বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে নির্ধারিত ফ্লাইটগুলো চালু রাখতে হিমশিম খাচ্ছে জার্মানউইংস৷ উড্ডয়নে আপত্তি জানাচ্ছেন বিমানকর্মীরা৷ তাঁদের মতো জার্মানির সর্বস্তরের মানুষই মঙ্গলবারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণে শোকাচ্ছন্ন৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার স্পেনের বার্সেলোনা থেকে জার্মানির ড্যুসেলডর্ফে আসার পথে ফ্রেঞ্চ আল্পসে বিধ্বস্ত হয় জার্মানউইংসের ৯৫২৫ ফ্লাইট৷ ১৪৪ জন যাত্রী এবং ৬ জন বিমানকর্মী ছিলেন বিমানটিতে৷ জার্মানির একটি স্কুলের ১৬ জন শিক্ষার্থীও ছিল তাদের মধ্যে৷ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে৷
মঙ্গলবার থেকে বিশ্বের সব সংবাদ মাধ্যমেই থাকছে জার্মানির রাষ্ট্রীয় বিমান কর্তৃপক্ষ লুফটহানসার মালিকানাধীন বিমান সংস্থা জার্মানউইংস-এর এই দুর্ঘটনার খবর৷ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রপ্রধানই শোক প্রকাশ করেছেন৷ বিমানযাত্রীদের অধিকাংশই জার্মানি এবং স্পেনের নাগরিক৷ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে ফ্রান্সের অংশের আল্পস পর্বতমালায়৷ তাই জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখই এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ দুর্ঘটনার অব্যবহিত পরই দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের প্রতি শোক এবং সমবেদনা জানান৷ এ ছাড়া তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে স্পেন৷ বুধবার আঙ্গেলা ম্যার্কেল, মারিয়ানো রাখই এবং ফ্রঁসোয়া ওলঁদের উদ্ধার তৎপরতা তদারক করতে ফ্রেঞ্চ আল্পসে যাওয়ার কথা৷
এদিকে মঙ্গলবার থেকেই জার্মানউইংসের অনেক কর্মী ফ্লাইট পরিচালনায় আপত্তি জানাচ্ছেন৷ এ কারণে মঙ্গলবার ড্যুসেলডর্ফ থেকে সাতটি ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়৷ বুধবারও বাতিল হয়েছে অন্তত একটি ফ্লাইট৷ ক্রুরা বলছেন, বিমান দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকে তাঁরা ফ্লাইট পরিচালনার মতো অবস্থায় নেই৷ লুফটহানসার প্রধান নির্বাহী (সিইও) কার্স্টেন স্প্যোর মনে করেন, বিমানকর্মীদের এমন হওয়াটা খুব অস্বাভাবিক নয়, কেননা, বিধ্বস্ত বিমানের ৬ জন ক্রু তাঁদেরই সহকর্মী, অনেকের ঘনিষ্ঠও ছিলেন তাঁরা৷
এবার মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় জার্মানির বিমান
আবার বিমান দুর্ঘটনা৷ এবার ফ্রেঞ্চ আলপসে বিধ্বস্ত হলো জার্মানির একটি বিমান৷ স্পেনের বার্সেলোনা থেকে জার্মানির ড্যুসেলডর্ফের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া বিমানটির সব যাত্রী এবং ক্রু-ই মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: cc-by-sa/Laurent Errera/L'Union
১৫০ জনের করুণ প্রস্থান!
