জার্মানিতে যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার নারীর সংখ্যা বাড়ছে
২৭ আগস্ট ২০১৮
নারী অধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘ট্যঁর দ্যে ফ্যাম' জানিয়েছে, যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার ৬৫,০০০ নারী বর্তমানে জার্মানিতে অবস্থান করছেন৷ ডয়চে ভেলের কেট ব্র্যাডি এক সোমালি নারীর সঙ্গে দেখা করেছেন, যিনি এই বর্বর চর্চার ইতি কামনা করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
‘‘আমার বয়স তখন বারো বা তের৷ বেশ কয়েকজন আমাকে চেপে ধরেছিল৷ তারপর আমার ওটা কেটে ফেলে৷ এরপর আমাকে একটি টেবিলের উপর শুইয়ে রাখে৷ সেদিনের ছবি এখনো আমার চোখে ভাসে৷ আমি প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছিলাম৷ এরপর তারা সেখানে সেলাই করে এবং আমার দুই পা একসঙ্গে একমাসের জন্য বেঁধে রাখে যাতে ক্ষত শুকিয়ে যায়৷''
বিশ্বের যেসব দেশে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ বা এফজিএম এখনো চালু আছে, সেসব দেশ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানিতে নারীর আগমন বেড়ে যাওয়ায় এখানে এমন চর্চার শিকার নারীর সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে মনে করছে নারী অধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘ট্যঁর দ্যে ফ্যাম'৷ সংঠনটির হিসেব অনুযায়ী, জার্মানিতে বর্তমানে এমন নারীর সংখ্যা ৬৫,০০০-এর মতো, গত বছরের তুলনায় যা ১২ শতাংশ বেশি৷
৩০ বছর বয়সি ইফরা (ছদ্মনাম) তাঁদের একজন৷ জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংগঠন ইউনিসেফ-এর হিসেব অনুযায়ী, তাঁর দেশ সোমালিয়াতে এফজিএমের চর্চা সবচেয়ে বেশি৷ দেশটির ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সি ৯৮ শতাংশ নারীই এর শিকার৷
‘‘যৌনাঙ্গচ্ছেদের জন্য তথাকথিত হাজাম রয়েছে৷ তবে তাঁরা আসলে জানেন না তাঁরা ঠিক কী করছেন৷ তাঁদের কাছে একটি ছুরি এবং একটি রেজার থাকে৷ আর সেগুলো দিয়ে তাঁরা কেটে ফেলে,'' বলেন ইফরা৷
প্রতিবাদ সত্ত্বেও চলছে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ
আফ্রিকার দেশগুলোতে এখনো চলছে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ৷ যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তা নিষিদ্ধ৷ ঐতিহ্য রক্ষার নামে নারীর উপর বর্বর নির্যাতনের কিছু ছবি পাবেন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/S. Modola
সবার জন্য একই ব্লেড
কেনিয়ার রিফ্ট গ্রামের এই নারী হাতে থাকা ব্লেডটি দিয়ে ইতোমধ্যে চারজনের যৌনাঙ্গচ্ছেদ করেছেন৷ পোকোট জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য অনুযায়ী, ব্লেড দিয়ে মেয়েদের যৌনাঙ্গের বাইরের অংশ কেটে বা যৌনাঙ্গচ্ছেদের মাধ্যমে তাঁদের মেয়ে থেকে নারীতে পরিণত করা হয়৷ যদিও বিশ্বের অনেক দেশে এটা নিষিদ্ধ, তাসত্ত্বেও অনেক নারী এখনো এই বর্বরতার শিকার হন৷
ছবি: Reuters/S. Modola
অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি
যৌনাঙ্গচ্ছেদের অনুষ্ঠান বা আচার শুরুর আগের প্রস্তুতির ছবি এটি৷ পোকোট জনগোষ্ঠীর নারী এবং শিশুরা আগুনের পাশে বসেছেন শীত থেকে বাঁচতে৷ এখানকার নারীদের মধ্যে যাঁরা যৌনাঙ্গচ্ছেদ বা ‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন’ (এফজিএম) করতে চান না, তাঁদের সহজে বিয়ে হয় না৷ আর প্রত্যন্ত এই এলাকায় বিয়ে ছাড়া মেয়েদের পক্ষে চলা কার্যত অসম্ভব৷
ছবি: Reuters/S. Modola
বাধা দেয়া সম্ভব নয়
যোনাঙ্গচ্ছেদের আগে মেয়েদের উলঙ্গ করে ধোয়া হয়৷ এর ফলে পরবর্তীতে তাঁদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে, কারণ তাঁদের মায়েদেরও সমস্যা হয়েছে৷ যৌনাঙ্গচ্ছেদের কারণে সংক্রমণ, বন্ধ্যাত্ব এমনকি সন্তান জন্ম দেয়ার সময় সমস্যাও হতে পারে৷ আফ্রিকার ২৮টি দেশে, আরব উপদ্বীপে এবং এশিয়ার কিছু দেশে এখনো এই চর্চা রয়েছে৷ ইউরোপের অভিবাসী মেয়েরাও অনেক সময় এই ঝামেলায় পড়েন৷
