জার্মানিতে মার্কিন গুপ্তচরবৃত্তি
২১ নভেম্বর ২০১৩খবরটা ফাঁস করেছে জার্মানির স্যুডডয়চে সাইটুং পত্রিকা এবং নর্ডডয়চে রুন্ডফুংক নামধারী সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল: বিশেষ করে জার্মানিতে মার্কিন সেনা ছাউনিগুলি থেকে নাকি সিআইএ, এনএসএ, মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস ও হোমল্যান্ড সিকিওরিটি-র এজেন্টরা যথেচ্ছ কাজ চালিয়ে থাকে৷
আজও জার্মানিতে ৪৩ হাজার মার্কিন সৈন্য নিয়োজিত, যারা বিভিন্ন ‘বেস' বা ঘাঁটিতে অবস্থান করছে৷ সেভাবেই রামস্টাইন ও স্টুটগার্টের মার্কিন ঘাঁটিগুলি থেকে নাকি সোমালিয়ায় ড্রোন আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, বলে জানিয়েছে স্যুডডয়চে সাইটুং৷ ‘‘স্টুটগার্টের মার্কিন ঘাঁটিতে যোগাযোগের জন্য জার্মান অফিসাররা নিযুক্ত ছিলেন৷ জার্মানির রাজ্যাঞ্চল থেকে সংঘটিত (সোমালিয়ায় ড্রোন আক্রমণের) অভিযানটি জার্মান সরকারের সঙ্গে একত্রে নির্ধারণ করা হয়েছে'' – বলেছেন এনডিআর টেলিভিশন সংস্থার সম্পাদক জন গোয়েটৎস, যিনি বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট ছিলেন৷
এনডিআর আর স্যুডডয়চে সাইটুং মিলে প্রায় বিশজন সাংবাদিক দু'বছর ধরে খোঁজখবর করেছেন, মার্কিন গুপ্তচর সেবা এবং মার্কিন সেনাবাহিনী জার্মানিতে কি ধরনের সক্রিয় সাহায্য পেয়েছে অথবা পেয়ে থাকতে পারে৷ সাংবাদিক দলের এই গবেষণার ফলাফল পর্যায়ক্রমে পত্রিকাটিতে প্রকাশ করা হয়েছে, যার শীর্ষক রাখা হয়েছে: ‘‘গোপন যুদ্ধ''৷ মার্কিন গুপ্তচর বিভাগের কর্মীরা নাকি জার্মান বন্দরগুলিতে কনটেইনার চেক করতে পারে – এমনকি কোন কনটেইনার লোড করা হবে কিংবা হবে না, তা নির্ধারণ করতে পারে৷
জার্মান সরকার নাকি বিভিন্ন মার্কিন শিল্প – তথা বাণিজ্য সংস্থাকে দু'শোর বেশি বিশেষ পারমিট দিয়েছেন, যার বলে তারা মার্কিন সরকারের নির্দেশে জার্মানিতে নানা স্পর্শকাতর প্রকল্প চালাতে পারে, যেমন স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবির মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বিশ্বব্যাপী গতিবিধি অনুসরণ করার সফটওয়্যার তৈরি৷ এই সদ্য ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে জার্মান ফেডারাল পুলিশ এস্টোনিয়া থেকে আগত এক ব্যক্তিকে প্লেনে চড়া থেকে বিরত করতে সাহায্য করেছে – মার্কিন এজেন্টদের অনুরোধে৷
সব মিলিয়ে এ টুকুই বলা যায়: জার্মান সরকার যে এনএসএ-র তরফ থেকে জার্মানিতে আড়ি পাতার ব্যাপারে কিছুই জানতেন না, এটা আর ঠিক বিশ্বাসযোগ্য থাকছে না৷ বিশেষ করে জার্মান সরকার যখন সুদূর পঞ্চাশের দশক যাবৎ মার্কিন সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন গোপন চুক্তি করে আসছেন, যে সব চুক্তির সম্পাদনে জার্মান সংসদও ঠিকমতো সংশ্লিষ্ট নয়৷
মজার কথা, স্যুডডয়চে সাইটুং এবং এনডিআর-এর সাংবাদিকরা তাদের অনুসন্ধান শুরু করেন ‘‘গুগল ম্যাপস'' নামধারী ডিজিটাল পরিষেবায় কিছু ফাঁকের ফলে৷ সাংবাদিকরা দেখেন, জার্মানির গুগল-ম্যাপে এমন অনেক জায়গা ফাঁকা দেখানো হয়েছে, অথবা বনজঙ্গল আছে বলে দেখানো হয়েছে, যেখানে বাস্তবে মার্কিন নিরাপত্তা বিভাগ কিংবা সামরিক বাহিনীর নানা ঘাঁটি আছে৷ সেখান থেকেই সাংবাদিকদের তদন্তের শুরু – এডোয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা তথ্য থেকে নয়৷