জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের মনে করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর মধ্যে শরণার্থীদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে৷ জার্মানি অন্যদের তুলনায় বেশি সুবিধা দিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির একটি পত্রিকাকে শনিবার দেয়া সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান যে, তিনি ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শরণার্থী ইস্যুতে একই মান দেখতে চান৷ তিনি মনে করেন, জার্মানির বর্তমান ব্যবস্থা মানবপাচারকারীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাইনিশে পোস্ট পত্রিকাকে বলেন, ‘‘অনেক শরণার্থী ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে জার্মানিতে বসবাস করতে চান, কেননা দেশটির (শরণার্থী গ্রহণ) পদ্ধতি এবং অভ্যর্থনা ব্যবস্থা উদার এবং সুযোগ-সুবিধাও (অন্যান্য দেশের তুলনায়) অনেক বেশি৷''
তাহলে কি জার্মানিতে শরণার্থীদের সুযোগ-সুবিধার মান কমানো হবে? এই প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংকোচের সঙ্গে জানান যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে সামঞ্জস্য আনতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘আশ্রয়গ্রহণ প্রক্রিয়া এবং আশ্রয়প্রার্থীদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে আগের চেয়ে বেশি সমন্বয় প্রয়োজন৷ কিছুক্ষেত্রে এখানে শরণার্থী গ্রহণের হার অন্যান্য জায়গার তুলনায় বেশি এবং সামাজিক সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য৷''
শরণার্থী সংকটের কিছু আইকনিক ছবি
ইউরোপে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশের ছবি গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে এবং মানুষের মতামত সৃষ্টিতে প্রভাব বিস্তার করেছে৷ অভিবাসন এবং অভিবাসনের ফলে সৃষ্ট ভোগান্তির এত ছবি আগে দেখেনি বিশ্ব৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
লক্ষ্য: টিকে থাকা
অনিশ্চিত যাত্রার ধকল সামলাতে হয় শারীরিক এবং মানসিকভাবে৷ ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে হাজার হাজার সিরীয় নাগরিক তুরস্ক হয়ে গ্রিসে জড়ো হয়েছেন৷ সে দেশের তিনটি দ্বীপে এখনো দশ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস অবধি ছয় হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Messinis
পায়ে হেঁটে ইউরোপে
২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ গ্রিস ও তুরস্ক থেকে পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছে৷ ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, অর্থাৎ বলকান রুট ব্যবহার করে তাদের এই যাত্রার অধিকাংশই ছিল পায়ে হেঁটে৷ অভিবাসীদের এই যাত্রা বন্ধ হয়ে যায়, যখন রুটটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কয়েকটি দেশ সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷
ছবি: Getty Images/J. Mitchell
বৈশ্বিক আতঙ্ক
এই ছবিটি গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ তিন বছর বয়সি সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির মরদেহ তুরস্কে সমুদ্রতটে ভেসে ওঠে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে৷ ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরণার্থী সংকটের প্রতীকে পরিণত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/DHA
বিশৃঙ্খলা এবং হতাশা
শেষ সময়ের ভিড়৷ ইউরোপে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুনে ক্রোয়েশিয়াতে এভাবে ট্রেনে এবং বাসে উঠতে দেখা যায় অসংখ্য শরণার্থীকে৷ ২০১৫ সালের অক্টোবরে হাঙ্গেরি সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং শরণার্থীদের জন্য কন্টেইনার ক্যাম্প তৈরি করে৷
ছবি: Getty Images/J. J. Mitchell
বিবেকবর্জিত সাংবাদিকতা
হাঙ্গেরির এক সাংবাদিক এক শরণার্থীকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়ার ভিডিও নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ সার্বিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন হাঙ্গেরির একটি এলাকার সেই ঘটনায় আলোচিত সাংবাদিকের চাকুরি চলে যায়৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
উন্মুক্ত সীমান্ত নয়
২০১৬ সালের মার্চে বলকান রুট আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়ার পর সীমান্তগুলোতে আরো আবেগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়৷ হাজার হাজার শরণার্থী বিভিন্ন সীমান্তে আটকা পড়ে এবং তাদের সঙ্গে বর্বর আচরণের খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন স্থান থেকে৷ অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে৷
ধুলা এবং রক্তে ঢাকা এক শিশু৷ পাঁচবছর বয়সি ওমরানের এই ছবিটি প্রকাশ হয় ২০১৬ সালে৷ আয়লান কুর্দির ছবির মতো এই ছবিটিও গোটা বিশ্বকে আরেকবার নাড়িয়ে দেয়৷ সিরীয়ায় গৃহযুদ্ধ কতটা বিভৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং সিরীয়রা কতটা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তার এক প্রতীক হয়ে ওঠে ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Aleppo Media Center
অজানা নতুন ঠিকানা
গ্রিক-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তের ইডোমিনিতে নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় হাঁটছেন এক সিরীয় নাগরিক৷ ইউরোপে তাঁর পরিবার নিরাপদ থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তাঁর৷ ডাবলিন রেগুলেশন অনুযায়ী, একজন শরণার্থী প্রথম ইউরোপের যে দেশে প্রবেশ করেন, সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে হবে৷ ফলে যারা আরো ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন, তাদের অনেককে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
সহযোগিতার আশা
বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রবেশের কারণে জার্মানি অভিবাসন নীতি আরো কড়া করে ফেললেও এখনো শরণার্থীদের প্রথম পছন্দ জার্মানি৷ ইউরোপের আর কোনো দেশ জার্মানির মতো এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থী নেয়নি৷ ২০১৫ সালে সঙ্কট শুরুর পর থেকে দেশটি ১২ লক্ষ শরণার্থী নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা
ইউরোপে শরণার্থী প্রবেশের সংখ্যা চলতি বছর কমেছে, তবে থেমে যায়নি৷ বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মরছে অনেকে৷ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন অবধি সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছে প্রায় দু’হাজার মানুষ৷ গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
10 ছবি1 | 10
ডেমেজিয়ের অবশ্য স্বীকার করেন যে, ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় জার্মানিতে জীবনযাপনের খরচ বেশি৷ সেক্ষেত্রে তাঁর পরামর্শ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবার জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণের পর জার্মানির বাড়তি খরচের কথা বিবেচনা করে শরণার্থীদের কিছু ভর্তুকি দেয়া যেতে পারে৷
উল্লেখ্য, জার্মান আইন অনুযায়ী, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের বাসস্থান, খাদ্য, প্রসাধনী, পোশাক এবং জরুরি প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত জিনিস যেমন, দেশে ফোন করার ফোন কার্ড ইত্যাদি প্রদান করা হয়৷ আইনে নগদ অর্থের বদলে যতটা সম্ভব জিনিসপত্র এবং সেবা দেয়ার কথা বলা হয়েছে৷ তবে রাজ্যভেদে মাসিক ভাতা দেয়ারও প্রচলন রয়েছে জার্মানিতে৷ সেক্ষেত্রে শরণার্থী শিবিরে থাকা প্রত্যেক অবিবাহিত অভিবাসনপ্রত্যাশীকে মাসে ১৩৫ ইউরো এবং বিবাহিত দম্পতির প্রত্যেককে ১২৯ ইউরো করে প্রদান করা হয়৷ এছাড়া শিশুরাও বয়সভেদে ৭৬ থেকে ৮৩ ইউরো অবধি পায়৷ আর শরণার্থী শিবিরের বাইরে থাকা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক পান মাসে ২১৬ ইউরো করে৷ প্রত্যেক বিবাহিত দম্পতির ক্ষেত্রে এই অনুদান মাসে জনপ্রতি ১২২ ইউরো৷