জার্মানিতে রেল ধর্মঘট, ক্ষতি হতে পারে ১০০ কোটি ইউরো
২৪ জানুয়ারি ২০২৪
আজ থেকে সোমবার পর্যন্ত রেল ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে জার্মানির ট্রেন চালকদের ইউনিয়ন। এই নিয়ে জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার ধর্মঘট।
বিজ্ঞাপন
বুধবার সকাল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, প্রায় ছয়দিন যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ থাকবে। অন্যদিকে মালবাহী ট্রেনের ক্ষেত্রে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই ধর্মঘট শুরু হয়ে গেছে। অর্থাৎ, সাতদিন ধরে মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে না। এর ফলে প্রভূত ক্ষতি হবে বলে বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন।
ধর্মঘটের ফলে কেবলমাত্র যাত্রী পরিষেবায় ব্য়াঘাত ঘটছে না, সামগ্রিকভাবে জার্মান শিল্পাঞ্চল ক্ষতির মুখে পড়ছে। বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে মূল সামগ্রী রেলের মাধ্যমে পাঠানো হয়। বস্তুত, শুধু জার্মানি নয়, জার্মান রেলের মাধ্যমে গোটা ইউরোপে জিনিস পাঠানো হয়। ইউরোপের শিল্পক্ষেত্রের কাঁচামালের ৬০ শতাংশ যায় জার্মান রেলের মাধ্যমে। ফলে ইউরোপের অন্যান্য দেশের কপালেও ভাঁজ পড়েছে। কীভাবে কাঁচামাল পরিবহণ হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ শুরু হয়েছে।
জার্মান অর্থনীতিতে তিন দিনের রেল ধর্মঘটের বহুমুখী প্রভাব
তিন দিনের রেল ধর্মঘট জার্মানির বাণিজ্য, পণ্য পরিবহণ, বন্দরের কর্মকাণ্ড, সেই সঙ্গে ভোক্তাদের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷ এখানেই শেষ নয়৷ আরো জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Jana Rodenbusch/REUTERS
বিকল্প নেই যাদের
জার্মানির রেল চালকদের ইউনিয়ন জিডিএল মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত তিনদিনের ধর্মঘট ডেকেছে৷ এতে শুধু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেল অপারেটর ডয়চে বানই নয় রেল কার্গো ব্যবহারকারী অন্য কোম্পানিগুলোরও ক্ষতি হচ্ছে৷ জার্মানির পণ্য পরিবহণের দুই-তৃতীয়াংশই হয় সড়ক ব্যবহার করে৷ এক-পঞ্চমাংশ হয় রেলপথে৷ কিন্তু তার গুরুত্ব কম নয়৷ বিশেষ করে ইস্পাত, রাসায়নিক, কয়লাসহ এমন কিছু পণ্য রেলে পরিবহণ হয় যার আর কোনো বিকল্প নেই৷
ছবি: Bernd Thissen/dpa/picture alliance
অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত
রেলপথে পণ্য পরিবহণের অর্ধেক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেল কোম্পানি ডয়চে বানের দখলে৷ বাকি অর্ধেক পরিচালনা করে বেসরকারি কোম্পানিগুলো৷ তাদের চালকেরা এই ধর্মঘটে না থাকলেও এর নেতিবাচক প্রভাব আছে কোম্পানিগুলোর উপরে৷ কেননা ডয়চে বানের চালকেরা ছাড়াও ধর্মঘট আহ্বান জানানো হয়েছে রেল লাইনের রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী এবং সুইচ টাওয়ারের দায়িত্বে থাকা কর্মীদেরও৷ তারা যোগ দিলে কোনো ট্রেনই চালানো যাবে না৷
ছবি: HRSchulz/IMAGO
বন্দরে কনটেইনার জট
ধর্মঘটে শুধু রেল না, বন্দরের ব্যবস্থাপনার উপরেও প্রভাব পড়ছে৷ কনটেইনার পরিবহণ না হওয়ায় বিভিন্ন বন্দরে জট তৈরি হচ্ছে৷ হামবুর্গ বন্দরের সব কনটেইনারই রেলপথে পরিবহণ হয়৷ এই মুহূর্তে স্থলপথে পরিবহণ সেখান থেকে সম্ভব নয়৷ সময়মত পণ্য পরিবহণ করা না গেলে ইউরোপের অন্য বন্দরগুলোতেও এর প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: Marcu Brandt/dpa/picture-alliance
