বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার তত্ত্বাবধানে আশ্রয়প্রার্থীদের উপর নিপীড়নের কিছু ঘটনার জের ধরে জার্মানিতে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে৷ অবকাঠামোর উন্নয়ন ও আশ্রয়প্রার্থীদের সম্পর্কে নীতি পরিবর্তনের দাবিও উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
সিরিয়া, ইরাক সহ বিভিন্ন দেশের মানুষ সংকটে পড়ে বাধ্য হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় খুঁজছেন৷ অনেকে আবার অর্থনৈতিক কারণে দেশ ছাড়ছেন সৌভাগ্যের খোঁজে৷ ইদানিং সেই সংখ্যাটা বেশ বেড়ে গেছে৷ ফলে জার্মানির মতো অনেক শিল্পোন্নত দেশে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে৷ আবেদন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবার আগে তাদের জন্য সাময়িক বসবাসের ব্যবস্থা করতে হয়৷ কিন্তু বর্তমান অবকাঠামো প্রায়ই সেই চাপ সামলাতে পারছে না৷ ফলে ঘটছে নানা অপ্রিয় ঘটনা৷ জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়ায় এমনই এক কেলেঙ্কারি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে৷ এই প্রেক্ষাপটে বিরোধীরা বিদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের সম্পর্কে নীতির পুনর্মূল্যায়নের ডাক দিচ্ছে৷
জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য কিছু তথ্য
জার্মানিতে এসে যাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন, তাঁদের আমলাতন্ত্রিক নানা জটিলতার মধ্যে পরতে হয়৷ ফলে তাঁরা দিশেহারা হয়ে যান৷ তাঁদের সুবিধার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবার কমিক্স আকারে এই তথ্য পুস্তিকাটি রের করেছে৷
ছবি: SMI Sachsen
কিভাবে এগোবেন
গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ১৫ হাজার ৫৭৬ জন বিদেশি জামানিতে এসে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন৷ তাঁরা যাতে কোনো রকম আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সম্মুখীন না হন, সেজন্য স্যাক্সনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জার্মানি সম্পর্কে তিনটি ভাষায় একটি তথ্যপুস্তিকা প্রকাশ করেছে৷ যাতে রয়েছে সহজ ভাষায় ডাক্তারের কাছে যাওয়া থেকে শুরু করে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো পর্যন্ত নানা তথ্য৷
ছবি: SMI Sachsen
ভদ্রভাবে চলা
বিভিন্ন অফিস-আদালত বা কতৃপক্ষকে কোনো উপহার দেওয়া এ দেশে মোটেই ভদ্রতার মধ্যে পরে না বরং তাঁরা এতে বিরক্ত বোধ করেন৷ কাজেই সে ধরণের কোনো আচরণ না করাই ভালো৷ অন্যদিকে, কতৃপক্ষ কোনো উপহার নিলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁদেরও শাস্তি পর্যন্ত ভোগ করতে হয়৷
ছবি: SMI Sachsen
সহানুভূতিশীল
জার্মানিতে এসে যাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হন, তাঁদের থাকার জন্য আলাদা বাড়ির ব্যবস্থা রয়েছে৷ সেসব বাড়িতে অনেকে একসাথে থাকেন এবং সেখানে থাকতে তাঁদের কারও যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য সবাইকেই বেশ কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়৷ তথ্য পুস্তিকাটিতে বিশেষভাবে লেখা রয়েছে যে, একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে এবং নিজের কারণে যেন অন্যের অসুবিধা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷
ছবি: SMI Sachsen
সময় সচেতনতা
সময় সচেতনতা সম্পর্কে জার্মানির খ্যাতি রয়েছে৷ কারুর যদি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার নিদিষ্ট সময় দেওয়া থাকে আর তিনি যদি কোনো কারণে সে সময় সেখানে না যেতে পারেন, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারকে ফোন করে জানিয়ে দিতে হবে৷ তাছাড়া ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়া আশ্রয়প্রার্থীকে জার্মানিতে থাকার জরুরি কাগজ-পত্র বা টাকাও দেওয়া হবে না৷ জার্মানরা সময় সচেতন হলেও আজকাল মাঝেমাঝেই অবশ্য ট্রেনের সঠিক সময় রক্ষা করা যাচ্ছে না৷
