১৭ বছর বয়সি ছেলেটি ছুরি নিয়ে তার শিক্ষককে আক্রমণ করার কথা জানিয়ে নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
ফেডারেল প্রসিকিউটরের কার্যালয় জানিয়েছে চরম, ডানপন্থি আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐ ছাত্র পাইপ বোমা দিয়ে অপরাধ সংঘটনের পরিকল্পনা করেছিল।ছবি: NWM-TV/dpa/picture alliance
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষ জানায়, শিক্ষককে হত্যার দায়ে জার্মানির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইববেনবুরেন থেকে ঐ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডটি ঘটে এক ভোকেশনাল স্কুলে। নিহত শিক্ষকের বয়স ছিল ৫৫ বছর।
হত্যার কারণ এখনো জানা যায়নি। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার বিকালে ছেলেটি ক্লাসে ঢুকে হামলা করার সময় শিক্ষক একাই ছিলেন। হামলাকারী ছুরি দিয়ে কুপিয়ে শিক্ষককে খুন করে।
পরে ছেলেটি পুলিশকে ফোন করে এবং কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই আত্মসমর্পণ করে বলে জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ম্যুনস্টারের পাবলিক প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের এক মুখপাত্র জানান।
এদিকে, জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের এক শহরের স্কুলে গণহত্যার পরিকল্পনা করার অভিযোগে আরেক শিক্ষার্থীর বিচার চলছে। ওই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হত্যা করতে চেয়েছিল।
ফেডারেল প্রসিকিউটরের কার্যালয় জানিয়েছে চরম, ডানপন্থি আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐ ছাত্র পাইপ বোমা দিয়ে অপরাধ সংঘটনের পরিকল্পনা করেছিল।
২০২০ সালের ছবিঘর
জার্মান রাষ্ট্রবিরোধী ‘রাইশব্যুর্গার’ আন্দোলন!
বেশ কিছুদিন ধরে গণমাধ্যমে আসছে রাইশব্যুর্গার আন্দোলনের নাম৷ তারা করোনা সংক্রমণে নেয়া সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, এমনকি সরকারের বৈধতাও চ্যালেঞ্জ করছেন৷ কিন্তু এই রাইশব্যুর্গার কারা? সরকার তাদের বিষয়ে কী করছে?
ছবি: picture-alliance/chromorange/C. Ohde
রাইশব্যুর্গার কারা?
রাইশ শব্দের অর্থ সাম্রাজ্য, আর ব্যুর্গার হচ্ছে নাগরিক৷ ফলে এই রাইশব্যুর্গাররা নিজেদের জার্মান সাম্রাজ্যের নাগরিক বলে দাবি করেন৷ আধুনিক জার্মানিকে নিজেদের রাষ্ট্র বলে মানতে রাজি নন তারা৷ তাদের দাবি, ১৯৩৭ বা ১৮৭১ সালের জার্মান সাম্রাজ্যের সীমানাই আসল জার্মানি৷ বর্তমান জার্মানির সরকার, পার্লামেন্ট, বিচারব্যবস্থা এবং নিরাপত্তাবাহিনীকেও তারা মিত্রশক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকা পুতুল বলে মনে করেন৷
ছবি: picture-alliance/SULUPRESS/MV
রাইশব্যুর্গাররা কী করেন?
রাইশব্যুর্গাররা ট্যাক্স বা জরিমানা দিতে চান না৷ নিজেদের বাড়ি-ঘর, সম্পদ ইত্যাদিকে জার্মান প্রজাতন্ত্রের অধীনে নয়, বরং স্বাধীন বলে বিবেচনা করেন৷ তারা জার্মান সংবিধান ও আইন স্বীকার করেন না, কিন্তু সেই আইন ব্যবহার করেই সরকার ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অজস্র মামলা করেন৷ তাদের অধিকাংশই নিজেদের তৈরি পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করেন৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/Ohde
কত বড় হুমকি?
জার্মান গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮০-র দশকের দিকে রাইশব্যুর্গার আন্দোলন গড়ে ওঠে৷ বড় কোনো নেতা না থাকলেও এ আন্দোলনের সঙ্গে অন্তত ১৯ হাজার জার্মান জড়িত বলেও তথ্য রয়েছে৷ এদের মধ্যে ৯৫০ জন উগ্র ডানপন্থার সঙ্গে জড়িত এবং এক হাজার জনের লাইসেন্স করা অস্ত্রও রয়েছে বলে জানা গেছে৷ এদের অনেকেই ইহুদিবিদ্বেষী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
কারা সদস্য?
জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী রাইশব্যুর্গার আন্দোলনে জড়িতদের বেশিরভাগই পুরুষ এবং তাদের গড় বয়স ৫০ বছর৷ তাদের বেশিরভাগই সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া৷ জার্মানির দক্ষিণ ও পূর্বের শহরগুলোতেই রাইশব্যুর্গারদের মূল কার্যক্রম৷ নামকরা রাইশব্যুর্গারদের মধ্যে একজন ছিলেন সাবেক মিস্টার জার্মানি আড্রিয়ান উরজাশে৷ ২০১৯ সালে গুলি চালিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে আহত করায় তার সাত বছরের কারাদণ্ড হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Schmidt
নড়েচড়ে বসছে সরকার
দীর্ঘদিন রাইশব্যুর্গার আন্দোলনকে তেমন একটা গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু ২০১৭ সালের একটি ঘটনা সরকারকে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করে৷ ভোল্ফগাং পি নামের এক ব্যক্তি তার বাসায় তল্লাশি চালানোর সময় এক পুলিশ সদস্যকে গুলি করে হত্যা করেন৷ এরপর তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ভোল্ফগাং পি রাইশব্যুর্গার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বলে গোয়ন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Karmann
কী করছে কর্তৃপক্ষ?
রাইশব্যুর্গার আন্দোলন সহিংসতা উসকে দিচ্ছে, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের৷ কিন্তু ২০১৭ সালের আগে কখনোই তাদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি৷ ভোল্ফগাং পি-র ঘটনার পর থেকে নিয়মিতই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে৷ এমনকি পুলিশ এবং সেনাবাহিনীও নিজেদের মধ্যে কোনো রাইশব্যুর্গার সদস্য আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Zinken
আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রতত্ত্ব
রাইশব্যুর্গার আন্দোলনকারীদের বেশ কিছু স্থানে রাশিয়ার পতাকা হাতে দেখা গেছে৷ ফলে রাশিয়াই এদের মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে, এমন অভিযোগও রয়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ফ্রিম্যান-অন-দ্য-ল্যান্ড নামের সংগঠন রয়েছে৷ তারও রাইশব্যুর্গারদের মতোই সরকার ও রাষ্ট্রের আইন অস্বীকার করেন৷