ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র পুনর্ব্যবহারের অভ্যাস থাকা সত্ত্বেও জার্মানরা প্রতি বছর রেকর্ড সংখ্যক প্যাকেজিং বর্জ্য উৎপাদন করছে বলে ফেডারেল এনভায়রনমেন্টাল এজেন্সি (ইউবিএ) জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সংস্থাটির সোমবার প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, জার্মানিতে ২০১৭ সালে এক কোটি ৮৭ লাখ টন প্যাকেজিং বর্জ্য জড়ো হয়, যা তার আগের বছরের তুলনায় তিন শতাংশ বেশি৷ উৎপাদন ও খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রে পরিবহণের আগে বেশি বেশি প্যাকেজিং ব্যবহার করা হলে এই বর্জ্য আরো বেড়ে যাবে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি৷
ইউবিএর সভাপতি মারিয়া ক্রাউটজবার্গার বলেছেন, ‘‘আমরা অনেক বেশি প্যাকেজিং ব্যবহার করি৷ আমাদের অবশ্যই এই বর্জ্য এড়াতে হবে, সম্ভব হলে উৎপাদন পর্বের প্রথম পর্যায় থেকেই৷’’
প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার দিকে এগোচ্ছে বিশ্ব
গত ১ বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে৷ প্লাস্টিক বিক্রি, ব্যবহার এবং তৈরির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে৷ আগামী বছর আরও দেশ এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করবে বলেই বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
প্লাস্টিকহীন সুপারমার্কেট
২০১৮ সালের গোড়াতেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে জানিয়েছেন, ২০৪২ সালের মধ্যে ব্রিটেনকে সম্পূর্ণ প্লাস্টিকমুক্ত করাই তাঁর লক্ষ্য৷ একটি স্লোগানও দিয়েছেন তিনি, ‘‘ক্লিনার, গ্রিনার ব্রিটেন৷’’ সুপারমার্কেটগুলির কাছে তাঁর আবেদন, ‘‘প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করুন৷’’
ছবি: picture-alliance/Photoshot
প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমশ কমছে৷ লুক্সেমবুর্গ, ডেনমার্কের মতো বহু দেশ প্লাস্টিক ব্যাগের উপর বিপুল পরিমাণ কর বসিয়েছে৷ জার্মানির সুপারমার্কেটগুলি প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে বার বার ব্যবহার করা যায় এমন অন্য ব্যাগের ব্যবহার চালু করেছে৷
ছবি: Getty Images
কেনিয়ার অবদান
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে সুদূরপ্রসারী এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেনিয়া৷ দেশের কোথাও প্লাস্টিক ব্যাগ উৎপাদন করা যাবে না৷ ব্যবহারও করা যাবে না৷ পরিসংখ্যান বলছে, মাসে কেনিয়ায় প্রায় ২৪ মিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহৃত হতো৷ সরকার জানিয়েছে, কেউ নতুন নিয়ম না মানলে তার চার বছর পর্যন্ত জেল এবং ৩৮হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে৷
ছবি: Reuters/T. Mukoya
জিম্বাবোয়ের পদক্ষেপ
জিম্বাবোয়েও তাদের প্যাকেজিং নীতি বদলে দিচ্ছে৷ প্লাস্টিকের তৈরি স্টাইরোফোম বাক্স বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ সাধারণত, যে ধরনের বাক্সে খাবার প্যাক করে দেওয়া হয়৷ কাগজের তৈরি নতুন বাক্স তৈরি করার চেষ্টা করছে তারা৷ বিভিন্ন ফাস্টফুড সেন্টারে প্যাক করে খাবার না দিয়ে ক্রেতাদের রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়াদাওয়া করতে উৎসাহ দেওয়া আহ্বান জানানো হয়েছে৷
ছবি: Environment Management Agency of Zimbabwe
প্লাস্টিকের ইয়ারবাড নয়
স্কটিশ সরকার জানিয়েছে, প্লাস্টিকের তৈরি ইয়ারবাড বা কানখোঁচানি আর সে দেশে ব্যবহার করা যাবে না৷ সাধারণত এগুলি ব্যবহার করে কমোডে ফেলে দেওয়াই অভ্যাস স্কটিশদের৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমোড থেকে পিটে গিয়ে সেই বাডগুলি চলে যাচ্ছে সমুদ্রে৷ সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত৷ বায়োডিগ্রেডেবল বাড অবশ্য ব্যবহার করা যাবে৷
ছবি: Colourbox
5 ছবি1 | 5
তিনি বলেন, ‘‘টুথপেস্ট টিউবও প্যাকেজ করে দেওয়া হয়, প্রায়ই কেউ এর বিপরীত দিকটি দেখতে পান৷ কেবল (বোতলজাত) মিনারেল ওয়াটার এবং বিয়ার নয়, আমাদের আরো বেশি পুনর্ব্যবহারযোগ্যতা প্রয়োজন৷ পুনরায় ব্যবহারযোগ্য মগে কফি কেনা যায় এবং পুনরায় ব্যবহারযোগ্য পাত্রে খাবার গ্রহণ করতেও সক্ষম হওয়া উচিত৷’’
২০০০ সাল থেকে জার্মানিতে প্যাকেজিং ব্যবহারের হার ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ জার্মানির পুনর্ব্যবহারযোগ্য কোটা ৭০ শতাংশ হওয়ায় ইউবিএ এটিকে ‘ভালো’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল৷
তবে এখন ইউবিএ জানিয়েছে, পুনর্ব্যবহারযোগ্য হিসেবে কাঁচ, কাগজ এবং ইস্পাত ভালো কাজ করলেও প্লাস্টিক ৫০ শতাংশ এবং কাঠের তন্তুগুলোর পুনর্ব্যবহার ২৬ শতাংশের মধ্যে রয়েছে৷ অ্যালুমিনিয়াম পুনর্ব্যবহার আপাতদৃষ্টিতে উচ্চ কোটায় অর্থাৎ ৮৭ শতাংশ থাকলেও খাঁটি অ্যালুমিনিয়াম পুনরুদ্ধারের মাত্রা মাত্র ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে৷
জার্মানির সংশোধিত প্যাকেজিং আইন গত জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন উপকরণগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্যতা উন্নত করার কথা বলা হয়েছে৷
সুপারশপ এবং আউটলেটগুলোতে ধীরে ধীরে প্লাস্টিকের ব্যাগনিষিদ্ধ করতে জার্মানির পরিবেশমন্ত্রী সোভেঞ্জ শুলজের সুপারিশে নভেম্বরের প্রথম দিকে সায় দিয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভা৷ প্লাস্টিকের বদলে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ ব্যবহারের জন্য ক্রেতাদের আহ্বান জানিয়েছে সরকার৷