জার্মানিতে শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গ্রাম ছেড়ে শহরে ছুটছে মানুষ৷ ইউরোপসহ বিশ্বের উন্নত অনেকে দেশে এমন প্রবণতা দেখা গেলেও উলটো ঘটনা ঘটছে জার্মানিতে৷ শহর থেকে বরং গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন দেশটির অনেকে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের পর ৩০ থেকে ৪৯ বছর বয়সি, যাদের সন্তান আছে এবং ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সি তরুণ পেশাজীবীদের মধ্যে গ্রামে বসবাসের প্রবণতা বেড়েছে৷
বার্লিন ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের গবেষকেরা বলছেন, অতীতের চেয়ে বর্তমানে গ্রামের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়ছে৷ সংস্থার সামাজিক মনোবিজ্ঞানী ফ্রেডেরিক জিক্সটাস বলছেন, ২০২১ সালে দুই-তৃতীয়াংশ গ্রামীণ সমাজে জনসংখ্যা বেড়েছে৷ এই তথ্য এক দশক আগে প্রতি চারটি গ্রামীণ সমাজের মধ্যে মাত্র একটির জন্য সত্য ছিল৷
পরিস্থিতি বুঝতে ভ্যুস্টেনরোট ফাউন্ডেশন ও বার্লিনের ঐ ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা জনসংখ্যা বাড়ছে এমন ছয়টি গ্রামীণ সমাজ পরিদর্শন করেছেন৷ সেখানে তারা বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ একজন নতুন বাসিন্দা তাদের জানান, ‘‘আমি অনেক ভেবে গ্রামে আসার কথা ভেবেছি কারণ এখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের বন্ধন অনেক শক্তিশালী৷ আর সত্যি বলতে, কিছু নির্মাণ করতে গেলে খরচ একটা বড় বিষয়৷ অবশ্যই গ্রামে বিষয়টা অনেক অন্যরকম৷''
কম খরচে বসবাস, প্রকৃতির সান্নিধ্য আর কম দূষণ - এসব কারণে মানুষ গ্রামে যাচ্ছেন বলে গবেষকেরা জানতে পেরেছেন৷
সামাজিক মনোবিজ্ঞানী ফ্রেডেরিক জিক্সটাস বলছেন, করোনার পর ঘরে থেকে চাকরি করা সম্ভব হওয়ায়ও অনেকে গ্রামে যাচ্ছেন৷
জার্মানিতে গ্রামে যাওয়ার প্রবণতা বাড়লেও ইউরোপের অন্যান্য দেশে পরিস্থিতি উলটো৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের হিসাব বলছে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ইইউর ৪০৬টি গ্রামীণ এলাকার মধ্যে ৩৫৫টি থেকে মানুষ শহরে পাড়ি জমিয়েছেন৷ এসব এলাকায় তরুণ ও কাজের বয়স আছে এমন মানুষের সংখ্যা অনেক কমেছে৷ সেই তুলনায় ৬৫ বছরের বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা বছরে গড়ে এক দশমিক আট শতাংশ করে বেড়েছে৷
সাবিনে কিনকার্ৎস/জেডএইচ
এক নজরে জার্মানির ১৬ রাজ্য
এক শতকে দুই বিশ্বযুদ্ধ, নাৎসিবাদের উত্থান, দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ার কয়েক দশক পর পুনরেকত্রীকরণ, নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে জার্মানি৷ এখন ইউরোপের নেতৃত্বে থাকা দেশটিতে রয়েছে ১৬টি রাজ্য৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ
দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির এ রাজ্যটিতে ফ্রান্স এবং সুজারল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে৷ সুবিশাল ব্ল্যাক ফরেস্ট এবং হাইডেলবার্গ দুর্গের ধ্বংসাবশেষ দেখতে অনেকের পছন্দ এই রাজ্য৷ রাজ্যের রাজধানী স্টুটগার্ট৷
বাভারিয়া
জার্মানির সবচেয়ে বড় রাজ্য বাভারিয়ার রাজধানী মিউনিখ৷ দেশটির ভূখণ্ডের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ জুড়ে এ রাজ্য৷ জার্মানির অন্য সব অঞ্চলের তুলনায় বাভারিয়ার সংস্কৃতি বেশ আলাদা, এমনকি ভাষাও৷ আল্পসের সৌন্দর্য দেখতে, বিয়ার পানের উৎসব অক্টোবরফেস্ট দেখতে বাভারিয়া আসতেই হবে৷
বার্লিন
