মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে সোচ্চার ইউরোপের দেশটিতে লেখকদের স্বাধীনতাই ‘হুমকির' মুখে৷ কখনো সরাসরি, কখনো সামাজিক মাধ্যমে আক্রমণ ও হুমকির ফলে অনেক ক্ষেত্রে অনেক কিছু লিখতেও ভয় পাচ্ছেন লেখকরা৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির পেন সেন্টার এক গবেষণায় প্রকাশ করেছে এমন ‘ভয়াবহ' তথ্য৷
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করা পেন ইন্টারন্যাশনালের সদস্য জার্মানির পেন সেন্টার৷ ‘ফ্রি স্পিচ আন্ডার প্রেশার' বা ‘চাপের মুখে মতপ্রকাশ' শীর্ষক এই গবেষণায় সহযোগী ছিল উত্তরপূর্ব জার্মানির রোস্টোক ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর মিডিয়া রিসার্চ৷
গবেষকদের দাবি, এটিই জার্মানিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে করা প্রথম পূর্ণাঙ্গ গবেষণা৷
উৎকণ্ঠায় লেখকরা
গবেষণার আগে এক জরিপের মাধ্যমে লেখকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়৷ শুধু জার্মান রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদেরই এই জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ তাঁদের কাছে অনলাইনে একটি ফরম পাঠানো হয়, সেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিগত আক্রমণের ঘটনা ও কিভাবে এমন ঘটনা তাঁদের কাজকে প্রভাবিত করেছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন৷
ইউরোপেও প্রশ্নবিদ্ধ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা
বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ সাংবাদিকদের সব সময় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় এমন দেশগুলোর উল্লেখ তো আছেই, সঙ্গে মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রশংসিত ইউরোপের সমালোচনাও রয়েছে প্রতিবেদনে৷
ছবি: Imago/IPON
সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় ‘জেলখানা’ তুরস্ক
কোন দেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন বা পরাধীন, তা মূল্যায়ন করে প্রকাশিত এ বার্ষিক প্রতিবেদনে তুরস্ককে উল্লেখ করা হয়েছে ‘সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় জেল’ হিসেবে৷ ২০১৬ সালের কথিত ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকে সে দেশে অনেক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে এর্দোয়ান সরকার৷ প্রতিবেদনে তুরস্ক আছে ১৫৭ নম্বরে৷
ছবি: Reuters/M. Cetinmuhurdar
গণমাধ্যমের ‘শত্রু’ ট্রাম্প
ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ ট্রাম্পকে প্রায়ই মিডিয়ার বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলতে শোনা যায়৷ গণমাধ্যমকে ‘জনগণের শত্রু’ বলে বিষোদগার করতেও দেখা গেছে তাঁকে৷ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৪৫তম স্থানে৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
রাশিয়া এবং চীনে গণমাধ্যমের দুরবস্থা
রাশিয়া, চীন এবং উত্তর কোরিয়ারও সমালোচনা করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, পুটিন ক্রেমলিনে ফেরার পর থেকে নানাভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে৷ সাংবাদিকরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন৷ সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত ৫০ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করে চীনেরও সমালোচনা করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান ১৪৮, চীন তার অনেক নীচে ১৭৬তম স্থানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Klimentyev
সেরা দশে এখনো ইউরোপের প্রাধান্য
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য ইউরোপ সবসময়ই প্রশংসিত৷ এবারও সেরা দশে ইউরোপেরই প্রাধান্য৷ তাই প্রথম থেকে পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে নরওয়ে, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ড৷ তারপর সপ্তম ও নবম স্থানেও ইউরোপের দুই দেশ বেলজিয়াম ও ডেনমার্ক৷ সবাইকে অবাক করে সেরা দশের ষষ্ঠ স্থানে ঢুকে পড়েছে ক্যারিবীয় দেশ জ্যামাইকা৷ নবম স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড৷
ইউরোপের কয়েকটি দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভয়ানকভাবে খর্ব হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ গাড়িবোমা বিস্ফোরণে সাংবাদিক, ব্লগার ডাফনে কারুয়ানা গালিজিয়া নিহত হওয়ার পর ১৮ ধাপ পিছিয়ে ৬৫ নম্বরে নেমে গেছে মাল্টা৷ স্লোভাকিয়াতেও এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন৷ তাই সেই দেশ ১০ ধাপ পিছিয়ে ২৭-এ৷ সাংবাদিকদের ‘স্লোভাকবিরোধী নোংরা বেশ্যা’ বলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো৷
ছবি: picture alliance/AP/P.D. Josek
সবচেয়ে খারাপ কারা?
১৮০টি দেশকে নিয়ে তৈরি করা তালিকার শেষ দশে ইউরোপের কোনো দেশ নেই৷ সেখানে ১৭১তম দেশ ইকোয়েটোরিয়াল গিনি৷ তারপর থেকে ১৮০তম স্থান পর্যন্ত যথাক্রমে রয়েছে কিউবা, জিবুতি, সুদান, ভিয়েতনাম, চীন, সিরিয়া, তুরস্ক, ইরিত্রিয়া এবং উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: picture-alliance/Yonhap
এবং বাংলাদেশ
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে অন্তত ২৫ জন সাংবাদিক ও কয়েকশ’ ব্লগার এবং ফেসবুক ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা হয়েছে৷ দেশে সংবিধান এবং ইসলামের সমালোচনা করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে প্রায়ই স্পষ্টবাদী ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি, সাংবাদিক এবং ব্লগারদের অনলাইনে হত্যার আহ্বান জানায় ইসলামী জঙ্গিরা৷ সূচকে এবার বাংলাদেশের অবস্থান আগের বছরের মতোই আছে, ১৪৬৷
ছবি: bdnews24.com
7 ছবি1 | 7
৫২৬ অংশগ্রহণকারীর মধ্যে প্রতি চার জনে তিন জন মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ ৬০ শতাংশ লেখক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তাঁদের লেখার স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে মনে করেন৷
প্রতি দুই জনে একজন নিজের বা বন্ধুদের ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ ও সহিংসতার শিকার হওয়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন৷ এর মধ্যে ৩৭ শতাংশ ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, ৩১ শতাংশ করা হয়েছে সরাসরি মৌখিকভাবে৷ অবশ্য শারীরিক সহিংসতার কথা বলেছেন কেবল ২ শতাংশ লেখক৷
জার্মান পেনের মহাসচিব কার্লোস কলাডো সাইডেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক দেশে এমন ফল ভয়াবহ৷'' এমন ঘটনার ফলে ভিন্নমতের প্রতি সহিষ্ণুতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো মৌলিক নীতিবোধও হুমকিতে পড়ছে৷