স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হান্স-পেটার ফ্রিডরিশ চিন্তিত৷ শুধুমাত্র জুলাই মাসে সাড়ে ন’হাজার মানুষ জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন – ২০১২-র জুলাই মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ৷ এখন যারা আসছে, তাদের অধিকাংশ আসছে চেচনিয়া থেকে৷
বিজ্ঞাপন
চলতি বছরে এ যাবৎ বাহান্ন হাজারের বেশি মানুষ জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ বছর শেষ হতে হতে সংখ্যা এক লাখ ছাড়াতে পারে, বলে জার্মান সরকারের ধারণা৷ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ‘‘অধিকাংশই আসছে রাশিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তান, সার্বিয়া, ইরান এবং পাকিস্তান থেকে'' – ডয়চে ভেলে-কে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্থায়ী সচিব ওলে শ্র্যোডার৷ তবে বিশেষ খবরটা হল: জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত যাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন, তাঁদের মধ্যে যে সাড়ে এগারো হাজার মানুষ রুশ পাসপোর্টের অধিকারী, তাঁদের ৯০ শতাংশই এসেছেন চেচনিয়া থেকে৷
জার্মানিতে বাড়ি সমস্যায় অভিবাসীরা
অভিবাসীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ তবে বাড়ির সমস্যাকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে ধরা যেতে পারে৷এ সমস্যা জার্মানিতে বসবসারত তুর্কিদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়৷ কারণ জার্মানিতে প্রায় ৪০ লাখ তুর্কি আছেন৷
ছবি: Suzheh.sub.ir
অভিবাসী তুর্কিদের সমস্যা বেশি
জার্মানিতে অভিবাসীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ এগুলোর মধ্যে বাড়ির সমস্যাকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে ধরা যেতে পারে৷ জার্মানিতে অভিবাসীদের মধ্যে তুর্কিদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি প্রায় ৪০ লাখ৷ কাজেই সমস্যাটাও ওদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শীতকালে ঠান্ডায় কষ্ট পায়
তুর্কিদের সাধারণত বাসা ভাড়া দেওয়া হয় পুরনো এলাকায় বহু বছরের পুরনো বাড়িগুলোয়৷ সেই সব বাড়িতে হয়ত দরজা ঠিকমতো বন্ধ হয় না বা জানালা দিয়ে বাতাস ঢোকে বা খানিকটা খোলা থাকে৷ অথবা শীতকালে হিটার কাজ করে না, অর্থাৎ ঠান্ডায় কাটাতে হয়৷ বাড়ির মালিককে কয়েকবার বলেও ঠিক করানো যায়নি৷ এভাবেই জানান তিন দশক আগে তুরস্ক থেকে জার্মানিতে আসা আহমেদ খালিফি৷
ছবি: DW/C. Ruta
বাড়ির অবস্থা অস্বাস্থ্যকর
আহমেদ খালিফির ছেলে আদেলের বাড়িতেও প্রায় একই সমস্যা৷ বাড়িটি ৪০ বছরের পুরনো হওয়ায় খুবই স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকার এবং অস্বাস্থ্যকর৷ এ ব্যাপারে অবশ্য বাড়িওয়ালার মাথা ব্যথা নেই, কয়েকবার বলেও কোনো কাজ হয়নি৷
ছবি: DW/C. Ruta
অবশেষে নিজেই দায়িত্ব নেন
আবদাল ১৫ বছর এ বাড়িতে আছেন, কিন্তু একবারও রঙ করা হয়নি৷ আর সেকথা বাড়ির মালিককে কয়েকবার বলায় তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, প্রয়োজনে তিনি যেন নিজেই এ কাজ করে নেন৷ তাই আবদাল এ কাজ ভালো না জানা সত্ত্বেও নিজেই করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
শীতের কথা ভেবে ভীত
একটি মাত্র ঘর আর সেখানেই বাচ্চাদের নিয়ে থাকেন আলিয়া৷ ঘরে যেসব জিনিসের জায়গা হয় না, সেসব জিনিস স্থান পেয়েছে বাড়ির বারান্দায়৷ কিন্তু শীতের সময় এসব প্রয়োজনীয় জিনিসের কি হবে – তা ভেবে অস্থির আলিয়া৷ এই অবস্থা অবশ্য শুধু আলিয়ার একার নয়৷
ছবি: DW/C. Stefanescu
অভিবাসীদের বেশি সন্তান
