জার্মান সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগ শুক্রবার এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তর্ক-বিতর্কের পর সমাজে সমকামীদের বিবাহের অধিকারকে স্বীকৃতি দিলেন সংসদ সদস্যরা৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেল নিজে প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
গ্রীষ্মকালীন বিরতির ঠিক আগে বুন্ডেসটাগের শেষ অধিবেশনে সমকামীদের বিবাহের অধিকার নিয়ে বিতর্ক ও ভোটাভুটি নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা ছিল৷ তবে শুক্রবার সকালে সেই অনিশ্চয়তা কেটে যায়৷ সব দলের বিভিন্ন বক্তারা বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য রাখার পর ভোটাভুটি হয়৷ ৩৯৩ জন প্রস্তাবের পক্ষে, ২২৬ জন বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন৷
অন্যান্য দলগুলি বেশ কিছুকাল ধরে এই সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকলেও সরকারের প্রধান শরিক দুই দল সিডিইউ ও সিএসইউ বিষয়টি নিয়ে ঐকমত্যে আসতে পারছিল না৷ রক্ষণশীল এই শিবিরের অনেকের মতে, জার্মানির সংবিধান অনুযায়ী, সমকামীদের বিবাহকে স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ, তাতে বিবাহবন্ধন ও সন্তান সংক্রান্ত যে বিধান রয়েছে, একমাত্র নারী ও পুরুষ তা পূরণ করতে পারে৷ অর্থাৎ সংবিধান পরিবর্তন না করে সমকামীদের বিবাহের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়৷ এমনকি কয়েকজন সংসদ সদস্য এই প্রশ্নে জার্মানির সাংবিধানিক আদালতে মামলার হুমকিও দিয়েছিলেন৷
সিডিইউ নেত্রী ও চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল নির্বাচনের ঠিক আগে এমন একটি বিতর্কিত বিষয়নিয়ে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন৷ জোটসঙ্গী সামাজিক গণতন্ত্রী দল ‘সবার জন্য বিবাহের অধিকার' নিয়ে যেমন সোচ্চার হয়ে উঠেছে, তার প্রেক্ষিতে একটা অবস্থান না নিলেই নয়৷ নিজের শিবিরে বিরোধিতা সত্ত্বেও ম্যার্কেল তাই গত সোমবার বিষয়টি নিয়ে ভোটাভুটিতে সম্মতি দিয়েছিলেন৷ তবে তিনি স্পষ্ট করে দেন, যে এই প্রশ্নে সিডিইউ সংসদীয় দল তার সদস্যদের কোনো নির্দেশ দিচ্ছে না৷ ইউনিয়ন শিবিরের সংসদ সদস্যরা যে যার বিবেক অনুযায়ী ভোট দিতে পারবেন৷ শুক্রবার তিনি নিজে প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে বলেন, জার্মান সংবিধান সম্পর্কে তাঁর নিজের ব্যাখ্যা স্পষ্ট – বিবাহ শুধু পুরুষ ও নারীর মধ্যেই হওয়া সম্ভব৷
এসপিডি, বামপন্থি দল ‘ডি লিংকে' ও সবুজ দল শুরু থেকেই আশা করে আসছিল যে, সামান্য ব্যবধানে হলেও এই প্রস্তাব অনুমোদন করা সম্ভব হবে৷ কারণ, ইউনিয়ন শিবিরের বেশ কয়েকজন সদস্য এই প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানাতে এগিয়ে আসবেন৷ বাস্তবে সেটাই ঘটলো৷ এসপিডি নেতা ও চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী মার্টিন শুলৎস এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন৷
উল্লেখ্য, জার্মানিতে সমকামী দম্পতিরা সরকারি স্বীকৃতি পেলেও সেই বন্ধনকে বিবাহ হিসেবে মেনে নেওয়া হয়নি৷ ফলে তারা সন্তান দত্তক নিতে পারছিলেন না৷ এবার বিবাহের স্বীকৃতি পেলে সেই বাধাও দূর হবে এবং সরকারিভাবে সমকামীদের প্রতি আর কোনো বৈষম্য থাকবে না৷ বিশ্বের অনেক দেশে সমকামীদের অধিকার ধীরে ধীরে স্বীকৃতি পাচ্ছে৷
সমকামী বিয়ে বৈধ হওয়ায় বদলে যাবে তাঁদের জীবন
তাইওয়ানের সাংবিধানিক আদালত সমলিঙ্গের মানুষের মধ্যে বিয়ের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ এশিয়ার মধ্যে এই দেশটিই সর্বপ্রথম সমকামী বিয়েকে বৈধতা দিল৷ ছবিঘরে থাকছে এমন কিছু যুগলের কথা, এই আইনের ফলে যাদের জীবন বদলে যেতে চলেছে৷
ছবি: Reuters/T. Siu
ডাফনে এবং কেনি
