বুধবার জার্মানির ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলি লকডাউনের মেয়াদ ৭ই মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ করোনা সংক্রমণের কমে চলা হারের আলোকে পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির চলমান লকডাউনের মেয়াদ যে আরও বাড়ানো হবে, বুধবার চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকের আগেই তা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ দুপুর ও সন্ধ্যা জুড়ে আলোচনার পর তাঁরা আগামী ৭ই মার্চ পর্যন্ত লকডাউনের ঘোষণা করলেন৷ তবে একইসঙ্গে তার পরের সময়ের জন্য ইতিবাচক পূর্বাভাষও শোনা গেল৷ শীর্ষ নেতাদের মতে, বর্তমান কড়া বিধিনিয়মের ফলে দেশে করোনা ভাইরাসের দৈনিক সংক্রমণের হার যেভাবে লাগাতার কমে চলেছে, তার আলোকে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিপদ কেটে যেতে পারে৷ তখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারবেন জার্মানির মানুষ৷ প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণের গড় হার ৩৫-এর নীচে নামলেই এমন সুযোগ পাওয়া যাবে৷ কড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানবাজার, মিউজিয়াম, আর্ট গ্যালারিসহ একাধিক পরিষেবা আবার চালু হবে৷ উল্লেখ্য, বুধবার গড় সংক্রমণের হার ছিল ৬৮৷ গত ২২শে ডিসেম্বর সেই হার ছিল ১৯৮৷
ম্যার্কেল ও মুখ্যমন্ত্রীরা বুধবার কয়েকটি স্পষ্ট পদক্ষেপেরও ঘোষণা করেন৷ যেমন ১লা মার্চ থেকে দেশজুড়ে চুল কাটার সেলুন খোলা হবে৷ হোটেল-রেস্তোঁরা খোলার বিষয়ে এখনো কিছু স্থির হয় নি৷ তবে স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন খোলার সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারগুলির হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ অনেক রাজ্য ২২শে ফেব্রুয়ারি থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে যত দ্রুত সম্ভব শিশু-কিশোরদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছন্দে নিয়ে আসতে চান মুখ্যমন্ত্রীরা৷ শিক্ষকদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমাতে করোনা টিকার ক্ষেত্রে তাঁদের অগ্রাধিকারের মাত্রা বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে৷
এমন সব ইতিবাচক পূর্বাভাসের মাঝেও জার্মানির নেতারা করোনা ভাইরাসের আরও ছোঁয়াচে মিউট্যান্ট বা সংস্করণ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ এই সব নতুন মিউট্যান্ট আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার কথা বলেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ তবে এখনো পর্যন্ত সংক্রমণের ধীর গতির আলোকে তিনি অদূর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী৷ আগামী ৩রা মার্চ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ম্যার্কেল ও মুখ্যমন্ত্রীরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন৷
ইউগভ সংগঠনের জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী জার্মানির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়ানোর পক্ষে৷ মাত্র এক চতুর্থাংশ মানুষ এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন৷ শিল্পবাণিজ্য জগত অর্থনীতির লাগাতার ক্ষতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিলেও মার্চ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছে৷
জার্মানিতে টিকাদান কর্মসূচির ধীর গতি স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পথে বড় বাধা হয়ে উঠেছে৷ বুধবারের হিসেব অনুযায়ী ১০ লাখ মানুষ – অর্থাৎ জনসংখ্যার এক দশমিক এক শতাংশ ইতোমধ্যে টিকার দুটি ডোজ পেয়ে গেছেন৷ এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে টিকার সরবরাহ স্বাভাবিক হলে এই সংখ্যা আরও দ্রুত বাড়বে বলে রাজনীতিকরা আশা করছেন৷
করোনা মহামারি মোকাবিলায় ইউরোপের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে জার্মানির সাফল্য কতটা স্থায়ী হবে, সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠছে৷ বিশেষ করে অস্ট্রিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের মতো প্রতিবেশী দেশে সংক্রমণের মারাত্মক হার বাভেরিয়া রাজ্যে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷ প্রয়োজনে সীমান্ত বন্ধ করার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স, এএফপি)
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে করোনার টিকাদান৷ সেই দৌড়ে এগিয়ে উন্নত দেশগুলোই৷ উন্নয়নশীল কয়েকটি দেশ থাকলেও কোনো ‘অনুন্নত দেশ’ এখনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি৷ বিভিন্ন দেশের টিকা কার্যক্রমের পরিসংখ্যান জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Fedja Grulovic/REUTERS