ছবি: Reuters/S. Modola
ভীতিকর পরিস্থিতি
রিফট উপত্যকার একটি কুঁড়েঘরে যৌনাঙ্গচ্ছেদের জন্য অপেক্ষা করছেন কয়েকজন পোকোট মেয়ে৷ ২০১১ সালে কেনিয়া সরকার এই চর্চা নিষিদ্ধ করেছে৷ তবে ইউনিসেফ-এর প্রকাশিত তথ্য অনযায়ী, দেশটির ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সি অন্তত ২৭ শতাংশ মেয়ের যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/S. Modola
ব্যথা সহ্য করে থাকতে হবে
একজন খৎনাকারী একটি মেয়ের যৌনাঙ্গচ্ছেদ করছেন৷ স্থানীয়রা আশা করেন যে, মেয়েরা এ সময় মুখ বুজে ব্যথা সহ্য করে যাবে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, দশ শতাংশ মেয়ে যৌনাঙ্গচ্ছেদের সময় মারা যায়৷ আরো ২৫ শতাংশ মারা যায় যৌনাঙ্গচ্ছেদের কারণে সৃষ্ট শারীরিক জটিলতার কারণে৷ সোমালিয়ার ৯৮ শতাংশ মেয়ে যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার৷
ছবি: Reuters/S. Modola
পাথরের উপর রক্ত
একেক গোষ্ঠী একেকভাবে যৌনাঙ্গচ্ছেদ করে থাকে৷ পোকোট সম্প্রদায় যোনিদ্বার কেটে ফেলে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মূলত তিনভাবে যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়৷ প্রথম পদ্ধতি হচ্ছে, ক্লিটোরিয়াস বা ভঙ্গাকুর কেটে ফেলা৷ দ্বিতীয় পদ্ধতিতে, যোনিদ্বারের বাইরের এবং ভেতরের কিছু অংশ কেঁটে ফেলা হয়৷ আর তৃতীয় পদ্ধতিতে কার্যত যোনিদ্বার পুরোটা কেটে সমান করে ফেলা হয়৷
ছবি: Reuters/S. Modola
সাদা রং করা
পোকোটদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে মেয়েদের দেহে সাদা রং করা হয়৷ তারা আগে থেকেই ধরে নেয় যে, এতে করে সংক্রমণে বা মাত্রাতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে মেয়েটি মারা যেতে পারে৷ এমন বর্বরতা থেকে মেয়েদের বাঁচাতে ২০১৪ সালে বিশেষ পুলিশ বাহিনী তৈরি করেছে কেনিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Modola
জীবনভর যন্ত্রণা
যৌনাঙ্গচ্ছেদের পর একটি মেয়েকে পশুর চামড়া জড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ পোকোট জনগোষ্ঠীর ধারা অনুযায়ী, মেয়েটি এখন বিয়ের উপযোগী হয়েছে৷ অনেক উপজাতী গোষ্ঠী মনে করে, এফজিএম হচ্ছে স্বাস্থ্যকর ব্যাপার৷ এরফলে মেয়েরা আরো বেশি গর্ভধারণের উপযোগী হয় এবং স্বামীর প্রতি অনুগত থাকে৷
ছবি: Reuters/S. Modola
মা থেকে মেয়েতে?
এই কিশোরী কোনোদিন যৌনাঙ্গচ্ছেদের যন্ত্রণার কথা ভুলবে না৷ কিন্তু ভবিষ্যতে সে কি এই ব্যথা থেকে তার মেয়েকে রক্ষা করতে পারবে? কিছু দেশে এখন শিশুদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়৷ কেননা বাচ্চাদের করা হলে সেটা আলাদাভাবে মানুষের নজর কাড়ে না!
ছবি: Reuters/S. Modola
9 ছবি1 | 9
নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ নানা প্রক্রিয়ায় করা হয়৷ কোথাও কোথাও যৌনাঙ্গের ভগাঙ্কুরের অংশবিশেষ কেটে ফেলা হয়৷ আবার মেয়েরা যাতে যৌনমিলনের সময় বেশি আনন্দ না পায় এবং বিয়ের আগ অবধি কুমারী থাকে, সেই উদ্দেশ্যে অনেক জায়গায় যোনির প্রবেশপথও সেলাই করে দেয়া হয়৷৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে বিশ কোটি নারী এফজিএম-এর শিকার৷ আর এর ফলে নারীর মাসিকের সময় প্রদাহ, কাটাস্থলে বারংবার ইনফেকশন, সন্তান জন্মদানে সমস্যা এবং যৌনক্ষমতা কমে যাওয়াসহ নানা সমস্যা হয়৷
জার্মানিতে এফজিএম নিষিদ্ধ হলেও অভিবাসী পরিবারে জন্ম নেয়া ১৫,৫০০ মেয়ে এই চর্চার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছে ‘ট্যঁর দ্যে ফ্যাম'৷ কেননা, তাদের ছুটি কাটানোর নামে বাবা-মায়ের দেশে নিয়ে এফজিএম করানো হতে পারে৷ তাই, তাদের রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি৷