1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে শিশু জন্মহার কমার কারণ

৫ আগস্ট ২০২৫

জার্মানিতে ক্রমশ শিশু জন্মের হার কমছে৷ নারীরা গড়ে মাত্র ১.৩৫ সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন- যা হ্রাস পাওয়ার রেকর্ড মাত্রা ছুঁয়ে ফেলেছে৷ এই অবস্থা কি দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি কিছু ইঙ্গিত দেয়?

সদ্য়োজাত সন্তানের হাত ধরে রয়েছেন মা
২০২৪ সালে জার্মানিতে শিশুর জন্মহার এটাই৷ ২০২৪ সালে জার্মানিতে মোট ছয় লাখ ৭৭ হাজার ১১৭ শিশু জন্মগ্রহণ করে, যা ২০২৩ সালের চেয়ে ১৫ হাজার ৮৭২টি কম৷  ছবি: Markus Scholz/dpa/picture alliance

৩০ বছরের কৌতুকশিল্পী ও ইনফ্লুয়েন্সার ইয়ুলিয়া ব্রান্ডনার ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি তার নিজের বই, ‘‘আই অ্যাম নট কিডিং'' প্রকাশকালে তাকে প্রভূত কটাক্ষ ও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হবে৷ দর্শকদের মধ্যে থেকে ৭২ বছর বয়েসি এক জার্মান মহিলা তার তিন সন্তানকে নিয়ে সকলের সামনে আঙুল তুলে বলেন, ইয়ুলিয়া অহঙ্কারী৷ তার কারণ, নিজের বইতে কৌতুকের মোড়কে তিনি লিখেছেন, কেন তিনি কখনও সন্তান চাননি৷

বইটি বহু পাঠকের বেশ পছন্দও হয়েছে অবশ্য৷ কিন্তু ইয়ুলিয়া বিক্ষোভ ও ঘৃণার বিষয়ে ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘‘আপনি যদি বলেন আপনি সন্তান চান না, তা হলে প্রথমে বলা হবে আপনি বিপ্লবী৷ তার পরে বলা হবে, পেনশন ব্যবস্থা ও তরুণ-প্রবীণ প্রজন্মগত যোগাযোগ নষ্ট করার জন্য আপনিই দায়ী৷ শেষে এককভাবে মানবজাতির বিলুপ্তি ঘটানোর জন্য দায়ী করা হবে৷''  

৩০ বছরের কৌতুকশিল্পী ও ইনফ্লুয়েন্সার ইয়ুলিয়া ব্রান্ডনার ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি তার নিজের বই, ‘‘আই অ্যাম নট কিডিং'' প্রকাশকালে তাকে প্রভূত কটাক্ষ ও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হবে৷ছবি: Andy Sparkles

২৮ বছর বয়সে নিজেকে স্টেরিলাইজ করেন ইয়ুলিয়া৷ তার চিকিৎসক অবশ্য অস্ত্রোপচারের আগে ওই শিল্পীর মানসিক স্থিতির মূল্যায়ন করিয়েছিলেন৷

গড়ে মাত্র ১.৩৫- এই সংখ্যাটি বহু তরুণীর কাছে আত্মবিশ্বাস ও সংকল্পের এক উদযাপন৷ কিন্তু অনেকেই আবার এই সংখ্যাটিতে শঙ্কিত৷ কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে জার্মানিতে শিশুর জন্মহার এটাই৷ ২০২৪ সালে জার্মানিতে মোট ছয় লাখ ৭৭ হাজার ১১৭ শিশু জন্মগ্রহণ করে, যা ২০২৩ সালের চেয়ে ১৫ হাজার ৮৭২টি কম৷  

দক্ষিণপন্থার দাবি- অভিবাসন নয়, জন্মহার বাড়াও

নিজের বই নিয়ে এত বিতর্ক দেখে কার্যত বিস্মিত ইয়ুলিয়া৷ তার দাবি, তিনি খেয়াল করে দেখেছেন সমাজ ক্রমশ দক্ষিণপন্থার দিকে ঝুঁকছে৷ তথাকথিত ‘ঐতিহ্য'-এর দিকেও ফিরে যেতে চাইছে৷ যে ‘ঐতিহ্য' বলে, নারীরা রান্নাঘরে থাকবে ও সন্তানের দেখভাল করবে৷অতি-ডানপন্থি এএফডি রাজনৈতিক দলেরও মতাদর্শ এটাই৷ তাদের দাবি, দেশে দক্ষ কর্মীর অভাব মেটাতে অভিবাসন নয়, বরং সন্তানের জন্মহার বাড়ানো প্রয়োজন৷ ইয়ুলিয়ার কথায়, ২০২৫ সালেও সমাজের উন্নতির জন্য নারীকে কেন তার নিজের উন্নতির পথ রোধ করতে হবে?  