মঙ্গলবার সকালে বার্সেলোনা থেকে জার্মানউইংসের বিমানটি (এয়ারবাস এ৩২০) ১৪৪ জন যাত্রী এবং ৬ জন ক্রু নিয়ে যাত্রা শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hitij
আবার ফ্রেঞ্চ আলপস
গত বছরের জানুয়ারিতে এই ফ্রেঞ্চ আল্পসে স্কি করতে গিয়ে পা ফসকে মৃত্যুর দোরগোড়ায় চলে গিয়েছিলেন ফর্মুলা ওয়ানের জীবন্ত কিংবদন্তি মিশায়েল শুমাখার৷ মঙ্গলবার জার্মানউইংসের বিমানটিও সেই পর্বতমালারই কোথাও বিধ্বস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ জার্মান বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ডিএফএস-এর মুখপাত্র আক্সের রাব ডিডাব্লিউকে জানান, সকাল ১০টা ৩৭-এর দিকে বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়েছে বলে তাঁদের অনুমান৷
ছবি: Reuters/J.P. Pelissier
কারণ অজ্ঞাত
দুর্ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভালস বলেন, বিমানটি কী কারণে বিধ্বস্ত হলো তা জানা যায়নি৷ ফ্রান্সের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ শুধু জানাচ্ছে, স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৪৭ নাগাদ তাঁরা ওই বিমান থেকে একটি বার্তা পেয়েছেন, তারপরই বিধ্বস্ত হয় বিমানটি৷
ছবি: Getty Images/P. Kovarik
বিমানবন্দরে স্বজনদের ভীড়
বার্সেলোনা বিমানবন্দর থেকে বিমানটি জার্মানির ড্যুসেলডর্ফে আসছিল৷ তাই স্পেন আর জার্মানি দু দেশেই রয়েছেন বিমানযাত্রীদের স্বজন৷ দু্র্ঘটনার খবর শুনে তাঁদের অনেকে বিমানবন্দরে ছুটে যান৷ চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা নিয়ে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের জন্য তাঁদের এই অপেক্ষার কি অবসান হবে?
ছবি: AFP/Getty Images/L. Gene
ম্যার্কেলের শোক এবং আশ্বাস
জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর শোক এবং সমবেদনা জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত করবে ফ্রান্স, স্পেন এবং জার্মানি৷ এ বিষয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এবং স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে ইতিমধ্যে কথা বলেছেন বলেও জানিয়েছেন ম্যার্কেল৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
শেয়ার মূল্যের পতন
শেয়ারবাজারে ইতিমধ্যে এ দুর্ঘটনার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে৷ ইউরোপের বিমান উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ‘এয়ারবাস’-এর শেয়ারের দাম কমছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Vennenbernd
‘অভিশপ্ত’ মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স
২০১৪ সালে বেশ কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ মার্চে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে উধাও হয় মালয়েশিয়ার বোয়িং ৭৭৭ বিমান৷ ১৭ জুলাই আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুর যাচ্ছিল মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের আরেকটি বিমান৷ সেটি বিধ্বস্ত হয় ইউক্রেনে৷ বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে৷ পরপর দুটি বিমানের এমন পরিণতির কারণে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সকে কেউ কেউ ভাবছেন ‘অভিশপ্ত’, ‘অপয়া’৷
ছবি: cc-by-sa/Laurent Errera/L'Union
7 ছবি1 | 7
মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়েছে উদ্ধার তৎপরতা৷ রাতে অবশ্য বিরূপ প্রকৃতির কারণে উদ্ধারকাজ বন্ধ রাখা হয়৷ বুধবার থেকে আবার শুরু হয়েছে উদ্ধারের কাজ৷ স্থানীয় সময় এগারোটার দিকে ফ্রেঞ্চ আল্পসের ভীষণ দুর্গম এলাকায় বিধ্বস্ত হয় জার্মান উইংসের এ-৩২০ এয়ারবাস৷ সংবাদ মাধ্যমকে স্থানীয়রা বলেছেন, সেখানে গাড়ি নিয়ে যাওয়া অসম্ভব, সবচেয়ে কাছের লোকালয় থেকে হেঁটে যেতে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে৷
তবে অনেক রকমের প্রতিকূলতার মাঝেই চলছে উদ্ধার তৎপরতা৷ বিমানের একটি ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ককপিট ভয়েস রেকর্ডার৷ সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিশেষজ্ঞরা রেকর্ডিং উদ্ধার করতে পারবেন বলে আশা করছেন৷ বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ থেকে এখন অন্য ব্ল্যাকবক্সটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে৷ সেটি খুঁজে পেলে হয়তো বিমানের শেষ মুহূর্তের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে৷