গত শনিবার বার্লিনে প্রায় ২০ হাজার মানুষ করোনা প্রতিরোধে সরকারের নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন৷ আনসেল্ম লেনৎস নামের সাবেক এক সাংবাদিক প্রথম এমন বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
লেনৎসের অভিযোগ, গণতন্ত্র বিলুপ্ত করতে জার্মান রাষ্ট্র বিভিন্ন ওষুধ ও প্রযুক্তি কোম্পানির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে৷ তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বার্লিনের রোজা লুক্সেমবুর্গ চত্বরে ৪০ জন মানুষ জার্মানির প্রথম লকডাউন-বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল৷
প্রথম বিক্ষোভের প্রায় একমাস পর আয়োজিত আরেক বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় এক হাজার জন হয়৷ তাদের কয়েকজন মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের বিরুদ্ধে ‘ভ্যাকসিনেশন ডিক্টেটরশিপ'-এর অভিযোগ আনেন৷
বিক্ষোভে অংশ নেয়া প্রথম প্রখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন কেন ইয়েবসেন৷ তিনি একজন সাবেক বেতার সাংবাদিক৷ ইহুদি-বিরোধী মন্তব্যের কারণে ২০১১ সালে তার চাকরি চলে যায়৷ এরপর তিনি ইউটিউবে একটি চ্যানেল খোলেন৷ প্রায় পাঁচ লাখ অনুসারী নিয়মিত তার ভিডিও দেখে থাকেন৷ এমন এক ভিডিওতে ইয়েবসেন দাবি করেন, টিকা বিক্রি করে টাকা কামাতে বিল গেটস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন৷ মাত্র এক সপ্তাহে এই ভিডিও ৩০ লাখ বার দেখা হয়৷
জার্মানির প্রখ্যাত ভেগান রাঁধুনি আটিলা হিল্ডমান বিল গেটসকে ‘শয়তান' মনে করেন৷ আর জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে মনে করেন ‘চীনের পুতুল'৷ সাম্প্রতিক সময়ে লকডাউনের অন্যতম সমালোচক হয়ে উঠেছেন হিল্ডমান৷ ইন্সটাগ্রাম থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পর তিনি ‘টেলিগ্রাম'-এ অ্যাকাউন্ট খোলেন৷ প্রায় ৬৮ হাজার জন তাকে অনুসরণ করেন৷
ইয়েবসেন ও হিল্ডমানের মতো আরো কয়েকজন ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিক অনলাইনে বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করে লকডাউন-বিরোধী একটি অংশ গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছেন৷ তারাই শনিবার বার্লিনে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল৷
ইয়েবসেন ও হিল্ডমান এই বিক্ষোভ অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচার করেছেন৷ অংশগ্রহণকারীদের তারা ‘মুক্তিযোদ্ধা' বলে আখ্যায়িত করেছেন৷ বিক্ষোভে প্রায় দশ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তারা৷ যদিও বাস্তবে সংখ্যাটি মাত্র ২০ হাজার৷
জার্মানির বিমানবন্দরে করোনা টেস্ট: যা যা জানা প্রয়োজন
ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো থেকে জার্মানিতে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরেই করোনা টেস্ট করানো বাধ্যতামূলক করেছে সরকার৷ ৮ আগস্ট থেকে তা কার্যকর হবে৷ এ সম্পর্কে কিছু বিষয় জানা খুব প্রয়োজন৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
নতুন পরীক্ষা-নীরিক্ষা
৬ আগস্ট জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান ঘোষণা দেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে আসা যাত্রীদের দীর্ঘ করোনা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে৷ তবে যারা করোনা ‘নেগেটিভ’ সার্টিফিকেট আনবেন, তারা জার্মানিতে প্রবেশ করতে পারবেন৷ তবে সেই সার্টিফিকেট দুই দিনের বেশি পুরোনো হলে চলবে না৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
কাদের পরীক্ষা হবে?
