1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজনৈতিক আশ্রয় সম্পর্কে যা জানা উচিত

২১ মে ২০১৮

ইউরোপের দেশ জার্মানিতে বাংলাদেশিদের আগমন ইউরোপের অন্য অনেক দেশের তুলনায় কম৷ গত কয়েকবছরে কয়েক হাজার বাংলাদেশি শরণার্থী হিসেবে জার্মানিতে প্রবেশ করেছেন৷ যাদের অনেকে আবার অন্যত্র চলে গেছেন, বা যেতে বাধ্য হয়েছেন৷

ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warmuth

লিবিয়া হয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছিলেন কামরুল (ছদ্মনাম)৷ ২০১৬ সালে সেই যাত্রায় ইটালি থেকে নানা চেষ্টায় জার্মানি এসে হাজির হন তিনি৷ ইউরোপের এই দেশটি আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ৷ তাই রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করার পর কাজ পেতে তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি তাঁর৷ বরং নিয়মিত কাজ করে ভালো অর্থ উপার্জন শুরু করেন তিনি৷

অবস্থা এমন হয়েছিল যে, গতবছর তাঁর বান্ধবীকেও শিক্ষার্থী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে আনতে সক্ষম হন কামরুল৷ বিপত্তি বাঁধে তাঁর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়ার পর৷ শুরুতে বিষয়টি উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন কামরুল৷ কিন্তু একদিন পুলিশ আসে তাঁর ঠিকানায়, উদ্দেশ্য কামরুলকে জোর করে বাংলাদেশকে ফেরত পাঠানো৷ তাঁকে সেদিন পুলিশ পায়নি৷ তবে তিনি সেই ঘটনার পরপরই চলে গেছেন ফ্রান্সে৷ আর তাঁর বান্ধবী রয়ে গেছেন জার্মানিতে৷ 

‘নগ্ন করে নির্যাতন করা হয় শরণার্থীদের’

10:53

This browser does not support the video element.

সবার অবস্থা অবশ্য কামরুলের মতো হয় না৷ সেদিন কথা হচ্ছিল আরেক বাংলাদেশি যুবকের সঙ্গে৷ জার্মানিতে তাঁর আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে৷ তিন বছর থাকার অনুমিত পেয়েছেন তিনি৷ বাংলাদেশে মুক্তমনা ব্লগার হত্যা শুরুর পর নিজেকে মুক্তমনা পরিচয় দিয়ে জার্মানিতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি৷ কোথায় লেখেন? কীভাবে উগ্রপন্থিদের নজরে পড়লেন? এই প্রতিবেদকের এসব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই যুবক৷

জার্মানিতে যারা আশ্রয় পেয়েছেন, যাদের ফেরানো হয়েছে

জার্মানিতে গত কয়েকবছরে আশ্রয়ের আশায় অবৈধপথে আসা বাংলাদেশির সংখ্যা কয়েক হাজার৷ সরকারি এক পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালে জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন ২,৬৫৭ জন বাংলাদেশি৷ সেবছর আশ্রয় পেয়েছেন ১০৯ জন৷ ২০১৭ সালে অবশ্য আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা কমে গেছে অনেক৷ গতবছর জার্মানিতে আশ্রয়ের প্রার্থনা করেন মাত্র ৪৬ জন শরণার্থী৷ আর আটজনের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে৷ আর চলতি বছরের এপ্রিল অবধি জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশির সংখ্যা ১০১ জন, আশ্রয় পেয়েছেন ৩১ জন৷

জার্মানিতে অবস্থানরত কয়েকজন বাংলাদেশি শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতা, নাস্তিকতার চর্চা, সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, বিহারি নির্যাতন এবং সমকামিতার কারণে নিপীড়নের শিকার হওয়ার মতো কারণ দেখিয়ে আশ্রয়ের আবেদন করেন বাংলাদেশিরা৷ এ সবের মধ্যে কিছুক্ষেত্রে কারণগুলো ব্যক্তিবিশেষে সঠিক হলেও অনেকে অর্থের বিনিময়ে সংগৃহীত ভুয়া নথিপত্র দেখিয়ে আশ্রয় গ্রহণের চেষ্টা করেন৷   এদিকে, যেসব বাংলাদেশি শরণার্থীর আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখান করা হয়েছে, তাদের ফেরত পাঠাতেও শুরু করেছে জার্মানি৷ ২০১৬ সালে আকাশপথে অন্তত ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়৷ ২০১৭ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় অন্তত ৯৯ জনে৷ আর চলতি বছর বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর হার অনেক বেড়েছে বলে শরণার্থীরা জানিয়েছেন৷ তবে, জার্মানির পরিসংখ্যান ব্যুরো চলতি বছর এখন অবধি কতজনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেনি৷

