1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে মুসলমান-খ্রিষ্টান সম্পর্ক উন্নয়নে ফাউন্ডেশন

২০ মার্চ ২০০৯

বিশ্বের নানা দেশের মানুষ বসবাস করেন জার্মানিতে৷ এদের মধ্যে মুসলমানরাই বৃহত্তম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়৷ বলা যায় জার্মানির সমাজে ইসলাম ধর্ম এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছে৷

ছবি: AP

এ জন্য স্থানীয় খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মুসলমান অভিবাসীদের পারস্পরিক সৌহার্দ্যের সম্পর্ক গড়ে তোলাটা খুব জরুরি৷ আর এই লক্ষ্য সামনে রেখেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জর্জ আনাওয়াতি ফাউন্ডেশন৷

দিয়া এদ্দিন হাসানাইন একজন ইসলাম ধর্ম শিক্ষক৷ কায়রোর এক জার্মান প্রোটেস্ট্যান্ট স্কুলে পড়ান ৩৭ বছর বয়সী হাসানাইন৷ এই স্কুলে সব রকম জাতি, ধর্মের ছাত্রই পড়াশোনা করে৷ দিয়া এদ্দিন এখন অবশ্য জার্মানির হামবুর্গ শহরে বসবাস করছেন৷ ৩ বছরের জন্য এসেছেন তিনি জার্মানিতে৷ ক্যামেরা ও নোট বই হাতে নিয়ে হামবুর্গের বিভিন্ন স্কুলে ধর্ম বিষয়ের ক্লাসগুলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করছেন তিনি৷ ‘হামবুর্গ মডেল' নামে এই ক্লাসগুলিতে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধর্ম অনুযায়ী আলাদা না করে এক সঙ্গে ধর্ম ও নীতিশাস্ত্র পড়ানো হয়৷ মিশরে জনসাধারণের ৯০ শতাংশ মুসলমান, ১০ শতাংশ খ্রিষ্টান৷ তাই ঐ দেশে এই রকম মডেল চালু করা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে হাসানাইনের৷ এক কথায় বলা যায়, এ চিন্তাটা এখনও সুদূর পরাহত৷ হাসানাইন বলেন, মিশরে প্রথম শ্রেণী থেকে একেবারে শেষ শ্রেণী (আবিটুর) পর্যন্ত খ্রিষ্টান ও মুসলমান ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ক্লাস থাকে৷ যেমন মুসলমান ছেলে মেয়েরা শেখে, একজন মুসলমানের কেমন হতে হয়, তাদের কী কী নিয়ম কানুন পালন করতে হয় ইত্যাদি৷ এ ছাড়া ইসলাম ও নবীদের ইতিহাস সম্পর্কেও পড়াশোনা করতে হয় তাদের৷ এটা অবশ্য বলা যায় না যে, এসব স্কুলে মুসলমান ছাত্র ছাত্রীরা অন্য ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে৷ অন্যরাও ইসলাম সম্পর্কে কোনো শিক্ষা পায় না৷

জার্মানিতে মুসলমানরাই বৃহত্তম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ছবি: AP

হাসানাইন তাঁর গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আন্তঃধর্ম-ক্লাসের মডেল নিয়ে কাজ করবেন৷ তাঁর আশা, হয়তো মিশরের স্কুলগুলিতেও একদিন এই মডেল চালু করা সম্ভব হবে৷

এই ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য মিশরের শিক্ষকরা জার্মানিতে যে সুযোগ পাচ্ছেন, তা সম্ভব হয়েছে জর্জ আনাওয়াতি ফাউন্ডেশনের দৌলতে৷

