জার্মানিতে খ্রিষ্টানদের ‘গির্জা কর' দিতে হয়৷ এবার মুসলমানদের জন্যও এমন করের কথা ভাবা হচ্ছে৷ মসজিদ পরিচালনায় বিদেশি নির্ভরতা কমাতে এমন পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার ‘ডি ভেল্ট' পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দলের সদস্য টর্স্টেন ফ্রাই বলেন, মসজিদ করের প্রস্তাব ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ'৷ এর ফলে জার্মানিতে ইসলাম ধর্ম বিদেশি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে পারবে৷
জার্মানির জোট সরকারের অংশ সামাজিক গণতন্ত্রী দলের অভ্যন্তরীণ নীতি বিষয়ক প্রধান বুর্কার্ড লিশকা'ও মনে করছেন, মসজিদ কর আরোপ হলেজার্মানিতে ইসলাম ধর্মআরো স্বাধীন হবে৷ কর নির্ধারণের প্রস্তাবটি ‘আলোচনা করার মতো বিষয়' বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
উল্লেখ্য, জার্মানিতে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট ধর্মপালনকারীদের কাছ থেকে গির্জা কর সংগ্রহ করে সরকার৷ এরপর সেই অর্থ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়৷
জার্মানির মতো অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও ইটালিতেও খ্রিষ্টান ধর্মপালনকারীদের গির্জা কর দিতে হয়৷
জার্মানিতে মুসলমানদের ক্ষেত্রে এমন কোনো করের ব্যবস্থা না থাকায় মসজিদগুলোকে দানের উপর নির্ভর করতে হয়৷ অনেকসময় এই দান আসে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো থেকে৷ সেক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো রাষ্ট্র দানের বিনিময়ে মসজিদের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণদের মধ্যে মৌলবাদী আদর্শ ছড়ানোর চেষ্টা করে৷
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদটির নির্মান কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে, কোলনে৷ ২০১৭ সালে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে৷ ইতোমধ্যে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এই মসজিদ নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
ইউরোপের অন্যতম বড় মসজিদ
কোলনের কেন্দ্রীয় মসজিদ হিসেবে পরিচিত এই মসজিদটি ইউরোপের অন্যতম বড় এবং জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ৷ এটির আয়তন ৪৫০০ বর্গমিটার৷ এতে একসঙ্গে দুই থেকে চার হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে৷ জার্মানিতে তুর্কি মুসলিমদের সংগঠন ডিটিব মসজিদটি নির্মাণ করেছে৷ নামাজের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সংলাপ, খেলাধুলা আয়োজনের ব্যবস্থা এবং দোকান ও লাইব্রেরি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ভিন্ন ডিজাইনের মসজিদ
‘নন-অটোমান’ ডিজাইন অনুসরন করে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে৷ এতে কংক্রিট এবং কাঁচের দেয়াল ও গম্বুজ রয়েছে৷ দু’টি মিনারতের উচ্চতা ৫৫ মিটার করে৷ আর মসজিদের ভেতরে দেয়ালে বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফি রয়েছে৷
ছবি: Picture alliance/dpa/M. Becker
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন
কোলনে বসবাসরত তুর্কিরা দীর্ঘদিন ধরেই এমন এক মসজিদের স্বপ্ন দেখছিলেন৷ তবে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ এমনকি ২০১১ সালে বিপুল প্রতিবাদের মুখে এটির নির্মাণকাজ কিছুদিনের জন্য মন্থরও করা হয়৷ অভিবাসীবিরোধী চক্র এটি নির্মাণের বিরোধিতা করে৷ তবে পত্রিকার এক জরিপে দেখা যায়, শহরের ৬৩ শতাংশ বাসিন্দা এটি তৈরির পক্ষে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চোখে পড়ার মতো স্থাপনা