ধাক্কা অর্থনীতিতে
ভারি শিল্পের উপর নির্ভরশীল জার্মানির অর্থনীতি৷ এই ধর্মঘটে শিল্প খাতেই সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগছে৷ পণ্য সরবরাহ চেইনে জট লাগার কারণে শিল্পের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে৷ এর অর্থনৈতিক প্রভাব কতটা তীব্র হবে তা এখনই অবশ্য ধারণা করা যাচ্ছে না৷ তবে অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো প্রয়োজনীয় কাঁচামাল অগ্রিম মজুদ রেখে প্রস্তুতি নিয়ে রাখে৷
ছবি: Jochen Tack/picture alliance
ক্ষতির পরিমাণ কত
তিনদিনের এই ধর্মঘটের ক্ষতি কত তা পরিমাপ করাটা সহজ নয়৷ এক হিসাব অনুযায়ী দৈনিক ক্ষতির অঙ্ক কম-বেশি ১১ কোটি ডলার৷ তার চেয়েও বড় বিষয় হলো জার্মানির রেল পরিবহণ ব্যবস্থার দুর্নাম এতে আরো পাকাপোক্ত হলো৷ ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার পণ্য পরিবহণে রেলের অবদান ২৫ শতাংশে উন্নীত করতে চায়, যা বর্তমানে ১৯ শতাংশ৷ এমন পরিস্থিতি হলে সেই লক্ষ্য যে পূরণ হবে না তা বলা বাহুল্য৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
কেন ধর্মঘট
কর্মীদের ইউনিয়ন জিডিএল কর্তৃপক্ষের কাছে সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ৩৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৩৫ ঘণ্টা করার দাবি জানিয়েছে৷ তাদের দাবি অনুযায়ী, এজন্য মজুরি কাটছাট করা চলবে না এবং মাসিক বেতন ৬০০ ডলারের বেশি বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির সাথে সমন্বয় করে বোনাস দিতে হবে৷ কিন্তু কর্মী সংকট থাকায় কর্মঘণ্টা হ্রাসের দাবি মেনে নিতে রাজি নয় ডয়চে বান৷ তবে ৩২ মাসের জন্য মজুরি ১১ শতাংশ বাড়াতে রাজি তারা, যা প্রত্যাখ্যান করেছে জিডিএল৷
ছবি: Christian Charisius/dpa/picture alliance
6 ছবি1 | 6
এর আগে জানুয়ারির গোড়ায় তিনদিনের রেল ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করেছে রেল ইউনিয়ন। দৈনিক আয় বৃদ্ধির দাবিতে তারা আন্দোলন করছে। তিন দিন ধর্মঘটের পরেও দাবি আদায় হয়নি। তাই এবার দীর্ঘ আন্দোলনের পথে নেমেছে ইউনিয়ন।
এই ধর্মঘটের ফলে দৈনিক ১০ কোটি ইউরোর ক্ষতি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বস্তুত, কারো কারো মতে সংখ্যাটা এর চেয়েও বেশি। জার্মান ইকোনমিক রিসার্চের প্রধান মিশেল গ্রোমলিং জানিয়েছেন, ''ছয়দিনের ধর্মঘটের ফলে সব মিলিয়ে ১০০ কোটি ইউরোর ক্ষতি হবে বলে মনে হচ্ছে। সংখ্যাটা আরো বাড়তে পারে।''
অর্থনীতির আরেক বিশেষজ্ঞ হর্গ ক্রেমারের ধারণা, ছয়দিন টানা রেল ধর্মঘটের জন্য বেশ কিছু কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারণ, সময়মতো কাঁচামালের জোগান পাবে না তারা। কারখানা বন্ধ মানে উৎপাদন বন্ধ। এই ক্ষতি এখনই হিসেব করা সম্ভব নয়। দৈনিক ৩ কোটি ইউরো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখছেন ক্রেমার।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মালবাহী ট্রেন বন্ধ থাকার ফলে শুধু জার্মানি নয়, গোটা ইউরোপে তার প্রভাব পড়বে। জার্মান গাড়ি শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সব মিলিয়ে এক কঠিন পরিস্থিতির দিকে দেশ এবং ইউরোপকে নিয়ে যাচ্ছে এই ধর্মঘট।