জার্মানির একটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ শিশুদের ব্যবহার উপযোগী একপাক্ষিকভাবে নজরদারির সুবিধাসম্বলিত ঘড়ি নিষিদ্ধ করেছে৷ শিশুরা ক্লাসরুমে শিক্ষকদের সঙ্গে যেসব কথাবার্তা বলে অভিভাবকরা এমন ঘড়ি ব্যবহার করে সেগুলো শোনেন৷
বিজ্ঞাপন
শিশুদের ব্যবহার উপযোগী নির্দিষ্ট কিছুস্মার্টওয়াচ আর জার্মানির বাজারেবিক্রি সম্ভব হবে না৷ যেসব ঘড়িতে ‘ওয়্যারটেপিং'-এর সুবিধা আছে, সেসব ঘড়ি এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে বলে শুক্রবার জানিয়েছে একটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ৷
জার্মানির কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক এজেন্সি বা ‘বুন্ডেসনেৎসআগেনটুয়ার' এই নিষেধাজ্ঞা কারণ হিসেবে জানিয়েছে যে, ঘড়িগুলোকে ‘আনঅথরাইজড ট্রান্সমিটারের' ক্যাটাগরিতে ফেলা যায়৷ অর্থাৎ কোনোরকম অনুমতি ছাড়াই এগুলোর মাধ্যমে নিরবে কথাবার্তা শোনা সম্ভব৷
বুন্ডেসনেৎসআগেনটুয়ার-এর প্রেসিডেন্ট ইওখেন হোমান এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমাদের তদন্তে দেখা গেছে, অভিভাবকরা এ সব ঘড়ি ব্যবহার করে, উদাহরণস্বরূপ, সন্তানদের ক্লাসরুমে শিক্ষকদের কথাবার্তা শোনে৷''
নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষটি আরো জানিয়েছে যে, জার্মানির বাজারে পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সিদের জন্য ব্যবহার উপযোগী অনেক স্মার্টওয়াচ রয়েছে৷ পাশাপাশি তারা অভিভাবকদের এ ধরনের ঘড়ি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলেছে এবং বাসায়ও সেগুলো রাখতে নিষেধ করেছে, কেননা এটি আইনত অবৈধ৷
বাচ্চাদের কেন, কখন মোবাইল দেয়া বিপজ্জনক
খুব কম বয়সে হাতে মোবাইল তুলে দিলে সন্তানের সর্বনাশের পথই তৈরি হয়৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, দুই বছর হওয়ার আগে শিশুর হাতে মোবাইল দেয়া একদমই ঠিক নয়৷ কোন বয়সের কোন শিশু কতটা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে তা-ও জানিয়েছেন তাঁরা৷
ছবি: picture alliance/ZB
যত কম বয়সে প্রযুক্তি, ক্ষতি তত বেশি
দ্য অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স ও ক্যানাডিয়ান সোসাইটি অফ পেডিয়াট্রিক্সের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি কোন বয়সে শিশুকে কতটুকু প্রযুক্তির সংস্পর্শে নেয়া উচিত, সে সম্পর্কে পরিষ্কার একটা ধারণা দিয়েছেন৷ তাঁরা বলেছেন, দু বছরের আগে শিশুদের সব গ্যাজেট থেকে দূরে রাখাই উচিত৷ ওই বয়সে ইন্টারনেট, আইপ্যাড বা টেলিভিশনে অভ্যস্ত হলে শিশু স্বভাবে অস্থির হয়, অনেক ক্ষেত্রে কানে কম শোনে৷
ছবি: vladgrin - Fotolia.com
কোন বয়সে কতটুকু প্রযুক্তি
বিজ্ঞানীদের মতে, দু বছরের পর অল্প অল্প করে শুরু করলেও ৩ থেকে ৫ বছর বয়সিদের কখনো দিনে ১ ঘণ্টার বেশি মোবাইল, টেলিভিশন, আইপ্যাড, ল্যাপটপ, টেলিভিশন ইত্যাদির সংস্পর্শে থাকা ঠিক নয়৷ ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সিরা দিনে সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা সেই জিনিসগুলোর কাছাকাছি গেলে ক্ষতি এড়াতে পারবে৷
ছবি: Fotolia/Karin & Uwe Annas
খুব মুটিয়ে যাওয়া
এসবে অভ্যস্ত হলে অনেক শিশু অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যায়৷ এর নানা রকমের ক্ষতিকর প্রভাব জীবনের ওপরও পড়ে৷ ডায়াবেটিস কিংবা হৃদরোগের ও বেড়ে যায় তাদের৷
ছবি: picture alliance/dpa
উগ্রতা, আগ্রাসন এবং....