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে আসা প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে৷ জার্মানির প্রধান সব বিমানবন্দরে এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ বিমানবন্দরে পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকলে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
অন্য দেশ
যেসব দেশ করোনা ‘ঝুঁকিমুক্ত’ সেসব দেশের যাত্রীদের করোনার লক্ষণ দেখা না গেলে কোনো পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আপাতত যেতে হচ্ছে না৷ এমনকি তাদের কোয়ারান্টিনেও থাকতে হচ্ছে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Reiner
টাকা কে দেবে?
যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার ব্যয় বহন করবে জার্মান সরকার৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
কোয়ারান্টিন
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে আসা প্রত্যেক যাত্রীকেই ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে থাকবে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Probst
ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকা
প্রতিদিনের তথ্যের উপর ভিত্তি করে করোনায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকা করছে জার্মান জনস্বাস্থ্য সংস্থা৷ যেসব দেশে সংক্রমণের হার বেশি, সেগুলো ঝুঁকির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে৷ এখন পর্যন্ত তালিকার শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেনের উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকা, উত্তর মেসিডোনিয়া, ইসরায়েল, ইরান, তুরস্ক, ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া৷ বেলজিয়ামের এন্টোয়ার্প প্রদেশও আছে তালিকায়৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
6 ছবি1 | 6
বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া ডয়চে ভেলের সাংবাদিককে নানাভাবে অপমান করা হয়েছে এবং তার মাস্ক খুলে ফেলতে বলা হয়েছে৷
জার্মানিতে এখন পর্যন্ত দুই লাখ ১৪ হাজার ২১৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ মারা গেছেন নয় হাজার ১৮৩ জন৷
সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা অনেকটা কমে এলেও গত দুইদিনে সংখ্যাটি আবার দিনপ্রতি এক হাজারের বেশি করে বেড়েছে৷
করোনা সংক্রমণের হার যখন অনেক বেশি ছিল তখন তার বিস্তার ঠেকাতে সরকার চলাফেরায় কড়াকড়ি আরোপ করেছিল৷ স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ কর্মক্ষেত্রেও উপস্থিতি কমাতে বলা হয়েছিল৷ বড় ইভেন্ট আয়োজন বন্ধ ছিল৷ হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল৷ মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ছিল৷
এখন অনেককিছুই শিথিল করা হয়েছে৷ তবে গণপরিবহণ, দোকানপাটে এখনও বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হচ্ছে৷
ভার্ল শহরে লকডাউনের দিনলিপি
মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা ট্যোনিয়েস-এ করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় কঠোর লকডাউন দিতে হয়েছে জার্মানির দুটি অঞ্চলে৷ এত কঠোর লকডাউন কখনো দেখেনি জার্মানরা৷ ভার্ল শহর থেকে ডয়চে ভেলের মিওদ্রাগ সোরিচ জানাচ্ছেন কেমন সে জীবন৷
ছবি: Julia Held
লকডাউনে ভার্ল
উত্তর-পশ্চিম জার্মানির শহরটিতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বাস৷ কিন্তু ছবিতে যে ভবনের সামনে ভার্লশহরের মেয়রকে দেখা যাচ্ছে, সেখানে বেশিরভাগই রোমানিয়া থেকে আসা কর্মী৷ তারা জার্মান না জানায় এক অনুবাদকের মাধ্যমে দূরত্ব বজায় রেখে হ্যান্ড মাইকের সাহায্যে কথা বলছেন মেয়র৷ লকডাউনের মধ্যে কী কী করতে হবে, আর কী করা যাবে না, নাগরিকদের জানাচ্ছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Meissner
মেয়রের দ্বিমত