অভিবাসীদের বাড়ির বড় সমস্যা৷ তার কারণ, তাঁরা বড় শহরগুলোর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করতে পছন্দ করেন৷ তাছাড়া জার্মানদের তুলনায় অভিবাসীরা কম রোজগার করেন এবং তাঁদের সন্তান সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাড়ি পেতেও অসুবিধা হয়৷ এছাড়া একই ধরণের বাড়ির জন্য জার্মানদের তুলনায় তাঁদের কাছে বেশি ভাড়াও চাওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB
বাড়ির অবস্থা করুণ
অভিবাসীদের বাসস্থান সমস্যা অবশ্য নতুন সমস্যা নয়৷ অভিবাসীরা যেসব এলাকায় থাকেন সেই পুরনো বাড়িগুলোকে ঠিকঠাক না করানোয়, দিনদিন সেগুলি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে৷ এই অবস্থা নিদিষ্ট কোনো শহরে নয়, প্রায় শহরেই এই একই অবস্থা৷
ছবি: Fars
আগুনে পরিবারের আট জনের মৃত্যু
প্রায় চার মাস আগে বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গের বাকনাং শহরে একটি বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইন ছিল বিপজ্জনক এবং একথা বারবার মালিককে বলার পরও তা ঠিক করা হয়নি৷ যার ফল হয় মর্মান্তিক৷ ঘর গরম বা পানি গরমের জন্য ব্যবহার করা হতো কাঠের চুল্লি৷ ঐ বাড়িতেই আগুন লেগে একজন তুর্কি মা তাঁর সাত সন্তানসহ মারা যান৷ ছবিতে বাকনাং শহরের কিশোর-কিশোরীরা মৃত পরিবারের প্রতি ফুল আর মোমবাতি দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাড়ি মালিকদের মত
বাড়িওয়ালাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, তুর্কি পরিবারগুলো অনেক বড়, সবসময় হৈচৈ লেগে থাকে এবং তেমন পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন নয়৷ আর সেজন্যই তাঁদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে কিছুটা আপত্তি থাকে বাড়িওয়ালাদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তরুণদের ভিন্নমত
বয়স্ক অভিবাসীরা বাসস্থানের ব্যাপারে যতটা বৈষম্যের শিকার হন বলে মনে করেন, এই প্রজন্মের তুর্কিরা তেমনটা মনে করে না৷ সম্ভবত এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা জার্মান ভাষা ভালো জানার কারণেই এমনটা ঘটছে৷
ছবি: Suzheh.sub.ir
10 ছবি1 | 10
দৃশ্যত চেচনিয়ার বহু মানুষের ধারণা যে, জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করলেই এখানে কাজ করার অনুমতি পাওয়া যায়, যা একটি ভ্রান্তি৷ তবে চেচনিয়া থেকে আগত রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে শ'দুয়েক ইসলামপন্থিও আছে, বলে জার্মান গুপ্তচর বিভাগের খবর – অন্তত জার্মান গণমাধ্যমে খবরটা সেভাবেই দেওয়া হয়েছে৷ এই সব চেচেন সন্ত্রাসবাদীদের জার্মানিতে আসার উদ্দেশ্য হল, চেচনিয়ায় তাদের সংগ্রামের জন্য এখানে অর্থ সংগ্রহ করা, এমনকি চেচনিয়ায় যুদ্ধ করতে রাজি, এমন স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করা৷
কিন্তু চেচনিয়া থেকে যে হাজার দশেক রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী এ বছর জার্মানিতে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে যদি মাত্র শ'দুয়েক বিদ্রোহী – পক্ষান্তরে সন্ত্রাসবাদী থাকে, তবে বাকিরা আসছে কেন বা কীসের আশায়? তার একটি উত্তর সম্ভবত ককেশাসের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর: প্রত্যেক চেচেন নাকি জার্মানিতে এলে প্রথমেই চার হাজার ইউরো উপহার পায়! মানুষ পাচারকারীরা সঙ্গে সঙ্গে এই খবরটাকে তাদের নিজেদের কাজে লাগায় এবং জার্মানি যাত্রায় অভিলাষী চেচেনদের দলে দলে পোল্যান্ড হয়ে জার্মানিতে ঢোকাতে শুরু করে৷
কিন্তু সেই মওকায় যে সব চেচেন যোদ্ধারা জার্মানিতে ঢোকার চেষ্টা করছে অথবা করবে, ‘‘(তারা)একটি গৃহযুদ্ধ পীড়িত দেশ থেকে আসছে, এবং তারা মানুষ হত্যা করতে শিখেছে,'' বলে সাবধান করে দিয়েছেন জার্মান পুলিশ কর্মচারী সংগঠনের সভাপতি রাইনার ভেন্ড৷ এ ও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন ম্যারাথনে যারা বোমাবাজি করেছিল, তারাও ছিল আদতে চেচনিয়ার লোক৷