ছবি: SMI Sachsen
স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক
জার্মানিতে তিন বছর বয়সি প্রতিটি শিশুর কিন্ডারগার্টেনে জায়গা পাওয়ার অধিকার রয়েছে৷ রাজনৈতিক আশ্রয়পার্থীদের বাচ্চাদের স্কুলের খরচ বহন করে জার্মান সরকার৷ জার্মানিতে ছয় বছর বয়স হলে বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক৷ এছাড়া, স্কুলে বিদেশি বাচ্চাদের জার্মান ভাষা শেখার জন্য বাড়তি সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়ে থাকে৷
ছবি: SMI Sachsen
চিকিৎসা ব্যবস্থা
রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বিনা খরচে ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থাও রয়েছে জার্মানিতে৷ সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পুরো খরচ বহন করে জার্মান সরকার৷ কোনো রকম মানসিক সমস্যা হলে তাঁদের মনোবিজ্ঞানীর কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়৷ এ সব ক্ষেত্রে কারো ভাষাগত সমস্যা হলে, দোভাষীর ব্যবস্থাও করা হয়ে থাকে৷
ছবি: SMI Sachsen
6 ছবি1 | 6
গত সপ্তাহে বুয়রবাখ নামের এক ছোট্ট শহরে আশ্রয়প্রার্থীদের একটি কেন্দ্রে ঘটনাটি এক স্থানীয় সাংবাদিকের চোখে পড়ে৷ তিনি একটি ডিভিডি হাতে পান, যাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কী ভাবে রক্ষীরা এক বিদেশি আশ্রয়প্রার্থীর উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে৷ এক রক্ষীর মোবাইল ফোনে তোলা ছবিতে আরও এক ভয়াবহ দৃশ্য দেখা যায়৷ মেঝেতে পড়ে থাকা হাতকড়া পরা এক রিফিউজির গলায় পা দিয়ে ঠেলছে এক রক্ষী৷ সারা রাজ্যে মোট তিনটি কেন্দ্রে নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে৷
এমন দৃশ্য ইরাকের কুখ্যাত আবু ঘ্রাইব কারাগারের কেলেঙ্কারির কথা মনে করিয়ে দেয়৷ সেখানেও বন্দিদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালানো হয়েছিলো৷ ইরাকে শুধু মার্কিন সৈন্য নয়, অনেক মার্কিন বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীও মোতায়েন করা হয়েছিলো৷ জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যেও এমন বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার হাতে আশ্রয়প্রার্থী কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে৷ তারাও আবার অন্য কিছু বেসরকারি সংস্থাকে নিয়োগ করেছে৷
এই অবস্থায় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাল্ফ ইয়েগার প্রবল চাপের মুখে পড়েছেন৷ নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের বদলে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেবার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ এই অবস্থায় তিনি গোটা অঞ্চলের সব অ্যাসাইলাম সেন্টারে নিযুক্ত নিরাপত্তা কর্মীদের ‘ব্যাকগ্রাউন্ড চেক'-এর নির্দেশ দিয়েছেন৷ আরও বলেছেন, আশ্রয়প্রার্থীদের নিপীড়ন কোনো অবস্থায় বরদাস্ত করা হবে না৷ তিনি সরাসরি বিদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন৷
এদিকে মিউনিখে আশ্রয়প্রার্থীদের এক কেন্দ্র পরিদর্শন করে জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস দেমেজিয়ের বলেছেন, সেখানকার পরিস্থিতিও বেশ কঠিন৷ আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা আচমকা বেড়ে যাওয়ায় এমন কিছু সাময়িক সমস্যা দেখা যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যে নিরাপত্তা কর্মীদের আচরণের তীব্র নিন্দা করেন তিনি৷