জার্মানি যেসব কারণে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়

জার্মানিতে শরণার্থীরা সাধারণত চারটি কারণে আশ্রয় পেয়ে থাকেন৷ এগুলো হচ্ছে:

১. শরণার্থীদের রক্ষা 

মূলত বর্ণ, ধর্ম, জাতীয়তা, সামাজিক গোষ্ঠী কিংবা রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে যারা নিজেদের দেশে নিজেদের নিরাপদ মনে না করে অন্য দেশে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করেন তাদের এই ক্যাটাগরিতে আশ্রয় দেয়ার জন্য বিবেচনা করা হয়৷ তবে যারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে দেশত্যাগ করেন, এবং অবৈধভাবে জার্মানিতে প্রবেশ করেন, তাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বিবেচনা করা হয় না৷ আন্তর্জাতিক এবং জার্মান আইন অনুযায়ী, যেসব মানুষ নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির আশায় অবৈধভাবে অন্যদেশে যাচ্ছেন, তারা শরণার্থী নন৷ ফলে সংঘাতপ্রবণ নয় কিংবা যুদ্ধ চলছে না, এমন দেশের মানুষরা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় চাইলে অধিকাংশক্ষেত্রেই তা বাতিল হয়ে যায়৷ তবে যারা আশ্রয় পান, তাদেরকে তিন বছরের জন্য আশ্রয় দেয়া হয়৷ সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সেটা নবায়ন করা হবে কিনা তা পুনরায় মূল্যায়ন করা হয়৷

২. রাজনৈতিক আশ্রয়

যারা রাজনৈতিক কারণে নিজের দেশে নিগৃহের শিকার হয়েছেন কিংবা হওয়ার আশঙ্কায় আছেন, তাদেরকে এই ক্যাটাগরিতে জার্মানিতে আশ্রয় প্রদান করা হয়৷ তবে রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে চাইলে অবশ্য আশ্রয়প্রার্থীকে নথিপত্র দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি তাঁর দেশে নিরাপদ নন৷ জার্মান সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজনৈতিক আশ্রয় খুব কম মানুষকে প্রদান করা হয়৷ যারা এই আশ্রয় পান তাদেরকে প্রথমে তিন বছর মেয়াদে বসবাসের অনুমতি দেয়া হয়৷ পরবর্তীতে সেই মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ থাকে৷

জীবন বাঁচানোর পুরস্কার কারাদণ্ড?

02:36

This browser does not support the video element.

৩. শর্তসাপেক্ষে সুরক্ষা

যে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে আশ্রয় পাননি কিন্তু নিজের দেশে ফিরলে মৃত্যুদণ্ড বা অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে পারেন, তাকে জার্মানিতে শর্তসাপেক্ষে এক বছরের জন্য বসবাসের অনুমতি দেয়া হয়৷ মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও আন্তর্জাতিক বা অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাতের কারণে যদি কেউ দেশে ফিরতে না পারেন তাকেও এই ক্যাটাগরিতে থাকতে দেয়া হয়৷ তবে একবছর পর তাঁর বসবাসের মেয়াদ বাড়বে কিনা সেটা নির্ভর করছে জার্মান কর্তৃপক্ষের উপর৷ 

৪. জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোয় নিষেধাজ্ঞা

খুবই দুর্লভক্ষেত্রে এ ধরনের বসবাসের অনুমতি দেয়া হয়৷ যদি একজন আশ্রয়প্রার্থীর উপরে উল্লেখিত সবগুলো ক্যাটাগরিতে আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হয়, তারপরও জার্মান কর্তৃপক্ষ চাইলে তাঁকে ফেরত পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে৷ এই নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় কনভেনশন অনুযায়ী একজন ব্যক্তি তাঁর দেশে ফেরত গেলে তাঁর মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে কিনা সেটা বিবেচনা করা হয়৷ এক্ষেত্রেও আশ্রয়ের মেয়াদ হয় একবছর৷ এই সময়ের পর বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করা হয়৷

উল্লেখ্য, জার্মানিত যারা আশ্রয় পান তাদের সাধারণত নীল রঙের ‘শরণার্থী ট্রাভেল ডকুমেন্ট' দেয়া হয়, যেটি তারা নিজেদের দেশ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন৷ তবে এই ডকুমেন্ট কোনভাবেই জার্মান নাগরিকত্ব বা জার্মান পাসপোর্টের সমতুল্য নয়৷ বরং যে দেশের নাগরিক, ট্রাভেল ডকুমেন্টে সেই দেশের কথা উল্লেখ করা থাকে৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