জার্মানিতে সন্তানের অধিকার পাবেন একক বাবারাও
১২ আগস্ট ২০১০নাম তাঁর পিয়ারা তালুকদার৷ প্রাক্তন স্ত্রীর নাম এঞ্জেল৷ একটার পর আরও একটা৷ দুই সন্তানের জন্ম হওয়ার পর পিয়ারার স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে ফিরে চলে গেছেন তাঁর স্বদেশ নেদারল্যান্ডসে৷ পিয়ারা এখন একা৷ চাকরি সামলে দুটি বাচ্চাকে, যাদের বয়স এখন ছয় আর আট, তাদের সবকিছুই সামলাচ্ছেন তিনি৷
পিয়ারার মত এরকম অনেকেই আছেন৷ অনেক পুরুষ এভাবেই আজকাল একা একা নিজের বাচ্চাদের দেখভাল করে থাকেন৷ কিন্তু তারপরেও আইন কিন্তু পুরুষকে ততটা অধিকার এবং সম্মান দেয়না শিশু পালনের ব্যাপারে, যতটা একজন মহিলা পেয়ে থাকেন৷
তাই নিয়েই আপত্তি৷ আপত্তি ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও৷ ইইউ-র মানবাধিকার আদালত ২০০৯ সালেই বলেছিল, জার্মানিতে যে আইন রয়েছে একক পিতাদের জন্য, তা মোটেও যথেষ্ট অধিকার সচেতন নয়৷ সে আইনে মা আর বাবাকে সমানাধিকার দেওয়া হয়নি৷ পক্ষপাত দোষে সে আইন দুষ্ট৷
অতএব নড়েচড়ে বসেছিল জার্মান আইনমন্ত্রক এরপর থেকেই৷ পরিশেষে কার্লসরুয়ে শহরের সাংবিধানিক আদালত এ ধরণের একটি মামলায় অতি সম্প্রতি বেশ পরিবর্তনসাধ্য একটি রায় দিল৷ ১৯৯৮ সালে জন্ম হওয়া এক পুত্র সন্তানের অধিকার নিয়ে তার পিতা মামলা এনেছিলেন আদালতে৷ তাঁর অভিযোগ ছিল, যাবতীয় যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও তিনি তাঁর সন্তানের আইনি অভিভাবকত্ব পাচ্ছেন না৷ কারণ, সন্তানের মা কাছছাড়া করতে চাইছেন না ছেলেকে৷
কার্লসরুয়ের সাংবিধানিক আদালতে সেই মামলার রায়দানে বিচারপতি সাফ বলে দিয়েছেন, এরকমটা চলতে পারে না৷ বিচারপতির মতে, জার্মানিতে আইনজীবিদের মধ্যে এরকম একটা প্রবণতা রয়েছে, তাঁরা সবসময়ে পিতার অধিকারকে খর্ব করে দেখিয়ে থাকেন৷ সন্তানের জন্মের পরপরই তার মাকে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কারণে শিশুর প্রয়োজন হয়৷ কিন্তু তারপর যখন সে একটু বড় হয়েছে, তখন থেকেই বাবা আর মা দুজনেরই অধিকার সমান সমান৷ সেক্ষেত্রে শিশুর বিকাশের জন্যই মায়ের পাশাপাশি বাবার সঙ্গও সেই শিশুকে পেতে হবেই৷ আর সে জন্যই আইন এখন থেকে মায়ের পাশাপাশি একক বাবাদের সঙ্গেও৷ সাংবিধানিক আদালতের বিচারপতি বলে দিয়েছেন, এতদিন পর্যন্ত তাঁরা যে বঞ্চনা আর কষ্টের শিকার হয়েছেন, এখন থেকে তার পরিবর্তন ঘটবে৷ একক বাবারাও পাবেন সন্তানের ভরণপোষণের অধিকার, যেমন পেয়ে থাকেন মায়েরা৷
আসলে পরিবারতন্ত্রের বড় ধরণের পরিবর্তন ঘটে চলেছে দুনিয়া জুড়ে৷ পরিবার নামের প্রতিষ্ঠানটাই বিশেষ করে পাশ্চাত্ত্যে কিছুটা হলেও বাধার সম্মুখীন৷ সনাতন যে পদ্ধতিতে এতদিন পর্যন্ত পারিবারিক হিসেবনিকেশ পাওয়া যেত, অনেকদিনই পরিবারের সেই প্রাধান্যকে স্বীকার করতে চাইছে না আধুনিক জীবনযাত্রা৷ আর তাই পরিবার ভাঙছে, ভাঙছে নরনারীর সম্পর্কের রসায়ন৷
কিন্তু তার ফল ভুগতে হয় অনেক সময়েই শিশুদের৷ সন্তানসন্ততিদের৷ ফল ভুগতে হয় ভবিষ্যত প্রজন্মকে৷ মা আর বাবার মধ্যে কী নিয়ে দ্বন্দ, তা বোঝার মত বুদ্ধি তো ছোটদের থাকে না৷ তারা সমান সমান ভাবেই চায় দুজনের মনোযোগ৷ দুজনের ভালোবাসা, আদর, আহ্লাদ৷ সেই ব্যবস্থাই সঠিকভাবে এখন থেকে করতে চলেছে জার্মান আইন৷ যাতে বাবা আর মা দুজনের কেউই নিজেকে অপ্রয়োজনীয় মনে না করেন৷ কারণ, সন্তানকে সঠিকভাবে বড় করতে গেলে, দুজনকেই তো প্রয়োজন৷ এবং প্রয়োজন সুষমভাবে৷ অতএব আইনের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয়৷ তাতে কোন সন্দেহ নেই৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