জার্মানির রাজধানী বার্লিন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পশ্চিম ও পূর্বে ভাগ করা হয় জার্মানি৷ বার্লিন ওয়ালের মাধ্যমে ভাগ হয় বার্লিনও৷ কিন্তু বহু সংস্কৃতির সংমিশ্রণে এখন বার্লিনকে মনে করা হয় জার্মানির সবচেয়ে পরিবর্তনশীল এলাকা হিসেবে৷ রাজধানী হিসেবে বার্লিন পেয়েছে রাজ্যের মর্যাদা৷
ব্রান্ডেনবুর্গ
রাজধানী বার্লিনকে ঘিরে অবস্থিত ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্য৷ বেশ কিছু চোখ ধাঁধানো প্রাসাদ, রোমান সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে এ রাজ্য জুড়ে৷ ব্রান্ডেনবুর্গের রাজধানী পটসডাম৷
ব্রেমেন
জার্মানির সবচেয়ে ছোট রাজ্য ব্রেমেন৷ জনসংখ্যার দিক দিয়েও সবচেয়ে ছোট এটি৷ তবে ঐতিহ্যের দিক দিয়ে অন্য কোনো রাজ্যের চেয়ে কম নয় এটি৷ মাত্র দুটি শহর রয়েছে রাজ্যটিতে- ব্রেমেন এবং ব্রেমারহাভেন৷
হামবুর্গ
উত্তর জার্মানির এই শহরটিও পেয়েছে রাজ্যের মর্যাদা৷ শুধু বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাই নয়, স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় ও নর্ডিক দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বেশ বড় ভূমিকা রাখে এই বন্দরনগরীটি৷
হেসে
হেসে রাজ্যের রাজধানী ভিসবাডেন৷ রাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর ফ্রাঙ্কফুর্ট৷ জার্মান সাহিত্যিক ইয়োহান ভল্ফগাঙ ফন গ্যোয়েটের জন্ম এই শহরেই৷
লোয়ার সাক্সনি
নর্থ সি বা উত্তর সাগরের পাড়ে অবস্থিত এই রাজ্য৷ রাজ্যটির রাজধানী হানোফার৷ ছড়িয়ে থাকা সমুদ্রসৈকতের কারণেই অনেক জার্মানের কাছে ছুটি কাটানোর জন্য এই রাজ্যটি পছন্দের৷
মেকলেবুর্গ-ওয়েস্টার্ন পমেরানিয়া
বাল্টিক সাগরের পাড়ে অবস্থিত এ রাজ্যটির রাজধানী শ্ভেরিন৷ রাজ্যটির সাগরপাড়ে এত বেশি রিসোর্ট রয়েছে, মজা করে রাজ্যটিকে মাঝেমধ্যে বার্লিনের বাথটাবও বলা হয়৷
নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া
নানা সংস্কৃতির সফল সম্মীলন ঘটেছে এ রাজ্যে৷ এ রাজ্যের রাজধানী ড্যুসেলডর্ফ৷ বিভক্ত জার্মানিতে পশ্চিম জার্মানির রাজধানী বন শহরও এই রাজ্যেই অবস্থিত৷
রাইনলান্ড-পালাটিনেট
প্রতিবেশী তিন দেশ বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও লুক্সেমবার্গের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এ রাজ্যের৷ রাজ্যটির রাজধানী মাইনৎস৷ জার্মানির সবচেয়ে বড় ওয়াইন প্রস্তুতকারক অঞ্চলগুলোর অন্যতম এটি৷
সারলান্ড
রাজ্যটির মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সার নদীর নাম অনুসারে নামকরণ হয়েছে এ রাজ্যের৷ লুক্সেমবার্গ ও ফ্রান্সের সঙ্গে সীমান্তে এ রাজ্য অবস্থিত৷ ফরাসি ও জার্মান সংস্কৃতির মিলন ঘটেছে এ রাজ্যে৷ এর রাজধানীর নাম সারব্র্যুকেন৷
শ্লেভিগ-হোলশ্টাইন
ডেনমার্ক সীমান্তে অবস্থিত জার্মানির এ রাজ্য৷ রাজ্যটির দুই পাশে রয়েছে দুই সাগর- একদিকে উত্তর সাগর, অন্যদিকে বাল্টিক সাগর৷ এ রাজ্যের রাজধানী কিল৷
সাক্সনি-আনহাল্ট
এ রাজ্যের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য৷ এক রোমান সম্রাটের সমাধি, প্রাচীন দুর্গ ও প্রাসাদ এবং মার্টিন লুথারের জন্মস্থানও এই রাজ্যে৷
সাক্সনি
সাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের পাশেই অবস্থিত সাক্সনি রাজ্য৷ পূর্ব জার্মানির এ রাজ্যটি বিভক্ত জার্মানির সমাজতান্ত্রিক অংশে ছিল৷ পোল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এ রাজ্যটির, রাজধানী ড্রেসডেন৷
ঠুরিঙ্গিয়া
ভার্টবুর্গ, ভাইমার, গ্যোটে, গ্রোপিয়াসসহ নানা বিখ্যাত জার্মানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পূর্ব জার্মানির রাজ্য ঠুরিঙ্গিয়ার নাম৷ রাজ্যের রাজধানীর নাম এরফুর্ট৷