জার্মানিতে যদি শুধু নারীরাই ভোট দিতেন, তাহলে কে সরকারে আসতো, কোন সিদ্ধান্ত প্রাধান্য পেতো?
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে নারীরা ভোটাধিকার পেয়েছে ১৯১৮ সালে। তারপর ১০৬ বছর কেটে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে নারীরা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে সমানাধিকার পেয়েছে। এখন নারী ও পুরুষ ভোটদাতার সংখ্যা প্রায় সমান।
নারীরা কোন দলকে বেশি পছন্দ করে?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শুধু পশ্চিম জার্মানিতে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়েছিল। তারপর থেকে জার্মানির নারীদের পছন্দ অনেক বদলে গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে জার্মানির নারীরা রক্ষণশীল সিডিইউ এবং ম্যার্কেলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে অর্ধেকের বেশি নারী সিডিইউ-কে ভোট দিয়েছে। গবেষক এলকে উইশমান ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''সম্ভবত সিডিইউ পরিবারের মূল্যবোধের উপর জোর দিত এবং সেটা নারীদের ভালো লাগতো।''
তিনি জানিয়েছেন, ‘‘পরে ধর্ম, পরিবার ও বাড়ি আর নারীদের জীবনের কেন্দ্র থেকে সরে গেল। আর ম্যার্কেল-জমানা শেষ হওয়ার পর জার্মান নারীদের ভোট দেয়ার ধরণও বদলে গেল। ২০২১ সালে যখন ম্যার্কেল আর ভোটে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন থেকেই সিডিইউ নারীদের অনেক কম ভোট পেতে শুরু করলো।''
যদি পার্লামেন্টে শুধু নারীরা থাকতেন?
উইশমান জানিয়েছেন, যদি ২০২১ সালে শুধু নারীরাই ভোট দিতেন, তাহলে সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি(এসডিইউ) নেতা শলৎস আরো বেশি ভোট পেতেন। এছাড়া গ্রিন পার্টিও বেশি ভোট পেত। ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টি(এফডিপি) ও অতি-দক্ষিণপন্থি এএফডি কম আসন পেত।
মারি-লুইজে : জার্মানির ফুটবলে ইতিহাস গড়া নারী কোচ
শনিবার ইতিহাস গড়েছেন জার্মানির নারী ফুটবল কোচ মারি-লুইজে এটা৷ পুরুষদের প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগ বুন্ডেসলিগার এক ম্যাচে উনিয়ন বার্লিনের সহকারী কোচের দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Sabine Gudath/IMAGO
ইতিহাস গড়া
জার্মানিতে শনিবার পুরুষদের প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগ বুন্ডেসলিগার এক ম্যাচে উনিয়ন বার্লিন ক্লাবের সহকারী কোচের দায়িত্বে ছিলেন একজন নারী, যার নাম মারি-লুইজে এটা৷ প্রথম বিভাগ বুন্ডেসলিগায় একজন নারীর সহকারী কোচ হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম৷
ছবি: Andreas Gora/dpa/picture alliance
ফুটবলার থেকে কোচ
১৯৯১ সালে ড্রেসডেনে জন্মগ্রহণ করা এটা কোচ হতে ২৬ বছর বয়সে তার বুটজোড়া তুলে রেখেছিলেন৷ এরপর জার্মানির বিভিন্ন বয়সভিত্তিক জাতীয় নারী দলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন৷ এরপর পুরুষ খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিতে উনিয়ন বার্লিনে যোগ দেন৷
ছবি: Rauch/nordphoto/picture alliance
জনপ্রিয় কোচের বিদায়
২০১৮ সালের ১ জুন উনিয়ন বার্লিনের কোচ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন উরস ফিশার৷ প্রথম মৌসুমেই দলকে তিনি দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ করেন৷ এরপর বুন্ডেসলিগায় প্রথম মৌসুমে সপ্তম, দ্বিতীয় মৌসুমে পঞ্চম ও তৃতীয় মৌসুমে চতুর্থ হয় ক্লাবটি৷ সে কারণে দলটি বর্তমানে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলছে৷ তবে বুন্ডেসলিগায় শেষ ১৪ ম্যাচে জয় না পাওয়ায় ‘পারস্পরিক সম্মতির’ ভিত্তিতে ক্লাব ও ফিশার সম্পর্ক ছিন্নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
ছবি: Uwe Koch/Eibner-Pressefoto/picture alliance