জার্মানিতে প্রায় পাঁচ মিলিয়নের মতো মুসলমান বাস করেন৷ তাঁদের একটি বড় অংশই তুর্কি বংশোদ্ভূত৷ কোলনে বসবাসরত সোয়া লাখ মুসলমানের জন্য সত্তরটির মতো মসজিদ রয়েছে৷ অধিকাংশ মসজিদই এমন জায়গায় তৈরি যা সচরাচর চোখে পড়েনা৷ তবে এই মসজিদটি ব্যতিক্রম৷
ছবি: Picture alliance/dpa/O. Berg
খরচ কম নয়
মসজিদটি তৈরিতে কমপক্ষে সতের মিলিয়ন ইউরো খরচ হয়েছে৷ তবে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে বলে জানা গেছে৷ এই অর্থের অধিকাংশই দিয়েছে ডিটিব৷ কিছু অর্থ সংগ্রহে সহযোগিতা করেছে একটি গির্জা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Geisler
পল ব্যোম, স্থপতি
কোলন কেন্দ্রীয় মসজিদটির নকশা করেছেন পল ব্যোম৷ তিনি এবং তাঁর বাবা মূলত গির্জার ডিজাইন করার জন্য বিখ্যাত৷ তবে সমজিদটি তৈরির মাধ্যমে তিনি তাঁর দক্ষতাকে অন্যস্তরে নিয়ে গেছেন৷
ছবি: AP
প্রার্থনার এক স্বচ্ছ ঘর
‘উন্মুক্ত’ এবং ‘উজ্জ্বল’৷ মসজিদটির ডিজাইন সম্পর্কে এই দুটো শব্দই উচ্চারণ করেছেন ব্যোম৷ মসজিদটির মধ্যে প্রাকৃতিক আলো নিশ্চিত করতে দেয়ালে প্রচুর কাঁচ ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর মসজিদটি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও উন্মুক্ত৷ যেকেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারেন৷
ছবি: Lichtblick Film GmbH/Raphael Beinder
জার্মান স্টাইলে তৈরি মসজিদ
কোলনের মানুষ মসজিদটিকে স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘ক্যোলশ ম্যুশি’৷ আর মসজিদটির ডিজাইনেও জার্মান ছোঁয়া রয়েছে৷ প্রচলিত তুর্কি মসজিদগুলো যেরকম, এই মসজিদটি মোটেও সেরকম নয়৷
ছবি: picture alliance / dpa
কিছু শর্ত
কোলন কর্তৃপক্ষ মসজিদটি নির্মাণের অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সেখানে জার্মান ভাষা শিক্ষার আয়োজন থাকতে হবে৷ পাশাপাশি ইমামকে জার্মান ভাষায় দক্ষ হতে হবে৷ আর খুতবা দিতে হবে এমন ভাষায়, যা নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা বুঝতে পারেন৷ মোটের উপর, প্রার্থনায় অংশ নিতে আসা পুরুষ এবং নারীদের সমান মর্যাদা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
উদাহরণ হিসেবে তুরস্ক সরকার পরিচালিত ‘টার্কিশ-ইসলামিক ইউনিয়ন ফর রেলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স' বা ডিটিব-এর কথা বলা যেতে পারে৷ এই সংস্থার অধীনে জার্মানিতে প্রায় ৯০০ মসজিদ আছে, যেগুলো পরিচালনা ও ইমামদের বেতনের খরচ আসে তুরস্ক থেকে৷ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানিতে সমালোচনার মুখে পড়ে ডিটিব৷
এছাড়া সৌদি অর্থায়নেও জার্মানিতে অনেক মসজিদ পরিচালিত হয়ে থাকে৷
সরকারি তথ্য বলছে,জার্মানিতে ৪৪ থেকে ৪৭ লাখ মুসলিম বাস করেন৷ এর মধ্যে পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে যাঁরা মুসলমান, তাঁরাও আছেন৷ ফলে ইসলাম ধর্ম পালন করেন এমন মুসলমানের সংখ্যা অনেক কমও হতে পারে৷
মসজিদ প্রতিষ্ঠাতার সমর্থন
রাজধানী বার্লিনের একটি প্রগতিশীল মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সেরান আতেস মসজিদ করের প্রস্তাবের প্রতি তাঁর সমর্থন জানিয়েছেন৷ ‘ডি ভেল্ট' পত্রিকাকে তিনি বলেন, এর ফলে ‘ভবিষ্যতে মুসলমান সম্প্রদায়ের যা প্রয়োজন হবে, তা সদস্যদের দ্বারাই বহন করা সম্ভব হতে পারে'৷