জার্মানিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে রাশিয়ার হুমকি
২৯ জুলাই ২০২৪
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানিতে দূরপাল্লার ক্ষেপণান্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনার কথা শুনে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া৷ দুই পক্ষই পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের কথা ভাবছে৷
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন রোববার জানিয়েছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি জার্মানিতে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে, তাহলে তার দেশও একইরকমের উদ্যোগ নেবে৷
চলতি মাসের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন জানায় যে ন্যাটোর প্রতি প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ২০২৬ সাল নাগাদ জার্মানিতে দূরপাল্লার এবং হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র জমাতে শুরু করবে দেশটি৷
‘‘যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে, তাহলে আমরা নিজেদেরকে অতীতে মাঝারি এবং স্বল্পদূরত্বে আঘাত হানার অস্ত্র মোতায়েন সংক্রান্ত একতরফা স্থগিতাদেশ থেকে নিজেদের মুক্ত মনে করবো৷ তার মধ্যে আমাদের নৌবাহিনীর উপকূলীয় বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টিও রয়েছে,'' সেন্ট পিটার্সবার্গে এক নৌ কুচকাওয়াজে বলেন পুটিন৷
রাশিয়ার মিসাইলে বিধ্বস্ত ইউক্রেনের শিশু হাসপাতাল
ইউক্রেনের পাঁচটি শহরে আবার মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া৷ হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে কিয়েভের একটি শিশু হাসপাতাল৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক জানান, হামলায় মোট ৩৬ জন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন ১৪০ জন৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
বিধ্বস্ত শিশু হাসপাতাল
রাশিয়ার ছোঁড়া মিসাইলের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে কিয়েভের অকমাডিট শিশু হাসপাতাল৷ এটিই ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় শিশু হাসপাতাল৷ মিসাইলের আঘাতে হাসপাতাল ভবনটির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ সেখানে কর্মরত চিকিৎসক লেসিয়া লিজিটসিয়া ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এ কথা জানিয়েছেন৷
ছবি: Oleksandr Ratushniak/REUTERS
ভীতিকর পরিস্থিতি
ভীতিকর পরিস্থিতি
হামলার সময়কার ভীতিকর অবস্থান বর্ণনা করেছেন চিকিৎসক লেসিয়া লিজিটসিয়া৷ তিনি বলেন, যখন মিসাইল এসে হাসপাতালে আঘাত হানে তখন পুরো বিষয়টি ‘সিনেমার দৃশ্যের’ মতো মনে হচ্ছিল৷ তিনি ‘ভয়ঙ্কর তীব্র আলো’ দেখতে পেয়েছিলেন জানিয়ে আরো বলেন, ‘‘এর পরপরই বিকট এবং ভীতিকর শব্দ শুনতে পাই৷’’ হামলায় হাসপাতালের একটি অংশ গুঁড়িয়ে গেছে, অন্য অংশে আগুন ধরে যায় বলেও জানান তিনি৷
ছবি: Oleksandr Ratushniak/REUTERS
মোট নিহত ৩৬, হাসপাতালে ২
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদোমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক জানিয়েছেন, কয়েকটি শহরের এ হামলায় মোট ৩৬ জন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন আরো ১৪০ জন৷ কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো জানিয়েছেন, মিসাইল হামলায় হাসপাতালের এক চিকিৎসকসহ দুই ব্যক্তি মারা গেছেন৷ উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে তিনি আরো জানিয়েছেন, আশঙ্কা করা হচ্ছে ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো কেউ আটকা থাকতে পারেন৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
থমকে গেছে চিকিৎসাসেবা
রাশিয়ার হামলায় থমকে গেছে হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা৷ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চিকিৎসাধীন রোগীদের দ্রুত কাছের হাসপাতালগুলোতে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনীয় একটি টিভি চ্যানেলকে জানিয়েছে, যে ওয়ার্ডটিতে মিসাইল আঘাত হেনেছে সেখানে অন্তত ২০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
দায় অস্বীকার রাশিয়ার
বিবিসি জানিয়েছে, হাসপাতালে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে রাশিয়া৷ উল্টো ইউক্রেনের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছে তারা৷ রাশিয়া দাবি করছে, হাসপাতালটি ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইলের একটি অংশের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে৷ কিন্তু ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার ছোঁড়া মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে৷
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
গণহত্যার অভিযোগ
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে গণহত্যার চালানোর অভিযোগ এনেছেন কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো৷ তিনি বলেন, ‘‘এ ঘটনার মধ্য দিয়ে পুরো বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে রাশিয়ার মিসাইল ও ড্রোন কিভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ শহরকে তছনছ করে দিয়েছে এবং নাগরিকদের হত্যা করেছে৷’’ রাশিয়ার হামলায় একটি মাতৃ ও প্রসূতি হাসপাতালও আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ বলেছেন, সেখানে অন্তত সাত জন মারা গেছেন৷
ছবি: STATE EMERGENCY SERVICE OF UKRAINE/REUTERS
পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি জেলেনস্কির আহ্বান
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি লিখেছেন, রাশিয়ার ছোঁড়া বিভিন্ন ধরনের ৪০টিরও বেশি মিসাইল কিয়েভ, দিনিপ্রো, ক্রিভিই রি, স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক শহরে আঘাত করেছে৷ ইউক্রেনের জনগণ, ভূমি ও শিশুদের উপর রাশিয়ার এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা বিশ্বকে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি৷
ছবি: EPA/MICHAEL BUHOLZER
7 ছবি1 | 7
রাশিয়ার এই নেতা জানিয়েছেন যে এসংক্রান্ত প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং এটি প্রস্তুত হয়ে গেলে সামরিক এবং শিল্প লক্ষ্যবস্তুগুলোতে দশ মিনিটের মধ্যে আঘাত হানা যাবে৷
১৯৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সম্পাদিত এক চুক্তিতে ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য পরমাণু শক্তিসম্পন্ন মাঝারি মানের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদকালে ২০১৯ সালে এই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ দেশটির অভিযোগ ছিল যে রাশিয়া চুক্তিটি ভঙ্গ করেছে৷
যদিও সেসময় মস্কোও সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়, তাসত্ত্বেও পুটিন জানিয়েছেন যে তার দেশ সেই সমঝোতার শর্তগুলো মনে চলা অব্যাহত রেখেছিল৷ তবে জার্মানিতে যদি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয় তাহলে তিনি আর তা মানবেন না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন৷
ওয়াশিংটন এবং বার্লিন এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, নতুন মোতায়েনের মধ্যে এসএম-৬ বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন টমহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ‘‘ক্রমবিকাশী হাইপারসনিক অস্ত্র'' রয়েছে৷
জার্মানির সামরিক বাহিনী এই পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বলেছে যে রাশিয়া ইতোমধ্যে পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়ার মাঝখানে রুশ ছিটমহল ক্যালিনিনগ্রাদে ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে যেগুলো পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম৷
এধরনের মাঝারি মানের ক্ষেপণান্ত্র জার্মান শহরগুলোকে আঘাত হানতে সক্ষম বলে মনে করছে জার্মানি৷
গতসপ্তাহে রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্জেই রাইয়াভকভ জানিয়েছেন যে মার্কিন পদক্ষেপের জবাবে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনর বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছে না মস্কো৷