1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে শিক্ষকরা কতটা শ্রদ্ধা পান?

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী৬ জুন ২০১৬

জার্মানিতে শিক্ষকরা স্কুলের পড়ুয়াদের কাছে, তাদের বাবা-মায়েদের কাছ থেকে, সমাজের কাছ থেকে কতটা শ্রদ্ধা পান? স্কুলগুলিতে অবশ্যই উদার, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ – যার মূল্য দিতে হয় প্রধানত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের৷

Schule Unterricht Deutschland
ছবি: picture-alliance/dpa/Reinhardt

২০১২ সালের আলেনবাখ স্টাডি নামধারী একটি জরিপ আজও জার্মানিতে শিক্ষকতার পেশা নিয়ে কথা উঠলেই উল্লেখ করা হয়৷ সেটি হলো আলেনবাখ ইনস্টিটিউট ফর ডেমোস্কোপির একটি জরিপ৷ সেই জরিপে জার্মানির সব ধরনের স্কুলের বেশ কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তাঁদের পেশার আদর্শগত ও বাস্তবিক দিকগুলির মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছিল৷

উত্তরদাতাদের ৪৯ শতাংশ বলেন যে, ছাত্র পড়ানো পাঁচ-দশ বছর আগে যা ছিল, আজ (অর্থাৎ ২০১২ সালে) তার চেয়ে অনেক বেশি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ৩৫ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা বলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা অমনোযোগী; ৪৪ শতাংশ বলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা শৃঙ্খলাবিহীন৷ বিত্ত ও শিক্ষার নিক্তিতে উচ্চবর্গের পরিবার থেকে যে সব ছেলেমেয়ে আসে, তাদের সঙ্গে নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের পার্থক্য ক্রমেই বেড়ে চলেছে, বলে জানান ৬০ শতাংশ শিক্ষক৷ অপরদিকে বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলি থেকে আসা ছেলে-মেয়েরা তাদের বাড়ির নানা সমস্যা স্কুলে বয়ে নিয়ে আসে৷ কাজেই শিক্ষক আর পড়ুয়াদের মধ্যে আসল সম্পর্ক হলো সন্দেহ আর অনাস্থার৷

তারপরে আছেন বাবা-মায়েরা৷ তাদের মধ্যে কিছু বাবা-মায়ের মতে শিক্ষকরা বড় বেশি সদয় ও সহিষ্ণু হয়ে পড়েছেন; সাজা না দিলে শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায় না৷ আরেকদল বাবা-মায়ের মতে ছাত্র-ছাত্রীদেরই উচিত,তাদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ঠিকমতো পড়াচ্ছেন কিনা, নিয়মিত তার মূল্যায়ন করা৷ অর্থাৎ অভিভাবকদের সাথে শিক্ষকদের সম্পর্কও সহজ নয়৷

এর ওপর যখন সাবেক সামাজিক গণতন্ত্রী গেরহার্ড শ্রোয়ডার-এর মতো রাজনীতিকরা স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ‘‘ফাউলে জেকে'' বা ‘কুঁড়ের বাদশা' বলে অভিহিত করেন, তার ওপর বাজারে ধুয়ো ওঠে যে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সরকারি কর্মকর্তার মর্যাদা না দিয়ে, করণিকের মর্যাদা দেওয়া উচিত – যার ফলে তাদের মাসমাইনে প্রায় ৫০০ ইউরো কমে যাবে – তাহলে জার্মানিতে শিক্ষকতার পেশা যে তার প্রথাগত আকর্ষণীয়তা হারাচ্ছে, তা বলা বাহুল্য৷

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আরেকটি অভিযোগ হলো ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা বড় বেশি৷ সেই সঙ্গে শৃঙ্খলাহীনতা৷ সব মিলিয়ে বিশেষ করে ‘গিমনাজিয়ুম' বা হাইস্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে অসুখে পড়ার প্রবণতা লক্ষণীয়ভাবে বেশি, যার ফলে নাকি বছরে দশ লাখ ঘণ্টা ক্লাস বাতিল করতে হয়! ওদিকে শিক্ষাব্যবস্থা হল রাজ্য সরকারের অধীনে ও তারা আরো বেশি শিক্ষক নিয়োগ করতে অনিচ্ছুক৷

এ সব বলার পরেও প্রশ্ন থেকে যায়: তাহলে কি জার্মানির স্কুলগুলিতে শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়েছে, না কমেছে? আসল উত্তর সম্ভবত এই যে, অন্য সব সমাজের মতোই জার্মান সমাজেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি শ্রদ্ধা নির্ভর করছে সাধারণভাবে সমাজে বয়ঃকনিষ্ঠরা বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে কিরকম ব্যবহার করছে,তার উপর৷ সমাজে যদি শিশু-কিশোরদের দাপট, স্বাধীনতা, ঔদ্ধত্য, অভব্যতা বাড়ে, তবে তার ঢেউ শ্রেণিকক্ষ অবধি এসে পৌঁছবে বৈকি৷

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

মনে রাখতে হবে, জার্মানিতে শিক্ষকদের কোনো ধরনের শারীরিক শাস্তি দেবার অধিকার নেই৷ অথচ বিচ্ছিন্নতার সমাজে বিচ্ছিন্ন পরিবারবর্গের সন্তানরা আজ আরো বেশি করে এমন একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ খোঁজে, যার কাছে তারা তাদের বয়ঃসন্ধিসুলভ দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, ক্ষেত্রবিশেষে দুই সংস্কৃতির সংঘাত নিয়ে কথাবার্তা বলতে পারে – অথবা শুধুই উচ্ছৃঙ্খলতা করে তাদের বিষাদকে অভিব্যক্তি দিতে পারে৷ এ সবের বোঝা বইতে হয়, ধাক্কা সামলাতে হয় – শিক্ষককে৷

শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা বা অশ্রদ্ধা নয়, শিক্ষকের প্রতি আচরণ হলো এই কিশোর-কিশোরীদের মানসিক পরিস্থিতি, আশা-আকাঙ্খা-হতাশার মুকুর বা প্রতিবিম্ব৷ এ হলো যেন একটা রোগের লক্ষণ – সিম্পটম – বুদ্ধিমান ডাক্তার যা চেপে দেবার চেষ্টা না করে, বোঝার চেষ্টা করবেন৷ কিন্তু রোগনির্ণয়ের পর রোগ নিরাময়ের পদক্ষেপ নেবার দায়িত্বটা হবে শুধু চিকিৎসকের নয়, অভিভাবক, সমাজ, সরকার, সকলের৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