শহরটির মেয়র অবশ্য মনে করেন নর্থ-রাইন ওয়েস্টফালিয়া ফেডারেল রাজ্য সরকারের এ লকডাউন পুরো শহরে চাপিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি৷ কারণ, তিনি মনে করেন কেবল একটি কারখানাতেই করোনা সংক্রমণ ছড়িয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Meissner
অধিকাংশ আক্রান্তই পূর্ব ইউরোপের
ট্যোনিয়েস কারখানার কর্মীদের বেশিরভাগই রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার নাগরিক৷ তবে তারা শহরের এমন এক অঞ্চলে থাকেন যেখানে অন্যান্য আঞ্চলিক কারখানার কর্মীদেরও বাস৷ ফলে সহজেই ট্যোনিয়েস কারখানায় আক্রান্তদের কাছ থেকে অন্য এলাকাতেও সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Interlied
টেস্টে সহায়তায় সেনাবাহিনী
ভার্ল শহরের স্যুরেনহাইডে এলাকা পুরো বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে৷ তিনটি সড়ক মিলিয়ে ৬৭০ জনের মতো বাসিন্দা থাকেন৷ টেস্ট ও লকডাইনের অন্যান্য দিক ঠিকঠাক রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে জার্মান সেনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Inderlied
আইন রক্ষায় পুলিশ
রাজ্যপুলিশ দেখছে যাতে ঘিরে ফেলা এলাকা থেকে টেস্ট ছাড়া কেউ বের না হতে পারেন৷ দুই মিটার উঁচু বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়েছে এলাকা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাসিন্দাদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা লকডাউনের নানা শর্ত নিয়ে কথা বলছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Interlied
টেস্ট চলছে
শহরের গ্যুটারশ্লোহ এলাকাতেও চলছে কঠোর লকডাউন৷ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে ট্যোনিয়েস কারখানার কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের৷ জরুরি ঘেরাও এলাকার বাইরেই এক তাঁবুতে সার্বক্ষণিক ডাক্তার উপস্থিত রয়েছেন৷ বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি সরকারি স্কুলকে টেস্ট করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে৷ এর খরচ পুরোটাই বহন করছে রাজ্য সরকার এবং ট্যোনিয়েস কারখানা মিলে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Meissner
খোঁজ রাখছে সেনাবাহিনী
মেডিক্যাল সুরক্ষা পোশাক ও মাস্ক পরিহিত এক সেনাসদস্যকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷ করোনা টেস্টে পজিটিভ হওয়া এক নাগরিকের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন তিনি৷ যারা টেস্টে নেগেটিভ আসছেন, তাদের ছুটি কাটাতে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Interlied
বিপদের বন্ধু প্রতিবেশী
যারা লকডাউনে আটকে পড়েছেন, তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসছেন টেস্টে নেগেটিভ আসা বা সুস্থ প্রতিবেশীরা৷ কার বাড়িতে কী প্রয়োজন জেনে নিজেরাই দোকান থেকে কিনে সরবরাহ করছেন অনেকে৷
ছবি: Julia Held
সিগারেট-মদ বাদ যাবে কেন?
লকডাউনে যদি সব সুবিধা পাওয়া যায়, মন্দ কী! ঘুরে ঘুরে সিগারেট এবং বিয়ারও বিক্রি করছেন কেউ কেউ৷ বেড়ার এ প্রান্তে না আসতে পারলে কী হবে, এজন্য তো পার্টি থেমে থাকতে পারে না৷
ছবি: DW/M. Soric
পৌঁছে গেছে রেড ক্রসও
একদিকে কারখানা বন্ধ, ফলে চাকরি নেই৷ অনেকের ঠিকমতো বেতনও হচ্ছে না৷ কিন্তু সে কারণে যাতে খাবারের অভাব না হয়, পাউরুটি নিয়ে হাজির হয়েছে রেড ক্রস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Interlied
শিশুপণ্য
লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুদের খাবার, ডায়াপারসহ নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছিল৷ তবে বিভিন্ন সংস্থা দ্রুতই মাঠে নেমেছে সে সংকট নিরসনে৷ সবার কাছ থেকে চাহিদা জেনে সে অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করছে তারা৷ এমনকি দরিদ্র শ্রমিকদের অনেক পণ্য দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে৷