জার্মানির ওয়েস্ট ফালিয়া অঞ্চলের আর্নসবের্গ শহরে ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে এই উদ্যোগটি৷ ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যান্ট ও ইসলাম ধর্মের প্রতিনিধিরা ছোট ছোট প্রকল্পে এক সঙ্গে কাজ করেন এই ফাউন্ডেশনে৷ এ কাজ অবশ্য অবৈতনিক৷ জার্মানির রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে মাঝে মাঝেই অভিবাসীদের নিয়ে যে বিতর্কটা উঠে আসে তার চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে জর্জ আনাওয়াতি ফাউন্ডেশন৷ এই প্রতিষ্ঠানের নীতিমালায় জার্মানিকে অভিবাসীদের দেশ বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি বৈরীতা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে৷ পরিচালনা কমিটির সদস্য গ্রেগর ফন ফ্যুর্স্টেনবার্গ ফাউন্ডেশনটির লক্ষ্য সম্পর্কে বলেন, পরস্পরের সঙ্গে যত বেশি সম্ভব দেখা সাক্ষাৎ-এর ব্যবস্থা করানোই আমাদের মূল লক্ষ্য৷ একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হলে ভাবের আদান প্রদান হয়, একটা ইতিবাচক ধারণা জন্মে৷ খ্রিষ্টান ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষেরই পরস্পরের কাছে এগিয়ে যাওয়া উচিত৷ জার্মানির সব মুসলমানকেই সন্দেহের চোখে দেখাটা অর্থহীন৷ অন্যদিকে জার্মানি ও বিশ্বের সব মুসলিমকে আদর্শস্থানীয় মনে করারও কোনো মানে হয়না৷

জর্জ আনাওয়াতি ফাউন্ডেশন ছোট ছোট প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করে থাকে৷ যেমন, সংলাপ-প্রকল্প, মুসলিম ইমামদের জন্য প্রশিক্ষণ-প্রকল্প, মুসলমান নারীদের দৈনন্দিন জীবনের ওপর ভ্রাম্যমান প্রদর্শনীর আয়োজন করা ইত্যাদি৷

এ ছাড়া জনসাধারণের কাছে আধুনিক ইসলামের চিন্তাধারা পৌঁছে দেয়ার জন্য এই প্রকল্পের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হচ্ছে ইসলামবিষয়ক নানা গ্রন্থ৷ তুরস্ক ও মিশরে ইসলামের আধুনিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে বেশ কিছু গবেষণামূলক রচনা ও বই প্রকাশিত হয়েছে৷ সেসবের জার্মান অনুবাদ প্রকাশ করার ব্যবস্থা করছে ফাউন্ডেশনটি৷

আরবের এক খ্রিষ্ট ধর্মীয় যাজক জর্জ আনাওয়াতি-র নামানুসারে এই ফাউন্ডেশনটির নামকরণ হয়েছে৷ সিরীয় বংশোদ্ভূত মিশরীয় এই যাজক প্রথমে ফার্মেসি নিয়ে পড়াশোনা করলেও পরে গির্জার সাথে সম্পৃক্ত হন এবং ১৯৩৯ সালে যাজকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ এরপর আবার তিনি পড়াশোনা শুরু করেন প্রাচীন আরব সাহিত্য নিয়ে৷ ৪০ এর দশকের মাঝামাঝি কায়রোর একটি ইনস্টিটিউটের প্রাচ্য বিদ্যা বিভাগের পরিচালকের পদে আসীন হন আনাওয়াতি৷ এই বিভাগে মুসলান ও খ্রিষ্টানদের পারস্পরিক সংলাপের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হোত৷ আনাওয়াতি ইসলাম বিষয়ক ২৫০টিরও বেশি বই ও গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন৷ এতে ইসলাম সম্পর্কে তাঁর গভীর জ্ঞান ও উদারতা প্রকাশ পায়৷ ২০১০ সালে জর্জ আনাওয়াতির জীবন নিয়ে জার্মান ভাষায় একটি বই প্রকাশিত হবে৷ এতে জানা যাবে, ইসলামের জন্য ক্যাথলিক গির্জা যে দ্বার উন্মুক্ত করেছে, সে ক্ষেত্রে আনাওয়াতির অবদানের কথা৷ সেই ৬০এর দশকেই প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন তিনি এব্যাপারে৷ আর তাই কায়রোর ধর্ম শিক্ষক হাসানাইন পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এই মহান ব্যক্তিত্বকে৷

লেখক: রায়হানা বেগম, সম্পাদক: আব্দুল্লাহ আল-ফারুক

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