খাবার উপযোগী হয়ে যাবে৷
ছবি: Colourbox
বাঙ্গি
ফ্রেশ বাঙ্গির থাকবে সুঘ্রান এবং এটি দেখতে মজবুত হবে৷ তবে সেটির গায়ে যদি দাগ থাকে তাহলে সেটা না কেনাই ভালো৷
ছবি: Colourbox/Swan
কমলা
কমলা হবে উজ্জ্বল রঙের এবং ঘ্রাণ হবে মিষ্টি৷ যদি এই দু’টির অভাব দেখেন তাহলে না কেনাই ভালো৷
ছবি: Getty Images
পেঁয়াজ
পেঁয়াজের গঠন সুন্দর হলে এবং লেয়ারে দাগ কিংবা চিড় না থাকলে সেটা ভালো৷ তবে প্রথম লেয়ারের ভেতরের দিকটা যদি বিবর্ণ মনে হয়, তাহলে সে পেঁয়াজ না কেনাই ভালো৷
ছবি: Colourbox
মুরগি
মুরগির মাংস কেনার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন সেটা থেকে কোনো ধরনের দুর্গন্ধ আসছে কিনা৷ দুর্গন্ধ আছে এবং যে বক্সে রাখা হয়েছে তার নীচের দিকে তরলের আধিক্য থাকলে সেই মুরগির মাংস না কেনাই ভালো৷
ছবি: Colourbox
‘রেড মিট’
‘রেড মিট’ বা লাল মাংস বলতে আমরা সাধারণত গরু বা খাসির মাংসকেই বুঝি৷ এই মাংস যদি দেখতে কিছুটা বাদামি হয়ে যায় এবং পিচ্ছিল হয় তাহলে না কেনাই ভালো৷
ছবি: Fotolia/Phranc
মাছ
মাছ কেনার ক্ষেত্রে খেয়ার রাখবেন সেটির আঁশ উজ্জ্বল আছে কিনা৷ পাশাপাশি মাছের চোখ কতটা পরিষ্কার আছে সেটা দেখেও বোঝা যায় সেটি কতটা ফ্রেশ৷ দ্রষ্টব্য: ‘সিনোজ’ এবং ‘ফাইন ডাইনিং লাভারস’ ওয়েবসাইট দু’টি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ছবিঘরটি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/ZB
7 ছবি1 | 7
এছাড়া নতুন কৃষিমন্ত্রী ইউলিয়া ক্ল্যোকনার আগে থেকেই বলে রেখেছেন যে, সস্তা মাংস চিরকালই পাওয়া যাবে; পশুকল্যাণ ছাপের উদ্দেশ্য হবে, গ্রাহকরা যাতে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, কোন ধরনের মাংস কিনবেন৷ এবং কোন মূল্যে৷
পশুকল্যাণের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা অনেকদিনের৷ ২০১৫ সালের একটি ‘পশুকল্যাণ উদ্যোগ' অনুযায়ী, সুপারমার্কেটগুলি একটি তহবিলে অনুদান প্রদান করবে, যে অর্থে স্বেচ্ছায় পশুকল্যাণে উদ্যোগী খামারচাষিদের আর্থিক প্রেরণা দেওয়া হবে৷
এবার লিডল-এর মতো ডিসকাউন্টাররা তাদের নিজস্ব পশুকল্যাণ লেবেল বাজারে আনতে চলেছে৷ সে লেবেলের মান ও শর্তাবলীও হবে আলাদা৷ এভাবে যদি মাংসের উপর তকমা বাড়তে থাকে, তাহলে গ্রাহকরা সত্যিই ‘তকমার জঙ্গলে' পথ হারাতে পারেন বলে হোফরাইটারের আশঙ্কা৷