জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে হানাউ শহরের দুটি শিশা বারে হামলায় নয়জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ সন্দেহভাজন আততায়ীকে তার বাসায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে৷ তার মায়ের মৃতদেহও সেখানে ছিল৷
বিজ্ঞাপন
ঐ আততায়ী স্বীকারোক্তিমূলক এক চিঠিতে ডানপন্থি মতামত প্রকাশ করেছিলেন৷
বুধবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে ঐ হামলার পর পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। ভোর রাতে পুলিশ জানায়, একজন দুষ্কৃতির মৃতদেহ তার বাড়ি থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, এর পিছনে অতি দক্ষিণপন্থিদের হাত রয়েছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য, চার জন দুষ্কৃতি ছিল। প্রথমে একটি শিশা বারের বাইরে জড়ো হয় তারা। ভিতরে তখন ধূমপান করছেন বহু মানুষ। আচমকাই বারে ঢুকে গুলি চালাতে শুরু করে দুষ্কৃতিরা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিন জনের। এর পর সেখান থেকে গাড়ি চালিয়ে আরও একটি শিশা বারে পৌঁছে যায় তারা। সেখানে ফের গুলি চালায়। মৃত্যু হয় পাঁচ জনের। দু'টি ঘটনায় আহত হন পাঁচ জন। তার মধ্যে হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে একজনের।
রাতে পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতিদের খুঁজতে সর্বত্র তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ভোর রাতে একজনের দেহ উদ্ধারের খবর জানানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুষ্কৃতির বাড়ি থেকেই তার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও একটি মৃতদেহও সেখানে ছিল। তবে সেটি কার, তা এখনও জানা যায়নি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ অতি দক্ষিণপন্থীদের হাত রয়েছে ওই ঘটনায়। স্থানীয় মানুষের কাছে পুলিশের আবেদন, কারও কাছে কোনও তথ্য থাকলে তা যেন পুলিশকে জানানো হয়। তবে একই সঙ্গে গুজব থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সকলকে।
জার্মানিতে ইহুদিদের উপর হামলা নিয়ে মুসলিমদের ভাবনা
02:32
ঘটনার পরে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। ৪৯ বছরের আলি মেনগুসেক বলেছেন, ''ঘটনার খানিকক্ষণ আগে ওই রাস্তা দিয়েই দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। ওই শিশা বারের সামনে চারজন দাঁড়িয়েছিল। প্রত্যেকেই বেশ লম্বা এবং তরুণ। তিরিশ মিটারের ব্যবধানে দু'টি দলে ভাগ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তারা। আমরা ওদের মাঝখান দিয়েই যাই। বস্তুত ওদের দেখেই সন্দেহ হয়েছিল। তাই সন্তানদের বলেছিলাম দ্রুত পা চালাতে।''
আলি জানিয়েছেন, তাঁরা বাড়িতে ঢুকে পড়ার খানিকক্ষণের মধ্যেই গুলির আওয়াজ পান। জানালা খুলে তিনি দেখেন ফুটপাথ দিয়ে সকলে দৌড়চ্ছে। ততক্ষণে গাড়ি নিয়ে পরের শিশা বারের দিকে রওনা দিয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতিরা। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। ততক্ষণে রাস্তায় আরও লোক জমা হয়ে গিয়েছে। রাস্তায় ছড়িয়ে ছিল কার্তুজের খোল।
শাসক দল সিডিইউয়ের স্থানীয় প্রতিনিধি কাটিয়া লাইকার্ট ঘটনার পরেই নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। হ্যানাওয়ের মেয়র জানিয়েছেন, ''বহু দিনের মধ্যে এমন ভয়াবহ সন্ধ্যার সাক্ষী হয়নি শহর। এই ঘটনা বহু দিন মনে থাকবে।''
এসজি/জিএইচ (ডিপিএ, এপি)
২০১৭ সালের জুলাইয়ের ছবিঘরটি দেখুন...