এটার নিয়োগ
ফিশারের বিদায়ের পর দলের সঙ্গে কাজ করাদের মধ্য থেকেই অন্তর্বর্তী কোচ নিয়োগ দিতে চেয়েছিল উনিয়ন বার্লিন৷ সেই বিবেচনা সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ পান এটা৷ আর মূল কোচ হন মার্কো গ্রোটে৷ এটা ও গ্রোটে দুজনই উনিয়ন বার্লিনের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের সঙ্গে ছিলেন৷
ছবি: Sabine Gudath/IMAGO
যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত ঘটনা
যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষদের দলে নারী সহকারী কোচ নিয়োগের ইতিহাস অনেক দিনের৷ সেই তুলনায় ইউরোপে বিষয়টি এখনও নিয়ম হয়ে উঠতে পারেনি৷ ইউরোপে এখনও মেয়েদের অনেক বাধার মুখে পড়তে হয় বলে ডয়চে ভেলেকে জানান ইমকে ভ্যুবেনহর্স্ট৷ পুরুষ ও নারী দুই দলের কোচ হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা আছে তার৷ ২০১৮ সালে জার্মানির ক্লপেনবুর্গ ক্লাবের পুরুষ দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি৷ ক্লাবটি সেই সময় ষষ্ঠ বিভাগ লিগে খেলতো৷
ছবি: Noah Wedel/IMAGO
বাধা
পুরুষদের দলে নারী হিসেবে কোচ হতে গিয়ে অতীতে বাধার সম্মুখীন হওয়ার কথা জানিয়েছেন এটা৷ গতমাসে উয়েফাকে তিনি বলেন,‘‘আমি আগে খেয়াল করেছিলাম যে, কিছু মানুষ আমার সঙ্গে অন্যরকম আচরণ করছে৷ এই অভিজ্ঞতা সবসময় সুখকর ছিল না৷’’
ছবি: Andreas Gora/dpa/picture alliance
6 ছবি1 | 6
তিনি জানিয়েছেন, এখনো কাজের বাইরে জার্মানির কন্যা সন্তানেরা পু্ত্রদের চেয়ে বেশি দায়িত্ব নেয়, বাড়ির কাজও বেশি করে। তারা নতুন হাইওয়ের থেকে সরকারি পরিবহণকে আরো উন্নত করার পক্ষে। তারা এসপিডি, গ্রিন, বামপন্থিদের মতো প্রগতিশীল দলকে বেশি করে সমর্থন করেন।
জার্মানির পার্লামেন্টে নারীরা
গত দশকগুলিতে জার্মানির পার্লামেন্টে নারীদের সংখ্যা এক তৃতীয়াংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করেছে।
গবেষক এলিসা ডেইস-হেলবিগ জানিয়েছেন, ''পার্লামেন্টে বিভিন্ন পটভূমিতে থাকা নারীদের প্রতিনিধিত্ব দরকার।'' তিনি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''তখনই নারী প্রতিনিধিরা এমন বিষয়গুলিকে সামনে নিয়ে আসবেন, যা পুরুষ-প্রাধান্যের পার্লামেন্টে আসে না।''
তিনি এই প্রসঙ্গে ১৯৫৭ সালের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেছেন। তখন পার্লামেন্টে মাত্র ১০ শতাংশ নারী ছিলেন। সেসময় প্রশ্ন ওঠে, বিবাহ বা স্বামী-স্ত্রী সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে পুরুষদের প্রাধান্য কি থাকা উচিত? সেসময় নারীদের ভোটেই বিভেদের অবসান হয়।
কিছু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নারীদের ভোট খুব বেশি করে প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যেমন জার্মানিতে ১৯৯৭ সালে এসে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। তার আগে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দলের নারী প্রতিনিধিরা চেষ্টা করেও সংখ্যায় কম থাকার জন্য আইন পরিবর্তন করতে পারেননি।
ভোটে জিতে ইতিহাসের পাতায় দুই ট্র্র্যান্সজেন্ডার নারী
মাঝে মাঝে দু-একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা উঠে এলেও জার্মান সমাজ যে এখনো অনেক মানবিক, সব মানুষের জন্যই যথেষ্ট উদার তা আবার বোঝা গেল টেসা গানসারার এবং নাইকে স্লাভিকের জয়ে৷ ছবিঘরে বিজয়ী দুই ট্র্যান্সজেন্ডার নারীর গল্প...
জার্মানিতে সমকামী এবং অন্যদের অধিকার
জার্মানিতে সমকামিতা আইনি স্বীকৃতি পায় ১৯৬৯ সালে৷ সে বছরই সমকামিতাকে ‘অপরাধ’ বিবেচনা না করার পক্ষে রায় দেয় আদালত৷ এখন জার্মানিতে সম লিঙ্গের মানুষদের বিয়েও আইনসিদ্ধ৷ ২০১৭ সালে আদালত সম লিঙ্গের কাউকে জীবনসঙ্গী করতে আগ্রহীদের এ অধিকার দেয়৷
ছবি: imago images/S. Zeitz
উদারতায় ভাটা?