যদিও বিশেষজ্ঞদের দাবি, সারা বিশ্বে নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাচ্ছে জন্মহার৷ছবি: Caro/Hechtenberg/picture alliance

বিশ্বজুড়ে কমছে জন্মহার

যদিও বিশেষজ্ঞদের দাবি, সারা বিশ্বে নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাচ্ছে জন্মহার৷ দক্ষিণ কোরিয়ায় এই হার কমে পৌঁছেছে ০.৭৫-এ৷ ২০২৫ সালের শুরুতে ভিয়েতনামের জন্মহার রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছিল৷ একমাত্র ব্যতিক্রম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল, যেখানে নারীরা গড়ে পাঁচটিরও বেশি শিশুর জন্ম দিচ্ছেন৷

জার্মান সরকারের পারিবারিক রিপোর্ট ও প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ সমাজবিজ্ঞানী মিকেলা ক্রেয়ানফিল্ড অর্থনৈতিক সংকট, অনিশ্চয়তা এবং জন্মহারের মধ্যে সংযোগ দেখতে পান৷ ডিডাব্লিউকে তিনি জানিয়েছেন, নতুন প্রজন্মের সন্তান না চাওয়ার কারণগুলি হলো কোভিড অতিমারি, জলবায়ুর অবক্ষয় এবং প্রবল মূল্যবৃদ্ধি৷ তবে মিকেলা মনে করেন, জোর করে জন্মহার বৃদ্ধি সমীচীন নয়৷ উদাহরণ হিসেবে রোমানিয়ার কথা বলেন তিনি৷ ‘‘রাষ্ট্রপতি চসেস্কু গর্ভনিরোধক ব্যবহারের সুযোগ কমানো, গর্ভপাতের জন্য কঠোর শাস্তি-সহ একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন৷ এক বছরের মধ্যে জন্মহার ১.৮ থেকে ৪ হয়ে যায়৷ কিন্তু এর ফলে তৈরি হয় ‘হারিয়ে যাওয়া প্রজন্ম', যে প্রজন্ম তাদের বাবা-মায়ের কাছে অবাঞ্ছিত, অবহেলিত৷''

জন্মহারের এই ফারাক দূর করতে জার্মানির করণীয় কী?

ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন রিসার্চের ডেপুটি ডিরেক্টর মার্টিন বুয়ার্ড মনে করেন, কেউ যদি সন্তান নিতে না চান তবে তাকে একেবারেই দোষারোপ করা যায় না৷ ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, ‘‘সমীক্ষা করে দেখেছি ২০২৪ সালে নারী ও পুরুষ উভয়েই সন্তান চেয়েছিলেন, সংখ্যাটি গড়ে প্রায় ১.৮৷ এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা গেলে ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যার সমস্যার সহজে মোকাবিলা করা যেত৷''   

মাতৃত্বে সাম্যের জন্য লড়ছেন দুই নারী

07:07

This browser does not support the video element.

বুয়ার্ড আরও মনে করেন, পারিবারিক প্রকল্প নিয়ে আরও নিবিড় পদক্ষেপ প্রয়োজন জার্মান সরকারের৷ ‘ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স' আরও উন্নত করা প্রয়োজন৷ পরিবার বিষয়ক, সিনিয়র সিটিজেনস, উইমেন অ্যান্ড ইয়ুথ-এর মতে ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সি ২২ শতাংশ মহিলা এবং ৩৬ শতাংশ পুরুষের সন্তান নেই৷ সর্বোপরি, তরুণী শিক্ষাবিদরা সন্তান চাইছেন না৷ বুয়ার্ডের দাবি, দেশের চাইল্ডকেয়ার রাইট নির্ভরযোগ্যতা হারাচ্ছে৷ চাইল্ড কেয়ার কর্মীদের আয়ও কম৷ পর্যাপ্ত অর্থ এই খাতে এলে অন্তত এই বিষয়টি জোরাল করা যাবে৷

অলিভার পাইপার/এসটি

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