ডাফনে এবং কেনি’র পরিকল্পনা এ বছরের শেষে বিয়ে করার৷ সমকামী, তৃতীয় লিঙ্গ যুগলদের একটি সমাবেশে কেনি ডাফনেকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ এখন তারা বিয়ের পোশাক-আশাক কী হবে তাই নিয়ে ব্যস্ত৷ তবে নতুন আইন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাইওয়ানে সমকামীরা ‘পার্টনার’ হিসেবে নিবন্ধিত হতে পারতো৷
ছবি: Reuters/T.Siu
ড্যানিয়েল চো এবং চিন সাই
....তবে তখন তাদের অধিকার সীমিত ছিল৷ এই যুগল জানিয়েছে, ‘‘যতদিন তাইওয়ান সরকার আমাদের সম্পর্ককে বৈধতা দিতে রাজি হয়নি ড্যানিয়েল নিউইয়র্কে চাকরির জন্য গিয়েছিল৷ তবে আমি স্পাউস ভিসার আবেদন করতে পারিনি৷ এই আইন পাস হলে আমরাও বিয়ের কাজটা সেরে ফেলবো৷’’
ছবি: Reuters/T.Siu
হেয়ার লিন এবং চো চিয়া-লিন
হেয়ার লিন একজন প্রকাশক এবং চো চিয়া-লিন একজন লেখক৷ দু’জনই এমন পৃথিবী চান, যা হবে মুক্তচিন্তার মানুষের অভয়ারণ্য৷ লিন বলেছেন, ‘‘২০০৩ সালে আমি যখন প্রথম ‘গে প্যারেডে’ অংশ নেই, তখন কেবল এক হাজার মানুষ এতে যোগ দিয়েছিল৷ কিন্তু সাম্প্রতিককালে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ এতে যোগ দেন৷’’ ‘‘এছাড়া সমকামী শিল্পী, রাজনীতিবিদ, এমনকি প্রেসিডেন্ট প্রার্থীও রয়েছেন৷ তাই এ পৃথিবী পরিবর্তন হবে বলে আমার বিশ্বাস-’’ বললেন লিন৷
ছবি: Reuters/T.Siu
সমকামী অধিকার কর্মী চি চিয়া-ওয়েই
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন, যার মন্ত্রিসভায় তৃতীয় লিঙ্গের একজন মন্ত্রী রয়েছেন৷ তিনি টুইটারে জানালেন, ‘‘বৈষম্য দূরীকরণ কেবল একটি সূত্রপাত, এখন প্রয়োজন আলোচনা এবং এ বিষয়ে বোধ জাগ্রত করা৷ সমকামী অধিকার কর্মী চি চিয়া-ওয়েই বললেন, ‘‘তাইওয়ান যদি এই ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি না দেখায় তাহলে আমরা আমাদের কাজ অব্যাহত রাখব এবং দেশকে ‘রংধনু’ দেশে পরিণত করবো৷ এমনকি প্রয়োজনে বিপ্লবও করবো৷’’
ছবি: Reuters/T.Siu
ওয়াং ই এবং মেং উ-মেই
বার্ষিক ‘গে প্যারেডের’ জন্য তাইওয়ান বিখ্যাত৷ শিল্পী ওয়াং ই বললেন, ‘‘আপনার কি মনে হয় আমরা এই কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে চেয়েছি? বাবা-মা’র সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই জটিল ছিল৷ কিন্তু আমার মনে হয়, সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ে নিয়ে আলোচনা এমন একটা বিষয়, যা একটা মুক্ত দেশে হওয়া প্রয়োজন৷’’
ছবি: Reuters/T.Siu
হুয়াং চেন-টিং এবং লিন চি-হুয়ান
হুয়াং চেন-টিং এবং লিন চি-হুয়ান এর মতে, ‘‘বিপরীতকামী আর আমাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই৷ বৈষ্যমের অনেক ধরণ রয়েছে৷ আগে ছিল বর্ণবৈষম্য৷ যে কারণে কৃষ্ণাঙ্গদের দাস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর এখন হচ্ছে লিঙ্গের কারণে বৈষম্য, কিন্তু সবাই তো এক, মানুষ৷’’ সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, তাইওয়ানের বেশিরভাগ মানুষ সমলিঙ্গের বিয়েকে সমর্থন করে৷
ছবি: Reuters/T.Siu
লেবের লি এবং এমিলি চেন
লেবের লি তার সঙ্গী এমিলি এবং তাদের ছেলে মর্ক-কে নিয়ে ইলেনে থাকেন৷ চেন বললেন, ‘‘আমাদের স্বপ্ন ছিল একটা সন্তানের৷ তাই কৃত্রিম পদ্ধতিতে আমরা এই সন্তান নিয়েছি৷ কিন্তু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিল, কেননা, কেবল একজন শুধু সন্তানের মা হিসেবে নিজেকে নিবন্ধিত করতে পারে৷ শিশুটি দুই মায়ের স্নেহে বেড়ে উঠছে৷ একটা পরিবার কীভাবে গড়ে উঠছে সেটা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা গুরুত্ব রয়েছে ভালোবাসার৷’’
ছবি: Reuters/T. Siu
হুয়াং জি-নিং এবং কাং সিন
হুয়াং জি-নিং এবং কাং সিন শিক্ষার্থী৷ তাদের এই সেল্ফি তাওউয়ানে তোলা৷ জি-নিং জানালেন, ‘‘সমলিঙ্গে বিয়ের বিরোধিতাকারীরা বলছেন, তাদের বিরোধিতা করার কারণ হলো, পরবর্তী প্রজন্মকে তারা এর কবল থেকে রক্ষা করতে চায়৷ কিন্তু আমিই তো পরবর্তী প্রজন্ম৷ যারা এখন মৃতপ্রায়, আমাদের কথা না শুনে কেন তাদের কথা কেউ শুনবে ? তাই আমাদের এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া উচিত৷’’