গ্যাজেট ব্যবহার করার কারণে শিশুরা খুব তাড়াতাড়ি যৌনতা, সন্ত্রাস ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা পায়৷ ফলে অনেক শিশু খুব আগ্রাসী স্বভাবের হয়৷ কিছু শিশু বড় হয়ে নানা কিছুতে জড়িয়েও যায় ভালো-মন্দ না বুঝে৷
ছবি: Fotolia/somenski
মানসিক অসুস্থতা
গ্যাজেট বেশি ব্যবহার করার ফলে খুব কম বয়সেই অনেকে মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করে৷ তাতে এক সময় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকিও থাকে৷ ক্যানাডায় এ সমস্যা বেশ প্রকট হতে শুরু করেছে৷ সেখানে ছয় জন শিশুর মধ্যে অন্তত একজনকে বেশি গেজেট ব্যবহার করার ফলে মানসিক স্বাভাবিকতা ফিরে পেতে নিয়মিত ওষুধ খেতে হচ্ছে৷
ছবি: Colourbox
লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা
ব্যতিক্রম সব কিছুতেই হয়৷ তাই খুঁজলে এমন কিছু শিশু নিশ্চয়ই পাবেন যারা কম বয়সেই মোবাইল নিয়ে খেলেছে, তা দেখে বাবা তাকে নতুন মোবাইল কিনে দিয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত সেই শিশু সুস্থ, মেধাবী হিসেবেই বড় হয়েছে৷ তবে উল্টো দৃষ্টান্তও অনেক৷ ১২ বছরের আগে মোবাইল জাতীয় উপকরণে অভ্যস্ত হওয়া শিশুর লেখাপড়ায় উন্নতি খুব ধীর গতিতে হয়৷ দেখা গেছে, সেরকম শিশুদের এক তৃতীয়াংশই শিক্ষাজীবনে খুব সমস্যায় পড়ে৷
ছবি: Fotolia/lassedesignen
ঘুম কম হওয়া
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, শতকরা ৬০ ভাগ শিশুর বাবা মা-ই আজকাল কম বয়সি সন্তানের হাতে মোবাইল বা অন্য গ্যাজেট তুলে দেন৷ শতকরা ৭৫ ভাগ শিশুর বাবা-মা তারপর আর খবরই নেন না তাঁদের সন্তান রাতে কখন ঘুমায়৷ বাবা-মায়ের অজান্তেই অনিদ্রাজনিত অসুখ ডেকে আনে সন্তান৷
ছবি: DW
7 ছবি1 | 7
কর্তৃপক্ষ এটাও জানিয়েছে যে, টেলিফোন ফিচারযুক্ত ঘড়ি সাধারণভাবে ব্যবহার করা জার্মানিতে নিষিদ্ধ নয়৷ তবে সেসব ঘড়িতে যদি সিমকার্ড থাকে এবং ‘‘বেবি ফোন ফাংশন'', ‘‘ওয়ান-ওয়ে কনভারসেশন,'' বা ‘‘ভয়েস মনিটরিং''-এর মতো ফিচার থাকে, তাহলে সেগুলো বেআইনি হিসেবে বিবেচিতি হবে৷
তদন্তে দেখা গেছে, কিছু থাকা মাইক্রোফোন অভিভাবকরা দূর থেকে নিরবে চালু করতে পারেন৷ ফলে যিনি ঘড়ি পরেছেন বা যাঁরা আশেপাশে কথা বলছেন, তাঁরা বুঝতেও পারবেন না যে তাঁদের কথাবার্তা তৃতীয় কোনো পক্ষ শুনছে৷ বলা বাহুল্য, এ ধরনের ফিচারযুক্ত ‘ডিভাইস' জার্মানিতে ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ৷
উল্লেখ্য, গতবছর ‘‘মাই ফ্রেন্ড কেইলা'' নামের একটি খেলনার পুতুলও একইরকম কারণে নিষিদ্ধ করে জার্মানি৷ পুতুলটির সঙ্গে খেলনাটির কথাবার্তা রেকর্ড হতো, যা হ্যাকাররা চুরি করে ক্ষতিকর কাজে ব্যবহারের সুযোগ ছিল৷