তবে অতি সম্প্রতি জার্মানিতে এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে উগ্রতা বাড়ছে৷
পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে জার্মানিতে এলজিবিটি+-দের বিরুদ্ধে হেটক্রাইম, অর্থাৎ ঘৃণাসূচক অপরাধ শতকরা ৩৮ ভাগ বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/J. Brady
ভোটারদের ‘সবুজ সংকেত’
তবে বাভারিয়া এবং নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ার ভোটাররা সব মানুষের অধিকারের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল৷ তাই বাভারিয়া থেকে টেজা গানসারার আর নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া থেকে নাইকে স্লাভিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন৷ দুজনই গ্রিন পার্টির সদস্য৷ জার্মানিতে এই প্রথম কোনো ট্র্যান্সজেন্ডার নারী সংসদ সদস্য হলেন৷ এর আগে ক্রিস্টিয়ান শেঙ্ক নামের একজন বুন্ডেসটাগের সদস্য হলেও সংসদের মেয়াদ শেষেই নিজেকে তিনি পুরুষ ‘ঘোষণা’ করেন৷
‘এটা ট্র্যান্সজেন্ডারদের জয়’
রোববারের নির্বাচনে গ্রিন পার্টি তৃতীয় সফল দল হিসেবে উঠে আসে৷ ২০১৭ সালে যারা মাত্র ৮.৯ ভাগ ভোট পেয়েছিল সেই দল কিনা এবার পেয়েছে ১৪.৯ ভাগ ভোট৷ দলের এবং নিজের সাফল্যে গানসারার খুব খুশি৷ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘এটা সবুজদের জন্য এবং ট্র্যান্সজেন্ডারদের অধিকার আন্দোলনের জন্য বড় এক ঐতিহাসিক জয়৷’ ৪৪ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ ভোটযুদ্ধে আগেও জিতেছেন৷ ২০১৩ সালে বাভারিয়ার আঞ্চলিক সংসদের সদস্য হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: JOHN MACDOUGALL/AFP
স্লাভিকের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচনে জেতার আনন্দ ইন্সটাগ্রামে স্লাভিক প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘‘এ তো রীতিমতো পাগলামো! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না৷ তবে সত্যি কথা হলো, এক ঐতিহাসিক জয়ের মাধ্যমে আমি পরবর্তী বুন্ডেসটাগের সদস্য হতে চলেছি৷’’
ছবি: Dwi Anoraganingrum/Geisler/picture alliance
5 ছবি1 | 5
এখন কার কত নারী সাংসদ?
জার্মানিতে এখন ৭৩৬ জন পার্লামেন্ট সদস্যের মধ্যে নারী সদস্যের সংখ্যা ২৬৩। তার মধ্যে গ্রিন পার্টির নারী সাংসদের সংখ্যা ৭০, আর এএফডির নারী সাংসদের সংখ্যা মাত্র নয়জন।
গ্রিন পার্টি নিজে থেকেই ৫০ শতাংশ নারী প্রার্থী দাঁড় করায়। এসপিডি ৪০ শতাংশ নারী প্রার্থীকে দাঁড় করায়। সিডিইউ-ও এখন নারী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়াচ্ছে।
যদি পার্লামেন্টে শুধু নারী সদস্যরাই ভোট দিতেন?
জার্মানিতে পার্লামেন্ট সদস্যদের সবসময় দলের নীতি মেনে ভোট দিতে হয়। তাই নারীরা শুধু ভোট দিলে কী করতেন তা বলা কঠিন। তবে কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তারা পছন্দমতো ভোট দিতে পেরেছেন। তার ফল সামনে আছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, নারী ও পুরুষ প্রতিনিধিদের চিন্তাভাবনা আলাদা।
যেমন বিবাহ-সাম্য নিয়ে ভোটাভুটিতে ৫৪ শতাংশ পুরুষ ওপেন ম্য়ারেজের পক্ষে ভোট দেন, কিন্তু ৭৬ শতাংশ নারী এর পক্ষে ছিলেন। ২০২৩ সালে আত্মহত্যায় সাহায্য করা নিয়ে বিলের পক্ষে ২৮৬ ও বিপক্ষে ৩৭৫টি ভোট পড়ে। শুধু নারীরা ভোট দিলে বিলের পক্ষে ১২৮ ও বিপক্ষে ১০৫টি ভোট পড়ত। বিল পাস হয়ে যেত।
কোভিড ১৯-এর সময় পার্লামেন্টে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সিদের জন্য বাধ্যতামূলক টিকা ও ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য বাধ্যতামূলক কাউন্সেলিং নিয়ে ভোটাভুটি হয়। বিলটি পাস হয়নি। শুধু নারীরা ভোট দিলে এই বিল পাস হতো।