জার্মানিতে ‘রেড আর্মি'র সন্দেহভাজন সদস্য গ্রেপ্তার
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত শতকের ৭০ ও ৮০-র দশকে পশ্চিম জার্মানিতে সক্রিয় কট্টর বামপন্থি ‘রেড আর্মি ফ্যাকশন' বা আরএএফ গোষ্ঠীর এক সন্দেহভাজন সদস্য ডানিয়েলা ক্লেটেকে সোমবার বার্লিনে আটক করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
লোয়ার সাক্সোনি রাজ্যের ফেয়ারডেন শহরের পাবলিক প্রসিকিউটরের কার্যালয় মঙ্গলবার ৬৫ বছর বয়সি ক্লেটের আটকের খবর জানিয়েছে৷
‘‘আমরা মিস ক্লেটেকে গ্রেপ্তার করেছি,'' বলেন সিনিয়র পাবলিক প্রসিকিউটর করায় ফ্রয়ডেনব্যার্গ৷ তার কার্যালয় ক্লেটে ও তার দুই সহযোগী এয়ার্ন্সট-ফল্কার স্টাউব ও বুর্কহার্ড গারভেগকে নিয়ে তদন্ত করছে৷
এই তিনজন ১৯৯০ দশক থেকে পালিয়ে ছিলেন৷ ডাকাতি করে তারা পলাতক জীবন চালানোর চেষ্টা করতেন বলে ধারণা করা হয়৷
সম্প্রতি তাদের মামলা নিয়ে টেলিভিশনে একটি অনুষ্ঠান প্রচারের পর এই তিন সন্দেহভাজনের অবস্থান সম্পর্কে ১৬১টি তথ্য পেয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷
গত শতকের ৭০ ও ৮০-র দশকে আরএএফ তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে বেশ কয়েকটি হামলা ও অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিল৷ ৩০টির বেশি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই গোষ্ঠী জড়িত ছিল বলে ধারনা করা হয়৷
১৯৯৮ সালে গোষ্ঠীটি নিজেদের বিলুপ্ত ঘোষণা করে৷ সাবেক এই সন্ত্রাসী সংগঠনটি এখনও সক্রিয় থাকার কোনো প্রমাণ নেই৷
কট্টর-ডানপন্থি দল এএফডির উত্থানে উদ্বেগ বাড়ছে জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনে৷ অভিবাসনবিরোধী দলটিকে নিষিদ্ধের দাবিও উঠেছে বিভিন্ন শহরের প্রতিবাদ, বিক্ষোভে৷
ছবি: Michael Kuenne/ZUMAPRESS/picture alliance
কোলনে ৩০ হাজার মানুষ
মঙ্গলবার কোলন শহরে এএফডি-র বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ৩০ হাজার মানুষ জড়ো হন৷ টানা পাঁচদিন ধরে জার্মানির বিভিন্ন শহরে চলছে এই প্রতিবাদ৷
ছবি: Oliver Berg/dpa/picture alliance
‘ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রীদের জোট’
কোলন শহরে জড়ো হওয়ারা বিভিন্ন বার্তা নিয়ে হাজির হন৷ একজন প্ল্যাকার্ডে ‘ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে সব গণতন্ত্রীদের জোট’ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ নানা ইস্যুতে ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তা হ্রাস আর ডানপন্থি দলের সমর্থন বাড়ায় কেউ কেউ লিখে এনেছেন, ‘বর্ণবাদীরা বিকল্প হতে পারে না৷’
ছবি: Oliver Berg/dpa/picture alliance
চ্যান্সেলরের সমর্থন
কোলনের এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে স্বাগত জানিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও৷ তিনি বিক্ষোভকারীদের উৎসাহ ও সাহস জোগাতে বার্তা দিয়েছেন৷ দেবেন ই বা না কেন? এএফডির উত্থানে যে বড় ধরনের দুশ্চিন্তায় পড়েছে ক্ষমতাসীনেরা৷
ছবি: Marc John/IMAGO
‘নাৎসিদের সরকারে নয়’
একইদিনে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ এসেনে অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি বা এএফডি দলটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন৷ ‘নাৎসিদের সরকারে নয়’, ‘ধূসর নয়, রঙিনকে বেছে নিন’, এমন স্লোগান দেন তারা৷
ছবি: David Young/dpa/picture alliance
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লাইপসিশ
এএফডি ছাড়াও উগ্র-রক্ষণশীল দল ভ্যালুস ইউনিয়ন নামের আরেকটি দলের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন পূর্বের শহর লাইপসিশের মানুষ৷ মোবাইলে আলো জ্বালিয়ে শহরের ফেডারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কোর্টের সামনে জড়ো হন তারা৷ ‘ফ্যাসিবাদ আর কখনো নয়’, ‘এএফডিকে না’, ‘এএফডি নাৎসি দল’, এমন স্লোগান দেন তারা৷ সোমবার এই বিক্ষোভে পাঁচ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
ছবি: Jan Woitas/dpa/picture alliance
গ্য়োটিঙেনে মুখোমুখি
শনিবার গ্য়োটিঙেনে বিক্ষোভ করেছেন উগ্র ডানপন্থার পক্ষ ও বিপক্ষের মানুষ৷ ডানপন্থাবিরোধী জোট নামে একটি পক্ষ পুলিশের বাধার সামনে রাস্তায় বসে পড়েন (ছবিতে)৷ একই সময়ে ডানপন্থি ১০টি সংগঠনের সদস্যরা লোয়ার স্যাক্সনির শহরটিতে পাল্টা প্রতিবাদ করেছেন৷
ছবি: Swen Pförtner/dpa/picture alliance
বার্লিনে ঐক্যের ডাক
তার আগে রোববার বার্লিনে প্রতিবাদে শামিল হন ২৫ হাজার মানুষ৷ ফ্রাইডে ফর ফিউচারসহ বিভিন্ন এনজিও ও আন্দোলনকর্মীরা এতে অংশ নেন৷ কট্টর ডানপন্থার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের মূল্যবোধের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ঐক্যের ডাক দেন তারা৷
ছবি: Rainer Keuenhof/picture alliance
প্রতিবাদে সরকারও
এএফডির কর্মকাণ্ড নিয়ে চিন্তায় আছে সরকারও৷ একদিকে তাদের জনপ্রিয়তা কমছে, অন্যদিকে ডানপন্থিদের বাড়ছে৷ এমন পরিস্থিতিতে অস্তিত্ব রক্ষায় জোট সরকারের তিন দলের নেতারাও ডানপন্থা ঠেকানোর দাবিতে মানুষের সাথে শামিল হয়েছেন৷ রোববার পটসডামে এসপিডির নেতা জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎস, গ্রিন পার্টির নেত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকও বিক্ষোভে অংশ নেন।
ছবি: Sebastian Gollnow/dpa/picture alliance
যে কারণে ক্ষোভ
অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম কারেকটিভ জানিয়েছে, সম্প্রতি পটসডামে এএফডিসহ উগ্র ডানপন্থি দলগুলো একটি বৈঠক করে৷ নির্বাচনে জয়লাভের পর ‘রিমাইগ্রেশন’ বা জার্মানিতে আসা অভিবাসীদের কীভাবে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়- সেই কৌশল নিয়ে তারা আলোচনা করে৷ এই বৈঠকে জার্মান পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে কারেক্টিভ৷ এমন পরিস্থিতিতে এএফডিকে নিষিদ্ধ করার দাবি আবারো জোরালো হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মহলে৷