জার্মানির স্কুলে যত গোলাগুলি
জার্মানির স্কুলগুলোতে বেশ ক’বার বন্দুকধারীরা আক্রমণ করেছে৷ সর্বপ্রথম আঘাতটি এসেছিল ১৮৭১ সালে৷ এগুলোর মধ্যে বড় কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kulturhaus Walle
সারব্রুকেন, ১৮৭১
১৮২০ থেকে ১৮৯১ পর্যন্ত পশ্চিম জার্মানির সারব্র্যুকেনের এই চার্চটিতে একটি স্কুল ছিল৷ একবার ইউলিয়স বেকার নামের মানসিক বিকারগ্রস্ত এক ছাত্র বাজে গ্রেড পায় এবং এর ফলে স্কুল থেকে তাঁর বাবার কাছে একটি নোট যায়৷ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ১৮৭১ সালের ২৫ মে সে দুই ছাত্রকে গুলি করে৷ ছেলে দু’টি গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল৷ বেকারকে কোর্ট কোনো সাজা দেয়নি৷ তবে তাঁর জীবন শেষ হয় একটি সংশোধন কেন্দ্রে৷
ছবি: Imago/W. Otto
ব্রেমেন, ১৯১৩
৩০ বছর বয়সি এক চাকুরিহীন শিক্ষক একবার এক স্কুলে গিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি করে৷ তাতে সাত থেকে আট বছর বয়সি পাঁচটি মেয়ে শিশু মারা যায়৷ এই শেষকৃত্যটি সেই শিশুদের৷ ১৯১৩ সালের এই ঘটনায় আরো কয়েকজন শিশু ও কর্মচারী আহত হন৷ হাইনৎস শ্মিড্ট নামের সেই শিক্ষকের জীবনও শেষ হয় আশ্রমে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kulturhaus Walle
কোলন, ১৯৬৪
১৯৬৪ সালের ১১ জুন৷ কোলনের ফল্কহোফেন ডিস্ট্রিক্টে ৪২ বছরের যুবক ওয়াল্টার এস একটি ক্যাথলিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাতবোমা নিক্ষেপ করে৷ এতে আটজন শিশু এবং দু’জন শিক্ষিকা মারাত্মকভাবে আহত হন৷ আরো বিশজন শিশু এবং দুই শিক্ষকের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়৷ এস পরে বিষপানে আত্মহত্যা করে৷ তবে মারা যাবার আগে তিনি দাবি করেন যে কেউ তাঁকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, তাই তিনি এ কাজ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/H. Sanden Jr.
এপস্টাইন, ১৯৮৩
এই আগ্নেয়াস্ত্রটি ব্যবহার করেছিলেন ৩৪ বছরের চেক শরণার্থী কারেল সি৷ তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির এপস্টাইনে ফ্রাইহের-ফম-স্টাইন স্কুলে তিনি ১১-১২ বছরের তিনজন শিক্ষার্থী এবং একজন পুলিশ অফিসারকে মেরে ফেলেন৷ আরো ১৪ জন আহত হন৷ এরপর নিজেও আত্মহত্যা করেন৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, তিনি মদ্যপ ছিলেন৷ কিন্তু কী কারণে ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন তা জানা যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Schmitt
অ্যারফুর্ট, ২০০২
জার্মানির ট্যুরিঙ্গিয়া রাজ্যের অ্যারফুর্টের ম্যাসাকারটি ঘটেছিল ২০০২ সালের ২৬ এপ্রিল৷ গুটেনবার্গ গিমনাসিয়ুমে ১৯ বছর বয়সি রবার্ট এস নামের এক স্কুল থেকে বহিষ্কৃত ছাত্র ১৩ কর্মচারী, দুই শিক্ষার্থী এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলি করে মেরে ফেলেন৷ এক শিক্ষক তাকে কোনোরকমে শান্ত করতে সমর্থ হন এবং একটি ঘরে বন্ধ করে রাখেন৷ পরে ঐ ঘরে আত্মহত্যা করেন রবার্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schutt
এমস্টেটেন, ২০০৬
এমস্টেটেনের গেশোয়েস্তার-শল স্কুলের এক প্রাক্তন ছাত্র সেবাস্টিয়ান বি৷ ১৮ বছর বয়সি এই তরুণ ২০০৬ সালের ২০ নভেম্বর হঠাৎ করেই বেশ কয়েকটি বন্দুক ও স্মোক বোমা নিয়ে স্কুলে আক্রমণ করেন৷ এতে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সি চার শিক্ষার্থী ও এক পরিচারক মারাত্মক আহত হন৷ এছাড়া আরো স্মোক বোমায়ও ক্ষতিগ্রস্ত হন এক শিক্ষক ও ১৬ জন পুলিশ সদস্য৷ পরে পুলিশ জানায় যে, তিনি প্রায়ই একটি হিংস্র ভিডিও গেম খেলতেন৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
ভিনেন্দেন, ২০০৯
২০০৯ সালের ১১ মার্চ টিম কে নামের ভিনেন্দেন শহরের আলবার্টভিলে-রেয়ালশুলের এক সাবেক ছাত্র স্কুলে এসে মাতালের মতো গুলি ছুঁড়তে থাকেন৷ পিস্তলটি তিনি তার বাড়ি থেকে এনেছিলেন৷ তিনি ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সি নয় শিক্ষার্থী, যাদের আটজনই মেয়ে, এবং তিনজন নারী শিক্ষককে হত্যা করেন৷ পরে স্কুলের বাইরে গিয়েও তিনি এমন আচরণ শুরু করেন এবং আরো তিনজনকে হত্যা করেন৷ তারপর আত্মহত্যা করেন৷ কিন্তু তার এহেন মাতলামোর কারণ জানা যায়নি৷