ইসরায়েল
করোনার টিকা কার্যক্রমে সবার চেয়ে দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে ইসরায়েল৷ বায়োনটেক-ফাইজারের টিকা দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করেছে তারা ১৯ ডিসেম্বর থেকে৷ পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে৷ অর্থাৎ, ১৭ ভাগ জনগোষ্ঠীকে এরই মধ্যে টিকার আওতায় এনেছে ইসরায়েল, যা সবার চেয়ে বেশি৷
ছবি: Tsafrir Abayov/AP/picture alliance
সংযুক্ত আরব আমিরাত
পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের সোয়া আট ভাগের বেশি মানুষকে করোনার টিকা দিতে পেরেছে৷ মোট আট লাখ ২৬ হাজার ডোজ টিকা দিয়েছে তারা এই সময়ের মধ্যে৷
ছবি: Reuters/S. Kumar
বাহরাইন
পারস্য উপসাগরীয় দেশ বাহরাইনের প্রতি ১০০ জনের চারজন এরই মধ্যে টিকা পেয়েছেন৷ এক্ষেত্রে ইসরায়েল ও আরব আমিরাতের পরেই তাদের অবস্থান৷ মোট টিকাপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা ৬৮ হাজারের বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
যুক্তরাষ্ট্র
করোনার টিকা বিতরণের মোট সংখ্যায় সবার উপরে যুক্তরাষ্ট্র৷ ৫৩ লাখের বেশি মানুষ এরই মধ্যে টিকা নিয়েছেন৷ কিন্তু শতকরা হিসেবে ৬ জানুযারি পর্যন্ত করোনার টিকার আওতায় এসেছেন এক দশমিক ছয় শতাংশ৷
ছবি: Alex Edelman/AFP
যুক্তরাজ্য
আট ডিসেম্বর বায়োনটেক ও ফাইজারের ভ্যাকসিন দিয়ে করোনার টিকা কার্যক্রম চালু করে যুক্তরাজ্য৷ তাদের হালনাগাদ তথ্যটি ২৭ ডিসেম্বরের৷ সেই হিসাবে সাড়ে নয় লাখ ডোজ টিকা বিতরণ করেছে তারা, যা মোট জনগোষ্ঠীর সোয়া এক ভাগের বেশি৷
ছবি: Danny Lawson/empics/picture alliance
চীন
গত সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি সিনোফার্মের টিকার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছে চীন৷ শেষ ধাপের ট্রায়ালে আছে আরো কয়েকটি৷ তবে অনুমোদনের আগে পরীক্ষা পর্যায়েই সেসব টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে ৪৫ লাখ মানুষের দেহে৷ বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশটিতে শতকরা হিসাবে সেটি একভাগেরও কম৷ আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঁচ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা দেশটির৷
ছবি: Zhang Yuwei/AP/picture alliance
রাশিয়া
ট্রায়াল শেষের আগেই বিশ্বে সবার আগে নিজেদের উদ্ভাবিত টিকার অনুমোদন দিয়ে আলোচনায় আসে রাশিয়া৷ ৫ জানুয়ারির ঘোষণা অনুযায়ী দেশটি এরই মধ্যে ১০ লাখ মানুষকে স্পুটনিক ফাইভ নামের সেই টিকা দিয়েছে, যা মোট জনগোষ্ঠীর এক ভাগের কম৷
ছবি: Natacha Pisarenko/AP Photo/picture alliance
জার্মানি
২৭ ডিসেম্বর থেকে ইউরোপের দেশগুলো একজোটে বায়োনটেক-ফাইজারের টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে৷ তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পেরেছে জার্মানি৷ পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটিতে তিন লাখ ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ টিকা পেয়েছেন৷ জনসংখ্যার হিসাবে এটি এক ভাগের প্রায় অর্ধেক৷
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
ইটালি
মোট সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও জনসংখ্যার শতকরা হিসাবে জার্মানির চেয়ে ইটালি কিছুটা এগিয়ে৷ করোনায় ইউরোপে সবচেয়ে বেশি ভোগা দেশটিতে এখন পর্যন্ত তিন লাখ সাত হাজার ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে, যা মোট জনগোষ্ঠীর দশমিক পাঁচ-এক ভাগ৷
ছবি: Matteo Bazzi/REUTERS
ক্যানাডা
১৬ ডিসেম্বর থেকে টিকা দেওয়া শুরু করে ক্যানাডা৷ এক লাখ ৬৩ হাজার মানুষ এখন পর্যন্ত সেখানে করোনার প্রতিষেধক পেয়েছেন, যা জনসংখ্যার দশমিক চার-তিন ভাগ৷
ছবি: Adrian Wyld/REUTERS
স্পেন
৫ জানুয়ারি পর্যন্ত স্পেনে এক ৩৯ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন বিতরণ করা হয়েছে, যদিও জনসংখ্যার শতকরা হিসেবে তা উল্লেখযোগ্য নয়৷
ছবি: Alvaro Calvo/Government of Aragon/Getty Images
বাকি বিশ্ব
ইউরোপের সব দেশেই করোনার টিকা দেয়া শুরু হয়েছে৷ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশও তড়িঘড়ি করেই কার্যক্রম শুরু করেছে৷ লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা এরই মধ্যে ৫২ হাজার ডোজ বিতরণ করেছে৷ তবে এই দৌড়ে এখনও যোগ দিতে পারেনি সিংহভাগ উন্নয়নশীল ও কোনো অনুন্নত দেশ৷ সব মিলিয়ে বিশ্বের জনসংখ্যার তুলনায় মাত্র দশমিক দুই ভাগ টিকা বিতরণ করা হয়েছে৷